সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর - Indus Valley Civilization Question Answer

সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় Indus Valley Civilization Question Answer PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF


সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর - Indus Valley Civilization Question Answer

নিচে সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF টি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে এই পোস্টটির নীচে যান এবং ডাউনলোড করুন।


সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর - Indus Valley Civilization Question Answer


সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF

Dear Students, Gksolves.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF. প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি চাকরির যেমন Railway Group D | PSC Clerkship | WBCS | SSC CHSL | SSC CGL | SSC MTS | WBP Abgari Constable | WBP SI | WBP Constable | ICDS Supervisor | Railway Group D | RRB NTPC | PSC Miscellaneous | TET  | Upper Primary  | Group D ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই সমস্ত চাকরির পরীক্ষা ছাড়াও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সম্বন্ধে আপনার সাধারণ ধারণা থাকা দরকার, তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF যা আপনাদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ধারণা গঠন করতে বিশেষ সাহায্য করবে। 



Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর - Indus Valley Civilization Question Answer


সিন্ধু সভ্যতা


সিন্ধু সভ্যতার সূচনা:

৫১৮ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে পারস্য সম্রাট দরায়ুস (দরায়বৌষ) সিন্ধু এলাকাসহ ভারতের বেশ কিছু অংশ জয় করেন। পারসিক সাম্রাজ্যের এই অংশের নাম হয় ‘হিদুষ’। ইরানীয় ভাষায় ‘স’-এর উচ্চারণ না থাকায় ‘স’ হয়ে যায় ‘হ। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরােডােটাস পারসিক সূত্র থেকে ভারত সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করেন। কিন্তু গ্রিক ভাষায় ‘হ’-এর উচ্চারণ থাকায় তাঁর লেখায় ‘হ’ হয়ে যায় ‘ই’, কারণ ‘হ’-এর বিকল্প রূপে ‘ই’-কে ধরা হয়। সুতরাং, হেরােডােটাস ভারতকে ইন্ডিয়া’ নামে উল্লেখ করেন। যা ছিল ‘হিদুষ’, গ্রিক বিবরণে তা ‘ইন্ডিয়া’ হয়ে যায়। এরপর ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আরা ভারতবর্ষ জয় করার পরে সিন্ধুর নামকরণ করে হিন্দুস্থান (Land of Hindu)। যে সমস্ত মানুষ এখানে বাস করত তাদের বলে হিন্দু এবং তাদের ধর্ম হিন্দু (Hinduism)। ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা হল মেহেরগড় সভ্যতা। দুজন ফরাসি পুরাতত্ত্ববিদ (জঁ ফ্রাসােয়া জারিজ, রিচার্ড এইচ মিজে) ১৯৭৩ থেকে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বালুচিস্তানের অন্তর্গত মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন। এই সভ্যতা ৯০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে গড়ে ওঠে। মেহেরগড় অবস্থিত বােলান নদীর তীরে কোচি উপত্যকায়। এটি মহেঞ্জোদারাের ১৫০ মাইল উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এটি বালুচিস্তান প্রশাসনের অন্তর্গত। প্রথম কৃষিকাজের নমুনা পাওয়া যায় এই সভ্যতায়।


সিন্ধু সভ্যতার বিস্তৃতি

সিন্ধু সভ্যতা ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা। এটি মেসােপটেমিয়া ও মিশরের চেয়েও বড়াে সভ্যতা এর বিস্তৃতি ছিল ১.৩ মিলিয়ন বর্গ কিমি.। ২৫০টি কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ২৮০০টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি উত্তরে মান্দা (জম্মু ও কাশ্মীর) থেকে দক্ষিণের ডিমাবাদ (মহারাষ্ট্র), পশ্চিমে সুদকাজেন্দার (পাকিস্তান ও ইরান বর্ডার) থেকে পূর্বে আলমগীরপুর (উত্তরপ্রদেশ) পর্যন্ত বিস্তৃত। ব্যাসামের মতে উত্তর-দক্ষিণে ৯৫০ মাইল ব্যাপী বিস্তৃত। রনবীর চক্রবর্তীর মতে এই সভ্যতা সাতলক্ষ বর্গ কিমি. বিস্তৃত ছিল।


সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল

জন মার্শালের মতে সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল হল ৩২৫০ থেকে ২৭৫০ খ্রিস্টাপূর্বাব্দ। জন মার্শাল প্রথম সিন্ধুসভ্যতা কথাটি ব্যবহার করেন এবং তিনি প্রথম সভ্যতার কালসীমা পরিমাপ করেন ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে। সিন্ধুসভ্যতায় প্রাপ্ত শীলমােহর থেকে অনুমান করা হয় সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল হল ২৩৫০ থেকে ১৭৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। অধিকাংশ ঐতিহাসিকরা মনে করেন সিন্ধু সভ্যতার প্রকৃত সময়সীমা হল ৩০০০ খ্রিস্টাপূর্বাব্দ থেকে ১৫০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়াল্টার ফায়ার সার্ভিস কোয়েট্টা উপত্যকা খনন করে প্রাপ্ত শীলমােহর থেকে প্রমাণ করেন সিন্ধু সভ্যতার সময়সীমা ২০০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক ডি পি আগরওয়াল বলেন যে সিন্ধু সভ্যতার সময়সীমা হল ২৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৭৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। হুইলার, সি. জে. গ্যাড এবং ব্যসামের মতে ২৫০০ থেকে ১৫০০ খ্রিস্ট পূর্বের মধ্যে।


সিন্ধু সভ্যতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান

হরপ্পা: সিন্ধু সভ্যতার প্রথম আবিষ্কৃত স্থানটি হল হরপ্পা। হরপ্পা পঞ্জাবের মন্টোগােমারী জেলায় রাভি নদীর তীরে অবস্থিত। দয়ারাম সাহানী ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে হরপ্পা আবিষ্কার করেন। এর পরে সিন্ধু সভ্যতার নাম হল হরপ্পা সভ্যতা। হরপ্পা প্রথমে পর্যবেক্ষণ করেন ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে ম্যাসন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে এম এস ভেটস (Vats) খনন কার্য চালান। বার ইউনিট শস্যাগার, কফিন সমাধি, তামার ইক্কা, তলােয়ার, পাথরের নর্তকী মূর্তি, লিঙ্গ, যােনি এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শীলমােহর পাওয়া গেছে। হরপ্পা ছিল প্রধান নৌকা (boat) তৈরির কেন্দ্র। হরপ্পার চারদিক ছিল সিটাডেল দ্বারা পরিবেষ্টিত। প্রতিটি শস্যাগার ছিল ৫০ x ২০ ফুট। এগুলি ইট দিয়ে তৈরি ছিল। হরপ্পায় যে ছােটো ছােটো একক ঘর ছিল এগুলি মনে করা হয় এখানে শ্রমিকরা বাস করত।


মহেঞ্জোদারাে: সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম কেন্দ্র হল মহেঞ্জোদারাে। লাহােরের লারকানা অঞ্চলে সিন্ধু নদীর তীরে এটি অবস্থিত। মহেঞ্জোদারাে কথার অর্থ হল ‘মৃতের স্তুপ। এটি আবিষ্কার করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে। এর জনসংখ্যা ছিল ৪১ থেকে ৪৫ হাজারের মধ্যে। এখানে বৃহত্তম স্নানাগার (Great bath) পাওয়া গেছে যার দৈর্ঘ্য ৩৯ ফুট, প্রস্থ ২৩ ফুট এবং গভীরতা ৮ ফুট। স্নানাগারের মেঝে ছিল সুন্দর পােড়া ইটের। ইটগুলাে তৈরি হয় জিপসাম এবং মর্টার দিয়ে। স্নানাগারটি ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। মহেঞ্জোদারাের বৃহত্তম বাড়িটি হল শস্যাগার (Great Granary)। এটি দৈর্ঘ্যে ১৫০ ফুট, প্রস্থে ৫০ ফুট। এখানে বহু স্তম্ভ বিশিষ্ট সভাগৃহ এবং বড়াে আয়তক্ষেত্রাকার বাড়ি পাওয়া গেছে। মনে করা হয় এগুলি ব্যবহৃত হত। প্রশাসনিক কাজে। আগুনের বেদী (Fire Altars), পশুপতি শীলমােহর, মাতৃমূর্তি, জোড়া সমাধি, টেরাকোটার গােরুর গাড়ি এবং চাকাসমেত গােরুর গাড়ি, ব্রোঞ্জের নর্তকীমূর্তি, সােনার অলঙ্কার, স্টিটাইট (Steatite) ও টেরাকোটায় নির্মিত জাহাজ মহেঞ্জোদারােতে পাওয়া গেছে।


লােথাল: লােথাল বিশ্বের প্রাচীনতম পােতাশ্রয়। লােথাল অবস্থিত ছিল বর্তমান গুজরাটের আমেদাবাদ অঞ্চলের সারাঙ্গা জেলায়। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে এস.আর.রাও (S. R. Rao) লােথাল আবিষ্কার করেন। এর চারদিকে উচু প্রাচীর ছিল মূলতঃ বন্যা প্রতিরােধের জন্য। ১৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এখানে প্রথম ধানের চাষ হয়। লােথাল মূলতঃ শেলের (Shell) অলঙ্কার এবং পুঁথির অলঙ্কারের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে আগুনের বেদী, টেরাকোটার ঘােড়া, পার্শিয়ান শীলমােহর, তুষ, মাছ ও পাখি চিত্রিত বাসনপত্র (Pottery), হরপ্পার শীলমােহর, জোড়া কবর এবং কাপড়ের টুকরাে পাওয়া গেছে।


কালিবঙ্গান: কালিবঙ্গান ছিল বর্তমান রাজস্থানের গঙ্গানগরের হনুমানগড়ে। কালিবঙ্গান আবিষ্কার করেন এ. ঘােষ (A. Ghosh) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে। এখানে আয়তাকার কবর, আইভরি নির্মিত চিরুনী, তামার বালা, কাঠের খেলাগাড়ি, কাঠের লাঙল, লিঙ্গ ও যােনি এবং তামার ষাঁড় পাওয়া গেছে।


চানহুদারাে: এটি একমাত্র স্থান যেখানে কোনাে দুর্গ ছিল না। চানহুদারাে সিন্ধু প্রদেশের সরকন্দ অঞ্চলে অবস্থিত। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে এম জি মজুমদার (M. G. Mazumdar) এই স্থান আবিষ্কার করেন। এখানে কালির দোয়াত, পুঁথি তৈরির দোকান, শেলের জিনিষ এবং বালার জিনিষ পাওয়া গেছে। চানহুদারাের জলনিকাশী ব্যবস্থা ছিল সবচেয়ে সুন্দর। এখানে টিন, তামা, সােনা, রূপার ব্যবহার হত।


সুক্তাজেন্দোর: এটি অবস্থিত দক্ষিণ বালুচিস্তানের মাকরাণ উপকূলে। স্যার অরেলস্টাইন এটি আবিষ্কার ও খনন করেন। এখানে তামার কুঠার, ও পাখির ছবি আঁকা বাসন পাওয়া গেছে। এটি ছিল একটি উপকূলীয় বাণিজ্য কেন্দ্র।


বনওয়ালী: এটি অবস্থিত হরিয়ানার হিসার জেলাতে। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে আর.এস. বিস্ত (R. S. Bisht) এটির খননকার্য চালান। এখানে কোনাে নর্দমা ছিল না। এখানে ভালাে জাতের বার্লি পাওয়া গেছে। বারােটি শিংযুক্ত বাঘের শীলমােহর পাওয়া গেছে। মাটির লাঙলের মডেলও এখানে পাওয়া গেছে। এই স্থান ছিল হরপ্পা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সভ্যতার মিশ্রণ।


রংপুর: এটি গুজরাটের লােথাল থেকে ৮০ কিমি. দূরে অবস্থিত। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে এম.এস ভাটস (M.S. Vats) এটি আবিষ্কার করেন এবং ১৯৫৭-৫৮ খ্রিস্টাব্দে এস. আর. রাও (S.R. Rao) এটির খননকার্য চালান। এখানে ধানের তুষ, ছয় প্রকারের বাসনপত্র পাওয়া গেছে।


সুরকোটডা: এটি গুজরাটের কচ্ছ (Kuchcha) অঞ্চলে অবস্থিত। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জগপত যােশী এটি আবিষ্কার করেন। সমাধিগৃহ, ঘােড়ার দেহাংশ ইত্যাদি এখানে পাওয়া গেছে।


কোটদিজি: এটি অবস্থিত সিন্ধের ক্ষিরপুর অঞ্চলে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ঘুরি এটি আবিষ্কার করেন। এখানে পাথরের তীরের মাথা, যাঁড়ের প্রতিকৃতি, পিপুল পাতা, স্টিটাইট শীলমােহর, তামাব্রোঞ্জের বালা, কাচা ইটের মেঝে ইত্যাদি পাওয়া গেছে।


রােপার: এটি অবস্থিত পাঞ্জাবের শতদ্রু নদীর তীরে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে ওয়াই.ডি.শর্মা (Y. D. Sharma) এটি আবিষ্কার করেন। এখানে হরপ্পার মতাে বাসনপত্র, ডিম্বাকার পিট, কুকুরের সমাধি, এবং তামার কুঠার পাওয়া গেছে।


আলমগীরপুর: এটি উত্তরপ্রদেশের মীরাট জেলার হিন্দন নদীর তীরে অবস্থিত। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় এটি আবিষ্কার করে। এখানে জার বা পাত্র, চোঙাকৃতি (cylindrical) বাসনপত্র পাওয়া গেছে। এই স্থানের প্রধান বৈশিষ্ট্য পেন্টেড গ্রেওয়্যার।


আলমুরাদ: এটি সিন্ধুর দাদু অঞ্চলে অবস্থিত। এটি ছিল দুর্গ পরিবেষ্টিত এবং মাঝে ছিল একটি বড়াে কুঁয়াে। এখানে লাল ও কালাে রঙের বাসন পাওয়া গেছে।


ধােলাভীরা: ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে জে.পি.জোশী (J.P. Joshi) এটি আবিষ্কার করেন এবং ১৯৯০-৯১ খ্রিস্টাব্দে খননকার্য চালান আর.এস.বিস্ত (R.S. Bist)। এটির দুটি অংশ। একটি সিটাডেল (Citadel) এবং অন্য নিম্ন শহর অঞ্চল। এটি বিখ্যাত সুন্দর জল সরবরাহ ও নিকাশী ব্যবস্থার জন্য। এখানে সাইনবাের্ড পাওয়া গেছে। এটি গােলাপী সাদা রং-এর দেওয়াল, রাস্তা, মেঝে ইত্যাদি দ্বারা চিত্রিত ছিল।


বালাকোট: এটি করাচীর লাসবেলা অঞ্চলে অবস্থিত। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে জর্জ এফ. দালেস (G.E. Dales) এটি আবিষ্কার করেন। পাথরের জার, শেলের জিনিষ এবং পুঁথির জিনিষের জন্য এটি বিখ্যাত।


দেশালপুর: এটি গুজরাটের ভূজ অঞ্চলে ভাদর নদীর তীরে অবস্থিত। পি.পি.পান্ডে এবং এম. কে. ধাকি এটি আবিষ্কার করেন। এখানে একটি দুর্গ পাওয়া গেছে। আলহাদিনাে ও করাচীর উপকূল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। ডব্লিউ. এ. ফেয়ারসার্ভিস এটি আবিষ্কার করেন।


রাখিগ্রহী: অমরেন্দ্রনাথ এটি আবিষ্কার করেন। এখানে মহিলাদের সমাধি, পশুপালন (Animal Husbandry) এবং হস্তশিল্প পাওয়া গেছে।


হরপ্পা সভ্যতার বৈশিষ্ট্য

1. এটি ছিলো তাম্রপ্রস্তর যুগের সভ্যতা।

2. তারা লোহার ব্যবহার জানতো না।

3.তারা তামা গলিয়ে ধাতু নিষ্কাশন করে প্রয়োজনীয় হাতিয়ার ও গৃহস্থালির সরঞ্জাম তৈরি করতো।

4. তাদের সমাজ ব্যবস্থা ছিলো মাতৃতান্ত্রিক।

5.সমাজে বাণিজ্য জীবী বুর্জোয়াদের প্রাধান্য ছিলো খুব।

6. নগর ছিলো সুপরিকল্পিত।

7. প্রশস্ত রাস্তাঘাট ও উন্নত পয়প্রণালী ব্যবস্থা ছিলো দেখার মতো।

8. সে যুগের পৌরশাসন ব্যবস্থা ছিলো দৃঢ়। সব নাগরিকদের এই ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর ভাবে পালন করতে বাধ্য করা হতো।

9. মৃৎশিল্প ও ধাতুশিল্পের বিকাশ ঘটেছিলো এই সময়।

10. শিল্পের উন্নতি বহিরাগত বানিজ্যের সহায়ক হয়েছিলো।


হরপ্পা সভ্যতার অর্থনীতি

সিন্ধু সভ্যতায় লােথাল এবং রংপুরে ধানের ব্যবহারের নিদর্শন মিলেছে। এছাড়া দুপ্রকার গমের চাষ হত। ছােটোদানার বার্লির চাষ হত। অন্যান্য শষ্যের মধ্যে খেজুর, সর্ষে, সীসেম, তুলা এবং বিভিন্ন প্রকারের মটরের চাষ হত। এখানে আখচাষের কোনাে প্রমাণ নেই। সিন্ধুসভ্যতার মানুষরাই পৃথিবীতে প্রথম তুলার চাষ করে।

ভেড়া ও ছাগলের সঙ্গে এখানে কুঁজ বিশিষ্ট ষাঁড়ের নিদর্শন মিলেছে। এছাড়া ভারতীয় বন্য শূকর, মহিষ ইত্যাদি ছিল উল্লেখযােগ্য প্রাণী। কালিবঙ্গানে মিলেছে উটের হাড়। আমরি থেকে যে শীলমােহর পাওয়া গেছে সেটি ভারতীয় গন্ডারের ছবিযুক্ত। এছাড়া সম্বর হরিণ, ডােরাকাটা দাগবিশিষ্ট হরিণ, হগ হরিণ এবং কয়েকপ্রকারের কচ্ছপের নিদর্শন মিলেছে এই অঞ্চলে।

হরপ্পা সভ্যতায় ব্রোঞ্জের মূর্তিশিল্পী, স্বর্ণকার, ইট তৈরির কারিগর, তাতি, নৌকা তৈরির শিল্পী, টেরাকোটার তৈরি ইত্যাদির নিদর্শন মেলে। বালাকোট, লােথাল, চানহুদারাে ইত্যাদি কেন্দ্রগুলি ছিল শেল তৈরি ও বালা তৈরির প্রধান কেন্দ্র। কার্নেলিয়ান পাথর থেকে ওই যুগে পুঁথি তৈরি করা হত। পুঁথি, ব্রেশলেট, বােতাম ইত্যাদির নিদর্শন পাওয়া গেছে।

অভ্যন্তরীণ ব্যাবসাবাণিজ্য চলত রাজস্থান, সৌরাষ্ট্র, মহারাষ্ট্র, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের মধ্যে। বিদেশি ব্যাবসাবাণিজ্য চলত মেসােপটেমিয়া বা সুমের এবং বাহারিণের মধ্যে। আমদানীকৃত মূল্যবান ধাতুগুলি হল সােনা (আফগানিস্তান, পারস্য এবং দক্ষিণ ভারত থেকে), তামা (রাজস্থান, বালুচিস্তান এবং আরব থেকে), টিন (আফগানিস্থান ও বিহার থেকে), ল্যাপিস লাজুলি (আফগানিস্থান থেকে), টরকোয়েস (পারস্য থেকে) সীসা (পূর্ব অথবা দক্ষিণ ভারত থেকে), ঝিনুক (সৌরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ ভারত থেকে), জেড পাথর (মধ্য এশিয়া) কার্নেলিয়ান ও এ গেথ (সৌরাষ্ট্র থেকে)। সিন্ধুসভ্যতার রপ্তানীকৃত দ্রব্যগুলি হল – -গম, মটর, তৈলবীজ, তুলাের দ্রব্য, বাসনপত্র (Pottery), পুঁথি, টেরাকোটার মূর্তি, হাতির দাঁতের দ্রব্য। সুমেরের মানুষেরা নিম্নসিন্ধু অঞ্চলকে বলত মেলুহা। এরা দুটো বাণিজ্যকেন্দ্রের নাম দেয় দিলমান। 

এই দুটি জায়গা হল বাহারিণ এবং মাকান বা মাকরান উপকূল। সিন্ধু সভ্যতার দুডজনের মত শীলমােহর মেসােপটেমিয়ার বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। যেমন উর, কিশ, সুসা, লাগাস, তেল আসমার ইত্যাদি। তেমনি মেসােপটেমিয়ার বিভিন্ন ধাতুর তৈরি জিনিষ, পাথরের পাত্র পাওয়া গেছে মহেঞ্জোদারােতে। মেসােপটেমিয়াতে পার্শিয়ান গালফ শীলমােহর পাওয়া গেছে। ব্যাবসাবাণিজ্য চলত স্থল ও জলপথে। গােরুরগাড়ি এবং বলদের নিয়ােগ করা হত স্থলপথের জন্য এবং জাহাজ ও নৌকার দ্বারা জলপথে ব্যাবসা হত। লােথালে একটি টেরাকোটার জাহাজের মডেল মিলেছে। এছাড়া আধুনিক এক্কা বা ইক্কশ্রেণীর গাড়ির নিদর্শন মিলেছে। এই তথ্য সঠিক মনে হয় না, কারণ এক্কা গাড়ি বাহিত হয় ঘােড়ার দ্বারা। সিন্ধু সভ্যতায় ঘােড়া ছিল না।


হরপ্পা সভ্যতার সমাজ ও সংস্কৃতি

সিন্ধু সভ্যতার রাজনীতি সম্পর্কে কোনাে পরিষ্কার ধারণা নেই। ডি.ডি. কোশাম্বীর মতে পুরােহিতরাই সিন্ধু সভ্যতায় শাসন করত। কিন্তু আর.এস.শর্মার মতে বণিকরাই ছিল সর্বেসর্বা। সিন্ধু সভ্যতার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি যাই হােক না কেন এখানে সুদক্ষ সুগঠিত শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল।

হরপ্পা সভ্যতার প্রধান পুরুষ দেবতা ছিল পশুপতি যাকে ব্যাসাম আদিশিব বলেছেন। একটি শীলমােহরে ধ্যানরত অবস্থায় নীচু সিংহাসনে তাকে উপবিষ্ট দেখা যায়। তার তিনটি মাথা, দুটি শিং এবং চারদিকে চারটি পশুদ্বারা বেষ্টিত। এগুলি হল হাতি, বাঘ, গণ্ডার ও মহিষ এবং পায়ের কাছে রয়েছে দুটো হরিণ। এছাড়া মাতৃদেবী মাতৃভূমি, লিঙ্গ, যােনি ইত্যাদির পূজা করা হত। এছাড়া তারা প্রকৃতি, অশ্বত্থাগাছ, কুঁজবিহীন যাঁড় পূজা করত এবং তারা ভূত এবং বিভিন্ন অশুভ শক্তিতে বিশ্বাসী ছিল। এখানে একটি ধ্যানরত মূর্তি পাওয়া গেছে যার চারদিকে কোবরা বা গােখরাে সাপ রয়েছে।

হরপ্পায় যে লিপি পাওয়া গেছে সেগুলি চিত্রিত (Pictrographic)। এগুলি মাছ, পাখি, মানুষের বিভিন্ন রূপ ইত্যাদির দ্বারা লিপিগুলি উপস্থাপিত। হরপ্পার লিপিতে চিহ্ন রয়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ মতাে। এর মধ্যে ৪০ বা ৬০টি হল প্রধান এবং অন্যগুলি হল এর বিভিন্ন রূপ। হরপ্পায় প্রাপ্ত শীলমােহর থেকে যে ভাষাগুলি পাওয়া গেছে সেগুলি মনে হয় দ্রাবিড় ভাষা। ভারতীয় পণ্ডিত মহাদেবন পরীক্ষা করে দেখান এগুলি দ্রাবিড় হাইপােথিসিস। কিনিয়ার উইলসনের মতে হরপ্পার ভাষার সঙ্গে সুমেরের ভাষার মিল রয়েছে। এস.আর. রাও বলেন যে হরপ্পার শীলমােহর ছিল ইন্দো-আর্য পূর্ববর্তী ভাষা এবং ইন্দোইউরােপীয়ান পরিবারভূক্ত। কিন্তু অনেকে এই মত সমর্থন করেন না। নটবর ঝা ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বৈদিক গ্লসারি অন ইন্দাস সীল’ গ্রন্থে বলেছেন এই লিপি ছিল সিলেবিক এবং এখানে কোনাে ভাওয়েল ছিল না। এগুলি ছিল সেমিটিক ভাষা। ফিনিশিয় এবং আরবের মতাে সিলেবিক প্রথায়। ঝা দাবি করেন এখানে ৩৫০০ স্ক্রিপশান ছিল। বিখ্যাত ভাষাতত্ত্ববিদ এবং ঐতিহাসিক ফাদার হেরাস সিন্ধু সভ্যতার শীলমােহরের ভাষা আবিষ্কারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন সিন্ধু সভ্যতার বর্ণ সংখ্যা ছিল ২৭০-২৯০টি।

সিন্ধু সভ্যতার প্রধান টেরাকোটার চিত্রগুলির মধ্যে ছিল বিভিন্ন শ্রেণীর পাখি, বানর, কুকুর, ভেড়া এবং গবাদি পশু। কুঁজ ও কুঁজবিহীন যাঁড়ের নিদর্শন পাওয়া গেছে। মহিলা ও পুরুষ মানুষের চিত্র পাওয়া গেছে যেখানে কিছু মহিলার দেহে ভারী গহনার ছবি রয়েছে। সবচেয়ে জীবন্ত চিত্র হল বসা অবস্থায় মহিলা মা ও শিশুশ্রেণী। কিছু টেরাকোটায় রয়েছে মানুষের মাথায় সিং ও সিং-এর মতাে বস্তু। এগুলি মনে করা হয়েছে দেবতা। একটি টেরাকোটায় রয়েছে গােরুর গাড়ির মডেল।

হরপ্পা সভ্যতায় কিছু সংখ্যাকে ব্যবহার করা হত ওজন হিসাবে। ১, ২, ৪, ৮ থেকে ৬৪ পর্যন্ত এগুলি ব্যবহৃত হত। দৈর্ঘ্য পরিমাপ করা হত ফুটের দ্বারা। ১ ফুট = ৩৭.৬ সেমি। ১ কিউবিক ফুট = ৫১.৮ থেকে ৫৩.৬ সেমি।

মহেঞ্জোদারাে হরপ্পা, কালিবঙ্গান, লােথাল এবং রােপার-এ খননকার্যের ফলে সমাধি প্রথার গুরুত্ব ধরা পড়ে। মহেঞ্জোদারােতে তিনপ্রকার সমাধির নিদর্শন রয়েছে। যথা সম্পূর্ণ সমাধি, আংশিক সমাধি (শুধুমাত্র হাড়গুলির সমাধি হবে বাকি অংশ পাখি খাবে), দেহ ভস্মীভূত করার পর সমাধি। এখানে চিত করে সমাধি দেওয়া হত এবং মাথা থাকত উত্তর দিকে। হরপ্পাতে কাঠের কফিন এবং শরীর ঢাকা থাকত পড়নের সুতাে দ্বারা তৈরি কাপড়ে। সুরকোটদাতে পাত্র কবর দেওয়া হত। লােথালে একটি কবরখানা পাওয়া গেছে যেখানে জোড়ায় জোড়ায় কঙ্কাল পাওয়া গেছে, এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন পুরুষ ও একজন মহিলা। এর থেকে প্রমাণিত হয় হরপ্পায় সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। এছাড়া আরও অনুমান করা হয় যে, স্বামী বা প্রভুর মৃত্যুর পর স্ত্রী, চাকর অথবা তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের একসাথে কবর দেওয়া হত। হরপ্পায় H সিমেট্রির কবরখানা পাওয়া গেছে।


হরপ্পা সভ্যতার পতন

সিন্ধু সভ্যতার পতনের প্রধান কারণ হল প্রাকৃতিক বিপর্যয় (বন্যা, নদী শুকিয়ে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত বৃক্ষচ্ছেদন, ঘনঘন ভূমিকম্প, মরুভূমির প্রসারতা ইত্যাদি)। এছাড়া এই ধ্বংসের অন্যান্য কারণ ব্যাবসা বাণিজ্যের অবনতি, নাগরিক সচেতনতার অভাব এবং প্রতিরক্ষার প্রতি অবহেলা। ঐতিহাসিক মার্টিমার হুইলার এবং স্টুয়ার্ট পিগটের মতে সিন্ধু সভ্যতা পতনের মূল কারণ হল আর্যদের আক্রমণ। এম. আর. সাহানির মতে সিন্ধু নদীর ঘনঘন বন্যা ও সিন্ধু নদের গতিপথের পরিবর্তন এর ধ্বংসের জন্য দায়ী। অল্টার ফেয়ার সার্ভিসের মতে অতিরিক্ত সম্পদের ব্যবহার এবং বৃক্ষচ্ছেদন হল এর ধ্বংসের কারণ। এইচ.টি.ল্যামরিকের মতে সিন্ধু নদের ঘন ঘন গতিপথের পরিবর্তনের ফলে মহেঞ্জোদারাের জনসংখ্যা কমে যায় এবং এটি দুর্বল। হয়ে যায় এবং বর্বররা সহজে আক্রমণ করে। রবার্ট লে. রাইক-এর মতে পাতসঞ্চালনের দ্বারা যে চ্যুতির সৃষ্টি হয় তার ফলে এই সভ্যতা ধ্বংস হয়। ঋগবেদে আর্যদেবতা ইন্দ্রকে পুরন্দর বা দুর্গধ্বংসকারী বলা হয়েছে। এখানে পুর বলতে সিন্ধু নগর বােঝায় বলে মার্টিমার হুইলার মনে করেছেন। কোশাম্বীও এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।


হরপ্পা সভ্যতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও নিকটবর্তী নদীর নামের তালিকা :


স্থাননদীর নাম
হরপ্পারাভী
দেশালপুরভাদর
মহেঞ্জোদারােসিন্ধু
রােজদিভাদর
লােথালভােগাবর
মান্দাচন্দ্রভাগা
কালিবঙ্গানঘর্ঘরা
দিমাবাদপ্রভার
সুক্তাজেন্দোরআরবসাগর
বনওয়ালিসরস্বতী
কোটদিজিসিন্ধু
রােপারশতদ্রু
আলমগীরপুরহিন্দন
বালাকোটসিন্ধুর উপকূল
আলহাদিনােসিন্ধু


★★★ সিন্ধু সভ্যতায় ২০০০ শীলমােহর আবিষ্কৃত হয়েছে।


সিন্ধু সভ্যতার বাইরে গ্রাম ও কৃষি কাজ: খ্রিস্ট পূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দ থেকে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মধ্যে খুব দ্রুত একটা বিশাল অঞ্চলে গ্রামজীবনের ছবি পরিষ্কার হয়ে উঠেছিল। সিন্ধু সভ্যতার উপস্থিতি আরও পূর্বদিকের খাদ্যসংগ্রাহক, খাদ্য উৎপাদক ও পশুপালকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। গুজরাট ও দোয়াব অঞ্চলের ভিতর দিয়ে সিন্ধু সভ্যতার স্রোত গঙ্গা উপত্যকায় এসে পৌছেছিল।


উত্তরের পার্বত্য বলয়: কাশ্মীরের বারামুলা, অনন্তনাগ ও শ্রীনগর অঞ্চলে ৩০টির বেশি নব্যপ্রস্তর যুগের কেন্দ্র পাওয়া গেছে। ৭-৮ একর জমিতে মাটিতে গর্ত করে খুঁটি পুঁতে তার ওপর আচ্ছাদন দিয়ে ঘর তৈরি হত। চাষ করা হত গম, যব, মুসুর ডাল। গৃহপালিত পশু ছিলগরু, ভেড়া, ছাগল ইত্যাদি।


দক্ষিণ-পূর্ব রাজস্থান: ৯০টির বেশি কেন্দ্র ছড়িয়ে আছে এই অঞ্চলে। উদয়পুর, ভিলওয়াড়া, চিতােরগড় এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। নদীর ধারে ৫-১০ মাইল অন্তর ২ একর থেকে ১০ একর জুড়ে বসতি। এখানে কৃষিজীবনের ব্যাপক সাক্ষ্য পাওয়া যায়। গম, যব, বাজরা, কয়েকরকমের ডালের নিদর্শন পাওয়া গেছে। রাজস্থানের বেশ কিছু অঞ্চলে গবাদিপশুর হাড় পাওয়া গেছে।


মালব অধিত্যকা: এই অঞ্চলে ১০০টির বেশি প্রাগৈতিহাসিক গ্রাম কেন্দ্র পাওয়া গেছে। নর্মদা তীরবর্তী নভদাততালি নামক স্থানে প্রায় ৪০ একর আয়তনের একটা গ্রাম ছিল। গােলাকৃতি ঘরগুলির ব্যাস ছিল ১ থেকে ৪.৫ মি। ছােটোগুলি সম্ভবত শস্যের গােলা। গ্রামটি ছিল সন্নিবদ্ধ। অনেকরকম শস্যের চাষ হত। উল্লেখযােগ্য ছিল গম, তিসি, মসুর, মটর ও খেসারি।


মহারাষ্ট্র: মহারাষ্ট্রের কাওথে নামে একটি জায়গায় ৫০ একরের মতাে জায়গাজুড়ে গ্রাম ছিল। ঘরগুলি ছিল লতাপাতা, খড় ইত্যাদি দিয়ে তৈরি ঝুপড়ি জাতীয়। তবে দাইমাবাদে পাওয়া গেছে আয়তাকার মাটির বাড়ি। বাড়িতে একাধিক ঘর থাকত। চাষ হত গম, যব, মসুর, ছােলা ইত্যাদি।


দক্ষিণ ভারত: কর্নাটকে কৃষ্ণা, তুঙ্গভদ্রা উপত্যকায় সমতলের ভিতর কিছু পাহাড় আছে। মনে করা হয় প্রথম পর্যায়ে গ্রামীণ বসতি এই ধরনের পাহাড় চূড়ায় ও ঢালে শুরু হয়েছিল। এখানে সুপারির সাক্ষ্য পাওয়া গেছে। শস্যের ভিতর পাওয়া গেছে এক ধরনের বাজরা ও ছােলা। গুলবর্গা জেলায় উৎপন্ন হত কুল, চেরি জাতীয় ফল ও আমলকি।


পূর্বভারত: পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে আদি গ্রামীণ কৃষিভিত্তিক সমাজের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।


উত্তর প্রদেশ: সরযূপাড় অঞ্চলে, এলাহাবাদের কাছে শৃঙ্গবেরপুর, বুলন্দশহরের লালকিলা প্রভৃতি অঞ্চলে খনন কার্যের ফলে উত্তর প্রদেশের গ্রামীণ চিত্র পাওয়া যায়। আলিগড়ের কাছে অত্রনজিখেরায় যে গ্রাম গড়ে উঠেছিল, সেখানকার বাড়ি-ঘর ছিল উন্নত ধরনের। দেওয়ালেধানের তুষ মিশিয়ে পলেস্তরা দেওয়া হত। যম, গম ও ধানের চাষ হত। গরু, মােষ, ভেড়া, ছাগল, ঘােড়া প্রভৃতি পশু পােষা হত।   একথা উল্লেখযােগ্য যে, সিন্ধু সভ্যতার পরিণত ও শেষ পর্যায়ের সময় থেকে এইসব গ্রামজীবন বিকাশলাভ করেছিল।


Short Notes on Indus Valley Civilization - সিন্ধু সভ্যতার সংক্ষিপ্ত নোট


মেহেরগড় সভ্যতা


  • ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার নাম হলো মেহেরগড় সভ্যতা।
  • বোলান গিরিপথের কাছে এবং কোয়েটা শহর থেকে ১৫০ km দূরে কাচ্চি সমভূমিতে ৫০০ একর ব্যাপ্ত মেহেরগরের প্রত্নক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে।
  • ১৯৭৪-১৯৮৬ সালে বিশিষ্ট ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিক জা ফ্রাঁসোয়া জারিজ এর নেতৃত্বে এখানে খননকাজ চালানো হয়।
  • পরবর্তীকালে ১৯৯৬-১৯৯৭ সালেও এখানে খননকাজ চালানো হয়।
  • মেহেরগর সভ্যতা গ্রামীন সভ্যতা থেকে আস্তে আস্তে নাগরিক সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
  • খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ে মেহেরগর সভ্যতার পতন হয়।
  • এতদিন মনে করা হতো যে সিন্ধু সভ্যতায় ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা কিন্তু মেহেরগরের আবিষ্কার প্রমান করেছে যে সিন্ধু পূর্ব যুগে ভারতে এক উন্নত সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল।
  • মেহেরগর ও সন্নিহিত অঞ্চলে মানব সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছিল হরপ্পা সভ্যতা তারই এক পরিপূর্ণ রূপ।
  • 1921 ক্রিস্টাব্দে দয়ারাম সাহানি পাঞ্জাবের মন্টগমারী জেলায় ইরাবতী বা রাভি নদীর তীরে এক উন্নত নগর সভ্যতার সন্ধান পান।


সিন্ধু সভ্যতা


  • ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার কানিংহাম হরপ্পায় একটি সিলমোহর আবিষ্কার করেছিলেন।
  • সিন্ধু নদের তীরে প্রথম এই সভ্যতা আবিষ্কৃত হয় বলে এই সভ্যতা কে আগে সিন্ধু সভ্যতা বলা হতো।
  • সাম্প্রতিক কালে সিন্ধুতট অতিক্রম করে ভারত ও ভারতের বাইরে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছোটো বড়ো মিলিয়ে এই সভ্যতার ১৫০০ টি কেন্দ্র আবিষ্কৃত হয়েছে।
  • এই সভ্যতা হলো তাম্র প্রস্তর যুগের সভ্যতা।
  • এই যুগের মানুষ লোহার ব্যাবহার জানতো না।
  • সমগ্র এলাকাটির আয়তন ছিলো প্রায় ১২ লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
  • নগর কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারও। এই নগর দুটির মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় ৪৮৩ বর্গ কিলোমিটার।
  • সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক।
  • নগরগুলির দুটি এলাকা ছিল উঁচু এলাকা ও নিচু এলাকা।
  • মহেঞ্জোদারও শহরটির পশ্চিম দিকে প্রায় চল্লিশ ফুট উঁচু একটি বিশাল আয়তনের ঢিপির উপর একটি দুর্গ ছিল।একে দুর্গঞ্চল বা citadel area বলা হতো। এই অঞ্চল ঘিরে ছিল বিরাট প্রাচীর। কেবলমাত্র মহেঞ্জোদারও বা হরপ্পায় নয়…ছোটো বড়ো বহু নগরেই এই ব্যবস্থা ছিল।
  • দুর্গ অঞ্চলেই সর্বসাধারণের ব্যবহার -উপযোগীএকটি বিরাট স্নানাগার আবিস্কৃত হয়েছে। তার আয়তন দৈর্ঘ্যে ১৮০ ফুট ও প্রস্থে ১০৮ ফুট। এর চারদিক ঘিরে আছে ৮ ফুট উঁচু ইটের দেওয়াল।
  • এর কেন্দ্রস্থলে আছে একটি জলাশয় যা 39 ফুট লম্বা, 23 ফুট চওড়া এবং 8 ফুট গভীর। জলাশয়ের নোংরা জল নিকাশ ও তাতে পরিষ্কার জল পূর্ণ করার ব্যবস্থা ছিল। এরই পাশে ছিল একটি কেন্দ্রীয় শষ‍্য‌গার। এর আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে 200 ফুট এবং প্রস্থে 150 ফুট। শস‍্যগার সংলগ্ন বিরাট চাতালে শস্য ঝাড়াই মাড়াই হত।শস‍্যগার সংলগ্ন বিরাট চাতালে শস্য ঝাড়াই মাড়াই হত।
  • সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো যে এর উন্নত নগর পরিকল্পনা। নগরের উত্তর থেকে দক্ষিণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে সমান্তরাল ভাবে কয়েকটি রাস্তা চলে গেছে। রাস্তা গুলি 9 থেকে 34 ফুট চওড়া। এই রাস্তা গুলি থেকে বেরিয়ে এসেছে অসংখ্য গলি। গলিগুলোর দুপাশে নাগরিকদের ঘরবাড়ি ছিল।বাড়িগুলো ছিল পড়া ইটের তৈরি এবং অনেক বাড়ি ই দোতলা বা তিনতলা।
  • অনেক বাড়িতে আবার সোকপিট ছিল। বাড়ির নোংরা জল নর্দমা দিয়ে এসে রাস্তার ঢাকা দেওয়া বাঁধানো নর্দমায় পড়তো। নর্দমাগুলি পরিষ্কারের জন্যে ইট দিয়ে তৈরি ঢাকা ম্যানহোলের ব্যবস্থা ছিল।এমনকি প্রত্যেক বাড়ির সামনে বাঁধানো ডাস্টবিন ছিল।
  • এই সভ্যতা নগরকেন্দ্রিক হলেও তার মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। এখানকার অধিবাসীরা গম, যব, বার্লি, ভাত,  ফলমূল, বাদাম, শাকসবজি, মুরগি, ভেড়া, গরু, পাখির মাংস, দুধ, খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত। মাছ ও ডিম ও তাদের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। গৃহপালিত জন্তুর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গরু, মহিষ, ভেড়া, উট, হাতি, শুকর, ছাগল। এরা ঘোড়া কে পোষ মানাতে পারেনি।
  • সিন্ধুবাসীরা সুতি ও পশমের বস্ত্র ব্যবহার করত। তারা দেহের উর্ধাংশ ও নিম্নাঙ্গ দুইখন্ড বস্ত্রের দ্বারা আবৃত করতো।
  • নারীরা নানা ধরনের অলংকার পড়তো। নারী পুরুষ উভয়েই চুল রাখত। নৃত্য-গীত, পশুশিকার, পাশাখেলা, ষাঁড়ের লড়াই ও রথ চালনা ছিল তাদের অবসর বিনোদনের উপায়। এ প্রসঙ্গে স্মরনীয় যে সিন্ধু উপত‍্যকায় ঢাল, বর্ম, শিরস্ত্রাণ প্রভৃতি আত্মরক্ষামূলক অস্ত্রের কোন ও সন্ধান মেলেনি।
  • সিন্ধু উপত্যকায় পোড়ামাটি,তামা ও ব্রোঞ্জের প্রচুর সিল আবিস্কৃত হয়েছে। পন্ডিতদের অনুমান প্রধানত ব্যবসা বাণিজ্যের জন্যই ওইসব সিল তৈরী হয়েছিল এবং আন্তজার্তিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এগুলি ব্যবহৃত হতো কারণ সুসা এবং মেসোপটেমিয়ার নগরগুলিতেও হরপ্পার সিল আবিস্কৃত হয়েছে।
  • হরপ্পাবাসী ছবি এঁকে তাদের মনের ভাব প্রকাশ করত। এগুলিই হলো সিন্ধু লিপি বা হরপ্পা লিপি। এই লিপি গুলি হলো চিত্র লিপি-বর্ণলিপি নয়। এই লিপি ডানদিক থেকে বাঁদিকে পড়া হতো। এইসব লিপি এখনও পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি।
  • হরপ্পা সভ্যতার অর্থনীতি কৃষির উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং সিন্ধু ও তার শাখা নদীর বন্যায় এই অঞ্চল যথেষ্ট উর্বর ছিল। ফসল উৎপাদনের জন্য সার,জলসেচ,বা দক্ষতার বিশেষ প্রয়োজন হতো না। তারা লোহার ব্যবহার জানতো না,তাই তারা লোহার পরিবর্তে কাঠের লাঙ্গল ব্যবহার করত।
  • বস্ত্রবয়ন শিল্প ছিল হরপ্পা সভ্যতার প্রধান শিল্প। এই অঞ্চল থেকে পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সুতিবস্ত্র রপ্তানি করা হত। সোনা ও রুপার অলংকার নির্মাণে এবং মৃৎ শিল্পের ক্ষেত্রেও তাদের দক্ষতা ছিল। তবে এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে তাদের গৃহ, যন্ত্রপাতি প্রভৃতিতে কোনও শৈল্পিক সুক্ষতাবোধের পরিচয় নাই।তাদের লক্ষ ছিল প্রয়োজন মেটানো।
  • হরপ্পার নগর সংস্কৃতির বিকাশের অন্যতম কারণ হলো এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি। ভারত ও ভারতের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে হরপ্পার বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। জলপথ ও স্থলপথ–দুই ই ব্যবহৃত হতো। হিমালয় থেকে দেবদারু কাঠ,কর্ণাটক থেকে সোনা,রাজপুতানা থেকে তামা ও সীসা,রাজপুতানা-গুজরাট থেকে দামি পাথর, কাথিয়াওয়ার শাঁখ আসতো। ভারতের বাইরে বেলুচিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান থেকে আমদানি করা হত সোনা,রূপা,সীসা,টিন ও দামি পাথর। সিন্ধু উপত্যকা থেকে রপ্তানি করা হতো তুলো, সুতিবস্ত্র,তামা,হাতির দাঁত ও দাঁতের তৈরি নানা জিনসপত্র। সুতিবস্ত্র ও তুলা ছিলো রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধান উপকরণ।
  • লোথালের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার বিশাল বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রমান দেয়। লোথাল হলো বিশ্বের প্রাচীনতম বন্দর ও পোতাশ্রয়। এখানে একটি প্রকান্ড জাহাজঘাট, আগন্তুক জাহাজ রাখার উপযোগী ডক এবং পাথরের তৈরি নোঙর মিলেছে।
  • তখন ও মুদ্রার প্রচলন হয়নি। বিনিময় প্রথার মাধ্যমে বাণিজ্য চলত।
  • সিন্ধুবাসীরা পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে উট, গাধা ও ঘোড়ার ব্যবহার করত।
  • ওজন ও মাপের ব্যাপারেও সিন্ধুবাসী যথেষ্ট দক্ষ ছিল। এখানে নানা ওজনের বিভিন্ন বাটখারা, ব্রোঞ্জনির্মিত কয়েকটি দাঁড়িপাল্লা এবং ধাতুনির্মিত গজকাঠি পাওয়া গেছে। ওজনের সময় সাধারণত ১৬ ও তার গুণিতক ব্যবহৃত হতো, যথা- ১৬,৬৪,১৬০,৩২০,৬৪০ প্রভৃতি। সমগ্র এলাকা জুড়ে একই ধরনের ওজন ও মাপ প্রচলিত ছিল।
  • সিন্ধু সভ্যতায় খননকার্যের ফলে প্রচুর অর্ধনগ্ন নারীমূর্তি মিলেছে। পন্ডিতরা এই মুর্তিগুলি কে মাতৃমূর্তি বা ভূমাতৃকা বলেছেন। সিন্ধু উপত্যকার এই মূর্তিগুলি তে ধোঁয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। মনে হয় দেবীকে প্রসন্ন করার জন্য ধুপ তেল দেওয়া হতো এবং সামনে প্রদীপ জ্বালা হতো।
  • এই সময় নরবলি প্রথাও প্রচলিত ছিল। একটি সিলে বাঘ,হাতি,গন্ডার, মোষ ও হরিণ ——-এই পাঁচটি পশু দ্বারা পরিবৃত ও ত্রিমুখবিশিষ্ট এক যোগীমূর্তি দেখা যায়। মূর্তিটির মাথায় দুটি সিং আছে। অনেকের ধারণা এটি হলো শিবমূর্তি,কারণ হিন্দু ধারণায় শিব হলেন ত্রিমুখ ,পশুপতি ও যোগেশ্বর।
  • সিন্ধুবাসীরা বৃক্ষ,আগুন,জল,সাপ, বিভিন্ন জীবজন্তু, লিঙ্গ ও যোনি পূজা এবং সূর্য উপাসনা ও করত।
  • সিন্ধুবাসীরা পরলোকে বিশ্বাস করত। তারা মৃতদেহ সমাধিস্থ করত। মৃতদেহকে সাধারণত কবরস্থানের উত্তর থেকে দক্ষিণে শায়িত করা হতো। কবর দেওয়া হতো মূলত তিনরকমভাবে। অনেকের মতে কবরের এই ভেদাভেদ শ্রেণী বৈষম্যের পরিচায়ক।
  • সিন্ধু উপত্যকায় প্রাপ্ত নর কঙ্কাল গুলির নৃতাত্ত্বিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষা করে পন্ডিতরা এখানে চারটি জনগোষ্ঠীর মানুষের সন্ধান পেয়েছেন। কঙ্কাল গুলির সংখ্যা এত কম যে সেগুলি থেকে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। সুতরাং বলা হয় যে, হরপ্পা সভ্যতা বিশেষ কোনো জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা সৃষ্ট হয় নি। বিভিন্ন জাতির মানুষের প্রচেষ্টায় এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
  • মহেঞ্জোদারোর নিচের দিকে কয়েকটি স্তর এখনও জলমগ্ন থাকায় সেখানে কোনও পরীক্ষা চালানো সম্ভব হয়নি। হরপ্পা লিপির পাঠোদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এখনও সঠিক কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই বলা যায় যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সাহায্যে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
  • হরপ্পা সংস্কৃতির প্রাচীনত্ব বা কালানুক্রম নির্ণয় করা একটি কঠিন সমস্যা। স্যার জন মার্শাল এর সময়সীমা খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫০ থেকে ২৭৫০ খ্রিস্টপূর্ব র মধ্যে স্থির করেন।
  • ঐতিহাসিকরা এই সংস্কৃতির কলানুক্রমের দুটি দিকের কথা বলেছেন। একটি হলো নিম্নতম কালসীমা এবং ঊর্ধ্বতম কালসীমা। নিম্নতম কালসীমা হলো ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব। ২৮০০ খ্রিস্টপূর্ব হলো সর্বোচ্চ কালসীমা । তবে এ কথা ঠিক যে কালসীমা সংক্রান্ত সব আলোচনাই অনুমানভিত্তিক। সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এই সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
  • পশ্চিমে ইরান ও পাকিস্তানের সীমানায় অবস্থিত সুকতাসেনদোর থেকে পূর্বে আলমগীরপুর এবং উত্তরে জম্মুর কাছাকাছি মান্ডা থেকে দক্ষিণে গোদাবরী উপত্যকার দাইমাবাদ পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি ছিলো। কিন্তু এই সভ্যতার শেষ পর্যন্ত পতন হয়।
  • এই সভ্যতার ঠিক কি কারণে পতন হয় সেই সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা একমত নন। অনেক ঐতিহাসিক কারণ হিসাবে অভ্যন্তরীণ অবক্ষয়, রক্ষনশীল মানসিকতা কে দায়ী করেন । অনেকে আবার প্রাকৃতিক কারণ কে দায়ী করেন। প্রাকৃতিক কারণগুলির মধ্যে ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর পরিবর্তন, সিন্ধু নদের গতিপথের পরিবর্তন, ভূমিকম্প- তত্ত্ব,বন্যা তত্ত্ব,উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল ধ্বংস প্রভৃতি কারণগুলো জোরালো দাবি রাখে। আবার হুইলার, Stuart পিগট , গর্ডন চাইল্ড, অলচিন দম্পতি প্রমুখ মনে করেন যে আর্যদের আক্রমণের ফলেই এই সভ্যতা ধংসপ্রাপ্ত হয়। তবে এই মতবাদের কিছু দুর্বলতা আছে। মূল কথা হরপ্পা সভ্যতার পতনের জন্য কোনো ও একটি কারণকে দায়ী করা যায় না। তবে যে কোনো কারণ ই থাক না কেন অভ্যন্তরীণ অবক্ষয় এর প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল।
  • হরপ্পা সভ্যতার পতন হলেও প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার উপর এর প্রভাব ছিল ব্যাপক। এত সুন্দর নগর পরিকল্পনা সমকালীন বিশ্বে সত্যিই বিস্ময়কর ছিল।
  • প্রাচীন ভারতীয় মুদ্রার ছাঁচ ও কাঠামোর জন্য ভারতবাসী সিন্ধু সভ্যতার কাছে ঋণী। মাপ ও ওজনের ব্যাপারেও ভারতের মানুষ সিন্ধু সভ্যতার কাছে কৃতজ্ঞ। হিন্দু ধর্মে মূর্তিপূজা,প্রতীক উপাসনা,শিব ও লিঙ্গ পূজা, বলিদান প্রথা,বৃষের প্রতি ভক্তি —–সব ই হরপ্পা সভ্যতার অবদান।



সিন্ধু সভ্যতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর - Short Question-Answer on Indus Valley Civilization


Q. কোন সময়কালকে প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলা যায়?

উঃ আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব চার লক্ষ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব দুই লক্ষ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কালকে প্রাচীন প্রস্তর যুগ বলা যায়।

Q. কোন্ সময়কালকে মধ্য প্রস্তর যুগ বলা যায়?

উঃ মােটামুটি খ্রিস্টপূর্ব আট হাজার অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে মধ্য প্রস্তর যুগ বলা যায়।

Q. কোন্ সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা যায়?

উঃ মােটামুটি খ্রিস্টপূর্ব চার হাজার অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে নব্য প্রস্তর যুগ বলা যায়।

Q. মেহেরগড় সভ্যতা কোন যুগের সভ্যতা?

উঃ মেহেরগড় সভ্যতা নতুন প্রস্তর যুগের সভ্যতা।

Q. মেহেরগড়ের ভৌগােলিক অবস্থান কোথায় ছিল?

উঃ মেহেরগড়ের অবস্থান ছিল সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের মধ্যবর্তী স্থানে।

Q. মেহেরগড়ের আয়তন কত ছিল?

উঃ মেহেরগড়ের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে ২ কিমি ও প্রস্থে ১ কিমি।

Q. ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা কোনটি?

উঃ মেহেরগড় সভ্যতা ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা।

Q. মেহেরগড় সভ্যতা কখন আবিষ্কৃত হয়?

উঃ মেহেরগড় সভ্যতা ১৯৭৪ সালে আবিষ্কৃত হয়।

Q. মেহেরগড় সভ্যতা কারা আবিষ্কার করেন?

উঃ রিচার্ড মিভৌ ও জেন ফ্রাঁসােয়া জায়েজ মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন।

Q. মেহেরগড় সভ্যতা কখন গড়ে উঠেছিল?

উঃ আনুমানিক খ্রিঃপূঃ ৭০০০-৩২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়কালে মেহেরগড় সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

Q. প্রথম তুলাের চাষ করা শুরু করেন?

উঃ মেহেরগড় সভ্যতার অধিবাসীরা প্রথম তুলাের চাষ শুরু করেন।

Q. হরপ্পা সভ্যতা কোন সভ্যতার সমসাময়িক?

উঃ হরপ্পা সভ্যতা মেসােপটেমিয়া এবং সুমেরীয় সভ্যতার সমসাময়িক।

Q. হরপ্পা সভ্যতা কোন যুগের সভ্যতা?

উঃ হরপ্পা সভ্যতা তাম্র-প্রস্তর যুগের সভ্যতা।

Q. হরপ্পা সভ্যতায় কোন ধাতুর ব্যবহার জানা ছিল না?

উঃ হরপ্পা সভ্যতায় লােহার ব্যবহার জানা ছিল না।

Q. হরপ্পা সভ্যতায় কোন প্রাণীর কথা অজানা ছিল?

উঃ এই সভ্যতায় অশ্বের ব্যবহার অজানা ছিল।

Q. হরপ্পা সভ্যতা কত প্রাচীন?

উঃ পণ্ডিতদের মতে ভারত-উপমহাদেশে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটে খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার অব্দে বা তারও আগে এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৭৫০ অব্দ পর্যন্ত এই সভ্যতার ব্যাপ্তি ছিল।

Q. হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কারকের নাম কী?

উঃ এই সভ্যতার মহেন-জো-দারাে অঞ্চলের ও হরপ্পা অঞ্চলের আবিষ্কারক যথাক্রমে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও দয়ারাম সাহানি। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রত্নতত্ত্ববিদ কানিংহাম ইরাবতী নদীর তীরে হরপ্পায় অপরিচিত লিপি-সংবলিত একটি সিলমােহরের সন্ধান পান।

Q. হরপ্পা সভ্যতা কত সালে আবিষ্কৃত হয় ?

উঃ এই সভ্যতা ১৯২১ সালে আবিষ্কৃত হয়।

Q. হরপ্পা সভ্যতার অবস্থান কোথায় ছিল ?

উঃ সিন্ধু নদকে কেন্দ্র করে এই সভ্যতার বিকাশ হয়। এই সভ্যতার দুটি প্রধান অঞ্চল হল- (১) পশ্চিম পাঞ্জাবের মন্টগােমারি জেলার হরপ্পা, (২) সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার মহেন-জো-দারাে অঞ্চল।

Q. হরপ্পা সভ্যতার ভাষা কী ছিল ?

উঃ এই সভ্যতার লেখন অনেকটা প্রাচীন মিশরীয় হিয়রােগ্লিফিক লেখার মতাে। তবে এই লিপিগুলির পাঠোদ্ধার না হওয়ায় এর প্রকৃত ভাষা এখনও অজানা।

Q. ভারতের প্রাচীনতম লিপির নাম কী ?

উঃ ভারতের প্রাচীনতম লিপির নাম সিন্ধুলিপি।

Q. হরপ্পা সভ্যতায় কোন্ পশুকে দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হত ?

উঃ হরপ্পা সভ্যতায় বড়াে কুঁজবিশিষ্ট ষাঁড়কে দেবতাজ্ঞানে পুজো করা হত।

Q. হরপ্পা সভ্যতা কখন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল ?

উঃ খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-১৪০০ অব্দের মধ্যে হরপ্পা সভ্যতা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল।

Q. ‘মহেন-জো-দারাে’ কথার অর্থ কী ?

উঃ মহেনজোদারাে কথার অর্থ ‘মৃতের স্তুপ’।

Q. কোন বন্দরের মাধ্যমে হরপ্পা-সভ্যতার বৈদেশিক বাণিজ্য চলত ?

উঃ লােথাল বন্দরের মাধ্যমে হরপ্পা সভ্যতার বৈদেশিক বাণিজ্য চলত।

Q. হরপ্পা কোথায় অবস্থিত ?

উঃ হরপ্পা পাঞ্জাবের মন্টগােমারি জেলায় অবস্থিত।

Q. হরপ্পা সভ্যতার কোন দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল ?

উঃ হরপ্পা সভ্যতার সুমের দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, এইরূপ প্রমাণ পাওয়া।

Q. লােথাল কোথায় অবস্থিত?

উঃ লােথাল বর্তমান গুজরাত রাজ্যে অবস্থিত।

Q. বিদেশ থেকে হরপ্পায় কী কী দ্রব্য আমদানি করা হত ?

উঃ বিদেশ থেকে হরপ্পায় সােনা, টিন, তামা, রপা, শঙ্খ, দেবদার কাঠ ইত্যাদি আমদানি করা হত।

Q. হরপ্পা ও মহেন-জো-দারাে বর্তমানে কোন রাষ্ট্রের অন্তর্গত?

উঃ হরপ্পা ও মহেন-জো-দারাে বর্তমানে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্গত।

Q. হরপ্পা সভ্যতার কোথায় সমাধিক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে?

উঃ হরপ্পা সভ্যতার হরপ্পা অঞ্চলে সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে।


Download সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর PDF


File Details:-

File Name:- সিন্ধু সভ্যতা প্রশ্নোত্তর [www.gksolves.com]
File Format:-PDF
Quality:- High
File Size:-  5 Mb
File Location:- Google Drive

Click Here to Download


আরও পড়ুন:




Others Important Link

Syllabus Link: Click Here

Questions Paper Link: Click Here

Admit Card Link: Click Here

Result Link: Click Here

Latest Job: Click Here

Age Calculator: Click Here


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.