ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF: প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায় একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF.
নিচে ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF টি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে এই পোস্টটির নীচে যান এবং ডাউনলোড করুন।
ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান
ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF
Dear Students, Gksolves.com চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির সেরা ঠিকানা, আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF. প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি চাকরির যেমন Railway Group D | PSC Clerkship | WBCS | SSC CHSL | SSC CGL | SSC MTS | WBP Abgari Constable | WBP SI | WBP Constable | ICDS Supervisor | Railway Group D | RRB NTPC | PSC Miscellaneous | TET | Upper Primary | Group D ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হয়ে থাকে। এই সমস্ত চাকরির পরীক্ষা ছাড়াও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সম্বন্ধে আপনার সাধারণ ধারণা থাকা দরকার, তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF যা আপনাদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সম্পর্কে ধারণা গঠন করতে বিশেষ সাহায্য করবে।
Google News এ আমাদের ফলো করুন
ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India | একাদশ শ্রেণী রাষ্ট্রবিজ্ঞান
নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. ভারতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন কে?
উত্তর: ভারতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন নির্বাচন কমিশন।
2. ভারতীয় সংবিধানের কোন ধারায় নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪ নং ধারায় নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে।
3. কে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করেন ?
উত্তর: ভারতের রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করেন।
4. কে আঞ্চলিক নিৰ্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করেন ?
উত্তর: ভারতের রাষ্ট্রপতি আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করেন।
5. কতজন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় ?
উত্তর: ৩ জন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়।
6. কে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পদচ্যুত করেন?
উত্তর: ভারতের রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পদচ্যুত করেন।
7. নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং আঞ্চলিক নিৰ্বাচন কমিশনারদের কার সুপারিশে পদচ্যুত করা হয় ?
উত্তর: মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সুপারিশে নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনারদের পদচ্যুত করা হয়।
8. কত বছরের জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন?
উত্তর: ৬ বছরের জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন।
9. ভারতীয় নাগরিকগণ কত বছর বয়সে ভোটাধিকার লাভ করেন?
উত্তর: ভারতীয় নাগরিকগণ ১৮ বছর বয়সে ভোটাধিকার লাভ করেন।
10. কত খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডে নারীদের ভোটাধিকার স্বীকৃতি লাভ করে?
উত্তর: ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডে নারীদের ভোটাধিকার স্বীকৃতি লাভ করে।
11. ভারতে বিদেশিরা কি ভোটাধিকার পেয়ে থাকেন ?
উত্তর: ভারতে বিদেশিরা ভোটাধিকার পান না।
12. সর্বজনীন ভোটাধিকারের পূর্বে সর্বজনীন শিক্ষা প্রবর্তনের প্রয়োজন’ -উক্তিটি কার?
উত্তর: জে.এস. মিল বলেছেন, সর্বজনীন ভোটাধিকারের পূর্বে সর্বজনীন শিক্ষা প্রবর্তনের প্রয়োজন’ ।
13. ভারতীয় সংবিধানে কি দেউলিয়া ও বিকৃত মস্তিষ্কের ব্যক্তিদের ভোটাধিকার আছে?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে দেউলিয়া ও বিকৃত মস্তিষ্কের ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নেই।
14. ভারতীয় সংবিধানে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার কি স্বীকৃত ?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত।
15. ভারতীয় সংবিধানে নারীদের কি ভোটাধিকার স্বীকৃত?
উত্তর: ভারতীয় সংবিধানে নারীদের ভোটাধিকার স্বীকৃত।
16. ভারতে কার তত্ত্বাবধানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ?
উত্তর: ভারতে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
17. সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ফলে কি সাম্যনীতি প্রতিষ্ঠিত হয় ?
উত্তর: সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ফলে সাম্যনীতি প্রতিষ্ঠিত হয় না।
18. জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের কী ভোটাধিকার বাঞ্ছনীয় ?
উত্তর: জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষের ভোটাধিকার থাকা উচিত।
19. ‘নারী জাতি ভোটাধিকারের অপপ্রয়োগ ঘটায়’।— উক্তিটি কার?
উত্তর: জন স্টুয়ার্ট মিল বলেছেন,– ‘নারী জাতি ভোটাধিকারের অপপ্রয়োগ ঘটায়।’
20. গ্রেট ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কি প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত ?
উত্তর: গ্রেট ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত।
21. কে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা স্থির করেন ?
উত্তর: ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা স্থির করেন।
22. রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন প্রতীক বিতরণ করে কে ?
উত্তর: নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন প্রতীক বিতরণ করে।
23. সংবিধানের কত নং ধারায় ১৮ বছর বয়স্ক প্রত্যেক নাগরিকের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়?
উত্তর: সংবিধানের ৩২৬ নং ধারায় ১৮ বছর বয়স্ক প্রত্যেক নাগরিকের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়।
24. মূল সংবিধানে নাগরিকদের ভোটাধিকারের বয়স কত ছিল ?
উত্তর: মূল সংবিধানে নাগরিকদের ভোটাধিকারের বয়স ছিল ২১ বছর।
25. কত খ্রিস্টাব্দে এবং কততম সংবিধান সংশোধনীতে নাগরিকদের ভোট দানের অধিকারের বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়েছে?
উত্তর: ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ৬২তম সংবিধান সংশোধনীতে নাগরিকদের ভোটদানের অধিকারের বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়েছে।
26. ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন কত খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয় ?
উত্তর: ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত হয়।
27. “State and Politics in India” গ্রন্থটি কার রচনা?
উত্তর: “State and Politics in India” গ্রন্থটি রচনা করেন প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
28. কত নং ধারায় বলা হয় নির্বাচন সংক্রান্ত সকল ক্ষমতার অধিকারী হল নির্বাচন কমিশন ?
উত্তর: সংবিধানের ৩২৪ নং ধারায় বলা হয় নির্বাচন সংক্রান্ত সকল ক্ষমতার অধিকারী হল নির্বাচন কমিশন।
29. সংবিধানের কত নং ধারায় নির্বাচন কমিশনের গঠন আলোচনা করা হয় ?
উত্তর: সংবিধানের ৩২৪ (২) নং ধারায় নির্বাচন কমিশনের গঠন আলোচনা করা হয়।
30. সংবিধানের কোন কোন ধারায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধি আলোচনা করা হয়?
উত্তর: সংবিধানের ৫৪ এবং ৫৫ নং ধারায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধি আলোচনা করা হয়।
31. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কত খ্রিস্টাব্দে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে।
32. ব্রিটেনে কত খ্রিস্টাব্দে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে?
ব্রিটেনে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে।
33. ফ্রান্সে কত খ্রিস্টাব্দে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে?
উত্তর: ফ্রান্সে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১। প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার বলতে কী বোঝ?
উত্তর: বর্তমানে দেশের সকল অধিবাসী ভােটাধিকার ভােগ করতে পারে না। অপ্রাপ্তবয়স্ক, গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী ব্যক্তি, দেউলিয়া, উন্মাদ এবং বিদেশিগণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ভােটাধিকার লাভের উপযুক্ত নয়। উপরিউক্ত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে দেশের আঠারাে বছর বয়স্ক শিক্ষিত অশিক্ষিত, ধনী-নির্ধন, নারী-পুরুষ সকলেই নির্বাচনে ভােটাধিকারে যােগ্য। এটাই হল সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের মূলনীতি।
প্রশ্ন ২। সর্বজনীন ভােটাধিকারের পক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন এমন কয়েকজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর নাম করাে।
উত্তর: সর্বজনীন ভােটাধিকারের পক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন এমন কয়েকজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হলেন জন স্টুয়ার্ট মিল, আপ্পাদোরাই, ল্যাস্কি প্রভৃতি।
প্রশ্ন ৩। সর্বজনীন ভােটাধিকারের বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেছে এমন কয়েকজন রাষ্টবিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ করাে।
উত্তর: সর্বজনীন ভােটাধিকারের বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন এমন কয়েকজন বিজ্ঞান, হল লেকি, স্যার হেনরি মেইন, মেকলে প্রভৃতি।
প্রশ্ন ৪। নির্বাচন কমিশন কাদের নিয়ে গঠিত হয়?
উত্তর ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নিন কমিশন গঠিত হয়। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্রপতি বহু সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে।
প্রশ্ন ৫। ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রধান দুটি কাজ উল্লেখ করাে।
উত্তর: (i) পার্লামেন্ট, রাজ্য আইনসভা,স্থানীয় স্বায়ত্তশসমূলক সংসার নির্বাচনের জন্য তেল তালিকা প্রণয়ন ও সংশােধন। (ii) সংবিধান ও আইন অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, পার্লামেন্ট, রাজ্য আইস পদ নির্বাচন পরিচালনা ও তদারক করা।
প্রশ্ন ৬। নির্বাচন কমিশনারকে কীভাবে পদচ্যুত করা যায়?
উত্তর: প্রমাণিত অযােগ্যতা ও অসদাচরণের অভিযােগের ভিত্তিতে পনেন্টে উভয় ক্ষেত্রে সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াপশের রাসমর্থিত সম্পর্কিত প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অপসারণ হতে পারেন।
প্রশ্ন ৭। ভারতীয় সংবিধানে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার কী ব্যবস্থা আছে?
উত্তর: চাকুরিতে নিযুক্তির পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের স্বার্থের বিরুদ্ধে তর বে, তাত ও চাকুরির শর্তাদি পরিবর্তন করা যায় না। প্রমাণিত অযােগ্যতা ও অসদাগের হভিযােগের ভিতিতে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিকাশে এবং উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াতে সমর্থনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গৃহীত হলে, তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি তাঁকে রতে পারেন।
প্রশ্ন ৮। অন্তর্বর্তী নির্বাচন বলতে কী বােঝায়?
উত্তর: নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার আগেই যদি আইনসভা ভেঙে যায়, তখন নতু হই গঠন করার জন্য যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাকে অন্তর্বর্তী নির্বাচন’ বলে।
প্রশ্ন ৯। ভারতের ভােটাধিকারের নিয়ম কী?
উত্তর: ভারতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-নির্ধন, স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে ১৮ বছর বয়স্ক সকল বই লােকসভা ও রাজ্য বিধানসভার সদস্য নির্বাচনের জন্য ভােটাধিকার প্রয়ােগ তে পরে।
প্রশ্ন ১০। ভারতের নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা সম্বন্ধে কী অভিযােগ করা যায়?
উত্তর: (i) সংবিধানে নির্বাচন কমিশনারদের যােগ্যতা, কার্যকাল প্রভৃতি বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেয়। কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। শাসকদল এক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। (ii) মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের চাকরির শর্তাদি রাষ্ট্রপতি ধার্য করেন। এক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সভার প্রভাৰ উপেক্ষা করা যায় না। অনেকের মতে বহু ক্ষেত্রে কমিশন কেন্দ্রীয় প্রকারের রাজনৈতিক চাপের কাজে নতিস্বীকার করেছে।
প্রশ্ন ১১। প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের পক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
উত্তর: (i) ভােটাধিকার জন্মগত অধিকার ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আপ্পাদোরাই-এর মতে, “ভােটাধিকার নাগরিকদের জন্মগত অধিকার।” গণতান্ত্রিক এবং যে-কোনাে শাসনব্যবস্থায় জনগণই হল কেন্দ্রবিন্দু। (ii) গণতন্ত্রের সফলতা ও গণতন্ত্র হল শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা। এই শাসনব্যবস্থায় জনগণ যদি অংশ গ্রহণ না করে তাহলে গণতন্ত্র লাভ অধরাই থেকে যাবে।
প্রশ্ন ১২। প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের বিপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: (i) বিপজ্জনক ও প্রগতিবিরােধী ও গণতন্ত্রে সরকারের সাফল্য নির্ভর করে জনপ্রতিনিধিদের যােগ্যতার উপর। যােগ্যতম ব্যক্তিদের নির্বাচন করবে যােগ্য ভােটাররাই। অশিক্ষিত ও অওর জনগণ কখনই যােগ্য ব্যক্তিদের নির্বাচন করতে পারেন না।
(ii) মিলের অভিমত ও শিক্ষাই হল কোনাে নাগরিকের ভোটাধিকারের মূল ভিত্তি। যে ব্যক্তির সাধারণ জ্ঞান নেই তার পক্ষে ভােটাধিকারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ১৩। নারীর ভােটাধিকারের পক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
উত্তর: (i) শারীরিক দুর্বলতার অজুহাত ভিত্তিহীনঃ অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন শারীরিক দিক থেকে মহিলারা পুরুষদের থেকে দুর্বল। এই যুক্তি ভিত্তিহীন। বিশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক নারী রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেদের ছাপ রেখে গেছে, এমনকি পুরুষদেরও ছাপিয়ে গেছেন।
(ii) ন্যায়ের যুক্তি ও নারীও সমাজের অংশ। রাষ্ট্রের আইন নারী-পুরুষ সবাইকে স্পর্শ করে। সুতরাং সরকারি নীতি নির্ধারণে উভয়ের সমঅধিকার থাকা দরকার। গণতন্ত্রের মূল কথা সাম্য।
প্রশ্ন ১৪। নারীর ভােটাধিকারের বিপক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: (i) পারিবারিক অশান্তি ও রাজনৈতিক বিষয়ে নারীরা সাধারণত পুরুষদের চেয়েও কম মাথা ঘামায়। কোনাে কারণে যদি রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে পরিবারে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয় তাহলে পারিবারিক জীবনে শান্তি বিনষ্ট হয়।
(ii) আবেগপ্রবণতা: মনস্তাত্ত্বিকভাবে মহিলারা বেশি আবেগপ্রবণ। যুক্তিতর্কের পরিবর্তে নারীজাতি ভাবাবেগের দ্বারা পরিচালিত হয়।
বর্ণনামূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১) ভােটাধিকারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আধুনিক পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্বমুলক শাসনব্যবস্থা স্বীকৃত। কারণ বর্তমান সময়ে প্রত্যক্ষভাবে শাসনসংক্রান্ত ব্যাপারে জনগণের অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। সুতরাং, জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন এবং এই প্রতিনিধি নির্বাচনের সঙ্গে ভােটাধিকারের ধারণাটি সম্পৃক্ত। নাগরিক ভােট প্রদানের মাধ্যমে তার প্রতিনিধি নির্বাচিত করে।
আধুনিক গণতন্ত্রে ভােটাধিকার তাই রাজনৈতিক অধিকার। নাগরিক একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রার্থীর মধ্যে থেকে তার পছন্দমতাে ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেন। তার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতাবােধ বৃদ্ধি পায়। নাগরিক রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়। জনপ্রতিনিধিরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন।
এই অধিকার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে নানা বাধা ছিল। অর্থনৈতিক বাধা, শিক্ষাগত যােগ্যতার বাধা, স্ত্রীপুরুষ বিচারে বৈষম্যমূলক বাধা ইত্যাদি নানাভাবে এই বাধাকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি। এককথায় বলা যায় যে, সর্বজনীন ভােটাধিকার স্বীকৃত ছিল না। বর্তমান সময়ে বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্রেই সর্বজনীন ভােটাধিকার সম্প্রসারিত হয়েছে। তবে একথা উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, সর্বজনীন ভােটাধিকার স্বীকৃত হলেও বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি রাষ্ট্রে অল্প হলেও শাস্তিপ্রাপ্ত নাগরিকদের, বিদেশিদের, শিশুদের ভােটাধিকার কিন্তু স্বীকৃত নয়।
প্রশ্ন ২) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকারের পক্ষে তিনটি যুক্তি দাও।
উত্তর:
(i) সার্বভৌমত্ব বাস্তবে রূপায়িত হয়
গণতান্ত্রিক আদর্শের একটি মূল ভিত্তি হল গণসার্বভৌমত্ব। জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং প্রত্যেক নাগরিকের ভােটাধিকার স্বীকৃত না হলে গণ-সার্বভৌমত্বের ধারণা মিথ্যায় পর্যবসিত হবে। ভােটাধিকার নাগরিকের জন্মগত অধিকার; সুতরাং প্রকৃত জনগণের শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হলে সকল প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার স্বীকার করতে হবে। শাসননীতি নির্ধারণে জনগণের কোনাে ভূমিকা না থাকলে গণতন্ত্র জনগণের শাসনে পরিণত হতে পারে না। প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার ছাড়া গণতন্ত্র অর্থহীন।
(ii) ব্যক্তিস্বাধীনতার ভিত্তি
ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশের উপযােগী পরিবেশ গঠন করে ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌল কর্তব্য। ভােটাধিকার ছাড়া জীবনের পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তির স্বার্থ, অভাব-অভিযােগের প্রতি শাসকশ্রেণি কর্ণপাত করে না। ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত ব্যক্তি শাসনের সকল ফল বা সুযােগসুবিধা লাভ করতে পারে না।
(iii) সাম্যনীতির প্রতিষ্ঠা
গণতন্ত্রের মৌল ভিত্তি হল সাম্যনীতি। সমাজের কিছু অংশকে ভােটাধিকারের সুযােগ দান করে অপর অংশকে বঞ্চিত করলে সমাজে শ্রেণিবৈষম্যের সৃষ্টি হবে। এটি গণতান্ত্রিক আদর্শের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, সকল নাগরিকের ভােটাধিকারের সুযােগ ছাড়া গণতন্ত্র সার্থক হতে পারে না।
প্রশ্ন ৩) আধুনিক গণতন্ত্রে ভােটদাতাদের যােগ্যতাবলি উল্লেখ করাে।
উত্তর:
ভােটদাতাদের যােগ্যতাবলি
ভােটাধিকার প্রয়ােগের জন্য বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই কতকগুলি যােগ্যতা বা শর্তকে নির্দিষ্ট করা হয়। সেই শর্তগুলি হল নাগরিকতা, নির্দিষ্ট বয়স, বাসস্থান।
নাগরিকতা
প্রত্যেক রাষ্ট্রেই নাগরিকদের ভােটদানের অধিকার স্বীকৃত। ভােটাধিকারের বিষয়টি ব্যক্তির রাজনৈতিক আনুগত্যের সঙ্গে জড়িত। আর সেই কারণেই ভােটদানের আবশ্যিক শর্ত নাগরিকতা। কোনাে রাষ্ট্রেই বিদেশিদের ভােটাধিকার স্বীকার করা হয় না।
নির্দিষ্ট বয়স
সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার স্বীকৃত হলেও প্রত্যেক রাষ্ট্রে ভােটাধিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়স ঠিক করা হয়েছে। ওই নির্দিষ্ট বয়স না হলে ভােটাধিকার প্রয়ােগ করা যায় না। বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ভােটাধিকার প্রয়ােগের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়সকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ভারতীয় সংবিধান প্রবর্তিত হওয়ার সময়, ২১ বছর বয়স্ক সমস্ত নারী-পুরুষের ভােটাধিকার স্বীকৃত হয়েছিল। কিন্তু সংবিধানের ৬২ তম সংশোধন আইন অনুসারে ওই বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়েছে। সুতরাং, বর্তমানে ভারতে ১৮ বছর বয়স্ক যে-কোনাে ভারতীয় নাগরিকের ভােটাধিকার স্বীকৃত।
বাসস্থান
নাগরিক যে এলাকায় বসবাস করেন সেই এলাকা থেকে তিনি তাঁর প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। নির্দিষ্ট ভৌগােলিক এলাকায় বসবাস করাকে ভােটাধিকারের শর্ত রূপে গণ্য করা হয়। একথা বলা যায় যে, সুস্থ নাগরিকরা ভােটদানের অধিকারী। বিকৃত মস্তিষ্ক, আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘােষিত ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেক রাষ্ট্রেই ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। প্রত্যেক রাষ্ট্রে যাদের নাম ভােটার তালিকাভুক্ত হয় তাঁরাই ভােট দিতে পারেন এই ভােটার তালিকা তৈরি করেন নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। যার নাম ওই তালিকায় থাকে না তিনি সাধারণত ভােট দিতে পারেন না। ভােটার তালিকা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংশােধিত হয়। ভারতে ভােটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৪) ভারতের নির্বাচন কমিশনের গঠন আলােচনা করাে।
উত্তর: নির্বাচন কমিশন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে গঠিত। অন্যান্য কমিশনারদের সংখ্যা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন। এদের নিয়ােগ করবার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও কয়েকজন আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত করতে পারেন। নির্বাচনী গুরুদায়িত্ব স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে পালন করবার জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাসম্ভব শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের যে পদ্ধতি শাসনতন্ত্রে নির্দিষ্ট আছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে কেবলমাত্র সেই পদ্ধতির মাধ্যমে অপসারণ করা যায়। পার্লামেন্টের প্রতি কক্ষে দুর্নীতি বা অযােগ্যতার জন্যে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত হলে ইমপিচমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পদ থেকে অপসারণ করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনারদের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সুপারিশ ব্যতীত পদচ্যুত করা যায় না।
প্রশ্ন ৫) নির্বাচন কমিশনের কার্যাবলি কী কী?
উত্তর: ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই দায়িত্ব বা কাজগুলি হল:
(i) পার্লামেন্ট, রাজ্য আইনসভা, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক সংস্থার নির্বাচনের জন্য ভােটার তালিকা প্রণয়ন ও সংশােধন।
(ii) সংবিধান ও আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, পার্লামেন্ট, রাজ্য আইনসভার নির্বাচন পরিচালনা ও তদারক করা।
(iii) নির্বাচনের কর্মসূচি অর্থাৎ দিন স্থির, মনােনয়নপত্র পেশ, প্রত্যাহার ও মনােনয়ন পত্রের বৈধতার পরীক্ষা প্রভৃতির ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের।
(iv) নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়ােজনীয় কর্মচারী নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের অনুরােধ করা।
(v) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী প্রতীক বণ্টন করা।
(vi) কারচুপি, দুনীতি বা নির্দিষ্ট অভিযােগের ভিত্তিতে কোনাে কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত, বাতিল বা পুনর্নির্বাচনের আদেশ দিতে পারে।
(vii) সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্যে রাজনৈতিক দল এবং সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি (Code of conduct) তৈরি করতে পারে।
(viii) নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না তা তদারকি করার জন্যে কমিশন পরিদর্শক (observer) নিয়ােগ করে।
প্রশ্ন ৬) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পক্ষে যুক্তিগুলি দেখাও।
উত্তর: (i) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা থাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল ও সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলি তাদের শক্তি অনুযায়ী প্রতিনিধি পাঠানাের সুযােগ পায় ।
(ii) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় প্রতিটি ভােটদাতাকে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য তাঁর পছন্দ প্রকাশ করতে হয়। এর ফলে একজন ভােটদাতা তাঁর ভােটের মূল্য বুঝতে পারেন। ভােটদাতার রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়। নাগরিকের মধ্যে দায়িত্ববােধ সৃষ্টি করে।
(iii) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় একটি আসন সংবলিত নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।
(iv) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় নির্বাচকমণ্ডলী নিজ পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীর নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভােগ করে।
(v) মিল-এর মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় নির্বাচনী এলাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হলে বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলি ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রার্থীরুপে স্থির করে। এর ফলে অনেক যােগ্য ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না অথবা পরাজিত হয়। কিন্তু সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল বা গােষ্ঠী সুযােগ্য প্রার্থী মনােনীত করে।
প্রশ্ন ৭) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিপক্ষে যুক্তিগুলি কী?
উত্তর: (i) রাষ্টবিজ্ঞানী সিজইউই-এর মতে, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা শ্রেণি স্বার্থমূলক আইন প্রণয়নে উৎসাহিত করে।
(ii) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এইরুপ অবস্থায় দেশ বিরােধী দল ও গােষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রত্যেকেই জাতীয় স্বার্থ অপেক্ষা সংকীর্ণ স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়।
(iii) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থায় অনেক সময় কোনাে একটি রাজনৈতিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে সমঝােতার মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়। এক্ষেত্রে সরকারের মধ্যে স্থায়িত্ব থাকে না।
(iv) সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযােগ হল যে, এখানে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নেতৃত্বের প্রাধান্য বৃদ্ধি পায়। নির্বাচকমণ্ডলীর সঙ্গে প্রতিনিধির সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।
(v) যে সমস্ত দেশে অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞ ও অশিক্ষিত সেখানে এই পদ্ধতিকে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন ৮) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের বিপক্ষে কয়েকটি যুক্তি দাও।
উত্তর: সার্বিক ভােটাধিকার বর্তমানে স্বীকৃত নীতি হলেও, হেনরি মেইন, লেবন প্রভৃতি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই নীতিকে সমর্থন জানাননি। তাঁদের যুক্তিগুলি হল:
(i) প্রগতি বিরােধী: সকলকে ভােটাধিকার দিলে দেশের অগ্রগতি বাধা পাবে। সাধারণ মানুষ অশিক্ষিত ও অজ্ঞ। বিখ্যাত ঐতিহাসিক মেকলে (Maculay) বলেছেন, “সার্বিক ভােটাধিকার দিলে সভ্যতা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।”
(ii) শিক্ষাগত যােগ্যতা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিল (Mill) বলেছেন, যারা অশিক্ষিত তাদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ রাজনীতির অ আ ক খ যারা বােঝে না। শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকাই স্বাভাবিক। তাই তিনি বলেছেন,—“সার্বিক ভােটাধিকার দেওয়ার আগে সর্বজনীন শিক্ষা চালু করতে হবে।”
(iii) সম্পত্তিগত যােগ্যতা: যাদের সম্পত্তি নেই, তাদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল,—মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা। সম্পত্তিহীনদের ভােটাধিকার দিলে সম্পত্তির অধিকার বিঘ্নিত হবে।
(iv) করপ্রদানের যােগ্যতা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিল বলেছেন, যারা কর দেয় না, তাদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, তারা ভােটে জিতলে মিতব্যয়ী না হয়ে সরকারি অর্থের অপচয় করবে। তারা জানে বেশি খরচ করলেও তাদের উপর করের বােঝা চাপবে না।
(v) দারিদ্র্যগত অক্ষমতা:মেকলে বলেছেন, যারা দরিদ্র তাদের ভােটাধিকার দিলে “কিছু অর্ধনগ্ন ধীবর” সভ্যতাকে নষ্ট করবে। তারা বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। জনতার স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
(vi) পুরুষত্বের যােগ্যতা: কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে একমাত্র পুরুষরাই ভােটাধিকার ভােগ করবে। নারীদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, তাদের ভােটাধিকার দিলে, গৃহের শান্তি নষ্ট হবে। শিশুরা ঠিকমতাে লালিত পালিত হবে না। নারীরা ধর্মভীরু ও আবেগপ্রবণ, তাই যােগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারবে না। তা ছাড়াও তাদের শাসন দক্ষতাও কম।
প্রশ্ন ৯) নির্বাচন কমিশনকে কোন কোন দিক থেকে সমালােচনা করা যায়?
উত্তর: ভারতের সংবিধান রচয়িতারা গণতন্ত্র সফল করার উদ্দেশে নির্বাচন যাতে অবাধ সুষ্ঠ, স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণভাবে হয় তার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা সংবিধানে উল্লেখ করেছেন। সংবিধানের পঞ্চদশ অংশে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিশদ ব্যবস্থার উল্লেখ করা হয়েছে। সংবিধান রচয়িতারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করতে চেষ্টা করলেও সমালােচকরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। কারণ—
(i) কমিশনের সদস্যদের নিয়ােগ গত যােগ্যতা, কার্যকাল প্রভৃতির ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। যেহেতু রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করেন, সেহেতু দলীয় সমর্থকদের নিয়ােগের সম্ভাবনা বেশি। তাতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা যাবে না।
(ii) দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবার পর কমিশনের সদস্যদের অন্য কোনাে চাকরি পেতে বাধা নেই। ফলে ভবিষ্যতে চাকরি পাবার আশায় সরকারি অনুগ্রহ পেতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারবে না।
(iii) কমিশনের কর্মচারী নিয়ােগের ক্ষমতা নেই।
(iv) কমিশনের সুপারিশ এবং পরামর্শ সরকার মানতে বাধ্য নয়। এই সমস্ত কারণে সমালােচকরা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে গণতন্ত্র সম্মত নয় বলে মনে করেছেন। ড. মাহেশ্বরী বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন হল ভারতীয় গণতন্ত্রের দুর্বলতম স্তম্ভ।”
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ১) সার্বিক প্রাপ্তবয়স্ক ভােটাধিকার বলতে কী বােঝ? এর সপক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি আলােচনা করাে।
উত্তর: গণতন্ত্রের বিকাশের সঙ্গে জনগণের ভােটাধিকারের প্রশ্নটি জড়িত। গণতন্ত্র হল জনগণের শাসন। আধুনিক বৃহদায়তন রাষ্ট্রে জনগণের শাসনকে বাস্তবায়িত করার প্রধান মাধ্যম হল, প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার। সমস্ত নাগরিকের মধ্যে ভােটাধিকার স্বীকৃত হলে আদর্শ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আপ্পাদোরাই মন্তব্য করেন— “The primary means by which the people exercise their sovereignty is the votes.”
দেশের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ, শিক্ষিত, অশিক্ষিত নির্বিশেষে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ভােটদানের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকারী হলে তাকে প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার বলে। এই নীতি অনুযায়ী শুধুমাত্র বয়স ছাড়া অন্য কোনাে কারণে জনগণকে ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
সপক্ষে যুক্তি
(i) জনগণের সার্বভৌমিকতার বাস্তবায়ন
একটি রাষ্ট্রে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার স্বীকৃত হলে প্রকৃত অর্থে জনগণের সার্বভৌমিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়, ভােটাধিকারের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্রপরিচালনায় অংশগ্রহণ করে, জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার দায়িত্ব পালন করে।
(ii) সাম্যনীতির প্রতিফলন
দেশের মধ্যে প্রকৃত সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে জাতি, ধর্ম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকের ভােটাধিকার স্বীকার করা উচিত। সমাজের একটি অংশকে ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলে বৈষম্য সৃষ্টি করে।
(iii) সরকারের নীতি নিয়ন্ত্রণ
গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্য সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার প্রয়ােজন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারের নীতি সমস্ত মানুষকে স্পর্শ করে। তাই সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমস্ত জনগণের অধিকার থাকা উচিত।
(iv) রাজনৈতিক চেতনা ও আগ্রহ বৃদ্ধি
একটি দেশে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার স্বীকার করা হলে জনগণের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে। দেশের সমস্ত নাগরিক নির্বাচন, সভাসমিতি, মিছিল ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে। পত্রপত্রিকায় মতামত প্রকাশ করে। এর ফলে জনগণের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে।
(v) দাবি পূরণ
সাধারণত দেখা যায় যাদের ভােটাধিকার থাকে না, তাদের দাবির কথা কেউ শােনে না। অধ্যাপক ল্যাস্কি যথার্থই বলেছেন—যারা শাসন ক্ষমতায় অংশগ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত, তারা কখনই ক্ষমতার সুফল ভােগ করতে পারে না। এই ব্যবস্থা গণতন্ত্রে কাম্য নয়। তাই সকলকে ভােটাধিকার দেওয়া উচিত।
(vi) মানুষের জীবনে পূর্ণতা আনে
জীবনের বিভিন্ন দিক আছে। সব দিক আলােকিত হলে, জীবনের পূর্ণতা আসে। কাউকে ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত করলে, তার রাজনৈতিক দিকটা অন্ধকারে থেকে যাবে। ফলে সে অপূর্ণ রয়ে যাবে।
বিপক্ষে যুক্তি
(i) প্রগতিবিরােধী
গণতন্ত্রের অর্থ হল জনগণের শাসন। কিন্তু বেশিরভাগ দেশের অধিকাংশ নাগরিক অজ্ঞ ও অশিক্ষিত হওয়ার জন্য যােগ্যপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে না। অজ্ঞ ও দরিদ্র জনসমষ্টি অর্থের লােভে ভােটাধিকারের অপপ্রয়ােগ করে। তাই সকলের ভােটাধিকার থাকা উচিত নয়।
(ii) সম্পত্তিগত যােগ্যতা
যে সমস্ত নাগরিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নেই অথবা যারা রাষ্ট্রকে করপ্রদান করে না, তাদের ভােটাধিকার থাকা উচিত নয়। করপ্রদানের মাধ্যমেই নাগরিক রাষ্ট্রকে আর্থিক সাহায্য দিতে পারে। কিন্তু বর্তমানে। সমাজতান্ত্রিক যুগে সম্পত্তির অধিকারকে ভােটাধিকারের মানদণ্ড হিসাবে গ্রহণ করা যায় না। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অর্থ হল বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলে ভােটাধিকারের সঠিক প্রয়ােগ সম্ভব নয়।
(iii) শিক্ষাগত যােগ্যতা
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিল (Mill) বলেছেন,—যারা অশিক্ষিত তাদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, রাজনীতির অ আ ক খ তারা বােঝে না। শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের জ্ঞান না থাকাই স্বাভাবিক। তাই তিনি বলেছেন, “সার্বিক ভােটাধিকার দেওয়ার আগে সার্বজনীন শিক্ষা চালু করতে হবে।”
(iv) করপ্রদানের যােগ্যতা
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিল বলেছেন,—যারা কর দেয় না, তাদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, তারা ভােটে জিতলে মিতব্যয়ী না হয়ে সরকারি অর্থের অপচয় করবে। তারা জানে বেশি খরচ করলে তাদের উপর করের বােঝা চাপবে না।
(v) দারিদ্রগত অক্ষমতা
মেকলে বলেছেন, যারা দরিদ্র, তাদের ভােটাধিকার দিলে “কিছু অর্ধ নগ্ন ধীবর” সভ্যতাকে নষ্ট করবে। তারা বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে। জনতার স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
(vi) পুরুষত্বের যােগ্যতা
কিছু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে একমাত্র পুরুষরাই ভােটাধিকার ভােগ করবে। নারীদের ভােটাধিকার দেওয়া উচিত নয়। কারণ, তাদের ভােটাধিকার দিলে গৃহের শান্তি নষ্ট হবে। শিশুরা ঠিকমতাে লালিতপালিত হবে না। নারীরা ধর্মভীরু ও আবেগপ্রবণ, তাই যােগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারবে না। তা ছাড়া, তাদের শাসনদক্ষতাও কম।
প্রশ্ন ২) নারীর ভােটাধিকারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি আলােচনা করো।
উত্তর: প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তার সঙ্গে নারীর ভােটাধিকারের প্রশ্নটিও জড়িত ছিল। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারীর ভােটাধিকার নিয়ে আন্দোলন শুরু হয় এবং তা ইউরােপেও ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার স্বীকৃত হয়। পরবর্তী সময়ে ফ্রান্স, ইটালি ও জাপানে নারীর ভােটাধিকার স্বীকার করা হয়। সুইজারল্যান্ডে মাত্র ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্ত্রীলােকগণ ভােটাধিকার লাভ করে। সম্প্রতি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের এক সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে যে আধুনিক পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলিম দেশ ছাড়া সর্বত্র নারীর ভােটাধিকার স্বীকৃত হয়েছে। নিম্নে নারীর ভােটাধিকারের পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি আলােচনা করা হল:
বিপক্ষে যুক্তি
(i) গৃহের অশান্তি
নারীর স্থান প্রকৃতপক্ষে গৃহের মধ্যে সাংসারিক জীবনে। রাজনৈতিক জীবনে তাদের অংশগ্রহণ পারিবারিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ক্ষুন্ন করবে। পরিবার জীবনের পবিত্রতা নষ্ট হলে সমাজের বুনিয়াদ শিথিল হয়ে পড়বে।
(ii) যােগ্যতার অভাব
নারী রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনে পুরুষের সমকক্ষ হতে পারে না। সমান অধিকার দাবি করতে হলে সমান যােগ্যতা থাকা প্রয়ােজন। শারীরিক ও অন্যান্য কারণে নারী পুরুষের সমকক্ষ নয়, সুতরাং সমান অধিকার তারা দাবি করতে পারে না।
(iii) শারীরিক দুর্বলতা
ভােট দেওয়া একটি পবিত্র অধিকার। অধিকার ভােগ করলে কর্তব্য পালন করতে হয়। দেশ রক্ষা করা একটি কর্তব্য। নারীরা শারীরিক দিক থেকে দুর্বল। তারা দেশ রক্ষার কাজ করতে পারবে । তাই তারা ভােটাধিকারও দাবি করতে পারে না।
(iv) নারীত্বের ক্ষতি
সংসারে নারীর বিশেষ প্রয়ােজন। কথায় বলে,—“সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।” নারীরা শিশুদের লালনপালন করে। স্নেহ, প্রীতি, ভালােবাসা দিয়ে সংসারের বাঁধনকে শক্ত করে। ভােটাধিকার দিলে তারা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বে। এতে তার নারীত্বের গুণগুলি নষ্ট হবে।
(v) আবেগপ্রবণতা
নারীরা সাধারণত আবেগপ্রবণ হয়। তারা যুক্তিতর্কের ধার ধারে না। কিন্তু রাজনীতি অত্যন্ত জটিল। এখানে আবেগ প্রবণতার কোনাে স্থান নেই। তাই রাজনীতিতে নারীদের না আসাই ভালাে।
পক্ষে যুক্তি
(i) সাম্যনীতি
ভােটাধিকার মানুষের জন্মগত অধিকার। এই রাজনৈতিক অধিকার অস্বীকার করা হলে ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ হয় না। সুতরাং এই অধিকার কেবলমাত্র পুরুষ ভােগ করবে তা হতে পারে না। পুরুষের মতাে নারীও সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ; সুতরাং নারীর বিকাশের সুযােগ অস্বীকার করে সমাজের কল্যাণ করতে পারে না।
(ii) শারীরিক দুর্বলতা অজুহাত নয়
শারীরিক দুর্বলতার কারণে স্ত্রীলােককে ভােটের অধিকার থেকে বঞ্ছিত করলে দুর্বল ও বৃদ্ধ পুরুষকে ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হয়। সুতরাং দুর্বলতার অজুহাতে তাকে ভােটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
(iii) নারীবিকাশের জন্য
নারী-স্বার্থ ও সমস্যা সম্পর্কে নারীর স্বাভাবিক উপলদ্ধি থাকে। নারীর প্রতিনিধিত্বের সুযােগ থাকলে তাদের স্বার্থ, অভাব-অভিযােগের প্রতি সরকার বা আইনসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব। এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করলে সমাজের একটা অংশ উপেক্ষিত হবে।
(iv) যােগ্যতার অভাব নেই
নারীদের যােগ্যতা নেই, একথা আদৌ সত্য নয়, সাহিত্যে শিক্ষাদীক্ষায় এবং সংস্কৃতিকে এমনকি খেলাধুলায় তারা যথেষ্ট যােগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে।
(v) প্রশাসনিক যােগ্যতা
নারীরা যােগ্যতার সঙ্গে শাসনব্যবস্থা চালাতে পারে। ভারতের ইন্দিরা গান্ধি, শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক, ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার প্রভৃতি তার উদাহরণ।
প্রশ্ন ৩) ভারতের নির্বাচন কমিশনের গঠন ও কার্যাবলি আলােচনা করাে।
উত্তর ভারতের সংবিধান রচয়িতারা গণতন্ত্র সফল করার উদ্দেশ্যে নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, স্বাধীন ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পূর্ণ হয় তারজন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করার কথা সংবিধানে উল্লেখ করেছেন। ভারতীয় সংবিধানের পঞ্চদশ অংশে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যার উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের গঠন
সংবিধানের ৩২৪(২) নং ধারায় নির্বাচন কমিশনের গঠন সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং কয়েকজন কমিশনারকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। কতজন সদস্য থাকবেন, তা রাষ্ট্রপতি ঠিক করবেন। রাষ্ট্রপতি এদের নিয়ােগ করবেন। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বা অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য সচিব সাধারণত এই পদে নিযুক্ত হন।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কাজের ব্যবস্থা
নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন, তার জন্যে কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে:
(i) কমিশনের চাকুরির শর্তাবলি, কার্যকালের মেয়াদ ইত্যাদি পার্লামেন্টের তৈরি আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।
(ii) মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে অপসারিত করতে গেলে বিশেষ পদ্ধতি নিতে হবে। অসমর্থ কিংবা অসদাচরণের জন্যে পার্লামেন্টের প্রত্যেক কক্ষের মােট সদস্যের অর্ধেকের বেশি এবং উপস্থিত ও ভােটদানকারী সদস্যের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য অপসারণের প্রস্তাব গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতিকে জানালে, রাষ্ট্রপতি তাকে অপসারণ করতে পারবেন।
(iii) নিয়ােগের পর মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে চাকরির শর্তাবলি পরিবর্তন করা যাবে না।
(iv) সঞ্চিত তহবিল থেকে তাদের বেতন দেওয়া হবে।
ক্ষমতা ও কার্যাবলি
সংবিধানের ৩২৪(১) নং ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন পার্লামেন্টের, রাজ্য আইনসভার, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাবলির যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবে। এইসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কমিশন নিম্নলিখিত কাজগুলি করে থাকে:
(i) নির্বাচনের পূর্বে ভােটার তালিকা তৈরি করা।
(ii) নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচনের তারিখ, মনােনয়নপত্র পেশ এবং প্রত্যাহার করার তারিখ, মনােনয়ন পত্র পরীক্ষা করার তারিখ ইত্যাদি ধার্য করা।
(iii) সারা দেশে অবাধ ও স্বাধীনভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা।
(iv) নির্বাচনের ব্যবস্থাদি সম্পর্কে কোনাে বিরােধ দেখা দিলে, তার অনুসন্ধানের জন্যে অফিসার নিয়ােগ করা।
(v) নির্বাচন পরিচালনার জন্যে প্রয়ােজনীয় কর্মচারী দিতে রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালকে অনুরােধ করা।
(vi) কোনাে রাজনৈতিক দলকে স্বীকৃত দেওয়া। নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে বিরােধ দেখা দিলে তার মীমাংসা করা।
(vii) আইনসভার কোনাে সদস্যের অযােগ্যতার ব্যাপারে প্রশ্ন দেখা দিলে, রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালকে পরামর্শ দেওয়া। (viii) নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দল ও নির্বাচকমণ্ডলীর জন্যে আচরণবিধি তৈরি করা।
(ix) প্রয়ােজনে কোনাে নির্বাচনকে স্থগিত, এমনকি বাতিল করে দেওয়া।
মূল্যায়ন
একথা সত্য, বর্তমানে যেভাবে নির্বাচনের সময় ব্যাপক দুর্নীতি, কারচুপি, ভােটকেন্দ্র দখল, জালভােট, পেশি শক্তির প্রাধান্য প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিয়েছে, তাতে নিরপেক্ষ ও নির্ভীক নির্বাচন কমিশন গড়ে তুলতে না পারলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। তবে আশার কথা, কমিশন কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে সাহসের পরিচয় দিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়ােজনে নতুন করে ভোেট নিয়েছে। ১৯৮৯ সালে লােকসভার নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন ক্ষেত্র আমেথিতে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে পুনরায় ভােট নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি. এন. শেষণের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। ভারতের নির্বাচকমণ্ডলী তাঁকে বিপুল সমর্থন জানিয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু এবং স্বাধীন নির্বাচনের প্রয়ােজনে তিনি সচিত্র পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যােগ করেছেন।
প্রশ্ন ৪) ভারতে প্রবর্তিত সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, তুমি কি এই মত সমর্থন করাে। তােমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দেখাও।
উত্তর: প্রাপ্তবয়স্কের ভােটাধিকার ভারতে স্বীকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভােটদানের অধিকার জনগণের শ্রেষ্ঠ অধিকার। সংবিধান সংশােধনের মানে ১৮ বছর বয়স্ক ভারতের নাগরিক এবং যে-কোনাে নির্বাচনী এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তির ভােটদানের পবিত্র অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।।
ভারতে ভােটাধিকার ব্যর্থ
(i) গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন নাগরিক ছাড়া সার্বিক ভােটাধিকার সফল হতে পারে না। উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া সেই চেতনার বিকাশ হতে পারে না। ভারতের শতকরা ৬০ জন মানুষ এখনও নিরক্ষর, অজ্ঞ, অশিক্ষিত জনগণের পক্ষে রাজনৈতিক সমস্যার বিচারবিশ্লেষণ করা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি ও ভূমিকার মূল্যায়ন করা সম্ভব হয় না।
(ii) ভারতে নবম সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত জনতা দলের সাফল্য ছাড়াই একই দলের (কংগ্রেস) নিরঙ্কুশ প্রাধান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যর্থতাই প্রমাণ করে।
(iii) ভারতে এখনও মােট ভােটদাতার ৫০-৭০ অংশ ভােটদান করে থাকে, বাকি অংশ ভােটদানে বিরত থাকেন। এটি রাজনৈতিক চেতনার অভাব বলে পরিগণিত হয়।
ভােটাধিকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়নি
(i) পুথিগত শিক্ষার অভাবেই জনগণের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটেনি একথা বলা যায় না। বিগত নির্বাচনগুলিতে প্রমাণ হয়েছে যে, অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত ভােটদাতাগণ তাদের ভােটাধিকার প্রয়ােগের দ্বারা যােগ্য প্রার্থীকে নির্বাচন করেছেন।
(ii) চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনে বিভিন্ন প্রদেশে কংগ্রেসের বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে ব্যালট বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কংগ্রেস শােচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে জনতা দলের ভাঙন এবং ব্যর্থতার জন্য পুনরায় জনগণের ভােটে কংগ্রেস ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে কংগ্রেস (ই) বিপুল ভােটে জয়লাভ করলেও পশ্চিমবঙ্গ, বাংলা, ত্রিপুরা, অন্ত্র ও জম্মু-কাশ্মীরের জনগণ বিরােধী প্রার্থীদের অধিক ভােটদান করে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় দেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়ােজন যে, শুধু শিক্ষিত জনগণের অংশগ্রহণ নয়, নির্বাচন পদ্ধতি সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া প্রয়ােজন। নির্বাচন অবাধ ও গণতন্ত্রসম্মত না হলে ভােটাধিকারের মূল্য বিচার করা যায় না।
Download ভারতীয় নির্বাচন কমিশন গঠন ও কার্যাবলী - Election Commission of India PDF
File Details:-
File Format:-PDF
Quality:- High
File Size:- 5 Mb
File Location:- Google Drive
Click Here to Download
আরও পড়ুন:
Others Important Link
Syllabus Link: Click Here
Questions Paper Link: Click Here
Admit Card Link: Click Here
Result Link: Click Here
Latest Job: Click Here
Age Calculator: Click Here
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box