নানা রঙের দিন নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় Nana Ranger Din Descriptive Question Answer PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি নানা রঙের দিন নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF.
নিচে নানা রঙের দিন নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। Nana Ranger Din Descriptive Question Answer PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।
নানা রঙের দিন - অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘নানা রঙের দিন’ নাটকটি আন্তন চেকভের ‘Swan Song’ নাটকের অনুকরনে রচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকগুলি নাটক অনুবাদও করেছিলেন। যদিও অনুবাদের ক্ষেত্রেও তাঁর স্বকীয়তা চোখে পড়ার মতো। আলোচ্য নাটকেও নাট্যকারের নিজস্বতা মিশে রয়েছে। আলোচ্য পোস্টে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
নানা রঙের দিন নাটকের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Nana Ranger Din Descriptive Question Answer
1. “আমার জীবনে পয়তাল্লিশটা বছর” –কার জীবনের কথা বলা হয়েছে? পয়তাল্লিশ বছরের জীবনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
Ans: প্রদত্ত উক্তিতে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় তাঁর নিজের জীবন কথা ব্যক্ত করেছেন। তিনি অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের অন্যতম চরিত্র।
এই নাটকে রজনীকান্তকে আমরা পাই ৬৮ বছরের এক বৃদ্ধ অভিনেতা রূপে, যাঁর অভিনয় জীবন ৪৫ বছরের। অভিনয় শেষে মাতাল অবস্থায় ‘দিলদারের’ বেশে তাঁকে দেখা যায়।
একাকিত্ব তার জীবনযন্ত্রণার অন্যতম কারণ। তার নিজের বলতে কেউ নেই, সেজন্য থিয়েটার শো-এর পরে তাঁর বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। এমনকি—তিনি মরে গেলেও তাঁর জন্য ভাবার কেউ নেই, এমন আক্ষেপ তাকে কুরে কুরে খায়।
নিজের বংশমর্যাদা সম্পর্কে রজনীকান্ত সচেতন—“রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছিলুম।” অভিনয় জীবনে প্রবেশ করার আগে পুলিশের চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু নাটকের প্রতি গভীর আকর্ষণ তাঁকে টেনে আনে থিয়েটারে। আর এই থিয়েটারকে কেন্দ্র করেই আসে যৌবনের প্রথম প্রেম ৷ দুজনেই দুজনকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন, কিন্তু তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়াল শেষ পর্যন্ত থিয়েটার।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনের শেষে রজনীকান্ত তাঁর জীবনের চাওয়া পাওয়ার হিসাবনিকাশে পূর্ণ করে চলেছেন ব্যর্থতার ঝুলি। যে থিয়েটারকে তিনি মনে করতেন ‘পবিত্র শিল্প’ সেই থিয়েটার থেকে তিনি পাননি যথার্থ সম্মান। বরং, অবহেলা আর অবজ্ঞা যেন আজ তাঁর সম্বল। নিজের প্রতি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবকে স্বীকার করেন “হায়রে প্রতিভা! কোথায় গেল বলো তো?”— এভাবেই পরাজিত নায়কের মতো রজনীকান্ত বিদায় নিতে চান নাট্যমঞ্চ —থকে এবং জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে।
2.‘নানা রঙের দিন’ নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
Ans: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের অন্যতম চরিত্র হল বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় ৷ এই প্রৌঢ় অভিনেতা তার দীর্ঘ অভিনয় জীবনে থিয়েটার শিল্পের প্রতি নিষ্ঠাবান থেকেও প্রতিদানে কোনো সম্মান পাননি বরং পেয়েছেন একাকিত্বের যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণাবোধ থেকেই বাস্তবতার কঠিন সত্যকে মেনে নিয়ে রজনীকান্ত চরিত্রের নানাবিধ বিচিত্র দিক প্রস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।
মাদকাসক্ত আটষট্টি বছর বয়সের প্রৌঢ় অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় চরিত্রের একটি অন্যতম দিক হল থিয়েটার জগতের প্রতি ভালোবাসা ও আকর্ষণ। তাই তিনি থিয়েটারকে বলেছেন ‘পবিত্র শিল্প’। থিয়েটার জগতের প্রতি আত্মমগ্ন হয়ে তিনি পুলিশ ইনস্পেকটরের চাকরিকেও ছেড়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেননি। এমনকি এই থিয়েটার কেড়ে নিয়েছে তাঁর প্রথম যৌবনের প্রেমকেও। একাকী জীবনের পথে তাই থিয়েটারই হয়েছে তার সর্বস্ব।
নিজের বংশ পরিচয় তথা বংশমর্যাদা সম্পর্কে রজনীকান্ত ছিলেন বিশেষ সচেতন। তিনি তাঁর বংশমর্যাদা সম্পর্কে অবগত করতে বলেছেন-“রাঢ়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভদ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মেছিলুম।”
সেসময় থিয়েটার জগতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিচরিত্রের একটি সাধারণ চারিত্রিক দোষ ছিল মাদকাসক্তি। সেই দোষে রজনীকান্তও আসক্ত ছিলেন। তাই তাঁকে অভিনয় শেষে মদ্যপ অবস্থায় গ্রিনরুমে ‘দিলদারের’ বেশে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
একজন অভিনেতা হিসেবে রজনীকান্তের উপলব্ধি, থিয়েটার দর্শকবৃন্দের কাছে কেবলমাত্র আনন্দ-বিনোদনের মাধ্যম। অভিনেতার অভিনয়ে হাততালি দেওয়া ছাড়াও তাঁকে। যে সামাজিক মর্যাদাটুকুও দেওয়া প্রয়োজন তা তারা মনে করে না। যদিও প্রম্পটার কালীনাথ সেন রজনীকান্তকে তাঁর প্রতিভার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে—“আপনার প্রতিভা এখনও মরেনি চাটুজ্জেমশাই।” তবে এক সময় পরাজিত নায়কের মতো বাস্তবকে স্বীকার করে নেন রজনীকান্ত—“হায়রে প্রতিভা। কোথায় গেল বলো তো?” এইভাবেই রজনীকান্ত চরিত্রটি অন্তিম পরিণতি প্রাপ্তির পথে নাট্যমঞের জগৎ থেকে বিদায় নিতে চেয়েছে।
3.“শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে—তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ,”—’নানা রঙের দিন’ নাটক অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখো।
Ans: একাধারে মঞাভিনেতা-নির্দেশক নাট্যকার অজিতেশ। বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একাঙ্ক নাটক ‘নানা রঙের দিন’। প্রতিভাবান। নাট্য অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনকাহিনি অবলম্বনে। নাট্যকাহিনি আবর্তিত হয়েছে। অভিনয় শিল্পকে আজীবন তিনি ভালোবেসে গেছেন। আপন জীবনাভিজ্ঞতার পারাবার মন্থন করে তার নির্যাস সহকর্মী কালীনাথের সামনে রেখে বলেছেন— “শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে—তার বার্ধক্য নেই”। রজনীকান্তের আড়ালে এখানে যেন নাট্যকার অজিতেশেরই কণ্ঠ শোনা যায়।
যথার্থ শিল্পী কখনও তার শিল্পীসত্তা থেকে সরে আসতে পারে না। সাধারণ মানুষের মতো দৈহিক বার্ধক্য, দৈহিক দুর্বলতার কাছে সে হার মানে না—এই সত্যই অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নাটকটিতে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। নাটকের মূল চরিত্র রজনীকান্ত দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে থিয়েটার করছেন। থিয়েটারকে ভালোবেসে তিনি সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন। বিশ্বসংসারে তাঁর আপনজন বলতে নাটক, নাটকের মঞ। তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে তাঁরও মনে হয়েছে ঘর বলতে তার কিছু নেই—“পৃথিবীতে আমি একা। আমার আপনজন কেউ নেই—”। কিন্তু যখনই আবার নিজের শিল্পী সত্তায় ফিরে এসেছেন শরীরে অনুভব করেছেন উত্তেজনা। রক্তে মিশে থাকা অভিনয় প্রতিভা তাঁকে নতুন উজ্জীবিত করেছে। অভিনয়ের জন্য উদ্দীপনাই তাঁর কাছে জীবনের আর এক নাম। তাঁর শিল্পী সত্তাই তাঁর বার্ধক্য ভুলিয়ে দিয়েছে, একাকিত্ব ভুলিয়ে দিয়েছে, ভুলিয়ে দিয়েছে মৃত্যু ভয়। একজন যথার্থ শিল্পীর আসল জোরের জায়গাটি কোথায় সেটাই নাট্যকার রজনীকান্ত চরিত্রের মধ্য দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
4. একাঙ্ক নাটক বলতে কী বোঝো? একটি সার্থক একাঙ্ক নাটক হিসেবে ‘নানা রঙের দিন’-এর সার্থকতা বিচার করো।
Ans: বাংলা নাটকের ধারায় একাঙ্ক নাটক বা একাঙ্কিকা নিতান্ত আধুনিক কালের সংযোজন। সাধারণভাবে পঞ্চ অঙ্কে সমাপ্ত, একাধিক চরিত্র ও বেশ কিছু উপকাহিনি বিশিষ্ট এবং দীর্ঘ আয়তন বিশিষ্ট নাটককে আমরা পূর্ণাঙ্গ বা পাঙ্ক নাটক বলি। কিন্তু একাঙ্ক নাটকের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি অঙ্কের মধ্যে বেশ কিছু দৃশ্যের সমাবেশে স্বল্প সংখ্যক চরিত্রের সমবায়ে যে নাটক গড়ে ওঠে তা একাঙ্ক নাটক বা একাঙ্কিকা। এই ধরনের নাটকে ক্ষুদ্র সময় পরিসরে জীবনের এক বৃহত্তর সত্য প্রতিভাসিত হয়। কোনো একটি কেন্দ্রীয় বিষয়ই এর উপজীব্য হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটিমাত্র চরিত্রের একক কথনও সমগ্র নাটকে বিস্তার লাভ করে। স্বল্পায়তনে, ছোটোগল্পের কিছু বৈশিষ্ট্যকে উপজীব্য করে একাঙ্কিকা পূর্ণতার আস্বাদ বহন করে আনে। স্বল্প পরিসরে আকস্মিকভাবে দ্বন্দ্বমূলক বিষয়টির সূচনা, দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত রূপ বা Climax ও রেজোলিউশন ঘনীভূত হয়।
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা রঙের দিন’ নাটকটির মধ্যেও প্রায় সর্বাঙ্গীণভাবেই একাঙ্ক নাটকের স্বাদ পাওয়া যায়। নাটকটির সমগ্র ঘটনাবলি একটি রাত্রের কিছু সময়ের মধ্যে এবং একটিই ‘পেশাদারি থিয়েটারের একটি ফাকা মঞ্জু’-এ সীমাবদ্ধ। সমগ্র নাটকে না দৃশ্যান্তর ঘটেছে না অঙ্ক ভেদ এক্ষেত্রে লক্ষিত। কয়েক ঘণ্টার বর্ণনায় নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবনের উত্থানপতনের কাহিনি উপস্থাপিত করেছেন। এক সময়ের প্রখ্যাত অভিনেতার প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হওয়ায় জনপ্রিয়তায় ঘাটতি আসা, তাঁর একাকিত্ব, বর্তমানকে গ্রহণ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক দ্বন্দ্বের প্রকাশ—সবই নাট্যকারের লিখনকৌশলে অনুপুঙ্খ ভঙ্গিতে ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে নাট্যকার নাট্যাভিনয়কারীদের জীবনের করুণ পরিণতিকেও তুলে ধরেছেন। নাটকের প্রতি দুর্নিবার প্রেম অভিনেতা রজনীকান্তর জীবনে সাংসারিক সুখ লাভের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে ওঠে। প্রথম জীবনে প্রেম-সংসারকে নিতান্ত ক্ষুদ্র বলে মনে হলেও জীবনের অন্তিম স্তরে পৌঁছে যখন ক্রূর-কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হন তখন শুধুই বিদায় সংগীত ধ্বনিত হতে থাকে তাঁর অন্তরে। নাটকের ক্ষুদ্র পরিসরে, সংলাপের তীক্ষ্ণবাণে বিদ্ধ করে, ঔরঙ্গজেবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে যেভাবে নাট্যকার শুধু অভিনেতা রজনীকান্তর জীবনের চরম সত্যকে উপস্থাপিত করতে গিয়ে ক্ষুদ্রত্বের মধ্য দিয়ে বৃহদের ব্যঞ্জনা প্রদান করেছেন তার মাধ্যমে নাটকটি একটি সার্থক একাঙ্কিকা হয়ে উঠেছে।
5. “আমাদের দিন ফুরিয়েছে।”—কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? বক্তার এই উপলব্ধির কারণ ব্যাখ্যা করো।
Ans: বিখ্যাত নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ একাঙ্কিকাটিতে বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনকথা তাঁরই জবানিতে ব্যক্ত হয়েছে। জীবনসায়াহ্নে উপনীত হয়ে মদ্যপ অবস্থায় খালি স্টেজে মধ্যরাত্রে তিনি তাঁদের নাটকের প্রম্পটার কালীনাথ সেনকে নিজের জীবনের দুঃখাবহ কথা শোনাতে থাকেন। দীর্ঘ এই কথোপকথনের শেষে কালীনাথকে অশ্রুসজল অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেই রজনীকান্ত শিল্পীর জীবনের চরম পরিণতির কথা বর্ণনা প্রসঙ্গে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় একজন প্রৌঢ় নাট্যাভিনেতা যিনি তার দীর্ঘ আটষট্টি বছরের জীবনে নাট্যাভিনয়ের প্রতি তীব্র প্রগাঢ় আবেগানুভূতির কারণে বহু দুর্মূল্য ধন হারিয়েছেন। পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি নাট্যাভিনয়ের অঙ্গ হয়ে ওঠেন, প্রেমের দুর্নিবার হাতছানিকেও তিনি নাটক ত্যাগ না করার শর্তে অস্বীকার করেন। জীবনের আলোকময় মুহূর্তে তাঁর যৌবনোদ্দীপ্ত প্রতিভার তেজে অগ্নিময় হয়ে উঠেছে বহু ভক্তের হৃদয়াবেগ কিন্তু নাট্যশিল্পীর আবেদন ভক্তের হৃদয়ে জাগ্রত থাকে শুধুমাত্র তার দেহকান্তি ও শিল্পের উৎকর্ষকে কেন্দ্র করে। দার্শনিক ধারণা অনুযায়ী শিল্পী অমর, তাঁর কর্মকে অবলম্বন করেই তিনি জনমনে চিরজাগ্রত থাকেন। রজনীকান্ত নিজেই বলেছেন—“শিল্পকে যে-মানুষ ভালোবেসেছে— তার বার্ধক্য নেই কালীনাথ, একাকিত্ব নেই, রোগ নেই, মৃত্যুভয়ের ওপর সে তো হাসতে হাসতে ডাকাতি করতে পারে—”। কিন্তু বাস্তব স্পষ্টতই ভিন্ন। জীবনের দীর্ঘসময় অতিবাহিত করার পর তিনি লক্ষ করেছেন প্রতিভা রক্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও যৌবন ভিন্ন তা অর্থহীন। জীবনে যখন রাত্রি ঘনিয়ে আসে তখন জীবনের পাত্রকে রিক্ত করে দিয়ে প্রতিভা চিরতরে সঙ্গ ত্যাগ করে। জীবন বস্তুতপক্ষে চলমান ছায়ামাত্র, কিছু সময়ের জন্য সে দর্পিত পদক্ষেপে দাপিয়ে বেড়ায় রঙ্গমঞে, কিন্তু তারপর আর তার খোঁজ পাওয়া যায় না। প্রভূত আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও যখন রজনীকান্ত কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হন তখনই তিনি এই উপলব্ধিতে পৌঁছোন।
6. “এখন শুধু মাঝরাত্তিরের অপেক্ষা—এখানেই গল্প শেষ।” –বক্তা মাঝরাত্রির জন্য অপেক্ষা করছেন কেন? ‘এখানেই গল্প শেষ’ বলতেই বা নাট্যকার কী বোঝাতে চেয়েছেন?
Ans: নাট্যকার-মঞাভিনেতা অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় তার নানা রঙের দিন’ নাটকের প্রধান চরিত্র রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনযন্ত্রণা রূপায়িত করেছেন আলোচ্য একাঙ্কিকাটিতে। প্রৌঢ় অভিনেতার দীর্ঘ ৪৫ বছরের অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠার পরিণতি ব্যাখ্যাত হয়েছে এ নাটকে। মাদকাসক্ত রজনীকান্তর প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল থিয়েটারের প্রতি অদম্য ভালোবাসা ও আকর্ষণ। কিন্তু ক্রমে ক্রমে জীবনে ভোর, সকাল, দ্বিপ্রহর ও সন্ধ্যা অতিক্রম করে এসে তিনি উপলব্ধি করেন তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে। শিল্পীর জীবনে জনপ্রিয়তার অভাব তাকে ক্রমে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়। তাই শুধু জীবনে রাত্রির হাতছানি প্রত্যক্ষ করে নয় তাঁর অভিনয় জীবনের শেষ পাদে উপনীত হয়ে তিনি মাঝরাত্রির অনন্ত নিদ্রার জন্য অপেক্ষমান।
নাট্যকার রজনীকান্তর কাছে অভিনয় তার জীবন তুল্য। পেশাদারি মঞ্চে অভিনয় করাকে তিনি শুধু পেশা হিসেবে নয় জীবনের বিশিষ্ট অধ্যায় হিসেবে গণ্য করেছেন। ক্রমে তাঁর জীবনে অধ্যায় থেকে অধ্যায়ান্তর ঘটেছে, কিন্তু অভিনয়কে অবলম্বন করে সামাজিক সম্মান লাভে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তার প্রেমিকাও তাঁকে বিয়ে করতে রাজি হন মঞঞ্চ ত্যাগের শর্তে। ফলত, রঙ্গমঞ্ঝকে প্রাধান্য দেওয়ায় জীবন থেকে তাঁর প্রেমও হারিয়ে যায়। ক্রমে রজনীকান্তর আত্মবিশ্লেষণে প্রকট হয়ে ওঠে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিও। সমাজের চোখে থিয়েটারওয়ালারা যে শুধুমাত্র ভাঁড় বা নকলনবিশ ছাড়া আর কিছুই নন তা তিনি বুঝতে পারেন। ধীরে ধীরে অভিনয় জগতে তাঁর প্রয়োজন কমতে শুরু করে। যে খ্যাতি, যে সম্মান, যে অমরত্ব তিনি লাভ করতে চেয়েছিলেন সেগুলিই বৃহৎ প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হয়। তাই তিনি স্পষ্টতই বুঝেছেন যৌবনান্তে যখন তাঁর খ্যাতিতে ঘাটতি ঘটবে, জীবনের চরম পরিণতি যখন মধ্যরাত্রের কালো ছায়া রূপে তার জীবনে ঘনিয়ে আসবে তখনই ইতি ঘটবে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের জীবনের। শিল্পীর মরণোত্তর জনপ্রিয়তা তাকে যে চিরস্থায়িত্ব প্রদান করে এই মরজগতে তা রজনীকান্তর পক্ষে লাভ করা সম্ভবপর হবে না। এই উপলব্ধিতে উপনীত হয়েই রজনীকান্ত একটি সহজ সত্য অনুধাবন করেছেন যে, জীবনের মধ্যরাত্রি ঘনীভূত হলে তিনি যখন চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন তখনই শেষ হয়ে যাবে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, কেউ তাকে মনে রাখবে না। এ কথা স্পষ্ট করে তোলার জন্যই তিনি গল্প শেষ হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন।
7. “… প্রাক্তন অভিনেতা রজনী চাটুজ্জের প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ।”—কে বলেছেন? এই অপমৃত্যু কীভাবে ঘটে বলে বক্তা মনে করেন?
Ans: বক্তা: অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’ নাটকের উল্লিখিত অংশি। বক্তা হলেন বৃদ্ধ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়।
প্রতিভার অপমৃত্যু: গভীর রাতে মঞের উপরে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় শূন্য অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহের দিকে তাকিয়ে জীবনের ফেলে আসা দিনগুলিকে মনে করেছেন। তীব্র হতাশা এবং কষ্টবোধে ভুগেছেন তিনি। নিজের যৌবনে পুলিশ ইনস্পেকটরের চাকরি ছেড়ে নাটকের জগতে এসেছিলেন তিনি। নাটকের কারণেই তাঁর নামডাক হয়েছিল। ধনী মানুষের একমাত্র মেয়ের সঙ্গে জীবনের একমাত্র প্রেম সম্পর্কটিও হয়েছিল এই অভিনয়ের সূত্রেই। কিন্তু সেই সম্পর্ক ভেঙেও গিয়েছিল এই অভিনয়কে ছাড়তে না পারার জন্যই। আর তখন থেকেই রজনীকান্ত উপলব্ধি করেছিলেন অভিনেতার জীবনের অর্থহীনতাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিনেতা হিসেবে তাঁর কদরও কমল। গলার কাজ নষ্ট হল, চরিত্রকে বোঝার এবং ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে গেল। আর এ কারণেই হতাশ রজনীকান্তের মনে হল থিয়েটারের দেওয়ালে কেউ অদযশ্য কালো হাতে যেন লিখে দিয়ে গেছে তাঁর প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ।
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box