বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর - Vedic Civilization Question Answer

বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় Vedic Civilization Question Answer PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF

বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর - Vedic Civilization Question Answer

নিচে বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF টি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে এই পোস্টটির নীচে যান এবং ডাউনলোড করুন।


বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর - Vedic Civilization Question Answer


বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF

Dear Students, Gksolves.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF. প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি চাকরির যেমন Railway Group D | PSC Clerkship | WBCS | SSC CHSL | SSC CGL | SSC MTS | WBP Abgari Constable | WBP SI | WBP Constable | ICDS Supervisor | Railway Group D | RRB NTPC | PSC Miscellaneous | TET  | Upper Primary  | Group D ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই সমস্ত চাকরির পরীক্ষা ছাড়াও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সম্বন্ধে আপনার সাধারণ ধারণা থাকা দরকার, তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF যা আপনাদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ধারণা গঠন করতে বিশেষ সাহায্য করবে। 



Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর - Vedic Civilization Question Answer


বৈদিক সভ্যতা - Vedic Civilization


আর্য ও বৈদিক সভ্যতা


আর্যদের আদি বাসভূমি

সাধারণভাবে ‘আর্য’ বলতে একটা জাতিকে বােঝায়। বর্তমানে এই ধারণা পরিত্যক্ত হয়েছে। আর্য’ শব্দটি বহু অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সংস্কৃত অর্থ অনুযায়ী আর্য’ বলতে সদ্বংশজাত ব্যক্তিকে বােঝায়। আর্য’ শব্দটি জাতি’অর্থে পারস্য সম্রাট দরায়ুসও গ্রহণ করে ভুল করেছিলেন। প্রকৃত অর্থে আর্য কোনাে জাতির নাম নয়। ম্যাক্সমুলার, স্যার উইলিয়াম জোন্স প্রমুখ পণ্ডিতদের মতে ‘আর্য’ একটা ভাষার নাম। এটি একটি ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাগােষ্ঠীর নাম। যে ব্যক্তি এই ভাষাগােষ্ঠীর যে-কোনাে একটি ভাষায় কথা বলেন তিনিই আর্য।

আর্যদের আদি বাসস্থান সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা একমত নন। তাদের মধ্যে দুটি মত প্রচলিত আছে : (a) আর্যদের আদি বাসস্থান হল ভারত। (b) তাদের আদি বাসস্থান ভারতের বাইরে কোনাে স্থান।   আর্যদের আদি বাসস্থান ভারত বলে যারা মনে করেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন গঙ্গানাথ ঝা, পণ্ডিত পক্ষ্মীধর শাস্ত্রী, পুসলকর, পারগিটার প্রমুখ। তাদের বক্তব্য হল, এমন কোনাে তথ্য নেই যা দিয়ে প্রমাণ করা যেতে পারে যে, আর্যরা বিদেশী ছিল। দেশত্যাগ করে শতাব্দীর পর শতাব্দী অন্যত্র বাস করলেও কোনাে-না-কোনাে ভাবে আদি বাসস্থানের উল্লেখ থাকে সাহিত্যে। পুসলকর দেখাতে চান, আর্যদের এই ধরনের কোনাে স্মৃতিচারণের চিহ্ন ঋগবেদে নেই। ভাষাতত্ত্বের বিচারেও আর্যদের বিদেশী বলা যায় না। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় সংস্কৃত শব্দের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কিন্তু ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাসমূহে তা হয়নি। সুতরাং ব্যাখ্যাটি এইভাবে হতে পারে যে, প্রাক্-বৈদিক ভাষা ভারতে আর্যদের ভাষা ছিল এবং আর্যরা ভারতের বাইরে যাওয়ার পর তাদের সঙ্গে সংযােগের ফলে অন্যান্য আর্য ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। এইসব ঐতিহাসিকদের আর একটা প্রশ্ন হল, আর্যরা যদি ইউরােপ থেকে ভারতে এসে থাকেন, তাহলে সেখানে ঋগবেদের মতাে কোনাে রচনা পাওয়া যায়নি কেন? ব্যাখ্যাটি এমন হতে পারে যে, ভারতে আর্য জনগােষ্ঠীর যে অংশে সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেছিল, সেই অংশই দেশত্যাগী হয়। তাই তাদের পক্ষে আর একটা ঋগবেদের মতাে গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব হয়নি। পারগিটার দেখাতে চান, উত্তর-পশ্চিম দিক দিয়ে আর্যদের ভারত ত্যাগের উল্লেখ রয়েছে পুরাণে। আর্যদের যাঁরা বহিরাগত মনে করেন, তাদের বক্তব্য হল, ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাগােষ্ঠীর সাতটি ভাষার মধ্যে পাঁচটি আজও ইউরােপীয় ভাষা। এর দ্বারা প্রমাণ করা যায় যে, আর্যদের আদি বাসস্থান ইউরােপের বাইরে ছিল না। ম্যাক্সমুলার মনে করেন যে, আর্যদের আদি বাসভূমি ছিল পশ্চিম এশিয়ায়। এই অঞ্চল থেকেই আর্যদের একটা শাখা ইউরােপে চলে যায় এশিয়া মাইনরের ভিতর দিয়ে। অপর শাখাটি উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। তিনি বলেন যে, বৈদিক সাহিত্যে সমুদ্রের বা সমুদ্র সম্বন্ধীয় কোনাে শব্দের উল্লেখ নেই। সুতরাং ভারতে আর্যদের আগমন ঘটেছিল স্থলপথে। ব্ৰাণ্ডেনস্টাইন বলতে চান, গােড়ার দিকে ইন্দো-ইউরােপীয় শব্দাবলিতে কোনাে এক পর্বতমালার পাদদেশে আর্যদের আদি বাসস্থানের সন্ধান পাওয়া যায়। তার মতে, এই অঞ্চল উরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত কিরঘিজস্তেপ ভিন্ন অন্য কোনাে স্থান হতে পারে না। রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, দক্ষিণ রাশিয়া ছিল আর্যদের আদি বাসস্থান। সুতরাং আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। গর্ডন চাইল্ড তার The Aryans গ্রন্থটিতে এই সমস্যা আলােচনা করে একটা সঠিক সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করেছেন। তবে এটুকু বলা যেতে পারে যে, অধুনা অধিকাংশ পণ্ডিত ও ঐতিহাসিক কিরঘিজস্তেপ অঞ্চলকে আর্যদের আদি বাসভূমি হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন।


বৈদিক যুগ

বেদ কথাটি সংস্কৃত বিদ কথা থেকে এসেছে। এর অর্থ হল জ্ঞান। প্রথমদিকে বেদ মুখে মুখে রচিত হয়েছিল এবং শুনে মনে রাখতে হত বলে এর অপর নাম শ্রুতি। বেদ ছিল অলিখিত এবং একপুরুষ থেকে অন্যপুরুষে বংশানুক্রমিক ভাবে চলে যেত। এইজন্য বেদকে বলে অপৌরুষেয়। বৈদিক সাহিত্য বলতে ঋবৈদিক সাহিত্যকে বােঝানাে হয়। ঋগবেদ ১০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে রচিত হয়। বর্তমানে ২০০০ খ্রিস্টাব্দে এই ঋগবেদ ইউনেসকোর দ্বারা বিশ্বের ঐতিহ্যশালী গ্রন্থের মর্যাদা পেয়েছে। বেদ মানুষের সৃষ্টি নয় বলে মনে করা হত। ঋগবেদে গরুর উল্লেখ আছে ১৭৬ বার, ঘােড়ার উল্লেখ রয়েছে ২১৫ বার, বনের উল্লেখ আছে ৭০ বার, জলের উল্লেখ রয়েছে ২৭৫ বার, বিশের উল্লেখ রয়েছে ১৭১ বার, গ্রামের কথা উল্লেখ রয়েছে ১৩ বার, গণের কথা রয়েছে ৪৬ বার, ব্রাহ্মণের কথা ১৪ বার, ক্ষত্রিয়ের কথা ৯ বার, গৃহ বা ঘরের কথা ৯০ বার, শূদ্র ১ বার, পিতার কথা ৩৩৫ বার, মা’র কথা ২৩৪ বার, বৰ্ণর কথা ২৩ বার, রাজ্যের কথা ১, রাষ্ট্রের কথা ১০ বার, সেনা ২০ বার।


ঋগবেদের যুগের রাজনৈতিক অবস্থা

এই যুগে আর্যদের রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল প্রধানত উপজাতি কেন্দ্রিক, পরবর্তী বৈদিকযুগের ন্যায় বৃহৎ ভৌগােলিক রাষ্ট্র ঋগবেদের যুগে গড়ে ওঠেনি। ঋগবেদের যুগে আর্যরা ভরত, যুদ, সঞ্জয়, অনু, পুরু, তুবশ, দ্রাহত ইত্যাদি উপজাতিতে বিভক্ত ছিল। এই যুগে পরিবার ছিল রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন স্তর। পিতামাতা, পিতামহ ও পরিবারের অন্যান্য আত্মীয়দের নিয়ে পরিবার গঠিত হত। রক্ত সম্পর্ক দ্বারা পরিবারের বন্ধন স্থির করা হত, পরিবার প্রধানকে বলা হত কুলপতি’ বা কুলপা’। কতকগুলি পরিবার রক্তসম্পর্কে যুক্ত হলে গােষ্ঠী বা উপজাতি গঠিত হত। আর্য উপজাতিগুলি আদপে শান্তিপ্রিয় ছিল না। দশরাজার যুদ্ধের কাহিনী থেকে জানা যায় যে রাজা দিবদাসের পুত্র রাজা সুদাস ছিলেন ভারত বা ভরত গােষ্ঠীর রাজা। সুদাস পুরােহিত বিশ্বামিত্রের কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে তার জায়গায় বশিষ্ঠকে পুরােহিত রূপে নিয়ােগ করেন। এজন্য বিশ্বামিত্র ক্রুদ্ধ হয়ে দশটি আর্য উপজাতির দশরাজার ছােটো জোট গড়ে রাজা সুদাসকে আক্রমণ করেন। শেষ পর্যন্ত সুদাস জয়ী হন। কোশাম্বীর মতে ‘দাস’ শব্দটি থেকে প্রমাণিত হয় যে ভরতগােষ্ঠীতে আর্য-অনার্যের সংমিশ্রণ ঘটে। পরবর্তীকালে ‘দাস’ শব্দটি ঘৃণার চোখে দেখা হত।

রােমিলা থাপারের মতে ঋগবেদের যুগে রাজারা ছিল প্রধানত যােদ্ধাদের নেতা। নিরন্তর যুদ্ধবিগ্রহের জন্য এবং গােষ্ঠীদের উপজাতির মধ্যে শৃঙ্খলা রাখার জন্য রাজপদের উদ্ভব হয়। রাজা বংশানুক্রমিকভাবে ক্ষমতা ভােগ করতেন। ক্রমে ক্রমে রাজা নিজেকে ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করেন। অভিষেক প্রথার দ্বারা রাজাকে সাধারণ মানুষ থেকে স্বতন্ত্র এবং স্বর্গীয় অধিকারযুক্ত বলে ঘােষণা করা হয়, পুরােহিত রাজার অভিষেক করতেন। রাজা সার্বভৌম অধিকার রক্ষার জন্য জনসমর্থন লাভের কথাও বলা হয়েছে।

ঋগবেদের যুগে রাজপদ বংশানুক্রমিক হলেও নির্বাচিত রাজতন্ত্রের কথা জানা যায়। বিশ বা গােষ্ঠী দরকার হলে রাজাকে নির্বাচন করতেন। এই যুগে প্রজাতন্ত্রও ছিল। কতকগুলি গােষ্ঠী বা উপজাতি তাদের শাসনকর্তা নির্বাচন করত। এটি খাটি প্রজাতন্ত্র না হলেও নির্বাচিত অভিজাততন্ত্র ছিল একথা বলা যায়।

এই যুগে রাজার প্রধান কাজ ছিল শত্রুর হাত থেকে দেশ রক্ষা, প্রজাদের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। পুরােহিতের সাহায্যে রাজাকে প্রজাদের আবেদনের ন্যায়বিচার করতে হত, দোষিকে শাস্তি দিতে হত। এই যুগে গােধন অপহরণ, বলপূর্বক জমি ও সম্পত্তি দখলের চেষ্টা হত। রাজাকে এ সকল অন্যায়ের প্রতিকার করতে হত। রাজা বলি’নামে একপ্রকার অনিয়মিত কর পেতেন প্রজাদের থেকে। কোনাে নিয়মিত কর তিনি পেতেন না। তিনি ভূমি দান করতে পারতেন না। কারণ তিনি জমির মালিক ছিলেন না।

শাসন করার জন্য রাষ্ট্রকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হত। কয়েকটি পরিবার নিয়ে গােষ্ঠী গঠিত হত। কয়েকটি গােষ্ঠী নিয়ে গ্রাম। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে বিশ বা জন গঠিত হত। কয়েকটি জন নিয়ে দেশ বা রাষ্ট্র গঠিত হত। গ্রামণি গ্রামের শাসন করত, বিশপতি বিশ এবং গােপ জনের শাসন করত। তবে বিশ ও জনের সম্পর্ক সঠিকভাবে জানা যায় না। পুরােহিত রাজার খুবই ঘনিষ্ঠ কর্মচারী ছিলেন। যাগযজ্ঞ ও ধর্মীয় ব্যাপারে পুরােহিত ছিলেন সর্বেসর্বা। পুরােহিত রাজাকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরামর্শদান করতেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও যেতেন রাজার সঙ্গে। সেনানী যুদ্ধ বিগ্রহের দায়িত্ব পালন করত। দূত ও গুপ্তচর শত্রুর খবর রাখত। এইযুগে পদাতিক ও রথারােহী সেনা ছিল। তীর, ধনুক, বল্লম, কুঠার ইত্যাদি অস্ত্র ব্যবহার করা হত। রথমুষল নামে একপ্রকার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহৃত হত। এছাড়া পরচরিষু বা ছুটন্ত দুর্গের কথা বলা হয়েছে যা থেকে তীর ছোঁড়া হত।

সভা ও সমিতি নামে ঋগবেদের যুগে দুটি সংস্থা ছিল। সভা ছিল সম্ভবত বয়ােজ্যেষ্ঠ ও জ্ঞানবৃদ্ধদের প্রতিষ্ঠান এবং সমিতি ছিল উপজাতির সর্বসাধারণের পরিষদ। সমিতি সর্বসাধারণদের নিয়ে গঠিত হত। সমিতির ক্ষমতা সভা অপেক্ষা বেশি ছিল। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রের আয়তন বাড়লে সমিতির ক্ষমতা কমে যায়। প্রাচীন গ্রিসে যে পলিস (Polis) ব্যবস্থা ছিল বৈদিক যুগের উপজাতিক রাষ্ট্র ছিল অনেকটা সেইরকম।


ঋগবেদ যুগের সামাজিক অবস্থা

আর্যরা ভারতে যখন প্রবেশ করে তখন তারা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। যােদ্ধাশ্রেণী বা রাজন্য, ব্রাহ্মণ বা পুরােহিত শ্রেণী এবং সাধারণ আর্য। আর্যরা ভারতে আসার আগেই বর্ণ বা শ্রেণীর প্রথার সৃষ্টি হয়, আর্যরা ভারতে এই প্রথা নিয়ে আসে। বর্ণ’ বলতে শ্রেণী মনে করা উচিত। জাতি অর্থে নয়। ঋগবেদে বর্ণ শব্দটি উল্লেখ থাকলেও তখনও পর্যন্ত জাতি অর্থে এই শব্দটি ব্যবহৃত হত না। কৃষ্ণকায় অনার্য হতে গৌরবর্ণ আর্যদের পার্থক্য বােঝাতে বর্ণ শব্দটি ব্যবহৃত হত। ঋগবেদে আর্যদের সমাজ তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। যথা ব্রাহ্মণ বা পুরােহিত, রাজন্য বা যােদ্ধা এবং বৈশ্য। শ্রেণীবিভাগ বংশানুক্রমিক ছিল না। বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে অন্তর্বিবাহ ব্যবস্থা চালু ছিল। ঋগবেদে ‘ক্ষত্রিয়’ শব্দটির কোনাে ব্যবহার ছিল না। এর পরিবর্তে ‘রাজন্য’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। যে তিনটি শ্রেণীতে আর্যরা বিভক্ত তা ছিল অর্থনৈতিক শ্রেণী।   কিন্তু কেউ কেউ বলেন ঋগবেদের যুগে আর্যরা চারটি জাতিতে বিভক্ত ছিল। তারা ঋগবেদের দশম মণ্ডলের পুরুষ সূক্তের উল্লেখ করেন। পুরুষসূক্তে বলা হয় যে আদিপুরুষ বা ব্রহ্মার মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, বাহু থেকে ক্ষত্রিয়, উরুদেশ থেকে বৈশ্য, এবং পদযুগল থেকে শূদ্রের উদ্ভব হয়। এইযুগে আর্যদের মধ্যে বংশানুক্রমিক জাতিভেদ ছিল না। আর্যরা যখন পূর্বভারতে গঙ্গাযমুনা অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করে সেই সময় জাতিভেদ প্রথার উদ্ভব হয়।

এই যুগে একান্নবর্তী পরিবারের প্রাধান্য ছিল এবং পরিবার ছিল পিতৃতান্ত্রিক। পরিবারের সর্বাপেক্ষা বয়স্ক পুরুষ কর্তা বা গৃহপতি হিসাবে গণ্য হতেন। গৃহপতি বা কর্তা পারিবারিক সম্পত্তির আয় সকলের খাদ্য জোগাত। আর্যরা যাযাবর বৃত্তি ছেড়ে গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। প্রতি পরিবারে স্থায়ী গৃহ থাকত। গৃহগুলি বাঁশ, খড় ইত্যাদি দ্বারা তৈরি হত। পরবর্তীযুগে মাটির দেওয়াল দ্বারা গৃহ নির্মাণের প্রথা চালু হয়। প্রতিটি গৃহে একটি করে পােড়ামাটির ইটের তৈরি একটি করে অগ্নিকুণ্ড থাকত। আর্যরা যব, গম, চাউল ও চাউল জাত দ্রব্য, দুধ, ঘি, মাখন ইত্যাদি খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করত। অপূপ বা পিষ্টক ছিল আর্যদের প্রিয় খাদ্য। মাছ, ঘােড়ার মাংস, ছাগলের মাংস ও পাখির মাংস তারা আহার করত, গােমাংস খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। ঋগবেদে দুগ্ধবতী গাভী হত্যা নিষিদ্ধ ছিল। তরিতরকারি, ফলমূল ছিল আর্যদের দৈনন্দিন খাদ্য। বিশেষ উৎসবে সােমরস নামক একপ্রকার লতার রস মাদক দ্রব্য হিসাবে পান করা হত।

আর্যরা সূতি ও পশমের বস্ত্র ব্যবহার করত। ধর্মীয় উৎসবে ক্ষৌম বস্ত্র এবং ‘দুকুল’ নামে মিহি রেশমের বস্ত্র ব্যবহৃত হত। পুরুষেরা নিম্নাঙ্গে ধুতি ও উর্ধ্বাঙ্গে উত্তরীয় ব্যবহার করত। নারীরা দুপ্রস্থ পােশাক ছাড়া নিবি বা কোমরবন্ধনী ব্যবহার করত। নারীরা নানা ভাবে কবরী বাঁধত এবং তাতে চিরুনী ও তেল দিয়ে প্রসাধন করত।

অবসর সময়ে আর্যরা পাশাখেলা, মুষ্টিযুদ্ধ, রথের দৌড় ও সঙ্গীতের চর্চা করত। সমাজে জুয়া খেলা নিন্দনীয় হলেও বহুলােক এর প্রলােভনে পড়ত। ঋগবেদে জুয়াখেলাকে একটি ব্যসন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাঁশি, বিনা ও ঢােল সহযােগে তারা নৃত্যগীত করত। সামবেদকে গানের আকারে গাওয়া হত।   ঋগবেদের সমাজে নারীর সম্মান ছিল। বৈদিক স্তোত্র রচয়িতা হিসাবে ঘােষা, বিশ্ববারা, অপালা, লােপামুদ্রা খ্যাতিলাভ করেন। বাল্যবিবাহ প্রথা ছিল না। পণপ্রথা ও কন্যাপণপ্রথা উভয় নিয়মই ছিল। বহুবিবাহ প্রথা প্রচলিত ছিল পুরুষদের মধ্যে। সন্তানহীনা বিধবা ভ্রাতৃবধূকে বিবাহ করার প্রথা ছিল। সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল না।   ঋগবেদের যুগের শেষ দিকে চতুরাশ্রম প্রথার উদ্ভব ঘটে। সমাজে প্রথম তিন শ্রেণীর মধ্যে এই প্রথার চল ছিল। বাল্য ও কৈশােরে গুরুগৃহে থেকে ব্রহ্মচর্য পালন ও বিদ্যাচর্চা করা ছিল প্রথম পর্যায়। সাহিত্য, ব্যাকরণ, ছন্দ ও বেদ শিক্ষা ছিল গুরুগৃহে শিক্ষার অঙ্গ। যৌবনে বিবাহ করে সংসারধর্ম পালন বা গার্হস্থ্য আশ্রম ছিল দ্বিতীয় পর্যায়, প্রৌঢ় অবস্থায় সংসার, সম্পত্তি ও পরিজনদের প্রতি মায়া ত্যাগ করে অরণ্যে বাস ছিল তৃতীয় পর্যায়। সর্বশেষ সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণ ছিল চতুর্থ আশ্রম।

আর্যদের সাহিত্য ও ব্যাকরণ ইত্যাদি থাকলেও লেখার হরফ বা লিপি প্রথমদিকে তাদের ছিল না। আর্যরা আবৃত্তির দ্বারা তাদের সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখত। আনুমানিক ৭০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে আর্যরা লিপির ব্যবহার শেখে।


আর্যদের অর্থনৈতিক জীবন

কৃষি ও পশুপালন ছিল আর্যদের প্রধান জীবিকা। ঋগবেদে ধান বা বৃহি শব্দের উল্লেখ নেই। ‘যব’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে বােঝান হত। যব বলতে ধানকেও বােঝান হত। ঋগবেদে গােধূম বা গমের উল্লেখ রয়েছে। এই যুগে লবণের উল্লেখ নেই। ব্যক্তিগত সম্পত্তির কোনাে ধারণা ছিল না।   লােহার ফলাযুক্ত লাঙলের দ্বারা জমিকে গভীরভাবে চাষ করা হত। লাঙলের নাম ছিল ‘শীর’। চাষযােগ্য জমিকে বলা হত ‘সিতা। শস্যকাটার কাস্তেকে বলা হত দাত্র। জলচক্র ও জলাশয় ব্যবহার করা হত। অন্যান্য শস্যের মধ্যে ছিল বিন, তিল ও তুলা।

গরুকে বলা হত ‘গােধন’। গরুগুলি যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য গরুর কানে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হত। কোনাে দ্রব্যের মূল্য গরুর মূল্যের দ্বারা স্থির করা হত। গরু ছাড়া ভেড়া, ঘােড়াকেও পালন করা হত।   রথ তৈরি, লাঙল তৈরি, নৌকা তৈরি, স্বর্ণকার বা হীরণ্যকার, নাপিত, চর্মকার, চিকিৎসক, তক্ষণ বা ছুতাের, লােহার জিনিষ তৈরি বা কর্মকার, কুম্ভকার ইত্যাদি পেশা ও শিল্প ছিল উল্লেখযােগ্য। এইযুগে সীসা, টিন বা ত্রাপু, রৌপ্য বা রজত, আয়স বা তামা শ্যামায়স বা লােহা ইত্যাদির ব্যবহার ছিল।

ঋগবেদে ‘পনি’ নামে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীর কথা জানা যায়। বৈশ্য শ্রেণী ব্যাবসাকে জীবিকা হিসাবে নেয়। স্থলপথে রথ বা গরুরগাড়ি এবং নদীপথে নৌকার সাহায্যে ব্যাবসা চলত। এইযুগে ‘নিষ্ক’ নামে স্বর্ণমুদ্রার চল ছিল। রৌপ্যমুদ্রা না থাকায় মুদ্রার সংখ্যা কম ছিল। ঋগবেদে ‘মনা’ নামে আর একপ্রকার মুদ্রার উল্লেখ আছে। মনা ছিল প্রাচীন ব্যাবিলনের মুদ্রা। এর থেকে অনেকে মনে করেন যে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক যােগ ছিল। নিষ্ক ও মনাকে প্রকৃত অর্থে স্বর্ণমুদ্রা বলা যায়। এগুলি আসলে ছিল স্বর্ণখণ্ড। ঋগবেদে বহু দাঁড়যুক্ত নৌকার কথা উল্লেখ রয়েছে। এই নৌকাগুলি ছিল সমুদ্রগামী বহিত্র। ঋগবেদে এর নাম ছিল ‘শতঅনিত্ৰ।


ঋগবেদ যুগের ধর্মীয় জীবন

এইযুগে ৩৩টি দেবতার উল্লেখ পাওয়া যায়। দেবতাদের তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলি হল ইউনিভার্স বা পৃথ্রি স্থানের দেবতা, বায়ু বা মধ্যম স্থানের দেবতা এবং সর্বশেষটি হল দায়ুস্থানের দেবতা। পৃথি স্থানের দেবতা ইন্দ্র, রুদ্র, বায়ু, বাত, পাৰ্জন এবং মাতারিস্থান হল দ্বিতীয় প্রকার বা মধ্যমা স্থানের দেবতা। দারাউস, মিত্র, সূর্য, সাবিত্রী, পূষন, বিষ্ণু, আদিত্য, উষা, অশ্বিন ইত্যাদি ছিল তৃতীয় প্রকার বা দায়ুস্থানের দেবতা। অগ্নি এবং পৃথ্বি ছিল তিন প্রকারেরই দেবতা।

ইন্দ্র অথবা পুরন্দর হল এই যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতা। তার নামে ২৫০টি স্তোত্র আছে। ইন্দ্র হলেন যােদ্ধা এবং দেবতাদের রাজা।

তাকে বলা হয় বৃষ্টির দেবতা। তার অপর নাম ছিল বিত্ৰগ্ন। তিনি বজ্রের দ্বারা বৃত্ত বা বাঁধগুলােকে ভেঙে দেন। ইন্দ্রের পরেই স্থান ছিল অগ্নির তাঁর নামে ঋগবেদে ২০০টি স্তোত্র আছে। তিনি হলেন আগুনের দেবতা। মানুষ ও দেবতাদের মধ্যে প্রধান সংযােগকারী ছিলেন অগ্নি। এর পরেই হলেন বরুণ। বরুণ হলেন জলের দেবতা। মনে করা হয় বরুণ প্রাকৃতিক পর্যায়গুলাে ধরে রাখেন। মহাজাগতিক আইন নিয়ন্ত্রণ করেন বরুণ। বরুণের নামে ঋগবেদে ৩০টি স্তোত্র রয়েছে।

সােম ছিল গাছের দেবতা। তার নাম অনুসারে উত্তেজক পানীয় সােমরস তৈরি হত। ঋগবেদের নবম মণ্ডলে তার নামে ১২০টি স্তোত্র রয়েছে। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে আর.জি.অশান তার বিখ্যাত বই ‘সােম, ডিভাইন মাশরুম অফ ইমমর্টালিটি’তে লেখেন সােম গাছকে উদ্দেশ্য করে। সােম বাস করত মুঞ্জাভাট পর্বতে। সূর্য ছিল দিন রাতের দেবতা। অন্যান্য দেবদেবীর মধ্যে ছিল ভােরবেলার দেবী ঊষা, প্রার্থনার দেবতা বৃহস্পতি, মৃত্যুর দেবতা যম, বাতাসের দেবতা বায়ু, সৌরলােকের দেবী সাবিত্রী, উৎসর্গ করার দেবী ইলা, উর্বরতার দেবী পুরমধী, আলাের দেবী রাত্রি, জঙ্গলের দেবী অরণ্যানী, শাকসবজির দেবী দিশানা, শাশ্বত দেবী অদিতি, মৃত্যুর দেবী নিতি ইত্যাদি।


পরবর্তী বৈদিক যুগ

পরবর্তী বৈদিক যুগের সূচনা হয় ১০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের মধ্যে। এই যুগে রাজস্থান পূর্ব উত্তরপ্রদেশ, উত্তর বিহার ইত্যাদি অঞ্চলে বিস্তারলাভ করে। শতপথ ব্রাহ্মণ’ থেকে জানা যায় পূর্ব গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে আর্যসভ্যতা বিকাশ লাভ করে। কুরু, পাঞ্চাল ইত্যাদি নবগঠিত আর্য গােষ্ঠীগুলি পরবর্তী বৈদিক যুগে প্রাধান্য পায়। ভরত এবং পুরুর মিলনে কুরু উপজাতির সৃষ্টি হয়। অথর্ব বেদ থেকে জানা যায় যে কুরুর রাজা পরীক্ষিতের সময়। এই জনপদের চরম বিকাশ ঘটে। পরীক্ষিতের পুত্র জনমেজয় অশ্বমেধ যজ্ঞ করেন। এই যুগে ক্রিভিস, অনুষ, দ্রুয়যু বা দ্রুহ, তুবশ ইত্যাদি উপজাতির সংমিশ্রণে গঠিত হয় পাঞ্চাল। কুরু ও পাঞ্চালের পতনের পর কোশল, কাশী ও বিদেহ শক্তিশালী হয়। কোশলই প্রথম বৈদিক সভ্যতাকে প্রভাবিত করে। কোশলের কর্তৃত্ব ছিল ইক্ষাকু বংশের হাতে। এর প্রথম রাজধানী ছিল অযােধ্যা এবং পরবর্তী রাজধানী হল শ্রাবস্তী। এই বংশের বিখ্যাত রাজা ছিলেন পারা। কাশীর ২৩তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথ যিনি মহাবীরের জন্মের ২৫০ বছর পূর্বে মারা যান তার পিতা অশ্বসেন ছিলেন কাশীর রাজা।

বিদেহ-এর রাজধানী ছিল মিথিলা। এটি বর্তমানে তিরাহুত নামে পরিচিত। এখানকার বিখ্যাত রাজা জনক। তার রাজসভায় ছিলেন যাজ্ঞবল্ক। মগধ, অঙ্গ ও বাংলা তখন আর্য সভ্যতার বাইরে ছিল। উত্তরের উপজাতিগুলি হল উত্তরাকুরু, উত্তরামাদ্রাজ, গান্ধারী, কেজিন, কৈকেয় এবং কম্বােজ, দক্ষিণ ভারতে তখন ছিল সাতবাহন, বিদর্ভ নিশাদ ও কুস্তিজ। ঐতরেয় ব্রাহ্মণে উল্লিখিত আছে অন্ধ, পুন্ড্র, শবর, পুলিন্দ ও মুতিবহ উপজাতির।

পরবর্তী বৈদিক যুগে শুধুমাত্র গরু নয়, জমির জন্যও লড়াই হত। ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভব ঘটে। রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং রাজপদ বংশানুক্রম হয়ে পড়ে। রাজাকে নির্বাচিত করা হত না। রাজার ক্ষমতা বাড়ার ফলে রাজার ঐশ্বরিক ক্ষমতার তত্ত্ব জোরালাে হয়। এই যুগে নতুন নতুন কর্মচারীর পদ সৃষ্টি হয়। যেমন রঙ্গিন নামে একশ্রেণীর কর্মচারী রাজাকে রাজকার্যে পরামর্শ দিত, সুত বা রথচালক, সংগ্রহেত্রী বা কোষাধ্যক্ষ, ভাগদূত বা রাজস্ব সংগ্রাহক, অক্ষবাপ বা পাশাখেলার সঙ্গী, ক্ষত্রী ইত্যাদি নতুন পদের সৃষ্টি হয়। শতপথ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে রাজার ক্ষমতা বাড়ায় সমিতির ক্ষমতা কমে যায়। রাজা সভার সম্মতি নিয়ে রাজ্যশাসন করতেন। নরহত্যা, সম্পত্তি অপহরণ, গােধন অপহরণ, সুরাপান, রাজদ্রোহ ইত্যাদি নিন্দনীয় ও দণ্ডযােগ্য ছিল। নারীদের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার ছিল না। রাজা রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুসারে বিচার করতেন। রাজা রাজসূয় যজ্ঞ করতেন নিজের জনপ্রিয়তা ও সার্বভৌমত্ব বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। এই সময় ‘পালগােলা’ নামক কর্মচারী ছিল রাজার ব্যক্তিগত রাষ্ট্রদূত। রাজা রাজসূয় অশ্বমেধ ও বাজপেয় যজ্ঞ করতেন। সভা-সমিতি ও বিধাতা তাদের গুরুত্ব হারিয়ে ফেললে ১২জন সদস্যের রঙ্গিন নামে কর্মচারীর উদ্ভব হয়।

পরবর্তী বৈদিক যুগে মহিলারা সভায় অংশ নিতে পারত না। এইযুগে জাতিভেদ প্রথার উদ্ভব হয় এবং বিভিন্ন শ্রেণী ও বর্ণের মধ্যে বৈষম্য বাড়ে। এইযুগে মহিলারা তাদের স্বামীর আহারের পরে আহার করতেন। ধর্মীয় উৎসবে মহিলারা অংশ নিতে পারত না। বংশানুক্রমিক বৃত্তিকে অবলম্বন করে জাতিভেদপ্রথার উদ্ভব হয়। পণপ্রথার প্রসার ঘটে। এই যুগে নারীদের সম্মান এতই কমে যায় যে তাদের জুয়াখেলা বা সুরাপানের মতাে একই শ্রেণীভুক্ত করা হয়। যদিও এই যুগে গার্গী, মৈত্রী প্রমুখ ব্রহ্মবাদিনী দার্শনিক জ্ঞানবতী নারীদের কথা জানা যায়। ব্রহ্মবাদিনী হল সেইসব নারী যারা সারাজীবন কুমারী থেকে বেদচর্চা করত এবং যারা বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত বেদ বা বিদ্যা চর্চা করত তাদের বলা হয় সদ্যোদ্বাহা। বহুবিবাহ প্রচলিত ছিল উচ্চশ্রেণীর মধ্যে যেমন রাজাদের অনেক রানী থাকত। এইযুগে বাল্যবিবাহ চালু হয়। মহিষী ছিল রাজার প্রধান রানী। প্রিভিক্তি ছিল সবচেয়ে অবহেলিত রানী। পলিগালি হল যে রানী রাজাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিয়ে করত। কিভেন্তি হল যে রানীর কোনাে দাবিদাওয়া ছিল না। এই সময় সুতীর কাপড়ের সঙ্গে রেশমের ব্যবহার শুরু হয়। গমের মতাে চাল একটি প্রধান খাদ্যে পরিণত হয়। এই যুগে বেশিরভাগ লােক গ্রামে বাস করত। এই যুগে জমিতে খুব গভীরভাবে লাঙল দেওয়া হত। কখনাে কখনাে ভারী লােহার লাঙল টানার জন্য একসঙ্গে ২৪টি বলদ লাগত। বলদের উপর নির্ভর না করে মহিষকে কাজে লাগানাে হয়। এজন্য গৃহপালিত পশুর মধ্যে মহিষ স্থান পায়। এইসময় জমিতে সার দেওয়ার প্রথা শুরু হয়। জমির মালিকানা ছিল পরিবারগুলির হাতে। নারী ও শূদ্রদের জমিতে কোনাে অধিকার ছিল না। এইযুগে হাতিকে পােপাষ মানিয়ে যুদ্ধের কাজে লাগানাের চেষ্টা হয়। গাভী হত্যা নিষিদ্ধ ছিল। এই যুগে ব্যাবসা বাণিজ্যের অগ্রগতি ঘটে। শ্রেষ্ঠীন নামে ধনী বৈশ্যদের কথা জানা যায়। কাপড়, ছাগলের চামড়া ও অন্যান্য পােশাকের দ্রব্য বিক্রি হত। পূর্বদিকে বিহার ও নেপাল থেকে পশ্চিমে পাঞ্জাব পর্যন্ত বাণিজ্য চলত। কিরাত নামে এক উপজাতি ছাগলের চামড়া ও মৃগনাভী বিক্রি করত। সমুদ্রপথে মেসােপটেমিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চলত। বণিকরা গিল্ড বা নিগম বা সঙঘ বা গণ গঠন করত। এইযুগে ব্যাপকভাবে লােহার ব্যবহার শুরু হয়। এইযুগে সােনা, রূপা, তামার ঢালাই ও খােদাইয়ের কাজ হত। ধাতুশিল্প ছাড়া কাপড়বােনা, ছুতার মিস্ত্রির কাজ, ঝুড়ি তৈরি, চিকিৎসকের কাজ প্রভৃতি জীবিকার প্রসার ঘটে। এই যুগে নিষ্ক ছাড়া কৃষল’ নামে মুদ্রা ছিল। এর ওজন ১ রতি। শতমানা ছিল এক ধরনের সােনার বাট। ১০০ কিশলে হত শতমান।

পরবর্তী বৈদিক যুগে প্রজাপতি ব্রহ্মা, বিষ্ণু, রুদ্র বিশেষ স্থান লাভ করে। বরুণ, ইন্দ্র, অগ্নি ইত্যাদি দেবতার প্রাধান্য হ্রাস পায়। প্রজাপতি ব্রহ্মাকে সৃষ্টিকর্তা রূপে কল্পনা করা হয়। তাঁকেই সকল কিছুর মূলধার রূপে গণ্য করা হত। এই যুগের দেবতা রুদ্র ক্রমে শিবে পরিণত হয়। এই যুগে দার্শনিক ধর্মচিন্তার উদ্ভব হয়। কর্মফল ও জন্মান্তরবাদের তত্ত্ব এই যুগে গড়ে ওঠে। বৃহদারণ্যক উপনিষদে প্রথম জন্মান্তরবাদের কথা বলা হয়। উপনিষদে আরাে একধাপ এগিয়ে ‘মানবাত্মা হল পরমাত্মার অঙ্গ’ এই তত্ত্ব প্রচারিত হয়। মৃত্যুর পর জীবের আত্মা পরমাত্মায় লীন হয়ে যায়। অধ্যাত্মবাদের পাশাপাশি জড়বাদী দর্শনেরও উদ্ভব উপনিষদে হয়। জড়বাদী তত্ত্ব প্রচার করেন ঋষি উদ্দালক। তিনি ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে প্রকৃতিকে বসিয়েছেন সৃষ্টিকত্রী হিসাবে। এই জড়বাদী তত্ত্ব থেকে শুরু হয় চার্বাকের দেহবাদী দর্শন তত্ত্ব। জীবনকে অস্বীকার করে পরলােকের কথা ভেবে লাভ নেই। এই সত্য তারা উপলব্ধি করেন।


বৈদিক সাহিত্য

বেদ শব্দটি বিদ বা জ্ঞান শব্দ থেকে এসেছে। আর্যদের প্রাচীনতম সাহিত্য হল বেদ। পৃথিবীর প্রাচীনতম সাহিত্য হল ঋগবেদ। বেদ সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়। বেদকে অপৌরুষেয় বা ঈশ্বরের বাণী বলে ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা মনে করে। ঈশ্বরের কাছ থেকে বেদের বাণী শুনে সেই বাণী ঋষিরা মনে রাখত। শুনে শুনে বেদকে মনে রাখা হত বলে এর আরেক নাম শ্রুতি। বংশপরম্পরায় মুখস্থ করে বেদকে স্মরণে রাখা হত। তাই বেদের আরেক নাম স্মৃতি।   বেদের সংখ্যা চার। বেদ ও বেদাঙ্গ নিয়ে বৈদিক সাহিত্য সৃষ্টি হয়। চারটি বেদ হল ঋক্, সাম, যজু এবং অথর্ব। চারটি বেদের মধ্যে ঋগবেদ হল সর্বপ্রাচীন। ম্যাক্সমুলারের মতে ঋগবেদের রচনাকাল ছিল সম্ভবতঃ খ্রি. ১২০০-৫০০। তবে বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে পণ্ডিতরা অনুমান করেন যে ১৫০০-১০০০ খ্রি.পূর মধ্যে ঋগবেদ রচনা করা হয়। সাম, যজু, অথর্ব ঋগবেদের অনেক পরে রচিত হয়।

প্রতিটি বেদ চারটি ভাগে বিভক্ত যথা সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। সংহিতা অংশ পদ্যে রচিত এবং এটা হল প্রধানত স্তোত্র মন্ত্র। সামবেদের স্তোত্রগুলি যজ্ঞের সময় সুর করে গানের মতাে করে গায়া হত এর নাম সামগান। ব্রাহ্মণ অংশগুলি গদ্যে রচিত। এতে যাগযজ্ঞের বিধি প্রকরণ ও মন্ত্রগুলির টীকা দেওয়া আছে। যে সকল লােক যাগযজ্ঞে বিশ্বাস না করে অরণ্য অর্থাৎ বনে বসবাস করত তারা আত্মার মুক্তির উপায় চিন্তা করত, তাদের কথাই আরণ্যকে স্থান পেয়েছে। এজন্য আরণ্যকে উচ্চ দার্শনিক চিন্তা স্থান পেয়েছে। উপনিষদে যজ্ঞ বা পূজা বাদ দিয়ে মানুষের মুক্তির কথা ভাবা হয়েছে। কর্মফল অর্থাৎ কর্ম অনুযায়ী জীবনের সুখ দুঃখ ভােগের তত্ত্ব উপনিষদে পাওয়া যায়। বেদের অন্তে বা শেষে উপনিষদ রচিত হয় বলে এর নাম বেদান্ত। কর্মফলের হাত থেকে মুক্তির জন্য ধ্যান, সন্ন্যাস, পরিশুদ্ধি নীতিবােধের কথা উপনিষদে পাওয়া যায়।

বেদ যাতে ঠিকভাবে পাঠ করা যায় তার শিক্ষার জন্য এবং যাগযজ্ঞের নিয়ম শিক্ষার জন্য বেদাঙ্গ রচিত হয়। বেদাঙ্গকে ‘সূত্র সাহিত্য বলা হয়। এতে ছয়টি সূত্র ও ছয়টি দর্শন আছে। ছয়টি সূত্র হল—(a) শিক্ষা—যার সাহায্যে বিশুদ্ধ উচ্চারণে বেদ পাঠ করা হয়। (b) ছন্দ-যাতে বেদের স্তোত্রগুলির ছন্দ আলােচনা করা হয়েছে। যেমন অনুষ্টুপ ছন্দ। (c) ব্যাকরণ—যার সাহায্যে ভাষাকে শুদ্ধভাবে প্রয়ােগ করা যায়। (d) নিরুক্ত—যাতে বৈদিকভাষা তত্ত্ব জানা যায়। (e) জ্যোতিষ—যাতে গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব জানা যায়। (f) কল্প—যাতে সমাজ পরিচালনার নিয়ম, যাগ-যজ্ঞের প্রণালী প্রভৃতি জানা যায়। কল্পসূত্র, কয়েকটি সূত্র বা অংশে বিভক্ত। যথা—শ্রৌত্র, গৃহ্য, শূন্থ এবং ধর্ম। এর মধ্যে গৃহ্য সূত্রে আছে গৃহীর জীবনযাপনের নিয়ম এবং তার দশকর্ম বিধি। ধর্মসূত্রে আছে সমাজ এবং রাষ্ট্র সম্পর্কে অনুশাসন। এর উপর নির্ভর করে বহু স্মৃতি সাহিত্য গড়ে ওঠে। যেমন—মনুসংহিতা, বৃহস্পতি স্মৃতি, নারদ স্মৃতি, যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি প্রভৃতি।   ষড়দর্শন বা ছয়টি দর্শনকে বেদাঙ্গের অপর অংশ বলে ধরা হয়। এই ছয় দর্শন হল-(a) সাংখ্য (b) যােগ (c) ন্যায় (d) বৈশেষিক (e) পূর্ব মীমাংসা (f) উত্তর মীমাংসা। যে ছয় ঋষি এই ছয় দর্শন তত্ত্বের উদগাতা ছিলেন তাদের নাম হল কপিল (সাংখ্য), পতঞ্জলি (যােগ), গৌতম (ন্যায়), কণাদ (বৈশেষিক), জৈমিনী (পূর্ব মীমাংসা), বেদব্যাস (উত্তর মীমাংসা)।   পাণিনি ব্যাকরণ—খ্রিস্ট পূর্ব চতুর্থ শতকে এই গ্রন্থ রচিত হয়। পাণিনির ভাষা ছিল মার্জিত উন্নত। তার গ্রন্থের নাম হল অষ্টাধ্যায়ী। এই সময় আর্যদের মধ্যে লােকে টাকা সুদে খাটাত। কার্যাপন, নিক্স, মাষ প্রভৃতি মুদ্রার প্রচলন ছিল।   আর্যদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা এই সব সাহিত্য থেকে জানা যায়। এরা গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান অনুসারে বছরকে সৌর নিয়মে ভাগ করতে জানত। তারা ১২ মাসে বছর ভাগ করত এবং প্রতি মাসকে ৩০দিনে ভাগ করত। সুলভ সূত্রে আর্যদের জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। যজ্ঞবেদী তৈরির সময় চতুর্ভুজ ও ত্রিভুজ তৈরির প্রণালী তারা আবিষ্কার করেছিল। চিকিৎসাবিদ্যা ও শারীরবিদ্যা সম্বন্ধে আর্যদের জ্ঞান ছিল।


মহাকাব্যের যুগ: পরবর্তী বৈদিক যুগ থেকে ৬০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ পর্যন্ত সময় কালকে ‘মহাকাব্যের যুগ’ বলা হয়। বৈদিক যুগের পরে আর্য সভ্যতার বিকাশ জানতে হলে আমাদের রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্য এবং সূত্র সাহিত্যগুলির উপর নির্ভর করতে হয়। এজন্য অনেকে এ যুগকে মহাকাব্যের যুগ বলেন। কিংবদন্তী অনুসারে জানা যায় যে ঋষি, বেদব্যাস মহাভারত রচনা করেন এবং বাল্মীকি রামায়ণ রচনা করেন।   সম্প্রতি হস্তিনাপুর খননকার্যের ফলে মহাভারতের দেওয়া তথ্য সম্পর্কে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই প্রমাণের ভিত্তিতে মহাভারতের মূল কাহিনীর কিছু সত্যতা আছে বলে মনে করা হয়। রামায়ণ এবং মহাভারতের মধ্যে মহাভারতকেই প্রাচীনতর মনে করা হয়। কারণ বৈদিক সূত্র সাহিত্যের সঙ্গে মহাভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। ডা. সুনীতি চট্টোপাধ্যায় বলেন “রামায়ণের কাহিনীর কোনাে ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।”

মহাভারতের কিছু কিছু বিষয় প্রক্ষিপ্ত থাকলেও মূল কাহিনী যথা কুরু পাণ্ডবের যুদ্ধের কাহিনী বেশ প্রাচীন ঘটনা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ সম্ভবতঃ ১০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ঘটে ছিল। তবে এই যুদ্ধের কাল গণনা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে।


ঋগবেদ: ঋগবেদে মােট ১০২৮ টি মন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ১০১৭ টিকে বলা হয় সত্তা। এগুলি আদি বা অরিজিনাল। পরবর্তীকালে ১১ টি স্তোত্র যােগ করা হয়। এগুলিকে বলা হয় বালখিল্য। ঋগবেদে ১০ টি বই বা মণ্ডল রয়েছে। দ্বিতীয় থেকে সপ্তম মণ্ডল আগে রচিত হয়। এগুলি ‘ পারিবারিক বই ’ নামে পরিচিত। বিশ্বামিত্র, বামদেব, অত্রি, বশিষ্ট, ভরদ্বাজ, গৃশামদা ঋষি এগুলি রচনা করেন। প্রথম ও দশম মণ্ডল পরবর্তী কালে রচনা করা হয়। দশ রাজার যুদ্ধ আছে সপ্তম মণ্ডলে। নবম মণ্ডল সােমদেবের উদ্দেশ্যে রচিত। তৃতীয় মণ্ডল রচনা করেন বিশ্বামিত্র। বিখ্যাত গায়ত্রী মন্ত্র রচিত হয় সৌর অধিষ্ঠানের দেবী সাবিত্রীর উদ্দেশ্যে। ঐত্রেয় ব্রাহ্মণ যেটি ‘ পঞ্চিকা ’ নামে পরিচিত সেটি ঋগবেদের সঙ্গে যুক্ত। এটি রচনা করেন মহিদাস ঐত্রেয়। কৌশিটিকি ব্রাহ্মণ অথবা সংখ্যায়ন ব্রাহ্মণ ঋগবেদের সঙ্গে যুক্ত।


সামবেদ: সামবেদ কথাটি এসেছে শাসন থেকে। এতে ১৫৪৯ স্তোত্র রয়েছে। সামবেদে মােট স্তোত্রের সংখ্যা ১৮১০ টি। এখানে অনেকগুলাে একাধিকবার বলা হয়েছে। ৭৫ নম্বর অধ্যায় (Stanza) ছাড়া অন্যগুলাে ঋবেদের অষ্টম ও নবম মণ্ডল থেকে নেওয়া। স্তোত্রগুলাে ইন্দ্র, অগ্নি ও সােমের উদ্দেশ্যে রচিত।


যজুর্বেদ: এই বেদকে বলে প্রার্থনার বই। যজুর্বেদ কিছুটা গদ্যে এবং কিছুটা পদ্যে লেখা। এর দুটি অংশ রয়েছে, একটি শুক্লা যজুর্বেদ ও কৃষ্ণ যজুর্বেদ। তৈতেরীয় সংহিতা কৃষ্ণা যজুর্বেদের সঙ্গে যুক্ত। বদশেনীয় সংহিতা যুক্ত শুক্লাযজুর্বেদের সঙ্গে। এছাড়া যজুর্বেদের সঙ্গে কথা উপনিষদ, কপিস্তলকথা, মৈত্রেয়ানী, তৈতেরীয় সংহিতা যুক্ত। 


অথর্ববেদ: এই বেদকে বলে জাদুবিদ্যার বই। এখানে বশীকরণ, তন্ত্রমন্ত্র সাধনা ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র জাদুবিদ্যার নীতি এবং ২৬ টি বিভাগ রয়েছে। এই বেদে ৫৯৭৮ টি মন্ত্র রয়েছে। এই বেদ ৭৩১ টি অথবা ৭৬০ টি স্তোত্র রয়েছে এবং অথর্ববেদ ২০ টি বইতে বিভক্ত। এটি দুটি ভাগ বা খন্ডে বিভক্ত। যথা পৈপালাদা এবং সুনাক। ত্রয়ী – ঋগ, সাম ও যজুর্বেদকে একত্রে বলে ত্রয়ী। অথর্ববেদকে বলে অনার্যদের বেদ। পঞ্চমবেদ বলে মহাভারতকে। ব্রাহ্মণ – ব্রাহ্মণ হল বেদের দ্বিতীয় ভাগ। এতে যাগযজ্ঞের বিধি, প্রকরণ ও মন্ত্রগুলির টীকা দেওয়া আছে। ব্রাহ্মণ অংশগুলি গদ্যে রচিত। গুরুত্বপূর্ণ ব্রাহ্মণগুলি হল ঐত্রিয়, কৌশিটাকী, ট্যান্ডিমাহ, জৈমিনিয়া, তৈতেরীয় শতপথ, গােপথ ব্রাহ্মণ। ঐত্রিয় ও কৌশিটাকী যুক্ত ঋগবেদের সাথে। ট্যান্ডিমাই ও জৈমিনিয়া যুক্ত সামবেদের সাথে। তৈতেরীয় ও শতপথ যুক্ত যজুর্বেদের সাথে। গােপথ ব্রাহ্মণ যুক্ত অথর্ববেদের সাথে। ট্যান্ডিমাহ ব্রাহ্মণ ছিল সবচেয়ে প্রাচীন ব্রাহ্মণ। এর মধ্যে ব্রাত্যস্টম যজ্ঞের উল্লেখ আছে, যার মাধ্যমে অনার্যরা আর্য জাতিতে উন্নীত হত। সর্ববৃহৎ ব্রাহ্মণ হল শতপথ ব্রাহ্মণ।


উপনিষদ: উপনিষদ হল বেদের শেষ অংশ। তাই একে বলে বেদান্ত। কর্মফলের হাত থেকে মুক্তির জন্য ধ্যানসন্ন্যাস, পরিশুদ্ধ নীতিবােধের কথা উপনিষদে পাওয়া যায়। ভারতবর্ষে ১০৮ টি উপনিষদ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১২ টি উপনিষদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ১২ টি হল (a) ঐতেরীয় (b) কৌশিটাকী (c) ছন্দযজ্ঞ (d) কেন (e) তৈত্তেরীয় (f) কথা (g) শ্বেতস্বটারাে (h) বৃহদারণ্যক (i) ঈশ (j) মুন্ডক (k) প্রশ্ন (1) মাভুক। (a) ও (b) ঋবেদের সাথে, (c) ও (d) সামবেদের সাথে, (e) থেকে (i) যজুর্বেদ এবং (j) থেকে (I) যুক্ত অথর্ববেদের সাথে। ভারতের জাতীয় প্রতীকের নীচে লিখিত ‘সত্যমেব জয়তে’ কথাটি এসেছে মুন্ডক উপনিষদ থেকে। বৃহদারণ্যক ও ছন্দ উপনিষদ হল প্রাচীনতম উপনিষদ। ছন্দজ্ঞ উপনিষদে কিছু শিক্ষামূলক গল্প রয়েছে। মহান দার্শনিক উদালি আরুনি শিক্ষা দিয়েছিল তার পুত্র সেতুকেতুচ সত্য এবং ব্যক্তিগত আত্মা সম্পর্কে। পুষণ ছিল বৈদিকযুগের অনার্যদের দেবতা। তিনি হারানাে গরুগুলােকে খুঁজে দিতেন।

যজুর্বেদে ৪০ টি মন্ডল আছে। ২০০০ টি স্তোত্র রয়েছে। ঋগবেদের সাথে আয়ুর্বেদ, সামবেদের সাথে গান্ধর্ব উপবেদ, যজুর্বেদের সাথে ধনুর্বেদ এবং অথর্ববেদের সাথে যুক্ত শিল্পবেদ।

চারজন বিশেষজ্ঞ যজ্ঞের কাজে অংশগ্রহণ করত এবং যজ্ঞ সম্পূর্ণ করার জন্য পুরােহিতকে সাহায্য করত। এই চারজন বিভিন্ন বেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। ঋগবেদে এদের বলা হত হত্রী, সামবেদে উদগাত্রী, যজুর্বেদে অধ্যারু ও অথর্ববেদে ব্রাহ্মণ বলা হত।


গরু সম্পর্কিত কিছু শব্দ: গােমত্ত বলতে বােঝাত গরুর জন্য যুদ্ধ, গত মানে হল গরুর জন্য যুদ্ধ, গােধুলি মানে হল সময় পরিমাপের একক, গােভতি হল দূরত্ব পরিমাপের একক গােচাৰ্মন মানে হল দূরত্ব পরিমাপের একক, গৌরী মানে মহিষ, গােঘ্ন মানে অতিথি। গরুকে বলা হত অগ্ন্য। কিছু পেশা –রথকর (রথচালক), ইসুকার (তীর তৈরীকারী), (রজুসার্চ (দড়ি তৈরীকারী) বিদানকারী (ঝুড়ি তৈরীকারী), রাজিত্রি (চিত্রকর), সুরাকর (মদ্য প্রস্তুতকারী), ধাবর (জেলে), কেয়তগােপাল (গােয়ালা), অভিপাল (রাখাল), অজপাল (ছাগল চরায় যে), অশ্ব (ঘােড়ার দেখাশুনা যে করে), হাতিপ (হাতি রক্ষণাবেক্ষণ)।

দশ রাজার যুদ্ধে জয়ের পর সুদাস আরাে তিনটি উপজাতিকে পরাস্ত করেন। এগুলি হল অজ, সি, এবং যক্ষ। বৈদিক যুগের পদাতিক সৈন্যদের বলা হত পতি। এই যুগে দুই প্রকারের শাস্তি ছিল। যথা ভার্দয় এবং শাতদয়।


বৈদিক সভ্যতার সংক্ষিপ্ত নোট - Short Notes on Vedic Civilization


ঋক-বৈদিক যুগ


  • হরপ্পা সভ্যতার ধ্বংসের পর ভারতে যে সভ্যতার উন্মেষ হয় তার নাম বৈদিক সভ্যতা।
  • বেদকে ভিত্তি করে এই সভ্যতা গড়ে ওঠে বলে এর নাম বৈদিক সভ্যতা।
  • এই সভ্যতার স্রষ্টা ছিল আর্য। খাঁটি সংস্কৃত শব্দে আর্য কথার অর্থ হলো সৎবংশজাত বা অভিজাত মানুষ। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা র মধ্যে সংস্কৃত,ল্যাটিন, গথিক,কেলটিক,পারসিক প্রভৃতির মধ্যে যারা একটি ভাষায় কথা বলতেন তারাই হলো আর্য।
  • আর্য দের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল সে সম্পর্কে পন্ডিতরা একমত নন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক ভারত কে,কোনো কোনো ঐতিহাসিক ইউরোপ কে,তো কোনো কোনো ঐতিহাসিক আবার মধ্য এশিয়া কে আর্য দের আদি বাসস্থান বলে বর্ণনা করেন। তবে বিশিষ্ট প্রাচ্য বিদ্যা- বিশারদ ব্রান্ডেনস্টাইন প্রাচীন আর্য ভাষাতত্ত্ব ও শব্দার্থ বিদ্যার উপর গবেষনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে উরাল পর্বতের দক্ষ্মিণে অবস্থিত কিরঘিজ তৃণভূমি ছিল আর্য দের আদি বাসভূমি।
  • খাদ্যাভাব, স্থানাভাব, গৃহবিবাদ প্রভৃতি নানা কারণে আর্য রা তাদের আদি বাসভূমি ত্যাগ করে এশিয়া ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের একটি শাখা ভারতে প্রবেশ করে। তবে কবে তারা ভারতে প্রবেশ করলো তা নির্ণয় করা খুবই দুরূহ কারণ এই বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য আবিস্কৃত হয়নি।
  • ঋগ্বেদ হল আর্য দের প্রাচীনতম গ্রন্থ। ঋগ্বেদের রচনা কাল জানলে আর্য দের আগমনের সময় সম্পর্কে একটি ধারণা করা যাবে। প্রথমে ঋগ্বেদের স্তোত্রগুলি রচিত হলেও তা লিপিবদ্ধ করা হত় না— কানে শুনে বা শ্রুতির মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় তা চলে আসত।
  • দীর্ঘদিন নিজ ভূমিতে বসবাসের পর আর্যরা বহির্দেশ গমন করে। তাদের সমষ্টিগত দেশ ত্যাগের কোনও সুস্পষ্ট কারণ জানা যায় না। তবে মনে করা হয় যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খাদ্যাভাব,ভূমির অভাব,জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জমির শুস্কতা বৃদ্ধি, গৃহবিবাদ প্রভৃতি কারণেই তারা দেশে ত্যাগে বাধ্য হয়।
  • W. Durant বলেন যে, তারা জাতীয় সম্মানের জন্য যুদ্ধ করত না, গবাদি পশু সংগ্রহে র জন্যই যুদ্ধ করত।
  • তাদের একটি অংশ অগ্রসর হয় পশ্চিম ইউরোপের দিকে, অপর অংশটি অগ্রসর হয় পূর্বদিকে। যে অংশ টি পূর্বদিকে অগ্রসর হয়, তারা প্রথমে পারস্যে বসতি স্থাপন করে। তারপর পারস্য থেকে তাদের একটি অংশ চলে যায় ভারতে।
  • ভারতে প্রবেশকালে আর্য রা কয়েকটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল। এই গোষ্ঠী গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সৃঞ্জয়, অনু, পুরু, ভরত, যদু, দ্রুহু, তুর্বস।
  • গরু চুরি, জমি দখল ও নদীর জলের উপর কর্তৃত্ব নিয়ে সর্বদাই তাদের মধ্যে বিরোধ চলতো। এছাড়া স্থানীয় দ্রাবিড়- ভাষী অনার্য দের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ জয় করেও তাদের এই অঞ্চলে বসতি বিস্তার করতে হয়। এই সময় ভরত গোষ্ঠী খুব উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে।
  • ঋকবেদে দশ রাজার যুদ্ধের কথা উল্লেখ আছে। আর্যদের দশটি গোষ্ঠী ভরত গোষ্ঠীর রাজা সুদাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।
  • এই যুদ্ধে জয়যুক্ত হয়ে রাজা সুদাস ভরত গোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ গৌরবের ভিত্তি স্থাপন করেন। বলা হয় ভরত গোষ্ঠীর নাম থেকেই আমাদের দেশের নাম হয় ভারতবর্ষ।
  • পন্ডিতরা বৈদিক যুগকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন, ঋক বৈদিক যুগ এবং পরবর্তী বৈদিক যুগ। ঋক বৈদিক যুগের সময়কাল ধরা হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব।
  • ঋক বৈদিক যুগের প্রধান উপাদান হলো ঋকবেদ।
  • ঋকবৈদিক যুগে পরিবার ছিল সমাজের সর্বনিম্ন স্তর। এই পরিবার ই ছিল রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি। কয়েকটি পরিবার নিয়ে গঠিত হতো clan বা গোষ্ঠী। কয়েকটি clan নিয়ে গঠিত হত ট্রাইৰ বা উপজাতি। ঋকবৈদিক যুগে এই ট্রাইৰ বা উপজাতি ই হলো সর্বোচ্চ রাজনৈতিক স্তর বা রাষ্ট্র।
  • অন্য ভাবে বলা যায় যে,এই যুগে আর্যদের রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিল উপজাতিকেন্দ্রিক।
  • এই যুগে আর্য ও অনার্যদের মধ্যে যেমন সংঘর্ষ চলতো তেমনি ভূমি ও গোসম্পদের দখল নিয়েও বিভিন্ন আর্য গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অবিরাম সংঘর্ষ চলত। এককথায় সামগ্রিক পরিস্থিতি ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ।
  • তাই এই অবস্থার অবসান ঘটানো বা যুদ্ধজয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন যোগ্যতাসম্পন্ন ও শক্তিশালী নেতার প্রয়োজন দেখা দেয়। এইভাবেই সমাজে রাজতন্ত্রের উৎপত্তি ঘটে।
  • ঋকবেদে কিছু শাসনতান্ত্রিক বিভাগের উল্লেখ আছে যথা গ্রাম, বিশ, জন।
  • পরিবার ছিল এই যুগের রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি এবং সর্বনিম্ন রাজনৈতিক স্তর। পরিবারকে বলা হতো কুল এবং এই কুলের প্রধান বা পরিবারের প্রাচীনতম পুরুষটিকে বলা হতো কুলপ।
  • কয়েকটি পরিবার নিয়ে গঠিত হতো গ্রাম এবং গ্রামের প্রধান কে বলা হতো গ্রামনী। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হতো বিশ এবং তার প্রধান কে বলা হতো বিশপতি। জন এর প্রধান কে বলা হতো গোপ।
  • জন ও বিশ এর মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করা দুরূহ—- তবে মনে করা হয় যে,জন হলো বিশ এর চেয়ে বড় শাসনতান্ত্রিক স্তর এবং তা একটি রাষ্ট্রের সমকক্ষ।
  • রাজতন্ত্রই ছিল সাধারণভাবে প্রচলিত শাসন- ব্যবস্থা এবং রাজাকে বলা হতো রাজন।
  • রাজতন্ত্র সাধারণত বংশানুক্রমিক ছিল,তবে প্রয়োজনে জনসাধারণ বা বিশ রাজা মনোনয়ন করতে পারতো। রাজতন্ত্র এর পাশাপাশি কিছু আরাজতন্ত্রী রাজ্যও ছিল।
  • ঋকবেদে গণ বা প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উল্লেখ আছে।এর শাসকদের গণপতি বা জ্যেষ্ঠ বলা হত। আবার কোনো কোনো গোষ্ঠীর মুষ্টিমেয় নেতা যৌথভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন এবং তারা জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হতেন।এগুলিকে অভিজাততন্ত্র বা মুষ্টিমেয়তন্ত্র বলা হত।
  • ঋগবেদে রাজা সর্বশক্তিমান হলেও কখনোই স্বৈরাচারী ছিলেন না।তাকে সব বিষয়েই সভা ও সমিতি নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মত নিয়ে চলতে হতো।
  • রাজাকে শাসনকার্য সহায়তা করতেন পুরোহিত, সেনানী, ব্রজপতি, গ্রমনী,গুপ্তচর, দূত প্রভৃতি কর্মচারীরা। মেয়েদের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা ও উল্লেখ আছে।
  • এই যুগে কোনো নিয়মিত কর ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
  • তবে বিচারব্যবস্থা ছিল খুব কঠোর।রক্তপাত জনিত অপরাধের শাস্তি ছিল শতদায় বা একশত গরু।


পরবর্তী বৈদিক যুগ


  • ঋক-বৈদিক যুগের পর থেকে বুদ্ধদেবের আগমনের পূর্ববর্তী যুগ পর্যন্ত সময়কে পরবর্তী বৈদিক যুগ বলা হয়।
  • ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের স্থলে এই যুগে বৃহৎ বৃহৎ রাজ্যের উৎপত্তি পরিলক্ষিত হয়। রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শাসনকার্য এ জটিলতা বৃদ্ধি পায়।
  • এই সময় বলি ও শুল্ক নামে দুই ধরনের রাজস্ব ও আদায় করা হতো। ব্রাহ্মণ বা রাজপরিবারের সদস্যদের কোনও রাজস্ব দিতে হতো না। জনসাধারণ ই তা বহন করত।
  • খ্রিস্ট -পূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতে কোনো কেন্দ্রীয় রাজশক্তি ছিল না এবং এই যুগে কোনো অখণ্ড সর্ব ভারতীয় রাজ্যও গড়ে ওঠে নি।



বৈদিক সভ্যতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর - Short Question-Answer on Vedic Civilization



Q. আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কী ?

উঃ আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম বেদ।

Q. নর্ডিক কাদের বলা হয় ?

উঃ আর্যদের নর্ডিক বলা হয়।

Q. আর্যদের বিনিময়প্রথার মাধ্যম কী ছিল?

উঃ আর্যদের বিনিময়প্রথার মাধ্যম ছিল গােরু।

Q. ব্রহ্মবাদিনী কাদের বলা হয় ?

উঃ যে সমস্ত নারী ধর্মচর্চা করে জীবন অতিবাহিত করেন তাদের ব্রক্ষ্মবাদিনী বলা হয়।

Q. ‘বেদ’কে অপৌরুষেয় বলা হয় কেন ?

উঃ আর্যদের বিশ্বাস ছিল যে বেদ কোনাে মানুষের দ্বারা সৃষ্টি হয়নি। বলা হয়ে থাকে যে, বেদ ঈশ্বরের মুখনিঃসৃত বাণী, সেইজন্য বেদকে অপৌরুষেয় বলা হয়।

Q. আর্যরা ভারতে কোথায় প্রথমে বসতি স্থাপন করে ?

উঃ আর্যরা ভারতে সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে প্রথমে বসতি স্থাপন করে।

Q. কোন অঞ্চলকে ‘সপ্তসিন্ধু’ অঞল বলা হত ?

উঃ আফগানিস্তান থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলকে সপ্তসিন্ধু (ঝিলম, বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রু ও সিন্ধু) অঞ্চল বলা হত।

Q. বৈদিক সভ্যতা কী ?

উঃ বেদকে ভিত্তি করে যে সভ্যতা গড়ে ওঠে তাই বৈদিক সভ্যতা।

Q. বৈদিক সভ্যতার স্রষ্টা কারা?

উঃ বৈদিক সভ্যতার স্রষ্টা আর্যরা।

Q. ‘আর্য’ কথাটির অর্থ কী?

উঃ খাঁটি সংস্কৃত ভাষায় ‘আর্য’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল সদবংশজাত বা অভিজাত মানুষ। আর্য বলতে অনেকে একটি জাতি বােঝেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আর্য কোনাে জাতি নয়। এটি হল একটি ভাষাগত ধারণা।

Q. কারা ভারতবর্ষে লৌহযুগের সূচনা করেন?

উঃ আর্যরা ভারতবর্ষে লৌহযুগের সূচনা করেন।

Q. ভারতের প্রাচীন নাম কী ?

উঃ ভারতের প্রাচীন নাম জম্বুদ্বীপ।

Q. চারটি বেদের নাম কী ?

উঃ চারটি বেদের নাম ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব।

Q. ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্য কোনটি ?

উঃ ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্য হল ঋগ্বেদ।

Q. ‘বেদ’ কথাটির উৎপত্তি কীভাবে হয় ?

উঃ ‘বেদ’ কথাটির উৎপত্তি ‘বিদ’ শব্দ থেকে। এর অর্থ ‘জ্ঞান।

Q. প্রত্যেক বেদের কটি অংশ ও কী কী ?

উঃ প্রত্যেক বেদের চারটি অংশ, যথা—সংহিতা, ব্রাহ্ণ, আরণ্যক ও উপনিষদ বা বেদান্ত।

Q. বেদের শেষ অংশের নাম কী ?

উঃ বেদের শেষ অংশের নাম ‘উপনিষদ’ বা ‘বেদান্ত’।

Q. আর্যদের আদি বাসভূমি কোথায়?

উঃ আর্যদের আদি বাসভূমি সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। তার মধ্যে ম্যাক্সমুলার প্রমুখ পণ্ডিতগণের মতে আর্যদের আদি বাসস্থান হল মধ্য এশিয়া।

Q. বৈদিক সমাজে গ্রামের প্রধানকে কী বলা হত ?

উঃ বৈদিক যুগে গ্রামের প্রধানকে ‘গ্রামণী’ বলা হত।

Q. বৈদিক যুগে ‘অক্ষবাপ’ কাকে বলা হত ?

উঃ বৈদিক যুগে ন্যূতক্রীড়ার প্রধানকে ‘অক্ষবাপ’ বলা হত।

Q. বৈদিক যুগে প্রচলিত স্বর্ণমুদ্রা দুটির নাম কী ?

উঃ বৈদিক যুগে প্রচলিত দুটি স্বর্ণমুদ্রা হল ‘নিষ্ক’ এবং ‘মনা’।

Q. আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থ কোনটি ?

উঃ ঋগবেদ আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থ।

Q. আর্যদের ‘চতুরাশ্রমের’ প্রথম আশ্রমের নাম কী ?

উঃ আর্যদের চতুরাশ্রমের প্রথম আশ্রমের নাম ব্ৰত্মচর্য।

Q. বেদকে শ্রুতি বলা হয় কেন?

উঃ ‘বেদ’ আর্য ঋষিদের বাণী এবং কানে শােনা এইসব বেদের বাণী মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে বলে বেদকে শ্রুতি বলা হয়।

Q. মৈত্রেয়ী কে ছিলেন ?

উঃ মৈত্রেয়ী ছিলেন বৈদিক যুগের একজন বিদুষী নারী।

Q. সূত্র সাহিত্যের ছয়টি সূত্র কী?

উঃ সূত্র সাহিত্যের ছয়টি সূত্র হল—(ক) শিক্ষা, (খ) ছন্দ, (গ) ব্যাকরণ, (ঘ) নিরুক্ত, (ঙ) জ্যোতিষ ও (চ) কল্প।

Q. ষড়দর্শনের নাম কী ?

উঃ ষড়দর্শন হল – (ক) সাংখ্য, (খ) যােগ, (গ) ন্যায়, (ঘ) বৈশেষিক, (ঙ) পূর্ব মীমাংসা, (চ) উত্তর মীমাংসা।

Q. আর্য সভ্যতাকে লৌহযুগের সভ্যতা বলা হয় কেন ?

উঃ আর্য সভ্যতায় সর্বপ্রথম লােহার ব্যবহার শুরু হয়, সেজন্য আর্য সভ্যতাকে লৌহযুগের সভ্যতা বলা হয়।

Q. ‘কুসীদ’ ও ‘কুসীদিন’ কী ?

উঃ কুসীদ বলতে ঋণ ও কুসীদিন বলতে ঋণদাতাকে বােঝায়।

Q. ঋগবৈদিক যুগে সমাজ ও অর্থনীতির ভিত্তি কী ছিল ?

উঃ ঋগবৈদিক যুগে সমাজ ও অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষি ও পশুপালন।


Download বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF


File Details:-

File Name:- বৈদিক সভ্যতা প্রশ্নোত্তর [www.gksolves.com]
File Format:-PDF
Quality:- High
File Size:-  5 Mb
File Location:- Google Drive

Click Here to Download


আরও পড়ুন:




Others Important Link

Syllabus Link: Click Here

Questions Paper Link: Click Here

Admit Card Link: Click Here

Result Link: Click Here

Latest Job: Click Here

Age Calculator: Click Here


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.