অর্ডিনারি আইটির পোস্ট নোটিফিকেশন


পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের অধিক উন্নতির কারণ। | Carpus Weaving Industry In Western India

পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের অধিক উন্নতির কারণ। | Carpus Weaving Industry In Western India
 

Q. পশ্চিম ভারতে কার্পাস বয়ন শিল্পের অধিক উন্নতির কারণ। | Carpus Weaving Industry In Western India

কার্পাস বয়ন শিল্প হল ভারতের একক বৃহত্তম শিল্প। বিশুদ্ধ কাঁচামাল নির্ভর শিল্প হওয়ায় বাজার বা কাঁচামালের উৎস অঞ্চল অথবা এই দুই এর মধ্যবর্তী যে কোন অঞ্চলে এই শিল্প গড়ে ওঠে। ভারতের ক্ষেত্রেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই নিয়মটি ছাড়াও আরো কতগুলো বিশেষ কারণে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষত মুম্বাই ও আমেদাবাদে কার্পাস বয়ন শিল্পের একদেশীভবন ঘটেছে। নিম্নে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির কারণগুলি আলোচনা করা হল-

১)কাঁচামালের সহজলভ্যতা:  মহারাষ্ট্রের ডেকান ট্রাপ ও গুজরাটের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল কার্পাস বা কাঁচা তুলো প্রচুর পরিমাণ উৎপন্ন হয় এবং নিকটবর্তী কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রগুলিতে সহজেই সরবরাহ করা যায়।ফলে এই অঞ্চলের কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাব হয় না।

২)আর্দ্র জলবায়ু: আরব সাগরের অনতিদূরে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার জলবায়ু আর্দ্র প্রকৃতির, যা এই অঞ্চলের কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির পক্ষে সহায়ক।কারণ আর্দ্র জলবায়ুতে সুতো ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে।

৩)রাসায়নিক দ্রব্যের সহজলভ্যতা:  সুতো পরিষ্কার করা ও রং পাকা করার জন্য কার্পাস বয়ন শিল্পে যে ব্লিচিং পাউডার, কস্টিক সোডা ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন হয় তা এখানকার মুম্বাই, আমেদাবাদ, ভাদোদারা, মিঠাপুর ইত্যাদি স্থানের রাসায়নিক শিল্প কারখানাগুলি থেকে সহজে পাওয়া যায়।

৪)পরিশ্রুত জলের যোগান:  কার্পাস বয়ন শিল্পে সুতো পরিষ্কার করা, বস্ত্র রং করা, ব্লিচ করা ইত্যাদি কাজের জন্য যে প্রচুর পরিমাণে পরিশ্রুত জলের প্রয়োজন হয় তা এখানকার সবরমতী, মাহি ইত্যাদি নদী থেকে সহজে পাওয়া যায়।

৫)শক্তি সম্পদের যোগান:  কার্পাস বয়ন শিল্পে যে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় তা এখানকার ভিরা, ভীবপুরী, খোপালি, কয়না ইত্যাদি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং তারাপুর ও কাকড়াপাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সহজেই পাওয়া যায়।

৬)উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা:  ভারতের পশ্চিমাঞ্চল উন্নত সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত। ফলে এই অঞ্চলের কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আনয়ন এবং উৎপাদিত কার্পাস বস্ত্র বাজারে প্রেরণের সুবিধা হয়েছে।

৭)বন্দরে সান্নিধ্য:  মুম্বাই, কান্ডালা, সুরাট, নভসেবা ইত্যাদি বন্দর গুলি পশ্চিম ভারতে অবস্থিত হওয়ায় একদিকে যেমন কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি সহ অন্যান্য উপকরণ আমদানির সুবিধা হয়েছে, অন্যদিকে তেমনি উৎপাদিত কার্পাস বস্ত্র বিদেশে রপ্তানি সুবিধা হয়েছে।

৮)সুলভ শ্রমিক:  কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় শ্রমিক এখানকার সাতারা, শোলাপুর, সুরাট প্রভৃতি জনবহুল অঞ্চল গুলি থেকে সহজে ও সুলভে পাওয়া যায়।

৯)মূলধনের প্রাচুর্য্য:  ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রয়োজনীয় মূলধন এখানকার স্থানীয় গুজরাটি, মারাঠি, পারসি, ভাটিয়া ইত্যাদি সম্প্রদায়ের ধনী শিল্পপতিগণ এবং বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থা ও বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিয়োগ করে থাকে।

১০) চাহিদা:  মুম্বাই,আমেদাবাদ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এই অঞ্চলের বিপুল জনসংখ্যার বিশাল কার্পাস বস্ত্রের চাহিদা মেটানোর জন্য কার্পাস বয়ন শিল্পের বিশাল বাজার গড়ে উঠেছে। এছাড়া বিদেশের বাজারেও এখানকার কার্পাস বস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা আছে। দেশে-বিদেশে কার্পাস বস্ত্রের এই বিপুল চাহিদা ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতি কে ত্বরান্বিত করেছে।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.