সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF: প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF.
নিচে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF টি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে এই পোস্টটির নীচে যান এবং ডাউনলোড করুন।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations | উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF
Dear Students, Gksolves.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF. প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি চাকরির যেমন Railway Group D | PSC Clerkship | WBCS | SSC CHSL | SSC CGL | SSC MTS | WBP Abgari Constable | WBP SI | WBP Constable | ICDS Supervisor | Railway Group D | RRB NTPC | PSC Miscellaneous | TET | Upper Primary | Group D ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই সমস্ত চাকরির পরীক্ষা ছাড়াও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সম্বন্ধে আপনার সাধারণ ধারণা থাকা দরকার, তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF যা আপনাদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ধারণা গঠন করতে বিশেষ সাহায্য করবে।
Google News এ আমাদের ফলো করুন
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations | উচ্চমাধ্যমিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. জাতিসংঘ কত খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল ?
উত্তর: জাতিসংঘ গঠিত হয়েছিল ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি।
2. U.N.O.-এর পুরাে নাম কী ?
উত্তর: U.N.O.-এর পুরাে নাম United Nations Organisation.
3. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘােষণা কখন প্রকাশিত হয় ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘােষণা’ প্রকাশিত হয় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি।
4. ‘ইয়াল্টা সম্মেলন’ কখন অনুষ্ঠিত হয় ?
উত্তর: ‘ইয়াল্টা সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে।
5. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে কয়টি প্রস্তাবনা, অধ্যায় ও ধারা আছে ?
উত্তর: একটি প্রস্তাবনা, ১৯টি অধ্যায় ও ১১১টি
ধারা আছে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে।
6. সাধারণ সভার প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের কয়টি ভোটাধিকার থাকে ?
উত্তর: সাধারণ সভার প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের ভোটাধিকার থাকে ১টি।
7. সাধারণ সভাকে ‘বিশ্ব নাগরিক সভা’ (Town meeting of the world) বলে এভিহিত করেছেন কে ?
উত্তর: সাধারণ সভাকে ‘বিশ্ব নাগরিক সভা’ বলে অভিহিত করেছেন অধ্যাপক গেটেল।
8. সাধারণ সভাকে ‘গল্পগুজবের আসর’ বলে মন্তব্য করেছেন কে ?
উত্তর: সাধারণ সভাকে ‘গল্পগুজবের আসর’ বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক নিকোলাস।
9. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কোন সংস্থাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদ (Security Council) হল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা।
10. নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১১থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ করা হয় কত খ্রিস্টাব্দে ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের সদস্য সংখ্যা ১১ থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ করা হয় ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে।
11. নিরাপত্তাপরিষদের অস্থায়ী সদস্যরা (১০ জন) নির্বাচিত হন কার দ্বারা ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের অস্থায়ী সদস্যরা সাধারণ সভার দ্বারা নির্বাচিত হন।
12. ‘ভেটো’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘ভেটো’ শব্দের অর্থ হল কর্তৃত্ব বলে ‘অসম্মতি বা নিষেধাজ্ঞা’।
13. জাতিপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে কত ?
উত্তর: বর্তমানে জাতিপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৫৪।
14. অছিপরিষদের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে কত ?
উত্তর: অছিপরিষদের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৫।
15. আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে প্রতি তিন বছর অন্তর নতুন করে কত জন বিচারপতি নির্বাচিত হন?
উত্তর: আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে প্রতি তিন বছর অন্তর নতুন করে ৫ জন করে বিচারপতি নির্বাচিত হন।
16. জাতিপুঞ্জের মহাসচিবের কার্যকাল কত বছর ?
উত্তর: জাতিপুঞ্জের মহাসচিবের কার্যকাল ৫ বছর।
17. “জাতিপুঞ্জের কাজই হচ্ছে শান্তি, বিশেষ করে বিশ্বশান্তির খোঁজ করা”-কার উক্তি ?
উত্তর: ডি সি. গোয়েল বলেছেন, “জাতিপুঞ্জের কাজই হচ্ছে শান্তি, বিশেষ করে বিশ্বশান্তির খোঁজ করা”।
18. কোন্ কোন্ দেশ ‘Big Five’ নামে পরিচিত ?
উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েত ইউনিয়ন, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও গণপ্রজাতন্ত্রী চিন এই পাঁচটি দেশ ‘Big Five’ বা বৃহৎ শক্তি নামে পরিচিত।
19. জাতিসংঘ সৃষ্টি হয় কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ?
উত্তর: জাতিসংঘ সৃষ্টি হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকেই।
20. কারা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ সৃষ্টির উদ্যোক্তা ছিলেন ?
উত্তর: মিত্র শক্তিবর্গ ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্স ছিল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ সৃষ্টির উদ্যোক্তা।
21. ‘আটলান্টিক সনদ’ কখন ঘােষিত হয়েছিল ?
উত্তর: ‘আটলান্টিক সনদ‘ ঘােষিত হয়েছিল ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট।
22. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ১নং ধারায় কী বলা হয়েছে ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ১নং ধারায় বলা হয়েছে—“পৃথিবীকে যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে জাতিপুঞ্জ সংকল্পবদ্ধ।
23. সাধারণ সভা প্রত্যেক অধিবেশনের জন্য কতজন সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন করে ?
উত্তর: সাধারণ সভা প্রত্যেক অধিবেশনের জন্য ১ জন সভাপতি ও ২১ জন সহ-সভাপতি নির্বাচন করে।
24. “The general Assembly wields power Primarily as voice of the conscience of the world”- কে অভিমত দিয়েছেন জাতিপুঞ্জ সম্পর্কে ?
উত্তর: “The general Assembly wields power Primarily as voice of the conscience of the world”, আইনবিদ অস্টিন এই অভিমত দিয়েছেন জাতিপুঞ্জ সম্পর্কে।
25. কে বলেছেন, “সাধারণ সভা প্রধানত বিশ্ববিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে” ?
উত্তর: আইনবিদ অস্টিন বলেছেন, “সাধারণ সভা প্রধানত বিশ্ববিবেকের কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করে”।
26. নিরাপত্তাপরিষদের মােট সদস্য সংখ্যা বর্তমানে কত ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের মােট সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১৫।
27. ‘ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস’ (International relations) গ্রন্থের প্রণেতা কে ?
উত্তর: পামার ও পারকিনস হলেন ‘ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস’ গ্রন্থের প্রণেতা।
28. কত বছরের জন্য নিরাপত্তাপরিষদের অস্থায়ী সদস্যরা নির্বাচিত হন ?
উত্তর: দুই বছরের জন্য নিরাপত্তাপরিষদের অস্থায়ী সদস্যরা নির্বাচিত হন।
29. কারা নিরাপত্তাপরিষদে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী ?
উত্তর: কেবলমাত্র স্থায়ী সদস্যরা নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারে।
30. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন করে কে ?
উত্তর: সাধারণ সভা অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্যদের নির্বাচন করে।
31. ‘সংবিধি’ কী ?
উত্তর: ‘সংবিধি’ হল আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের সংবিধানের নাম।
32. আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে প্রতিটি রাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ কত জন বিচারপতি নির্বাচিত হতে পারেন ?
উত্তর: আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে প্রতিটি রাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ ১জন করে বিচারপতি নির্বাচিত হতে পারেন।
33. জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি’ (Peaceful Co-existence) কত খ্রিস্টাব্দে ঘােষণা করেন ?
উত্তর: জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি’ ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ঘােষণা করেন।
34. নিরাপত্তাপরিষদের সভাপতির কার্যকাল কত ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের সভাপতির কার্যকাল ১মাস।
35. W.H.O.-এর পুরাে নাম কী ?
উত্তর: W.H.O.-এর পুরাে নাম হল World Health Organisation (বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা)।
36. এমন একটি বিশ্ব সংস্থার নাম করাে যেটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠে ?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা বিশ্ব সংস্থাটির নাম হল জাতিসংঘ (League of Nations)।
37. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কত খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর।
38. ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘােষণা’ আর কী নামে পরিচিত হয় ?
উত্তর: ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘােষণা’ (১জানুয়ারি ১৯৪২) ‘ওয়াশিংটন ঘােষণা’ নামে পরিচিত।
39. ‘সম্মিলিত’ জাতিপুঞ্জ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন কে ?
উত্তর: মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।
40. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্র বর্তমানে কয়টি ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্র বর্তমানে ১৯১টি।
41. ‘Politics Among Nations’ গ্রন্থটির লেখক কে ?
উত্তর: ‘Politics Among Nations’ গ্রন্থটির লেখক মরগেনথাউ।
42. নিরাপত্তাপরিষদের বর্তমানে অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা কত ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১০।
43. গণপ্রজাতন্ত্রী চিন কত খ্রিস্টাব্দে নিরাপত্তা-পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে ?
উত্তর: গণপ্রজাতন্ত্রী চিন ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে নিরাপত্তা-পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে।
44. জাতিপুঞ্জের কোন সংস্থার অধীনে ‘সামরিক পরিষদ’ কাজ করে ?
উত্তর: জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তাপরিষদ’-এর অধীনে ‘সামরিক পরিষদ’ কাজ করে।
45. ‘ভেটো’ (Veto) কী ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের কার্যবিধির অন্তর্ভুক্ত যেকোনাে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের দ্বারা বিরােধিতা করার অধিকারকে বলা হয় ‘ভেটো’।
46. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে স্বাভাবিক অবস্থায় বছরে কতবার অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ?
উত্তর: স্বাভাবিক অবস্থায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের অধিবেশন বছরে দু-বার অনুষ্ঠিত হয়।
47. আন্তর্জাতিক বিচারালয় কতজন বিচারপতি নিয়ে গঠিত ?
উত্তর: আন্তর্জাতিক বিচারালয় ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হয়।
48. জাতিপুঞ্জের বা রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য প্রশাসনিক আধিকারিক কে?
উত্তর: মহাসচিব বা প্রধান কর্মসচিব হলেন রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য প্রশাসনিক আধিকারিক।
49. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় কবে ?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর।
50. প্রতিষ্ঠা লগ্নে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর: প্রতিষ্ঠা লগ্নে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫১।
51. ‘মস্কো ঘােষণা’ প্রকাশিত হয়েছিল কবে?
উত্তর: ‘মস্কো ঘােষণা’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর।
52. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কয়টি মূল অঙ্গ বা বিভাগ আছে ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ৬টি মূল অঙ্গ বা বিভাগ আছে।
53. কোন বিষয়ে সাধারণ সভা আলােচনা করতে পারে না ?
উত্তর: কোনাে রাষ্ট্রের ‘ঘরােয়া ব্যাপার’ নিয়ে সাধারণ সভা আলােচনা করতে পারে না।
54. কত খ্রিস্টাব্দে সাধারণ সভা সার্বজনীন ‘মানবাধিকারের ঘােষণাপত্র’ পাস করেছে?
উত্তর: সাধারণ সভা সার্বজনীন ‘মানবাধিকারের ঘােষণাপত্র’ পাস করেছে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে।
55. নিরাপত্তাপরিষদে স্থায়ী সদস্য সংখ্যা বর্তমানে কত ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদে স্থায়ী সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৫।
56. শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধ মীমাংসা করাতে ব্যর্থ হলে নিরাপত্তাপরিষদ শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দুটি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, সেগুলি কী কী ?
উত্তর: শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধ মীমাংসা করাতে ব্যর্থ হলে নিরাপত্তা পরিষদ শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘নিবর্তনমূলক’ ও ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
57. প্রথম অবস্থায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্য সংখ্যা কত ছিল ?
উত্তর: প্রথম অবস্থায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ১৮।
58. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিচার বিভাগটির নাম কী ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিচার বিভাগের নাম হল আন্তর্জাতিক বিচারালয়। (International Court of Justice, সক্ষেপে I.C.J.)।
59. কোন সংস্থার হাতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কার্যপরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত ?
উত্তর: সচিবালয় বা কর্মদপ্তরের হাতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কার্য পরিচালনার দায়িত্ব অর্পিত।
60. “এই ভেটো ব্যবস্থা নিরাপত্তাপরিষদের অচলাবস্থা ও ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হলেও বিশ্বকে এখনও সংকটের মুখে ঠেলে দেয়নি” -কার উক্তি ?
উত্তর: গুড স্পীড (Good Speed) বলেছেন, “এই ভেটো ব্যবস্থা নিরাপত্তাপরিষদের অচলাবস্থা ও ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হলেও বিশ্বকে এখনও সংকটের মুখে ঠেলে দেয়নি” ।
61. জাতিসংঘ গঠিত হওয়ার উদ্দেশ্য কী ছিল ?
উত্তর: বিশ্বকে যুদ্ধের গ্রাস থেকে চিরতরে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল জাতিসংঘ।
62. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সৃষ্টিপর্বে কয়টি সম্মেলন ও ঘােষণা হয়েছিল ?
উত্তর: ছােটো বড়াে ৭টি সম্মেলন ও ঘােষণা হয়েছিল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সৃষ্টিপর্বে।
63. ‘তেহেরান ঘােষণা’ কখন প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ‘তেহেরান ঘােষণা’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বর।
৬৪। জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে কত ?
উত্তর: জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১৯১।
৬৫। সাধারণ সভা ‘শান্তির জন্য সম্মিলিত হচ্ছি প্রস্তাব’ কত খ্রিস্টাব্দে গ্রহণ করে?
উত্তর: সাধারণ সভা শান্তির জন্য সম্মিলিত হচ্ছি প্রস্তাব’ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ৩ নভেম্বর গ্রহণ করে।
৬৬। জাতিপুঞ্জের কোন সংস্থাকে কূটনৈতিক বিশ্বের আয়না’ বলে অভিহিত করা হয় ?
উত্তর: জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভাকে কূটনৈতিক বিশ্বের আয়না বলে অভিহিত করা হয়।
৬৭। নিরাপত্তাপরিষদে বর্তমানে স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র কোনগুলি?
উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, চিন, গ্রেট ব্রিটেন ও রাশিয়া হল বর্তমানে নিরাপত্তাপরিষদে স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র।
৬৮। রাশিয়া নিরাপত্তাপরিষদে স্থায়ী সদস্য পদ লাভ করে কবে?
উত্তর: রাশিয়া নিরাপত্তাপরিষদে স্থায়ী সদস্য পদ লাভ করে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে।
৬৯। কোন সংস্থার হাতে অছি এলাকার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের হাতে অছি এলাকার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে।
৭০। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে বিচারপতিদের কার্যকাল কত বছর?
উত্তর: আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে বিচারপতিদের কার্যকাল ৯ বছর।
৭১। কোথায় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদর দপ্তর অবস্থিত ?
উত্তর: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদর দপ্তর।
৭২। জাতিসংঘের অবলুপ্তি হয় কখন?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে (১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে) জাতিসংঘের অবলুপ্তি হয়।
৭৩। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সংবিধানকে কী বলা হয় ?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সংবিধানকে সনদ (Charter) বলা হয়।
৭৪। সাধারণ সভায় প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র অনধিক কতজন প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে ?
উত্তর: প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র অনধিক ৫ জন প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারে সাধারণ সভায়।
৭৫। “সাধারণ সভা আলােচনা বা সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম’ কার উক্তি ?
উত্তর: ইভান লুয়ার্ড বলেছেন, “সাধারণ সভা আলােচনা বা সুপারিশ করতে পারে, কিন্তু খুব কম ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম”।
৭৬। নিরাপত্তাপরিষদের মােট সদস্য সংখ্যা প্রথম অবস্থায় কত ছিল?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের মােট সদস্য সংখ্যা প্রথম অবস্থায় ছিল ১১।
৭৭। “জাতিপুঞ্জের অন্য সকল সংস্থা থেকে নিরাপত্তাপরিষদই প্রতিশ্রুতি ও কৃতকার্যের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি পার্থক্য সৃষ্টি করেছে।” উক্তিটি কার?
উত্তর: অধ্যাপক নিকোলাস বলেছেন, “জাতিপুঞ্জের অন্য সকল সংস্থা থেকে নিরাপত্তাপরিষদই প্রতিশ্রুতি ও কৃতকার্যের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি পার্থক্য সৃষ্টি করেছে।
৭৮। অছিপরিষদের প্রচেষ্টায় স্বাধীনতা লাভ করেছে এমন কয়েকটি রাষ্ট্রের নাম লেখাে।
উত্তর: টোগােল্যান্ড, সােমালিল্যান্ড, টাঙ্গানিকা, নামিবিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র অছিপরিষদের প্রচেষ্টায় স্বাধীনতা লাভ করেছে।
৭৯। জাতিপুঞ্জের বর্তমান প্রধান কর্মসচিব কে ?
উত্তর: বান কি মুন হলেন জাতিপুঞ্জের বর্তমান প্রধান কর্মসচিব।
৮০। I.L.0.-এর পুরাে নাম কী ?
উত্তর: I.L.O.-এর পুরাে নাম হল International Labour Organisation-আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘ।
৮১। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা বিশ্বসংস্থাটির নাম কী ?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা বিশ্বসংস্থাটির নাম সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nations Organisation)।
৮২। লন্ডন ঘােষণা অনুষ্ঠিত হয়েছিল কত খ্রিস্টাব্দে ?
উত্তর: ‘লন্ডন ঘােষণা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুন।
৮৩। কোন প্রস্তাবের বলে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রশ্নে সাধারণ সভা নিরাপত্তা পরিষদের এক্তিয়ারে প্রবেশ করেছে?
উত্তর ‘শান্তির জন্য সম্মিলিত হচ্ছি প্রস্তাব’-এর বলে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রশ্নে সাধারণ সভা নিরাপত্তাপরিষদের এক্তিয়ারে প্রবেশ করেছে।
৮৪। “সম্মিলিত জাতি পুঞ্জ হল একটি আন্তর্জাতিক সরকার এবং নিরাপত্তা। পরিষদ হল এর প্রধান অঙ্গ”—কার উক্তি ?
উত্তর: মরগেনথাউ ‘Politics Among Nations’ গ্রন্থে বলেছেন,—“সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ হল একটি আন্তর্জাতিক সরকার এবং নিরাপত্তাপরিষদ হল এর প্রধান। অঙ্গ”।
৮৫। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্যদের কার্যকাল কত বছর?
উত্তর: অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সদস্যদের কার্যকাল ৩ বছর [৬১ (২) ধারা]।
৮৬। আন্তর্জাতিক বিচারালয়টি কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর: নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচারালয়টি অবস্থিত।
৮৭। U.N.E.S.C.0.-এর পুরাে নাম কী ?
উত্তর U.N.E.S.C.O.- এর পুরাে নাম হল United Nations Education Scientific and Cultural Organisation —সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা।
৮৮। ‘আটলান্টিক সনদ’ কারা ঘােষণা করেছিলেন?
উত্তর মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ‘আটলান্টিক সনদ’ ঘােষণা করেছিলেন।
৮৯। জাতিপুঞ্জের সচিবালয়ের দায়িত্ব কার হাতে অর্পিত ?
উত্তর জাতিপুঞ্জের সচিবালয়ের দায়িত্ব মহাসচিব। এর হাতে অর্পিত।
৯০। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রথম মহাসচিব কে ?
উত্তর: ট্রিগভি লি হলেন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রথম মহাসচিব।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের দুটি কাজ উল্লেখ করাে।
উত্তর: (i) আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিষয়ে পরিষদ সমীক্ষা করে এবং রিপাের্ট তৈরি করে। এই রিপাের্ট পাঠায় সাধারণ সভা ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে।
(ii) মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদা জ্ঞাপন এবং ওইগুলিকে বাস্তবে প্রয়ােগ করার বিষয়ে সুপারিশ করা।
প্রশ্ন ২। আন্তর্জাতিক অছি ব্যবস্থা বলতে কী বােঝ ?
উত্তর: স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত অঞ্চলের প্রশাসন পরিচালনা ও তদারকি করার জন্য জাতিপুঞ্জের সনদে যে ব্যবস্থার উল্লেখ আছে তার নাম আন্তর্জাতিক অছি ব্যবস্থা।
প্রশ্ন ৩। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত ? এই বিচারালয়ের উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: নেদারল্যান্ডের হেগ (The Hague) শহরে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের সদর কার্যালয় অবস্থিত। আন্তর্জাতিক বিবাদের নিষ্পত্তি করাই এই বিচারালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন ৪। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের দুটি কাজ লেখাে।
উত্তর: (i) বিচারের জন্য প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র এই আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। তবে নিরাপত্তা- পরিষদের সুপারিশ ও সাধারণ সভার অনুমােদনের ভিত্তিতে রাষ্ট্রসংঘের সদস্য নয় এমন রাষ্ট্রগুলিও আন্তর্জাতিক আদালতে বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য যেতে পারে। (ii) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের পরামর্শদান এলাকা আছে। আইনগত প্রশ্নে আন্তর্জাতিক বিচারালয় পরামর্শ দিতে পারে।
প্রশ্ন ৫। রাষ্ট্রসংঘের সচিবালয়ের দুটি কাজ লেখাে।
উত্তর: (i) রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা, নিরাপত্তাপরিষদ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, অছি- পরিষদ এবং তাদের অধস্তন সংস্থাগুলিকে সহায়তা করাই সচিবালয়ের মুখ্য কাজ।
(ii) আন্তর্জাতিক বিবাদ-বিরােধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য, মানবিক অধিকার রক্ষার জন্য, বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি প্রণয়নে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থা যে উদ্যোগ নেয়, সেই সমস্ত কাজে সচিবালয় সহায়তা করে।
প্রশ্ন ৬। সাধারণ সভার কয়েকটি কাজ লেখাে।
উত্তর: (ক) সাধারণ বিতর্ক ও বিশ্বজনমত গঠনে সহায়তা করে।
(খ) আইন প্রণয়ন ও সনদ সংশােধন করে।
(গ) আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখে।
(ঘ) নির্বাচন ও পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত কাজ করে এবং
(ঙ) অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৭। ‘সাধারণসভা কূটনীতিবিদদের সম্মেলন’—উক্তিটি কার? কবে সাধারণ সভা আইন কমিশন গঠন করে ?
উত্তর: বিশ্ববিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুম্যান-এর মতে, সাধারণ সভা হল “কূটনীতিবিদদের সম্মেলন”। সাধারণ সভা ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে একটি আন্তর্জাতিক আইন কমিশন গঠন করে।
প্রশ্ন ৮। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারপতিগণ কীভাবে নির্বাচিত হন?
উত্তর: সাধারণ সভা, নিরাপত্তাপরিষদ পৃথকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিচারকদের নির্বাচিত করে। একই রাষ্ট্র থেকে একজনের বেশি বিচারপতি নিয়োগ করা যায় না। বিচারকরা পুননির্বাচিত হতে পারেন।
প্রশ্ন ৯। জাতিসংঘের ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলি কী কী?
উত্তর: (ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ না নেওয়া।
(খ) সদস্যভুক্ত বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযােগিতার অভাব ও পারস্পরিক মতানৈক্য।
(গ) জাতিসংঘের কাঠামােগত ও কার্যকারী দুর্বলতা।
(ঘ) শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলির সংকীর্ণ মনােভাব ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১০। রাষ্ট্রসংঘের মুখ্য উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এই উদ্দেশ্যসাধন সর্বপ্রকার আগ্রাসী কার্যকলাপ ও শান্তিভঙ্গের প্রতি সমস্ত হুমকিকে কার্যকারীভাবে সমষ্টিগত ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে দূর করা হবে এবং ন্যায়বিচারের নীতি ও আন্তর্জাতিক বিরােধ বা শান্তিভঙ্গোর সম্ভাবনাকে নিষ্পত্তি করা হবে। বস্তুত ভাবীকালের যুদ্ধ থেকে ভবিষ্যত বংশধরদের রক্ষা কাই জাতিসংঘের মুখ্য উদ্দেশ্য।
প্রশ্ন ১১। অছিপরিষদের গঠন কীভাবে হয় ?
উত্তর: রাষ্ট্রসংঘের সনদের ৮৬ নং ধারায় অছিপরিষদের গঠন বর্ণনা করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের নিম্নোক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে অছিপরিষদ গঠিত হয়— (ক) অছি অঞ্চলগুলির প্রশাসনিক দায়িত্বযুক্ত সদস্য রাষ্ট্রসমূহ। (খ) নিরাপত্তাপরিষদের সেই সমস্ত স্থায়ী সদস্য যাঁরা অছি অঞলের শাসক নন। (গ) সাধারণ সভা কর্তৃক নির্বাচিত প্রয়ােজনীয় সংখ্যক সদস্য।
প্রশ্ন ১২। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গঠন লেখাে।
উত্তর আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের সংবিধানের ৩নং ধারা অনুসারে ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয় গঠিত হয়। কোনাে রাষ্ট্র থেকে একাধিক বিচারপতি নির্বাচিত হতে পারেন না। বিচারকগণ নিরাপত্তাপরিষদ ও সাধারণ সভার সংখ্যাগরিষ্ঠ ভােটে নির্বাচিত হন।
প্রশ্ন ১৩। আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কয়টি এলাকা ও কী কী?
উত্তর: আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের তিনটি এলাকা রয়েছে। স্বেচ্ছাধীন এলাকা, আধা আবশ্যিক এলাকা ও পরামর্শদানমূলক এলাকা।
প্রশ্ন ১৪। রাষ্ট্রসংঘের প্রথম মহাসচিব কে? তাঁর কার্যকাল লেখাে।
উত্তর: রাষ্ট্রসংঘের প্রথম মহাসচিব ছিলেন নরওয়ের বিদেশমন্ত্রী ট্রিগভি লি। তাঁর কার্যকাল ছিল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
প্রশ্ন ১৫। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) কবে প্রতিষ্ঠিত হয়? এর কাজ কী?
উত্তর: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল কাজ হল—বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান, ন্যায্য বেতন প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, মজুরি ও কার্যাবলির শর্ত নির্ধারণ করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১৬। ইউনেস্কো (UNESCO) কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? এর পুরাে নাম কী ?
উত্তর: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর ইউনেস্কো প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পুরাে নাম “United Nations Education Scientific and Cultural Organisation’.
প্রশ্ন ১৭। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর কাজ কী?
উত্তর: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৪ এপ্রিল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল কাজ হল—(ক) বিভিন্ন দেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দেওয়া এবং (খ) মহামারি প্রতিরােধ ও প্রতিরােধকল্পে অনুন্নত রাষ্ট্রগুলিকে উৎসাহ দান করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১৮। IMF এর পুরাে নাম কী ? এর প্রধান কাজ কী?
উত্তর: IMF-এর পুরাে নাম—International Monetary Fund বা আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার। এর প্রধান কাজ হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসারে সর্বাধিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, প্রকৃত আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করা, বৈদেশিক মুদ্রা সংক্রান্ত কাজ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ১৯। IAEA-এর পুরাে নাম কী? এর কাজ কী?
উত্তর: IAEA-এর পুরাে নাম International Atomic Energy Agency বা আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর কাজ হল শক্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আণবিক শক্তিকে কাজে লাগানাে, সামরিক উদ্দেশ্যে আণবিক শক্তির ব্যবহার প্রতিরােধ এবং আণবিক শক্তি গবেষণার বিষয়ে সহায়তা দান।
প্রশ্ন ২০। UNICEF কী? এর বর্তমান নাম কী ?
উত্তর: UNICEF হচ্ছে United Nations International Children Emergency Fund বা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের জরুরি শিশুভাণ্ডার। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে এই সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। UNICEF- এর বর্তমান নাম United Nations Children Fund বা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শিশুভাণ্ডার। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে এই নামকরণ করা হয়।
প্রশ্ন ২১। জাতিসংঘ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়? প্রথমে এর সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
উত্তর: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৪ জন।
প্রশ্ন ২২। জাতিসংঘের কটি সংস্থা ছিল ও কী কী?
উত্তর: জাতিসংঘ চারটি সংস্থা নিয়ে গঠিত হয়েছিল। এই সংস্থাগুলি হল—সভা, পরিষদ, কর্মদপ্তর ও স্থায়ী আন্তর্জাতিক আদালত।
প্রশ্ন ২৩। পরিষদের স্থায়ী সদস্য সংখ্যা কত ছিল? তাদের নাম কী ?
উত্তর: পরিষদের স্থায়ী সদস্য সংখ্যা ছিল তিন। গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সােভিয়েত ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী সদস্য ছিল। অস্থায়ী সদস্যদের সংখ্যা ছিল ১১।
প্রশ্ন ২৪। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা রাষ্ট্রসংঘ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? প্রথমে এর সদস্য সংখ্যা কত ছিল?
উত্তর: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। সূচনাকালে এর সদস্য। সংখ্যা ছিল ৫১।
প্রশ্ন ২৫। জাতিপুঞ্জের সনদ কী ?
উত্তর: জাতিপুঞ্জের সংবিধানকে সনদ বলা হয়। সনদে একটি প্রস্তাবনা, ১৯টি অধ্যায় এবং ১১১টি ধারা আছে। সনদে জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য, নীতি ও কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা আছে।
প্রশ্ন ২৬। রাষ্ট্রসংঘের কয়টি প্রধান সংস্থা আছে এবং কী কী ?
উত্তর: রাষ্ট্রসংঘের প্রধান সংস্থা হল ছয়টি। এই সংস্থাগুলি হল—(ক) সাধারণ সভা, (খ) নিরাপত্তা- পরিষদ, (গ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ, (ঘ) অছিপরিষদ, (ঙ) আন্তর্জাতিক বিচারালয় এবং (চ) সচিবালয়।
প্রশ্ন ২৭। রাষ্ট্রসংঘের কয়েকটি সহায়ক সংস্থার নাম লেখাে।
উত্তর: রাষ্ট্রসংঘের কয়েকটি সহায়ক সংস্থার নাম হল-
(ক) আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO)।
(খ) শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (UNESCO)।
(গ) খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)।
(ঘ) বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)।
(ঙ) আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF)।
(চ) বিশ্বব্যাংক (WB)।
(ছ) আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)।
(জ) আন্তর্জাতিক জরুরি শিশুভাণ্ডার (UNICEF) ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২৮। সাধারণ সভার সদস্য সংখ্যা কত? এর অধিবেশন বছরে কয় বার হয় ?
উত্তর: ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের মে মাস পর্যন্ত সাধারণ সভার সদস্য সংখ্যা হল ১৮৫। এর অধিবেশন বছরে একবার হয়। তবে বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ২৯। সাধারণ সভার অধিবেশন কীভাবে পরিচালিত হয়?
উত্তর: সাধারণ সভার অধিবেশন পরিচালনার জন্য প্রত্যেক বছর অধিবেশন শুরুর পূর্বে একজন সভাপতি ও সতেরাে জন সহসভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সভাপতি সভার কাজ পরিচালনা করেন। সভার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়।
প্রশ্ন ৩০। সাধারণ সভার কয়েকটি কমিটির নাম উল্লেখ করাে।
উত্তর: সাধারণ সভা তার কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সাতটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটিগুলি হল (ক) রাজনৈতিক, (খ) অর্থনৈতিক, (গ) সামাজিক, (ঘ) অছি, (ঙ) প্রশাসনিক, (চ) আইনগত, (ছ) বিশেষ রাজনৈতিক কমিটি।
প্রশ্ন ৩১। সাধারণ কমিটি’ কী ?
উত্তর: সাধারণ সভার সভাপতি ১৭জন সহসভাপতি ও সাতটি কমিটির চেয়ারম্যান নিয়ে যে কমিটি গঠিত হয় তাকে সাধারণ কমিটি’ বলে। এটি বিশেষ প্রয়ােজনে গঠিত হয়।
প্রশ্ন ৩২। সাধারণ সভার ভােটদান পদ্ধতি আলােচনা করাে।
উত্তর: সাধারণ সভার প্রত্যেক সদস্যের একটি করে ভােটদানের অধিকার আছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তগুলি উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সম্মতিতে গৃহীত হয়। অন্যান্য বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভােটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রশ্ন ৩৩। সাধারণ সভাকে বিশ্বনাগরিক সভা’ বলে কে এবং কেন অভিহিত করেছেন?
উত্তর: গেটেল সাধারণ সভাকে বিশ্বনাগরিক সভা বলে (Town meeting of the world) অভিহিত করেছেন। সাধারণ সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলােচনা হয় এবং বিশ্বজনমত গঠনে সহায়তা করে।
প্রশ্ন ৩৪। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কয়েকটি বিশেষ সংস্থার নাম লেখাে।
উত্তর: অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কয়েকটি বিশেষ সংস্থার নাম হল— (ক) শিশুদের জন্য রাষ্ট্রসংঘের সাহায্য ভাণ্ডার (UNICEF)। (খ) ঔষধপত্র তদারকি সংস্থা (DSB)। (গ) স্থায়ী কেন্দ্রীয় ওপিয়াম বাের্ড (PCOB) ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩৫। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের বিশেষজ্ঞ সংস্থা বা আন্তঃসরকারি সংগঠন ইউনিয়নের নাম লেখাে।
উত্তর অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের বিশেষজ্ঞ সংস্থা বা আন্তঃসরকারি সংগঠন ইউনিয়নের নাম হল (ক) আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা (ILO)। (খ) খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)। (গ) রাষ্ট্রসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (UNESCO)। (ঘ) আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF) ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩৬। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কখন প্রতিষ্ঠিত হয়? এর কাজ কী?
উত্তর: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর খাদ্য ও কৃষি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর রােমে। এর প্রধান কাজ হল পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রের খাদ্যোৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থায় উন্নতিসাধন করা এবং বিশ্বমানবের জীবনযাত্রার মান ও পুষ্টির পর্যায় উন্নীত করা।
প্রশ্ন ৩৭। বিশ্বব্যাংকের প্রধান কাজ কী?
উত্তর: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাংক কাজ শুরু করে। এর প্রধান কাজ হল— (ক) অনুন্নত ও দুর্বল রাষ্ট্রগুলিকে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া। (খ) গঠনমূলক কাজ। যেমন—রেলপথ, জাতীয় সড়ক নির্মাণে অর্থ সাহায্য করা। (গ) বনসৃজন, পানীয় জল সরবরাহ করা ইত্যাদিতে সাহায্য দান।
প্রশ্ন ৩৮। শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব কখন এবং কেন গ্রহণ করা হয় ?
উত্তর: ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ সভা শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তাপরিষদের ক্রমবর্ধমান ব্যর্থতা ও স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে মতানৈক্য ইত্যাদি কারণে সাধারণ সভা এই প্রস্তাব গ্রহণে বাধ্য হয়। এই প্রস্তাব ক্ৰমে সাধারণ সভা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের অংশীদার হয়।
প্রশ্ন ৩৯। নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি কী কী?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি হল— (ক) বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। (খ) নিয়ােগ ও নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ। (গ) নিরস্ত্রীকরণ ও আণবিক শক্তি সংক্রান্ত কাজ। (ঘ) সনদ সংশােধন ও অছি-সংক্রান্ত কাজ ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৪০। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন কীভাবে পরিচালিত হয় ?
উত্তর: নিরাপত্তাপরিষদের অধিবেশন পরিচালনার জন্য প্রতি মাসে একজন সভাপতি পর্যায়ক্রমের সদস্য রাষ্ট্রগুলি থেকে নির্বাচিত হন। ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে এই নির্বাচন হয়। এর অধিবেশন সবসময় চলে।
প্রশ্ন ৪১। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ও তাদের কার্যকাল লেখাে।
উত্তর: অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৫৪। প্রতি তিন বছর অন্তর এই সংস্থার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য পদত্যাগ করেন এবং সমসংখ্যক সদস্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা কর্তৃক নির্বাচিত হন। প্রতি সদস্যের কার্যকাল তিন বছর।
প্রশ্ন ৪২। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের স্থায়ী কমিটিগুলির নাম কী ?
উত্তর: অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের স্থায়ী তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি হল—মধ্যস্থতা কমিটি, প্রােগ্রাম কমিটি এবং বেসরকারি সংগঠন সংক্রান্ত কমিটি।
প্রশ্ন ৪৩। আটলান্টিক সনদ কী ?
উত্তর: ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ও প্রধানমন্ত্রী চার্চিল যে যৌথ বিবৃতি পেশ করেন তা আটলান্টিক সনদ নামে পরিচিত। আটলান্টিক সনদের শেষ পরিচ্ছেদে সাধারণ নিরাপত্তার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তােলার উল্লেখ ছিল।
প্রশ্ন ৪৪। সনদ সংশােধন সংক্রান্ত ক্ষমতা কী? সনদ কীভাবে সংশােধিত হয়?
উত্তর: সাধারণ সভার উপর রাষ্ট্রসংঘের সনদ সংশােধনের ক্ষমতা দান করা হয়েছে। সনদের সংশােধনী প্রস্তাব নিরাপত্তাপরিষদের স্থায়ী সদস্যগণ ও সাধারণ সভায় উপস্থিত ও ভােট প্রদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভােটে সমর্থিত হওয়া প্রয়ােজন।
প্রশ্ন ৪৫। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কখন প্রতিষ্ঠিত হয় ? প্রথমে রাষ্ট্রসংঘের সনদে কটি দেশ স্বাক্ষর করে ?
উত্তর: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর রাষ্ট্রসংঘের সনদ গৃহীত ও কার্যকর হয়। প্রথমে রাষ্ট্রসংঘের সনদে ৫১টি রাষ্ট্র স্বাক্ষর করে।
প্রশ্ন ৪৬। কোন্ বিষয়ে ভেটো ক্ষমতাকে ব্যবহার করা যায়?
উত্তর: পদ্ধতিগত বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৫জন স্থায়ী সদস্যের সম্মতিসূচক ভােটসহ মােট ৯ জন সদস্যের সম্মতি প্রয়ােজন এবং এক্ষেত্রে কোনাে স্থায়ী সদস্য ভেটো প্রয়ােগ করতে পারে বা অসম্মতি জানাতে পারে।
প্রশ্ন ৪৭। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের একটি মুখ্য কার্যের উল্লেখ করাে।
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের (রাষ্ট্রসংঘের) মুখ্য প্রশাসনিক অধিকর্তা হিসাবে মহাসচিবের গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম কাজ হল রাষ্ট্রসংঘের প্রধান সংস্থা, উপসংস্থা, কমিশন, কমিটির সভা আহ্বান করা এবং সুষ্ঠু পরিচালনার বন্দোবস্ত করা।
প্রশ্ন ৪৮। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধের মীমাংসার একটি উপায়ের উল্লেখ করাে।
উত্তর: কোনাে বিবাদের বিবাদমান পক্ষগুলি, বিশেষত যে বিবাদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ভঙ্গ করতে পারে, সেইসব বিবাদের মীমাংসার জন্য আলাপ-আলােচনা, অনুসন্ধান, মধ্যস্থতা, আপস-মীমাংসা ইত্যাদি ও পছন্দমতাে কোনাে পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে।
বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কী উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর: মানবজাতির ইতিহাসে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা এক গুরুপূর্ণ ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ব্যাপকতা ও অগণিত মানুষের প্রাণনাশ ও সম্পত্তির বিনাশ বিশ্ববাসীকে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ব্যাকুল করে তুলেছিল। এর ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-
প্রথমত, সনদের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, জাতিপুঞ্জের প্রধান উদ্দেশ্য হল বিশ্ব থেকে যুদ্ধের অবসান ঘটানাে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করা।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করাই হল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান উদ্দেশ্য। সনদের ১ নং ধারায় বলা হয়েছে, জাতিপুঞ্জ বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। শান্তি রক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে ন্যায়বিচারের নীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংহতি রেখে শান্তিপূর্ণভাবে আন্তর্জাতিক বিরােধের মীমাংসা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তৃতীয়ত, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল—বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তােলার জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সমানাধিকারের নীতিকে সম্মান দেখানাে হবে।
চতুর্থত, বিভিন্ন জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতির মান উন্নয়নের জন্য সহযােগিতা করা ও বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
পঞ্চমত, নারী, পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
ষষ্ঠত, এই সকল উদ্দেশ্যগুলিকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয়সাধনের কেন্দ্র হিসাবে কাজ করবে ও প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রশ্ন ২) অছি পরিষদের গঠন ও কার্যাবলি আলােচনা করাে।
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদ যখন রচনা করা হয় তখন বিশ্বের বহু মানুষ স্বায়ত্তশাসনের থেকে বঞ্চিত ছিল। তারা অন্য রাষ্ট্র কর্তৃক শাসিত হত। এই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞিত অঞলের প্রশাসন পরিচালনা ও তদারকি করার জন্য জাতিপুঞ্জের সনদে যে ব্যবস্থার উল্লেখ আছে তার নাম আন্তর্জাতিক অছি ব্যবস্থা।
অছি ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হল অছি অঞ্চলের আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষা বিষয়ে অগ্রগতি সাধন করা। ওইসব অঞ্চলের জনগণের স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদা ও উৎসাহ দেওয়া। সদস্য রাষ্ট্রের জনগণকে সমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুযােগসুবিধা দেওয়া।
গঠন
অছিপরিষদ জাতিপুঞ্জের নিম্নলিখিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত-
(i) অছি অঞ্চলের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সদস্যগণ।
(ii) নিরাপত্তাপরিষদের স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে যারা অছি অঞ্চলের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন না।
(iii) অছি অঞ্চলের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত এবং অছি অঞ্চলের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত নয় এই উভয় শ্রেণির সদস্য সংখ্যা সমান করার জন্য যে কয়জন অতিরিক্ত সদস্য রাষ্ট্রের প্রয়ােজন হয় তাদের সাধারণ সভা ৩ বছরের জন্য নির্বাচিত করে।
কার্যাবলি
সনদের ৮৭ ও ৮৮ নং ধারায় অছিপরিষদের কার্যাবলির উল্লেখ আছে। অছিপরিষদের উল্লেখযােগ্য কাজ হল:
(i) অছি অঞ্চলের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যে রিপাের্ট পাঠায় তা বিবেচনা করা।
(ii) অছি অঞ্চল থেকে আবেদনপত্র পরীক্ষা করা এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে তা পরীক্ষা করা।
(iii) অছি অঞল পরিদর্শন করা।
(iv) অছি সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
(v) অছি অঞ্চলের জনগণের সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে প্রশ্নমালা তৈরি করা। এই প্রশ্নমালার ভিত্তিতে সাধারণ সভার কাছে রিপাের্ট পাঠানাে অছিপরিষদের প্রধান কাজ।
প্রশ্ন ৩) সেক্রেটারি জেনারেল বা জাতিপুঞ্জের মহাসচিবের নিয়ােগ ও কার্যাবলি কী?
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কর্মদপ্তর একজন প্রধান কর্মসচিব ও প্রয়ােজনীয় সংখ্যক কর্মসচিব নিয়ে গঠিত। নিরাপত্তাপরিষদের সুপারিশ অনুযায়ী সাধারণ সভা প্রধান কর্মসচিবকে নিয়ােগ করেন।
প্রধান কর্মর্সচিব বা মহাসচিব হলেন কর্মদপ্তরের মুখ্য পরিচালক। তিনি তাঁর নিয়ােগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাপরিষদের অনুমােদনপুষ্ট পাঁচটি স্থায়ী সদস্যসহ নয়টি সদস্য রাষ্ট্রের তরফ থেকে সমর্থিত হওয়া প্রয়ােজন। নিরাপত্তাপরিষদের সুপারিশে সাধারণ সভায় প্রেরিত হওয়ার পর সভায় উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। প্রধান কর্মসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেলের কার্যকাল ৫ বছর।
মহাসচিবের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল–কর্মচারীদের নিয়ােগ করা, অপরাধী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন বিভাগের বৈঠকের ব্যবস্থা করা। সাধারণ সভা ও নিরাপত্তাপরিষদের অধিবেশনের কর্মসূচি নির্ধারণ করা, জাতিপুঞ্জের বাজেট প্রণয়ন করা, জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা প্রভৃতি।
তবে মহাসচিবের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল রাজনৈতিক কার্যাবলি। সনদের ৯৯ নং ধারায় এর উল্লেখ আছে। যদি কোনাে ঘটনা বা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে, তাহলে মহাসচিব সে ব্যাপারে নিরাপত্তাপরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। কোনাে ঘটনা বিশ্বশান্তি বা পরিস্থিতি বিঘ্নিত করেছে বা করতে পারে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার একমাত্র অধিকারী হলেন সহসচিব। এই বিষয়ে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মহাসচিবের ভমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে সােভিয়েত ইউনিয়ন এবং পূর্ব ইউরােপে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতা মহাসচিবকে সম্পূর্ণ নীরব করে তুলেছে।
প্রশ্ন ৪) আন্তর্জাতিক জরুরি শিশুভাণ্ডার সম্পর্কে একটি টাকা লেখাে।
উত্তর: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা আন্তর্জাতিক জরুরি শিশুভাণ্ডার গড়ে তােলে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে এই সংস্থার নাম পরিবর্তন করে ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শিশুভাণ্ডার’ করা হয়। এর সদর দপ্তর নিউইয়র্কে অবস্থিত। একটি পর্ষদ-এর কাজকর্ম পরিচালনা করেন। মুখ্য প্রশাসক মহাসচিব কর্তৃক নিযুক্ত হন।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শিশুভাণ্ডারকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযােগী রূপে চিহ্নিত করা হয়। এই সংস্থার ব্যয়ভার বহনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থসংগ্রহ করা হয়। এই সংস্থার প্রধান দায়িত্ব হল শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নতি-বিধান, শিশু ও মহিলাদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ, শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ ও বণ্টন করা। হাসপাতাল ও প্রসুতিসদন নির্মাণ, মাতা ও শিশুদের জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা। শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে খাদ্য প্রকল্প চালু করা। শিশু, মাতৃকল্যাণ শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, খরা, বন্যা, ঝড়, ভূমিকম্প বিধ্বস্ত শিশুদের জন্য ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ ও বণ্টন করা ইত্যাদি।
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের শিশুভাণ্ডার তাঁর দায়িত্ব গুরুত্ব সহকারে পালন করেছে। কিন্তু শিশুদের শােষণ অব্যাহত থেকে গেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক শােষণ এবং বৈষম্যের অবসান ছাড়া যে শিশুদের শােষণ এবং অপব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের একটি প্রতিবেদনে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রশ্ন ৫) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর:
উদ্দেশ্য
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান লক্ষ্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উত্তেজনা কমানাে, অস্ত্রের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, নিরস্ত্রীকরণ, শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধের মীমাংসা এবং শান্তি বিঘ্নকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়ােজন। অন্যদিকে এই সকল উদ্যোগের সাফল্যের জন্য প্রয়ােজন সমগ্র মানবজাতির সামাজিক,
অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের বিকাশ এবং অগ্রগতি। জাতিপুঞ্জের সনদের প্রস্তাবনায় এজন্যই সামাজিক অগ্রগতি এবং ব্যাপক স্বাধীনতার পরিবেশসহ এক উন্নত জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছােনাের সংকল্প ঘােষিত হয়েছে।
কার্যাবলি
সনদের ৬২ থেকে ৬৬ নং ধারায় পরিষদের নিম্নলিখিত কার্যাবলির উল্লেখ করা হয়েছে।
(ক) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মহাসচিব অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জনকল্যাণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পরীক্ষা করার পর প্রতিবেদন তৈরি করে বিশেষজ্ঞ সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া।
(খ) মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখানাে এবং এগুলি সংরক্ষণের জন্য প্রয়ােজনীয় সুপারিশ করা ও পরিকল্পনা গ্রহণের ব্যবস্থা করা।
(গ) নিজের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
(ঘ) পরিষদের অধীনস্থ বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির কাজকর্মের তত্ত্ববধান ও সমন্বয়সাধন ঘটানাে।
(ঙ) বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির কাছ থেকে প্রতিবেদনগুলি সংগ্রহ করার পর সেগুলি পরীক্ষা করা এবং সাধারণসভার কাছে বিশেষজ্ঞ সংস্থা কর্তৃক প্রেরিত প্রতিবেদনগুলি পাঠানাে।
(চ) নিরাপত্তাপরিষদকে প্রয়ােজনীয় সুপারিশ ও বিভিন্ন রকম তথ্য সরবরাহ করা হল মহাসচিবের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
প্রশ্ন ৬) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের কার্যাবলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর: সদনের রচয়িতাগণ আন্তর্জাতিক বিচারলয়ের বিচারপতিদের স্বাধীনতার উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। সেজন্য বিচারকদের অপসারণের ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যােগ্য বিচারপতিরা যাতে চাকুরি গ্রহণ করেন তার জন্যে তাঁদের বেতন ও ভাতা করমুক্ত করা হয়েছে। বিচারকরা যাতে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে কোনাে পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে না পারে তার জন্য সে বিষয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়ােজন, এই আদালতে কোনাে ব্যক্তি বিচারপ্রার্থী হতে পারে না। একমাত্র রাষ্ট্র বিচারপ্রার্থী হতে পারে। আদালতের কার্যাবলি নিম্নরূপ:
(ক) স্বেচ্ছামূলক এলাকা
দুটি বিবাদমান রাষ্ট্র নিজেদের ইচ্ছায় যে-কোনাে মামলা এখানে আনলে স্বেচ্ছামূলক এলাকায় তার বিচার করা হয়। এখানে বিবাদমান রাষ্ট্রগুলির অনুমতি না পেলে আন্তর্জাতিক বিচারালয় বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারবে না।।
(খ) আবশ্যিক এলাকা
সদস্য রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন বিরােধের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এই বিচারালয়ের এক্তিয়ারকে আবশ্যিক বলে মনে করতে পারে। এর মধ্যে আছে কোনাে সন্ধি বা চুক্তির ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক দায়দায়িত্ব লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ভঙ্গের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ প্রভৃতি।
(গ) পরামর্শদান এলাকা
জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন বিভাগ এই আদালতের কাছে পরামর্শ দিতে পারে। তবে এই পরামর্শ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়।
প্রশ্ন ৭) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সম্পর্কে একটি টীকা লেখাে।
উত্তর: রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের দ্বারা স্থাপিত প্রথম বিশেষজ্ঞ সংস্থা হল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে এই সংস্থা স্থাপনে প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই সংস্থার কাজকর্ম শুরু হয় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল। এই সময়ে ৬৪টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধানে স্বাক্ষর করে। বিশ্বের সকল নাগরিককে সুস্বাস্থ্যের অধিকারীরূপে গড়ে তােলা এর মূল লক্ষ্য। এর সদর দপ্তর জেনিভা শহরে অবস্থিত।
তবে ওয়াশিংটন, ম্যানিলা, আলেকজান্দ্রিয়া, কোপেনহেগেন ও দিল্লির ন্যায় শহরগুলিতে আঞ্চলিক কার্যালয় আছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার কার্যাবলির মধ্যে কয়েকটি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। নিম্নে সেগুলি আলােচনা করা হল-
(ক) বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দান। (খ) বিভিন্ন রাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহ করা, বিশ্লেষণ করা এবং প্রতিবেদন প্রস্তত করা। (গ) মহামারি প্রতিরােধ ও প্রতিরােধকল্পে উৎসাহ দান। (ঘ) স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণের মান উন্নত করা। (ঙ) ঔষধ প্রস্তুত ও মান বজায় রাখা ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৮) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতার কারণ সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।
উত্তর: বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না, কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে আরাে বড়াে রকমের কোনাে যুদ্ধ হয়নি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খালকে কেন্দ্র করে বড়াে রকমের যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপে তার রদ করা গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিকোলাস, পামার ও পারকিনস প্রভৃতি বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন,—জাতিপুঞ্জ মানবজাতির আশাকে পূর্ণ করতে পারেনি। এর ব্যর্থতার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ বর্তমান। সেগুলি নিম্নরূপ:
প্রথমত, নিরাপত্তাপরিষদে পাঁচটি সদস্য রাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা প্রয়ােগের ফলে আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
দ্বিতীয়ত, জাতিপুঞ্জের নিজস্ব সামরিক বাহিনী না থাকার জন্য বিবদমান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দ্রুত কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
তৃতীয়ত, জাতিপুঞ্জের নিজস্ব কোনাে আয় নেই। সদস্য রাষ্ট্রগুলি অল্প পরিমাণ চাঁদা প্রদান করে এবং সেই চাঁদাও সঠিকভাবে আদায় সম্ভব হয়নি।
চতুর্থত, বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঠান্ডা লড়াই জাতিপুঞ্জকে অকেজো করে দিয়েছিল। নিকোলাস তাই বলেছেন—“Their conflict tears the United Nations apart.”।
পঞ্চমত, জাতিপুঞ্জ আন্তর্জাতিক বিরােধের মীমাংসা করতে পারছে না বলে NATO, SEATO প্রভূতি আঞ্চলিক জোট গড়ে উঠেছে। আঞ্চলিক জোটগুলি আন্তর্জাতিক উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। শক্তিধর রাষ্টের মদত থাকার জন্য আঞ্চলিক জোটের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জ কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না।
ষষ্ঠত, জাতিপুঞ্জের উদ্যোগে শান্তি রক্ষার কাজ বৃহৎ ও শক্তিধর রাষ্ট্রের অসহযােগিতায় সফল হতে পারছে না।
প্রশ্ন ৯) নিরাপত্তাপরিষদের ভেটো ক্ষমতা সম্পর্কে টীকা লেখাে।
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সর্বাপেক্ষা গুরত্বপূর্ণ বিভাগ হল নিরাপত্তাপরিষদের মােট সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। এর মধ্যে ৫ জন সদস্য স্থায়ী। স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি হল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী চিন এবং রাশিয়া। পদ্ধতিমূলক বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ৫জন স্থায়ী সদস্যসহ মােট ৯জন সদস্যের সম্মতি আবশ্যক। নিরাপত্তাপরিষদের কোনাে স্থায়ী সদস্য প্রস্তাবে অসম্মতি জানালে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। স্থায়ী সদস্যদের প্রস্তাবের উপর এই অসম্মতি জ্ঞাপনকে ভেটো প্রয়ােগ বা ভেটো ক্ষমতা বলে। এক কথায় ভেটো হল এক বিশেষ অধিকার যা স্থায়ী পঞ্চপ্রধান ভােগ করে।
ভেটো ক্ষমতার বিরুদ্ধাচরণ করে বলা হয় যে, স্থায়ী সদস্যদের হাতে ন্যস্ত এই ক্ষমতা রাষ্ট্রসংঘের দুর্বলতার মূল কারণ। এই ভেটো প্রয়ােগের ফলেই সামগ্রিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সফল হয়নি। এই ক্ষমতার তাৎপর্য হল মাত্র একজন স্থায়ী সদস্যের অন্যায় অভিপ্রায় বা জেদের কাছে সকল সদস্য রাষ্ট্রের ইচ্ছার আত্মসমর্পণ। তবে গুড স্পীডের ভাষায়, ভেটো ব্যবস্থা নিরাপত্তাপরিষদের অচলাবস্থা ও ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হলেও বিশ্বকে এখনও সংকটের মুখে ঠেলে দেয়নি।
প্রশ্ন ১০) আটলান্টিক চার্টার কী?
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতির ফলে শক্তিকামী রাষ্ট্রগুলির নেতৃবৃন্দ এক নতুন আন্তর্জাতিক সংগঠনের পরিকল্পনা করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী চার্চিল যে যৌথ বিবৃতি পেশ করেন তা আটলান্টিক চার্টার বা আটলান্টিক সনদ নামে পরিচিত।
আটলান্টিক চার্টারের শেষ পরিচ্ছদে সাধারণ নিরাপত্তার জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তােলার উল্লেখ ছিল। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও রাশিয়া একটি ঘােষণা পত্রে স্বাক্ষর করে আটলান্টিক চার্টারে উল্লিখিত নীতি ও আদর্শকে স্বীকৃতি জানায়। পরবর্তীকালে আরও ২২টি রাষ্ট্র এই সমস্ত আদর্শকে বহন করে। আটলান্টিক সনদের নীতিগুলি রাষ্ট্রসংঘের ঘােষণাপত্র (Declaration of United Nations) নামে পরিচিত হয়।
এই ঘােষণাপত্রে বলা হয় যে, আটলান্টিক সনদে সংযােজিত সমস্ত উদ্দেশ্য ও নীতির প্রতি অধিকার প্রদর্শন, জীবন স্বাধীনতা, জাতীয় মুক্তি, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মানব অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য শত্রুর পরাজয় প্রয়ােজন। জাতিপুঞ্জের ইতিহাসে আটলান্টিক চার্টার-এর ঘােষণা এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
প্রশ্ন ১১) শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধের মীমাংসা বলতে কী বােঝ?
উত্তর: রাষ্ট্রসংঘের সনদের ১নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সংগঠনের মূল উদ্দেশ্য হল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা ও সেই উদ্দেশ্যে ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে সেইসব আন্তর্জাতিক বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা যা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সনদের ২(৩) ধারা অনুযায়ী সকল সদস্য রাষ্ট্র তাদের সকল আন্তর্জাতিক
বিরােধের এমনভাবে মীমাংসার চেষ্টা করবে যাতে আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ক্ষুন্ন না হয়। সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধ মীমাংসার জন্য বিশেষ উল্লেখ রয়েছে। সনদের ৩৩নং ধারা অনুযায়ী কোনাে বিবাদের বিবাদমান পক্ষগুলি, বিশেষত যে বিবাদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ভঙ্গ করতে পারে, সেইসব বিবাদের মীমাংসার জন্য আলাপ-আলােচনা, অনুসন্ধান, মধ্যস্থতা, আপস-মীমাংসা, সালিশি, বিচার বিভাগীয় নিষ্পত্তি, আঞ্চলিক ব্যবস্থা ও পছন্দমতাে অন্য কোনাে পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারে। নিরাপত্তাপরিষদ এইসব পদ্ধতির মাধ্যমে বিবদমান পক্ষগুলিকে তাদের বিবাদ নিষ্পত্তির জন্য সুপারিশ করতে পারে।
১২) জাতিপুঞ্জের প্রধান নীতিগুলি বর্ণনা করাে।
উত্তর: মানবজাতির ইতিহাসে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী ঘটনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ হত্যালীলার পটভূমিতে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নিয়েছিল জাতিসংঘ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে জাতিসংঘ ভেঙে পড়ে। এই যুদ্ধের ব্যাপকতা ও অগণিত মানুষের প্রাণনাশ ও সম্পত্তির বিনাশ বিশ্ববাসীকে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ব্যাকুল করে তুলেছিল। তারই ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতিপুঞ্জের সনদে যে উদ্দেশ্যগুলির কথা বলা হয়েছে, সেগুলিকে রূপায়ণের জন্যে সাতটি নীতির কথা সনদের ২নং ধারায় বলা হয়েছে। সেগুলি নিম্নরূপ:
প্রথমত, সকল সদস্য রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে সমান মর্যাদা পাবে।
দ্বিতীয়ত, সনদ প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে, প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রকে সেগুলি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।
তৃতীয়ত, প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরােধের মীমাংসা করবে।
চতুর্থত, সকল সদস্য রাষ্ট্র অপরের ভৌগােলিক অখণ্ডতা বা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলপ্রয়ােগ করবে না।
পঞ্চমত, জাতিপুঞ্জ কোনাে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সকল সদস্য রাষ্ট্র তাকে সর্বতােভাবে সাহায্য করবে। যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সদস্য রাষ্ট্র সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনাে সহযােগিতা বা মদত দিতে পারবে না।
ষষ্ঠত, বিশ্বশান্তির স্বার্থে যারা সদস্য নয়, এমন সব রাষ্ট্র যাতে সনদের নিয়ম মেনে চলে তার জন্য রাষ্ট্রসংঘ প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সপ্তমত, জাতিপুঞ্জ কোনাে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।
কিন্তু কোনাে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ঘটনা যদি আন্তর্জাতিক শান্তির পরিপন্থী হয়, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রসংঘ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।
প্রশ্ন ১৩) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের ত্রুটিগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিচার বিভাগের নাম হল আন্তর্জাতিক বিচারালয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে এটি গড়ে ওঠে। ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচারালয় গড়ে ওঠে। সাধারণ সভা ও নিরাপত্তাপরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভােটে বিচারপতিরা নির্বাচিত হন। সনদে বলা হয়েছে, -বিচারপতিরা উন্নত নৈতিক চরিত্রের মানুষ হবেন। বিচারপতিরা নিজ নিজ দেশের সর্বোচ্চ বিচারক পদে নিযুক্ত হবার যােগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। বিচারপতিরা নয় বছরের জন্য নিযুক্ত হন। প্রতি তিন বছর অন্তর এক-তৃতীয়াংশ বিচারপতিকে অবসর নিতে হয়। সকল বিচারপতিরা ঐক্যমত হলেই কোনাে বিচারপতিকে পদচ্যুত করা যায়।
বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গুরুত্বকে অস্বীকার করেছেন। কারণ-
প্রথমত, বিবদমান রাষ্ট্রের সম্মতি না পেলে আদালত তাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, কোনাে রাষ্ট্র যদি আদালতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে, তাহলে কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না।
তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে বিচারপ্রার্থী হওয়া অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ বলে, ছােটো রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে বিচার চাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।
চতুর্থত, সনদে বলা হয়েছে,আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিচারকরা যে দেশের মানুষ সেই দেশের প্রতি বিচারকরা পক্ষপাতিত্ব দেখান।
পঞ্চমত, সনদের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা আদালতের হাতে দেওয়া হয়নি। নিকোলাস যথার্থই বলেছেন, ”জাতিপুঞ্জ এই আদালতের উপর যথােচিত গুরুত্ব আরােপ করেনি।” তাই আদালতে মামলার সংখ্যা ও গুরুত্ব কমে গেছে। কোনাে কোনাে বছর একটি বা দুটির বেশি মামলা এখানে আসে না। আবার যে সমস্ত মামলা এখানে আসে সেগুলির তেমন গুরুত্ব নেই।
প্রশ্ন ১৪) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাফল্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ মারণলীলার পটভূমিতে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল, বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। যেমন—
(ক) শান্তি প্রতিষ্ঠা: শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজখালকে কেন্দ্র করে বড়াে রকমের যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। জাতিপুঞ্জের প্রচেষ্টায় এই বিবাদ এড়ানাে সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়া কোরিয়া, কঙ্গো, পাক-ভারত যুদ্ধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয়, কোনাে ঘটনা ও পরিস্থিতি যখন বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করেছে তখন জাতিপুঞ্জের মহাসচিব সেখানে শান্তিবাহিনী পাঠিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়েছেন। সন্ত্রাসবাদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড়াে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাদেন ও তার আলকায়দা জঙ্গি সংগঠন এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বিশ্বের শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। এ ব্যাপারে জাতিপুঞ্জ প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
(খ) আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা: এ ব্যাপারে জাতিপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অছিপরিষদের মাধ্যমে ১১টি অছিভুক্ত দেশের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে প্রায় সব কটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। অধ্যাপক নিকোলাস বলেছেন, ক্ষমতা ও সুযােগের সদ্ব্যবহার করে অছিপরিষদ যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে।
(গ) মানব অধিকার প্রতিষ্ঠা: মানব অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ প্রশংসার দাবি রাখে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জ মানব অধিকার সংক্রান্ত কর্মসূচি ঘােষণা করে। এর ফলশ্রুতি হিসাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রে মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে এবং মানবাধিকার কমিশনগুলির জনকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
(ঘ) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি: পৃথিবীতে যদি বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য থাকে তাহলে শান্তি আসতে পারে না। সেজন্য দারিদ্র্য থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। যেমন, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে অনুন্নত ও উন্নতিশীল দেশগুলি অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাতে সাহায্য পাচ্ছে। U.N.D.P. নামে এক পরিকল্পনার মাধ্যমে অনুন্নত দেশগুলিকে কারিগরি ও কৌশলগত সাহায্য দিয়ে শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করেছে। UNCTAD-এর মাধ্যমে বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলির মধ্যে সহযােগিতার সম্প্রসারণ ঘটানাে হয়েছে।
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১) জাতিপুঞ্জের (The United Nations) উদ্দেশ্য ও মূলনীতি বর্ণনা করাে।
উত্তর: মানবসভ্যতার ইতিহাসে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী ঘটনা প্রথম হয় জাতিসংঘ (League of Nations)। জাতিসংঘ নিজস্ব উদ্দেশ্যপূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্ধের ব্যাপকতা ও অগণিত মানুষের প্রাণনাশ ও সম্পত্তির বিনাশ বিশ্ববাসীকে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ব্যাকুল করে তুলেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর জাতিপুঞ্জ (U.N.O.) প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য
প্রথমত, সনদের প্রস্তাবনায় এ কথা বলা হয়েছে,—জাতিপুঞ্জের প্রধান উদ্দেশ্য—পৃথিবী থেকে যুদ্ধের অবসান ঘটানাে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করা।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা হল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। সনদের ১নং ধারায় বলা হয়েছে, জাতিপুঞ্জ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করবে। শান্তির প্রতি হুমকি ও আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে। সেই সঙ্গে ন্যায় বিচারের নীতি ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিরােধের সমাধান করবে।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রসংঘের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল,—বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তােলা। এই উদ্দেশ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সমানাধিকারের নীতিকে সম্মান জানানাে প্রয়ােজন।
চতুর্থত, বিভিন্ন জাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতির মান উন্নয়নের জন্য সহযােগিতা করা।
পঞ্চমত, নারী, পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা করা।
ষষ্ঠত, এই সকল উদ্দেশ্যগুলিকে বাস্তবায়নের জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয়সাধক হিসাবে ভূমিকা পালন করবে।জাতিপুঞ্জের নীতি
রাষ্ট্রসংঘের সনদে যে উদ্দেশ্যগুলির কথা বলা হয়েছে—সেগুলিকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্যে সাতটি নীতির কথা সনদের ২নং ধারায় উল্লেখ আছে:
প্রথমত, প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে সমান মর্যাদা অধিকারী।
দ্বিতীয়ত, সনদ প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে।
তৃতীয়ত, প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক বিরােধ মেটানাের ক্ষেত্রে আলাপ-আলােচনার পদ্ধতি গ্রহণ করবে।
চতুর্থত, সদস্য রাষ্ট্রগুলি অপরের ভৌগােলিক অখণ্ডতা বা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনােরূপ বল প্রয়ােগ বা বল প্রয়ােগের হুমকি দেবে না।
পঞ্চমত, জাতিপুঞ্জ যদি কোনাে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাহলে সদস্য রাষ্ট্রগুলি তাকে সর্বতােভাবে সাহায্য করবে। যার বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সদস্য রাষ্ট্র তার সঙ্গে কোনাে সহযােগিতা করতে পারবে না।
ষষ্ঠত, বিশ্বশান্তির স্বার্থে যে সকল রাষ্ট্র সদস্য নয়, তাদেরকে সনদের নিয়ম মেনে চলার জন্য রাষ্ট্রসংঘ প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেবে ও চাপ সৃষ্টি করবে।
সপ্তমত, জাতিপুঞ্জ কোনাে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনােরূপ হস্তক্ষেপ করবে না।তবে কোনাে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ঘটনা যদি আন্তর্জাতিক শান্তির বিরােধী হয় তাহলে হস্তক্ষেপ করে।
সমালােচনা
প্রথমত, “সার্বভৌম সমতার নীতি” গৃহীত হলেও নিরাপত্তাপরিষদে পাঁচটি স্থায়ী সদস্যকে ভেটো (Veto) ক্ষমতা দিয়ে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি এর ক্ষমতার অপপ্রয়ােগ ঘটাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, জাতিপুঞ্জের সদস্য বাধ্যতামূলক না হওয়ার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের বাইরে থেকে অনেক রাষ্ট্র বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করছে।
তৃতীয়ত, বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঠান্ডা-লড়াই লেগেই আছে, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ এর অবসান ঘটাতে পারছে না।
চতুর্থত, জাতিপুঞ্জ কোনাে রাষ্ট্রের ঘরােয়া ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না—এই নীতির সুযােগ নিয়ে কোনাে রাষ্ট্র জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।
মূল্যায়ন
সমালােচনা সত্ত্বেও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। অধ্যাপক ফ্রাঙ্কেল (Frankel) বলেছেন,—“জাতিপুঞ্জ আলাপ-আলােচনার ম হিসাবে গড়ে ওঠায় বিশ্বজনীন ঐক্যের পথ প্রশস্ত হয়েছে।” তাঁর ভাষায়,—“The U.N.O. is a symbol of World unity”. বস্তুত, এই জাতিপুঞ্জের চেষ্টায় বর্তমানে বিশ্বে যুদ্ধের ও ঠান্ডা লড়াইয়ের উন্মাদনা কিছুটা কমে গিয়ে শান্তি ও সহযােগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি এবং মানব অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এর ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। তাই বলা যায় জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য পুরােপুরি ব্যর্থ হয়নি।
প্রশ্ন ২) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের গঠন সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।
উত্তর:
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের গঠন
জাতিপুঞ্জের সাংগঠনিক দিক বর্ণনা করতে হলে এর মূল ৬টি বিভাগের কথাই বলতে হয়। এই বিভাগগুলি হল—
- সাধারণ সভা (General Assembly)
- নিরাপত্তাপরিষদ (Security Council)
- আন্তর্জাতিক বিচারালয় (International Court of Justice)
- অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council)
- অছিপরিষদ (Trusteeship Council)
- কর্মদপ্তর (Secretariat)
সাধারণ সভা
জাতিপুঞ্জে সকল সদস্য নিয়ে এই বিভাগ গঠিত। বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৯৯। সাধারণ সভায় প্রত্যেক সদস্যরাষ্ট্র ৫ জন করে প্রতিনিধি প্রেরণের অধিকারী, কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রের প্রত্যেকের একটি করে ভােট দেবার অধিকার আছে। সাধারণ সভায় নিয়মিত বাৎসরিক অধিবেশন হয়ে থাকে। প্রত্যেক অধিবেশনের জন্য একজন সভাপতি নির্বাচন করা হয়। নিরাপত্তাপরিষদ অথবা অধিকাংশ সদস্য-রাষ্ট্রের অনুরােধক্রমে বিশেষ অধিবেশনও অনুষ্ঠিত হতে পারে। যে-কোনাে আন্তর্জাতিক সমস্যা অথবা সনদের অন্তর্ভুক্ত যে-কোনাে বিষয় নিয়ে সাধারণ সভায় আলােচনা হয়ে থাকে। সাধারণত সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভােটে প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক শক্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, নতুন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্তি নিরাপত্তাপরিষদের অস্থায়ী সদস্যের নির্বাচন, আইনভঙ্গকারী সদস্য রাষ্ট্রকে বিতাড়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এই সভার দুই-তৃতীয়াংশের সদস্যের সমর্থনের প্রয়ােজন হয়। আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সম্পর্কে সাধারণ সভা আলােচনা করতে পারে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে যদি ওই বিষয়ে আলােচনা চলতে থাকে, তা হলে সাধারণ সভা পরিষদের অনুমতি ব্যতীত ওই বিষয়ে আলােচনা করতে পারে না। সেই কারণে বলা হয় যে, সাধারণ সভা কোনাে আইন প্রণয়নকারী সংস্থা নয়, যথার্থ বিশ্বনাগরিক সভা।
নিরাপত্তাপরিষদ
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল নিরাপত্তাপরিষদ। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিরাপত্তাপরিষদে ৫ জন অস্থায়ী সদস্য ছিল। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে সনদের সংশােধনের মাধ্যমে অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা ১০-এ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিরাপত্তাপরিষদের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। নিরাপত্তাপরিষদের ২ জন স্থায়ী সদস্য হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েত ইউনিয়ন, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও গণপ্রজাতন্ত্রী চিন। এরা “Big Five’ নামে পরিচিত। অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র দু-বছরের জন্য সাধারণ সভা কর্তৃক হয়। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনুসন্ধান, প্রত্যক্ষভাবে অন্তঃরাষ্ট্র বিবাদ মীমাংসার প্রয়াস সালিসি ব্যবস্থার দ্বারা বিবাদ মীমাংসার ব্যবস্থা করা। আলাপ-আলােচনার দ্বারা বিবাদ মীমাংসার প্রয়াস এবং মধ্যস্থতা দ্বারা বিবাদ মীমাংসার প্রয়াস প্রভৃতি নিরাপত্তাপরিষদের কাজের অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষার জন্য নিরাপত্তাপরিষদ শান্তিভঙ্গাকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে নির্দেশ দিতে পারে। এই ব্যবস্থা কার্যকর না হলে নিরাপত্তাপরিষদ শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সদস্য রাষ্ট্রকর্তৃক প্রদত্ত বিমান, নৌ ও স্থলবাহিনী প্রয়ােগ করতে পারে। এই সশস্ত্র বাহিনী নিরাপত্তাপরিষদে সামরিক কর্মচারী কমিটি (Military Staff Committee) দ্বারা পরিচালিত হয়।
নিরাপত্তাপরিষদের স্থায়ী সদস্যগণের ভূমিকার গুরুত্ব অনেক বেশি। সনদের ২৭ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক সদস্যের একটি করে ভােট প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। পদ্ধতিগত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জনের ভােট প্রয়ােজন। অন্যান্য ক্ষেত্রে ৭ জনের সম্মতিজ্ঞাপক ভােটের প্রয়ােজন হয়। কিন্তু এই ৯ জনের মধ্যে ৫ জন স্থায়ী সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।সুতরাং, কোনাে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ৫টি স্থায়ী রাষ্ট্রের সম্মতি প্রয়ােজন। এই ৫টি রাষ্ট্রের কোনাে একটি রাষ্ট্রের অসম্মতিজ্ঞাপক ভােটে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যাবে। স্থায়ী সদস্যের অসম্মতিজ্ঞাপক ভােট দ্বারা কোনাে প্রস্তাব বাতিল করবার ক্ষমতাকেই ভেটো (Veto) বলে। স্বভাবতই এই ক্ষমতার বলে পাঁচটি বৃহৎ রাষ্ট্র অন্যান্য সদস্য-রাষ্ট্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। কোনাে বিরােধ মীমাংসায় নিরাপত্তাপরিষদের যে-কোনাে সুপারিশই বৃহৎ পশক্তির যে-কোনাে একজন প্রতিনিধি ভেটো প্রয়ােগ করে বাতিল করে দিতে পারে।
আন্তর্জাতিক বিচারালয়
আন্তর্জাতিক বিচারালয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিচার বিভাগ। এই আন্তর্জাতিক আদালতকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অপরিহার্য অঙ্গ বলা যেতে পারে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ যােগদানের সঙ্গে সঙ্গেই প্রত্যেক রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক বিচারালয়কে মেনে নিতে হয়। আন্তর্জাতিক বিচারালয় ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে ৯ বছরের জন্য গঠিত হয়। প্রত্যেক বিচারপতির কার্যকাল ৯ বছর কিন্তু প্রতি ৩ বছর অন্তর ৫ জন বিচারপতি নির্বাচিত হন। বিধির (Statute) ধারা অনুযায়ী দুজন বিচারপতি একই জাতি হতে নির্বাচিত হতে পারেন না। কোনাে বিচারপতিকে তার কার্যকালের মধ্যে পদচ্যুত করা যায় না। সাধারণ সভা বিচারপতিগণের বেতনের ব্যবস্থা করে এবং এই নির্দিষ্ট কার্যকালের মধ্যে এই বেতন হ্রাসের ক্ষমতাও সভার নেই। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অন্তর্গত যে-কোনাে বিষয় এই বিচারালয়ের অধীন। জাতিপুঞ্জের যে-কোনাে সদস্য বিচারালয়ে মামলা রুজু করতে পারে। সদস্য-রাষ্ট্র ছাড়া অন্য যে-কোনাে রাষ্ট্রই এই সুবিধা চাইতে পারে। কিন্তু এই বিচারালয়ে কোনাে ব্যক্তিগত বিরােধের শুনানি হয় না। কোনাে সদস্য রাষ্ট্র যদি এই বিচারালয়ের রায় মানতে অসম্মত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট অপর পক্ষ নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বার্তা প্রেরণ করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাপরিষদ যে-কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
সাধারণ সভ্য কর্তৃক নির্বাচিত ১৮ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত। পরে এই পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪-তে দাঁড়িয়েছে। সদস্যগণের কার্যকাল ৩ বছর। জাতিপুঞ্জের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সহযােগিতার ভিত্তি দৃঢ় করাই এর মৌলিক উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য কার্যকর করবার জন্য পরিষদের কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ মানবহিতকর সংস্থা রয়েছে। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘ (I.L.O.), আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (I.M.F.) খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (F.A.O.), বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (W.H.O.), সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (U.N.E.S.C.O.), বিশ্বব্যাংক (I.B.R.D.), আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (I.T.O.) প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
এগুলি ছাড়া পরিষদের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি কমিশনও আছে, যেমন মানবীয় অধিকার কমিশন, ইউরােপীয় অর্থনৈতিক কমিশন, এশিয়া ও দূরপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক কমিশন প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। এই সকল সংস্থা ও কমিশনের বিবরণী আলােচনার জন্য সাধারণ সভায় পেশ করা হয়।
অছিপরিষদ
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ৭৬ থেকে ৯১ পর্যন্ত ধারাগুলির মধ্যে আন্তর্জাতিক অছি ব্যবস্থা সম্পর্কিত নিয়মাবলি সন্নিবেশিত হয়েছে। অনুন্নত দেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের উপযােগী করে গড়ে তুলবার জন্য ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট যে পরিষদ গঠনের ব্যবস্থা রয়েছে তাই অছিপরিষদ। অনগ্রসর জাতিসমূহের তত্ত্বাবধানে কাজ করে এই অছিপরিষদ। নিরাপত্তাপরিষদের স্থায়ী সদস্যগণ অছি অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলির সমসংখ্যক সভ্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হয়।
কর্মদপ্তর
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হল কর্মদপ্তর। একজন প্রধান কর্মসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেলের অধীনে ৮টি বিভাগ নিয়ে কর্মদপ্তর গঠিত। প্রধান কর্মসচিব নিরাপত্তাপরিষদের সুপারিশে সাধারণ সভা কর্তৃক ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।
প্রধান কর্মসচিবের কার্যকাল শেষ হলে পুননির্বাচিত হতে পারেন। প্রত্যেক বছর প্রধান কর্মসচিব সাধারণ সভায় বিবরণী পেশ করেন। অন্যান্য পরিষদ, কমিশন, কমিটি, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কর্মচারীগণ এবং বিশেষ সংস্থা সমস্ত বছর কী কাজ করেছে তা এই রিপাের্টে বর্ণনা করা হয়। প্রতিটি সংস্থা সম্বন্ধে সাধারণ সভার কী করণীয় তা প্রধান কর্মসচিব তার রিপাের্টে সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেন। প্রশাসনিক অধিকর্তা হিসাবে বিভিন্ন সংস্থার কার্যাবলির সঙ্গে প্রধান কর্মসচিবের প্রত্যক্ষ পরিচয় থাকে। সেইজন্য সাধারণ সভার প্রতিনিধিগণ তার প্রস্তাবগুলির ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন।
প্রশ্ন ৩) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের গঠন ও কার্যাবলি আলােচনা করাে।
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ জাতিপুঞ্জের একটি মুখ্য সংস্থা। যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠাই এর লক্ষ্য। এই অর্থে এটি একটি কল্যাণকর প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রসংঘের সনদের ১নং ধারায় বলা হয়েছে—“জাতিপুঞ্জ অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকএবং আন্তর্জাতিক সমস্যাসমূহ সমাধানে তৎপর হবে এবং জাতি, ভাষা, ধর্ম নির্বিশেষ মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে সচেষ্ট হবে।”
গঠন
এই পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৫৪। প্রতি ৩ বছর অন্তর সাধারণ সভা কর্তৃক ১৮ জন সদস্য নির্বাচিত হন। সদস্যদের কার্যকাল ৩ বছর। প্রত্যেক সদস্যের একটি ভােট আছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত করা হয়।
কার্যাবলি
সনদের ৬২-৭২ নং ধারায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কার্যাবলি বর্ণিত আছে। এই পরিষদের প্রধান কাজ হল:(i) আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিষয়ে পরিষদ পরীক্ষা করে এবং রিপাের্ট তৈরি করে। এই রিপাের্ট পাঠায় সাধারণ সভা ও অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে।(ii) মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি মর্যাদা জ্ঞাপন এবং ওইগুলিকে বাস্তবে প্রয়ােগ করার বিষয়ে সুপারিশ করা।(iii) পরিষদের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করা।(iv) সাধারণ সভার অনুমতিক্রমে অন্যান্য সংস্থাগুলির কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা।(v) জাতিপুঞ্জের অন্যান্য সংস্থাগুলি থেকে প্রতিবেদন গ্রহণ করার পর এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সুপারিশসহ সাধারণ সভার কাছে রিপাের্ট পেশ করা এই পরিষদের অন্যতম কাজ।(vi) নিরাপত্তাপরিষদের অনুরােধের ভিত্তিতে তথ্য সরবরাহ করে থাকে।(vii) সনদে উল্লেখিত এবং সাধারণ সভা কর্তৃক নির্দেশিত বিবিধ কাজ সম্পাদন করা।(viii) এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়ের ওপর নিয়মপত্রের (conventions) খসড়া তৈরি করে সাধারণ সভার কাছে তা পাঠানাে।(ix) বিশ্বের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা এবং কর্মসংস্থানের জন্য পরিষদ প্রয়াস চালাবে।(x) কোনাে সদস্যরাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত কোনাে বিষয়ে আলােচনা চলাকালীন এই আলােচনায় অংশগ্রহণের জন্য সেই সদস্য রাষ্ট্রকে নিমন্ত্রণ জানাতে পারে।
মূল্যায়ন
অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ উদবাস্তু পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়েরমােকাবিলায়, স্বাস্থ্য পরিসেবার কর্মসূচিকে রূপায়িত করার ক্ষেত্রে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারী স্বাধীনতা প্রসারের ক্ষেত্রে পরিষদ সাফল্য অর্জন করেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সহযােগিতার বন্ধন দৃঢ় করার ক্ষেত্রে এই সংস্থাটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছে। তবে পরিষদকে সাধারণ সভার অধীনে কাজ করতে হয়। এতে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের স্বাত ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ ছাড়া নিরাপত্তাপরিষদে বৃহৎ ও শিল্পোন্নতরাষ্ট্রগুলির যে প্রাধান্য রয়েছে তা থেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদও মুক্ত নয়। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির কর্তৃত্বের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কর্মসূচি রূপায়ণে ব্যর্থ হয়েছে পরিষদ। তা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ যে দুটি অতি প্রয়ােজনীয় কাজ করে চলেছে তা হল—(i) বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার ওপর ব্যাপক সমীক্ষা চালিয়ে এই সংস্থা এক বিপুল তথ্যভাণ্ডার গড়ে তুলেছে, যা গবেষণার কাজে সাহায্য করবে।(ii) বিভিন্ন কমিটি, কমিশন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ওপর সমন্বয়সাধন করে পরিষদ বিশ্বের উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য অবদান রেখে চলেছে।
প্রশ্ন ৪) জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার গঠন ও কার্যাবলি বর্ণনা করাে।
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সর্বাপেক্ষা প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা হল সাধারণ সভা। এই পরিষদ বা সভাকে ‘Town meeting of the World’ বা বিশ্বমানবের সংসদ বলা হয়। জাতিপুঞ্জের সকল সদস্য রাষ্ট্র সাধারণ সভার সদস্য। প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র একটি করে ভােটদান করে এবং অনধিক পাঁচজন করে প্রতিনিধি প্রেরণ করার অধিকারী। অধিবেশন শুরু হবার আগে প্রতিবারই একজন করে সভাপতি ও সতেরাে জন সহ-সভাপতি নির্বাচন করা হয়। প্রতি বছর সাধারণ সভার অধিবেশন হলেও কখনাে কখনাে বিশেষ অধিবেশনও হয়। নিরাপত্তাপরিষদ বা জাতিপুঞ্জের অধিকাংশ সদস্যের অনুরােধে প্রধান কর্মসচিব বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেন।
সাধারণ সভার কাজে সমতার নীতি অনুসরণ করে করা হয়। সাধারণ সভার কার্য পরিচালনার জন্য কয়েকটি কমিটি সাহায্য করে। যেমন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা কমিটি, অর্থনৈতিক কমিটি, স্থায়ী কমিটি, সামাজিক লােকহিতকর ও সাংস্কৃতিক কমিটি। অনেক সময় আবার সাধারণ সভা প্রয়োজন মনে করলে এই সভার সভাপতি, একুশজন সহ-সভাপতি, উপরিউক্ত কমিটির চেয়ারম্যানদের নিয়ে একটি সাধারণ কমিটি গঠন করতে পারে।
কার্যাবলি
সাধারণ সভার মর্যাদা ও অবস্থানের কথা স্মরণ রেখে তার কার্যাবলিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাধারণ সভাকে বহুমুখী কার্যাবলি সম্পাদন ও দায়িত্ব পালন করতে হয়। সাধারণ সভার কার্যাবলি ও ক্ষমতাকে ছয়টি ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা— শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার কাজ, বিতর্ক ও বিশ্বমানবতার প্রসারের কাজ, আন্তর্জাতিক আইন সংক্রান্ত কাজ, নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ, তত্ত্বাবধানের কাজ এবং সংবিধানের কাজ।
শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার কাজ
বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিরাপত্তাপরিষদের হাতে থাকলেও, অধিকাংশ দায়িত্বই পালন করে সাধারণ সভা। তাই নিরাপত্তাপরিষদকে ‘প্রাথমিক দায়িত্ব’ এবং সাধারণ সভাকে ‘গৌণ দায়িত্ব’ দেওয়া হয়েছে। বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মতানৈক্যের জন্য নিরাপত্তাপরিষদ অচল হয়ে যায় এবং সাধারণভাবেই তখন সমস্ত ক্ষমতা সাধারণ সভাকে অর্পণ করা হয়।
বিতর্ক ও বিশ্বমানবতার প্রসারের কাজ
জাতিপুঞ্জের সকল সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণসভা যে বিতর্কসভা তৈরি করে। তাতে সকল রাষ্ট্রই তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারার সুযােগ পায়। বিভিন্ন সমস্যার আলােচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় ও বিশ্বমানবতা প্রসারের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আলাপ-আলােচনার সুযােগ দেওয়া হয়। এই সভার মাধ্যমেই বিশ্বজনমতকে প্রভাবিত করা হয়।
আন্তর্জাতিক আইন সংক্রান্ত কাজ
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের ১৩নং ধারা অনুসারে সাধারণ সভা আন্তর্জাতিক আইনের প্রগতিশীল বিকাশ ঘটায় এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযােগিতার প্রসার সাধন করতে পারে। এ ছাড়া, সধারণসভা আন্তর্জাতিক আইন বিধিবদ্ধকরণ, মানবাধিকার রক্ষা এবং জাতি ধর্ম-বর্ণ-ভাষা নির্বিশেষে সকলের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে এবং উৎসাহ দান করে। এই অধিকার ফলপ্রসূ রার জন্য সাধারণ সভা সুপারিশও করতে পারে।
নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ
প্রধান কর্মসচিব, আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারপতি ও নিরাপত্তাপরিষদের অস্থায়ী সদস্যদের নির্বাচন করে সাধারণ সভা। অর্থনৈতিক সামাজিক পরিষদ এবং অছি পরিষদ, এমনকি কর্মসচিবালয়কেও তাদের কার্যাবলির বিভিন্ন রিপাের্ট সাধারণ সভার কাছে পাঠাতে হয়।সাংবিধানিক কার্যাবলি
উপরিউক্ত কার্যাবলি ছাড়াও সাধারণ সভার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল—সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়ােগ। নিরাপত্তাপরিষদের সম্মতিক্রমে অর্থাৎ স্থায়ী সদস্যসহ ন-জন সদস্যের সম্মতিতে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ‘সনদ সংশােধন সংক্রান্ত ক্ষমতা সাধারণ সভা প্রয়ােগ করে থাকে। এক্ষেত্রে আবার, সাধারণ সভায় উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যের দুই তৃতীয়াংশের সম্মতিতেই সনদ সংশােধিত হয়।
অন্যান্য কার্যাবলি
সাধারণ সভার অন্যান্য কার্যাবলির মধ্যে সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নিবর্তনমূলক বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতিপুঞ্জের বাজেট বিচার ও অনুমােদন, সদস্য রাষ্ট্রের চাঁদার পরিমাণ ধার্য ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য।
মূল্যায়ন
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে সাধারণ সভা নিছক একটি পরামশর্দাতা বিভাগ। সুপারিশ করাই-এর একমাত্র কাজ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নিকোলাস (Nicholas) বলেছেন, ‘প্রচারের জন্যই সাধারণ সভার সৃষ্টি।’ আবার অনেকে এই সভাকে “Talking shop’ বা বসবাসকারীর জায়গা’ বলে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কথাটি সত্য নয়। ভেটো (Veto) ক্ষমতার জন্যে নিরাপত্তা-পরিষদ অকেজো হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে সাধারণ সভার ওপর শান্তি রক্ষার দায়িত্ব এসে পড়েছে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ‘শান্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করে সে এ দায়িত্ব পালন করেছে।তা ছাড়া, সাধারণ সভায় সব রাষ্ট্রের প্রতিনিধি থাকে বলে এখানে আলােচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে বিশ্বজনমতে গড়ে ওঠে। অধ্যাপক ফ্রাঙ্কেল (Frankel) বলেছেন, এটি আলাপ-আলােচনা মঞ্চ হিসাবে গড়ে ওঠায় বিশ্বজনীন ঐক্যের পথ প্রশস্ত হয়েছে। এ ছাড়া এখানে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলি সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে যতই তাদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততই বৃহৎ শক্তির দাদাগিরি কমছে। এতে শক্তির ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটছে। সেদিক থেকে এই সভার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
প্রশ্ন ৫) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তাপরিষদের গঠন ও কার্যাবলি আলােচনা করাে।
উত্তর: মানবজাতির ইতিহাসে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে এটি গঠিত হয়। সনদের ১নং ধারায় এ কথা বলা হয়েছে। এই উদ্দেশ্য পূরণের প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তাপরিষদেরহাতে। সনদের ২৩ থেকে ৩২নং ধারায় নিরাপত্তাপরিষদের গঠন ও কার্যাবলি আলােচনা করা হল।
গঠন
বর্তমানে ৫ জন স্থায়ী ও ১০ জন অস্থায়ী সর্বমােট ১৫ জন সদস্যদের নিয়ে নিরাপত্তাপরিষদ গঠিত। পাঁচজন স্থায়ী সদস্যরা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া), ব্রিটেন, ফ্রান্স ও গণপ্রজাতন্ত্রী চিন। অস্থায়ী সদস্যরা সাধারণ সভা কর্তৃক দুবছরের জন্য নির্বাচিত হয়।
ভােটদান পদ্ধতি
সনদের ২৭ (১) ধারায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তাপরিষদের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের একটি করে ভােট থাকবে। পদ্ধতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ৯ জন সদস্যের সম্মতি প্রয়ােজন। অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে ৫ জন স্থায়ী সদস্যের সমর্থনসহ ৯ জন সদস্যের সমর্থন প্রয়ােজন।
কার্যাবলি
জাতিপুঞ্জের সনদের ২৪ থেকে ২৬ নম্বর ধারায় নিরাপত্তাপরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি বর্ণিত হয়েছে। সেগুলি হল—
(ক) শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা
নিরাপত্তা পরিষদের ক্ষমতা ও কার্যাবলি বর্ণিত হয়েছে। সেগুলি হল—
(ক) শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা
নিরাপত্তাপরিষদের প্রধান কাজ হল শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। আন্তর্জাতিক বিরােধ দেখা দিলে, নিরাপত্তাপরিষদ বিরােধের সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধের মীমাংসা করার পরামর্শ দিতে পারে। বিবাদমান দুটি পক্ষ যদি শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধের মীমাংসা করতে না পারে, তাহলে নিরাপত্তা-পরিষদ বিরােধ মেটাতে কিছু শর্ত আরােপ করতে পারে। এতে কাজ না হলে ৪১ নং ধারা অনুসারে শান্তিভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে শাস্তি হিসাবে তাদের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক, রেলপথ, সমুদ্রপথ, বিমানপথ প্রভৃতি যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার জন্য সদস্য-রাষ্ট্রগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এতেও যদি কাজ না হয়, তাহলে ৪২ নং ধারা অনুসারে শান্তিভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তাপরিষদ সদস্য রাষ্ট্রদের কাছ থেকে সামরিক সাহায্য চাইলে সদস্য রাষ্ট্রগুলি তা দিতে বাধ্য থাকে। সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্যপরিষদ একটি মিলিটারি স্টাফ কমিটি (Military Staff Committee) গঠন করতে পারে।
(খ) অছি সংক্রান্ত ক্ষমতা
যে-সকল অছি এলাকা সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাজের দায়িত্ব নিরাপত্তাপরিষদের হাতে অর্পণ করা হয়েছে। এই সকল এলাকায় ক্ষমতা প্রয়ােগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তাপরিষদ নানা বিষয়ে অছিপরিষদের সাহায্য চাইতে পারবে। এ ছাড়া, পরিষদ অছি সংক্রান্ত চুক্তির শর্তাবলি পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
(গ) শাস্তি দেবার ক্ষমতা
কোনাে সদস্য রাষ্ট্র জাতিপুঞ্জের বিধি বা নির্দেশ লঙ্ঘন করলে পরিষদ সেই সদস্য রাষ্ট্রকে শাস্তি দেবার বা বহিষ্কার করার জন্য সাধারণ সভার কাছে সুপারিশ করতে পারে।
(ঘ) নিয়ােগ ক্ষমতা
নিরাপত্তাপরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভা জাতিপুঞ্জে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। পরিষদের সুপারিশ ব্যতীত সাধারণ সভা নতুন সদস্য হবার জন্য কোনাে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এ ছাড়া নিরাপত্তাপরিষদের সুপারিশ ক্রমে সাধারণ সভা জাতিপুঞ্জের মহাসচিব ও আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের বিচারপতিদের নিযুক্ত করে।
(ঙ) নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত ক্ষমতা
অস্ত্রের প্রতিযােগিতা বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার পথে প্রধান বাধা। সেজন্য বলা হয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পরিষদ নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তাব কার্যকর করতে পারবে। পরিষদ মিলিটারি স্টাফ কমিটির (Military Staff Committee) এর সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে পরিকল্পনা তৈরি করার কথা সনদে উল্লেখ করা হয়েছে।
মূল্যায়ন
সনদে নিরাপত্তাপরিষদকে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তত্ত্বের সঙ্গে এর কাজের দুস্তর পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এর সমালােচনাগুলি নিম্নরূপঃ
(i) নিরাপত্তাপরিষদের গঠন এবং ভূমিকার মাধ্যমে সকল সদস্য রাষ্ট্রের সার্বভৌম সমানাধিকারের নীতি স্বীকৃত হয়নি। ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রকেই এখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০ জন সদস্যের কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা লক্ষ করা যায় না।
(ii) সনদে বর্ণিত শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরােধ মীমাংসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সমস্যা আছে। বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখার জন্য শান্তিপূর্ণ পথে বিরােধ মেটাতে চায় না। কখনও আবার বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্র শান্তি বিঘ্নিতকারী রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোনাে আগ্রাসী নীতিকে সমর্থন জানিয়ে শান্তির সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করেছে।(iii) নিরাপত্তাপরিষদকে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত করা হলেও তার জন্য প্রয়ােজনীয় স্থায়ী শান্তিবাহিনীর ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপত্তাপরিষদকে রাষ্ট্রসমূহের নিকট সেনাবাহিনী প্রেরণের জন্য অনুরােধ জানাতে হয়। ফলে বিশ্বশান্তির পক্ষে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
প্রশ্ন ৬) আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের (International Court of Justice) গঠন ও কার্যাবলি বর্ণনা করাে।
উত্তর: সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বিচার বিভাগের নাম হল আন্তর্জাতিক বিচারালয়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচারালয় অবস্থিত। আন্তর্জাতিক বিচারালয় ১৫ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত। বিচারপতিগণ সাধারণ সভা ও নিরাপত্তাপরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভােটে নির্বাচিত হন। বিচারকরা উন্নত নৈতিক চরিত্রের মানব হবেন। তাদের নিজ নিজ দেশের সর্বোচ্চ বিচারক পদে নিযুক্ত হবার মতাে যােগ্যতা থাকা প্রয়ােজন। বিচারপতিদের কার্যকাল নয় বছর। তবে তিন বছর অন্তর এক তৃতীয়াংশ বিচারপতিকে অবসর নিতে হবে। সকল বিচারপতি ঐক্যমত হলে তবে কোনাে বিচারপতিকে অপসারণ করা যাবে।
কার্যাবলি
সনদের রচয়িতাগণ আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকদের স্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। সেজন্য বিচারকদের অপসারণের ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যােগ্য বিচারপতিরা যাতে চাকুরি গ্রহণ করেন তার জন্য তাদের বেতন ও ভাতা করমুক্ত করা হয়েছে। বিচারকরা যাতে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে কোনাে পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে না পারে তার জন্য সে বিষয়ে ব্যবস্থা করাহয়েছে। এখানে উল্লেখ করার প্রয়ােজন—এই আদালতে কোনাে ব্যক্তি বিচারপ্রার্থী হতে পারে না। একমাত্র রাষ্ট্র বিচারপ্রার্থী হতে পারে। আদালতের কার্যাবলি নিম্নরূপঃ
(ক) স্বেচ্ছামূলক এলাকা
বিবদমান রাষ্ট্র নিজেদের ইচ্ছায় যে-কোনাে মামলা এখানে আনলে স্বেচ্ছামূলক এলাকায় তার বিচার করা হয়। এখানে বিবদমান রাষ্ট্রগুলির অনুমতি না পেলে আন্তর্জাতিক বিচারালয় বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারবে না।
(খ) আবশ্যিক এলাকা
সদস্য রাষ্ট্রগুলি বিভিন্ন বিরােধের নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে এই আদালতের এক্তিয়ারকে আবশ্যিক বলে মনে করতে পারে। এর মধ্যে আছে—কোনাে সন্ধি বা চুক্তির ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা, আন্তর্জাতিক দায়দায়িত্ব লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক দায়িত্ব ভঙ্গের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ প্রভৃতি।
(গ) পরামর্শ দান এলাকা
জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন বিভাগ এই আদালতের কাছে পরামর্শ নিতে পারে। তবে এই পরামর্শ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়।
সমালােচনা
বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের গুরুত্বকে অস্বীকার করেছেন। কারণ—
প্রথমত, বিবদমান রাষ্ট্রের সম্মতি না পেলে আদালত তাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
দ্বিতীয়ত, কোনাে রাষ্ট্র যদি আদালতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে, তাহলে কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না।
তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে বিচারপ্রার্থী হওয়া অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ বলে, ছােটো রাষ্ট্রের পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে বিচার চাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।
চতুর্থত, সনদে বলা হয়েছে, আদালত নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, বিচারকরা যে দেশের মানুষ সেই দেশের প্রতি বিচারকদের পক্ষপাতিত্ব দেখান।
পঞ্চমত, সনদের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা আদালতের হাতে দেও হয়নি। নিকোলাস (Nicholas) যথার্থই বলেছেন, — “জাতিপুঞ্জ এই আদালতের ওপর যথােচিত গুরুত্ব আরােপ করেনি।” তাই আদালতে মামলার সংখ্যাও গুরুত্ব কমে গেছে। কোনাে কোনাে বছর একটি বা দুটির বেশি মামলা এখানে আসে না। আবার যে সকল মামলা এখানে আসে সেগুলির তেমন গুরুত্ব থাকে না।
মূল্যায়ন
বিভিন্ন রাষ্টবিজ্ঞানী এর সমালোচনা করলে এই গুরুত্বকে অস্বীকার করা যাই না। এই আদালত বিভিন্ন বিরােধের মীমাংসা করেছে এবং রাষ্ট্রগুলি তা মেনেও নিয়েছে। যেমন, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে কয়েকটি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে বিরােধের মীমাংসা করে দিয়েছে। উভয় দেশ
বিচারালয়ের রায় মেনে নিয়েছে। বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে বিরােধের মীমাংসা করেছে। এই আদালত পূর্ণ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনি। একে মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে নিষ্ঠার সঙ্গে ও ভুত বিচারকার্য সম্পাদন করতে হবে। বাস্তবে আদালতের রায়ের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে গেলে এর পক্ষে ব্যাপক বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি যাতে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তার জন্যে চাপ সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়ােজন।
প্রশ্ন ৭) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাফল্য ও ব্যর্থতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
অথবা,
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কার্যাবলির মূল্যায়ন করাে।
উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ মারণলীলার পটভূমিতে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ অক্টোবর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ১ নং ধারায় সে-কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সারা বিশ্বে যাতে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উন্নতি ঘটে তার চেষ্টা করা এবং মানবাধিকার
জাতিপুঞ্জের সাফল্য বহু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন বিভিন্ন ধরনের সীমাবদ্ধতা সত্বেও জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন
(ক) শান্তি প্রতিষ্ঠা: শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ খালকে কেন্দ্র করে বড়াে রকমের যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। জাতিপুঞ্জের প্রচেষ্টায় এই বিবাদ এড়ানাে সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া কোরিয়া, কঙ্গে, পাক-ভারত যুদ্ধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে সন্ত্রাসবাদ বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড়াে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাদেন ও তার আলকায়দা জঙ্গি সংগঠন ও অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বিশ্বের শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। এ ব্যাপারে জাতিপুঞ্জ প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
(খ) আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা: এ ব্যাপারে জাতিপুঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অছিপরিষদের মাধ্যমে ১১ টি অছিভুক্ত দেশের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার ফলে প্রায় সবকটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
(গ) মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা: মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ প্রশংসার দাবি রাখে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জ মানবাধিকার সংক্রান্ত আইন ঘােষণা করে। এর ফলশ্রুতি হিসাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রে মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়েছে এবং মানবাধিকার কমিশনগুলি জনকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
(ঘ) অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি: সনদের রচয়িতারা মনে করেছিলেন, —পৃথিবীতে যদি বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য থাকে তাহলে শান্তি আসতে পারে না। সেজন্য দারিদ্র্য থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। U.N.D.P. নামে এক পরিকল্পনার মাধ্যমে অনুন্নত দেশগুলিকে কারিগরি ও কৌশলগত সাহায্য দিয়ে শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করেছে। UNCTAD– এর মাধ্যমে বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলির মধ্যে সহযােগিতার সম্প্রসারণ ঘটানাে হয়েছে।
ব্যর্থতা
বহু ক্ষেত্রে সফল হলেও এটি মানবজাতির আশাকে পূর্ণ করতে পারেনি। এর ব্যর্থতাগুলি নিম্নরূপঃ
প্রথমত, সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যার্থতার বহু উদাহরণ আছে। কাশ্মীর সমস্যার আজও সমাধান হয়নি। পাকিস্তানি হানাদারদের উগ্রপন্থী কার্যকলাপ উপত্যকার শান্তি বিঘ্নিত করছে। আরব-ইজরাইল সংঘর্ষ, ইরাক-ইরান বিরােধ, সিরিয়া-লেবানন সমস্যা, প্যালেস্টাইন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা আজ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, প্রিটোরিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে মানবাধিকার চরমভাবে লাঞ্চিত হয়েছে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বৃহৎ রাষ্ট্রের অসহযােগিতার ফলে কোনাে পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
তৃতীয়ত, জাতিপুঞ্জ তার অর্থভাণ্ডার থেকে যে অর্থ সাহায্য করছে, অনুন্নত দেশ সে ক্ষেত্রেও ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। যেটুকু অর্থ সাহায্য করছে, সেখানেও নানা অপমানজনক শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চতুর্থত, নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে জাতিপুঞ্জ তেমন সফল হতে পারেনি। আণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার কমানাের তেমন উদ্যোগ বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির অসহযােগিতার ফলে জাতিপুঞ্জ নিতে পারছে না।
পঞ্চমত, সন্ত্রাসবাদ দমনে জাতিপুঞ্জ শপথ নিলেও এখনও তেমন সাফল্য পাচ্ছে না। সম্প্রতি স্পেন, ইজরাইল, ইরাক প্রভৃতি দেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে।
মূল্যায়ন
কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও জাতিপুঞ্জের ভবিষ্যৎ অন্ধকার নয়। কারণ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বলিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হতে পারেনি। তা ছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির ক্ষেত্রে যেভাবে দায়িত্ব পালন করছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল — জাতিপুঞ্জ আজ বিশ্বজনমত গঠনের বলিষ্ঠ ম হিসাবে গড়ে উঠেছে। অধ্যাপক ফ্র্যাঙ্কেল বলেছেন, —জাতিপুঞ্জ আলাপ-আলােচনার মঞ্চ হিসাবে গড়ে ওঠায় বিশ্বজনীন ঐক্যের পথ প্রশস্ত হয়েছে। এ ছাড়া, বর্তমানে এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বৃহৎশক্তির দাদাগিরি অনেকাংশে কমেছে।
তাই জাতিপুঞ্জের মহাসচিব ভালডাইম বলেছেন, এই সংগঠনকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। কারণ এর কোনাে বিকল্প সংগঠন নেই, যে বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করবে। প্রকৃতপক্ষে জাতিপুঞ্জের সাফল্যের ওপর মানবজাতির অস্তিত্ব নির্ভর করছে। জাতিপুঞ্জের অবলুপ্তি হলে মানবজাতি ধ্বংসের মুখে পড়বে। এ কথা আজ সবাই মনে করছে। তবে গুডরিচ বলেছেন, “জাতিপুঞ্জকে সফল করে তুলতে হলে, স্থায়ী সদস্যদের আচরণের পরিবর্তন হওয়া প্রয়ােজন। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি রাষ্ট্রের সক্রিয় সহযােগিতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা জাতিপুঞ্জের সাফল্যের চাবিকাঠি।
প্রশ্ন ৮) শান্তিরক্ষার কাজে (Peace-keeping Process) জাতিপুঞ্জের ভূমিকা পর্যালােচনা করাে।
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ হত্যালীলা পৃথিবীর মানুষের মনে উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গড়ে উঠল জাতিসংঘ (League of Nations)। কিন্তু বৃহৎ শক্তিগুলির নির্লিপ্ততা ও কয়েকটি রাষ্ট্রের আগ্রাসনী মনােভাবের ফলে জাতিসংঘের সমাধি রচিত হল — শুরু হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধের ভয়ংকর মারণলীলা পৃথিবীর মানুষকে শান্তির জন্য আকুল করে তুলল। তার ফলে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নিল জাতিপুঞ্জ (United Nations) – এর প্রধান উদ্দেশ্য হল বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। জাতিপুঞ্জের সনদের ১ নং ধারায় সে কথা বলা হয়েছে।
শান্তিরক্ষা কাজের অর্থ
সাধারণভাবে বলা যায়, আন্তর্জাতিক শক্তিরক্ষার জন্য রাষ্ট্রসংঘের ভূমিকার নাম হল শান্তিরক্ষার কাজ। দুটি গােষ্ঠী বা রাষ্ট্রের মধ্যে যদি কোনাে বিরােধ চরম আকার ধারণ করে এবং তা যদি বিশ্বশান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন রাষ্ট্রসংঘের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাহিনী তৃতীয় পক্ষ হিসাবে বিরােধের মীমাংসা ও শান্তিরক্ষার চেষ্টা করে। পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না ঘটে, তার জন্য সচেষ্ট হয়। এই ধরনের কাজ করাকে বলে শান্তি স্থাপনের কাজ।
শান্তিরক্ষার মূলনীতি
অধ্যাপক পামার ও পারকিন্স (Palmer and Perkins) শান্তিরক্ষার কয়েকটি মূলনীতির কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল :
প্রথমত, শান্তিরক্ষার কাজে রাষ্ট্রসংঘ কোনাে দমনপীড়নমূলক ব্যবস্থা নেবে না। আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে বিরােধ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে।
দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী যখন কাজ করবে তখন নিরপেক্ষতা অবলম্বন করবে। কোনাে পক্ষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে না।
তৃতীয়ত, রাষ্ট্রসংঘ কোনাে বিরােধের অবসানের জন্যে কোনাে রাষ্ট্রে সেনাবাহিনী পাঠাবে তখন সেই রাষ্ট্রের সম্মতি নেবে।
শান্তিরক্ষায় কাজের সমস্যা
প্রথমত, শান্তিরক্ষার কাজে সেনাবাহিনী পাঠাতে গেলে তাদের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়ােজন। প্রথমদিকে স্বেচ্ছায় সদস্যরা অর্থ দিত। কিন্তু এখন অনেকে অর্থ দিতে অস্বীকার করছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থ দিতে রাজি নয়। | এমনকি সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না।
দ্বিতীয়ত, শান্তিরক্ষার জন্য পাঠানাে সেনাবাহিনী সেই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বে না। নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে তারা জড়িয়ে পড়ছে।
তৃতীয়ত, শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠাবে কে — এই নিয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নিরাপত্তাপরিষদের স্থায়ী সদস্যরা বলছে, তারাই সেনাবাহিনী পাঠাবে। কিন্তু অনেকের অভিমত হল মহাসচিব পাঠাবে। এর ফলে অচল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
শান্তিরক্ষার সাফল্য
শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রের অনেক অসুবিধা আছে। পর্যাপ্ত অর্থ নেই, সৈন্য নেই এমনকি অনেকের আন্তরিকতা নেই। তবুও এর সাফল্যকে অস্বীকার করা যাবে না।
(ক) সুয়েজ সংকট: সুয়েজ খাল মিশরে অবস্থিত। চুক্তি অনুসারে এই খাল সকলের ব্যবহারের জন্য খােলা থাকবে। কিন্তু ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের এই খাল জাতীয়করণ করেন। ইজরাইল, মিশরকে আক্রমণ করে। ব্রিটেন ও ফ্রান্স তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। যুদ্ধ শুরু হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যায়। ক্রমণকারীরা সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়।
(খ) কঙ্গো সংকট: ৮০ বছর ধরে কঙ্গে বেলজিয়ামের অধীনে ছিল। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে সে স্বাধীন হয়। কিন্তু অচিরেই সেখানে সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই সুযােগে বেলজিয়াম কঙ্গের কয়েকটি শহর দখল করে। রাষ্ট্রসংঘ সেনাবাহিনী পাঠায়। বেলজিয়ামের সৈন্যরা কঙ্গো ছেড়ে চলে যায়।
(গ) কাশ্মীর সমস্যা: দেশভাগ হবার সময় ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ কাশ্মীরকে দাবি করে। পাকিস্তান হঠাৎ কাশ্মীর আক্রমণ করলে কাশ্মীরের হিন্দু মহারাজা ভারতের সাহায্য নেয়। ভারত পালটা আক্রমণ করে। বিষয়টি নিরাপত্তাপরিষদে যায়। পরিষদ একটি কমিশন গঠন করে। কমিশন যুদ্ধবিরােধী রেখা টেনে দেন। শান্তিরক্ষা বাহিনীর হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
(ঘ) সাইপ্রাস সমস্যা: সাইপ্রাস রাষ্ট্রে মােট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের চার ভাগ গ্রিক, এক ভাগ তুর্কি, ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সাইপ্রাসে গ্রিকরা আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবি ছিল সাইপ্রাসকে গ্রিসের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। সাইপ্রাসের তুর্কিরা তুরস্কের সঙ্গে মিলনের জন্যে আন্দোলন শুরু করে। একে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধে। নিরাপত্তাপরিষদ মীমাংসা করতে ব্যর্থ হলে সাধারণ সভা শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠিয়ে অবস্থা আয়ত্তে আনে।
মূল্যায়ন
সুতরাং অধিকাংশ দেখা ক্ষেত্রে যাচ্ছে স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জ শান্তিপ্রতিষ্ঠা শান্তিরক্ষার করতে ক্ষেত্রে পারেনি বেশ। কিছু কাশ্মীর সাফল্য তার পেয়েছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু আসল কারণ হল বৃহৎ শক্তি গুলির মধ্যে বিরােধ থাকায় সাফল্য আসছে না। শুধু তাই নয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি রাজনৈতিক স্বার্থে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দিচ্ছে। ফলে শান্তির পথে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চাই বিশ্বে শাস্তি প্রতিষ্ঠিত হােক। এর জন্যে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সাধারণ সভাকে এর জন্যে সক্রিয় হতে হবে।
Download সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ - United Nations PDF
File Details:-
File Format:-PDF
Quality:- High
File Size:- 5 Mb
File Location:- Google Drive
Click Here to Download
আরও পড়ুন:
Others Important Link
Syllabus Link: Click Here
Questions Paper Link: Click Here
Admit Card Link: Click Here
Result Link: Click Here
Latest Job: Click Here
Age Calculator: Click Here
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box