হাত বাড়াও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের হাত বাড়াও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি হাত বাড়াও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF.
নিচে হাত বাড়াও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। হাত বাড়াও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।
হাত বাড়াও - সুভাষ মুখোপাধ্যায়
"হাত বাড়াও" গদ্যাংশটি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা 'আমার বাংলা' নামক পূর্ণ সহায়ক গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
"হাত বাড়াও" গদ্যাংশটি থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর দেওয়া হলো। আশা করি এগুলো তোমাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের হাত বাড়াও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - আমার বাংলা উচ্চমাধ্যমিক
১। “ সামনাসামনি আসতেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।” —উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বর্ণনা দিয়ে তাকে দেখে লেখকের অবাক হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করাে।
Ans: ১৩৫০ বঙ্গাব্দের বাংলার ভয়াবহ মন্বন্তরের সময়ে সুভাষ মুখােপাধ্যায় উত্তরবঙ্গের রাজবাড়ির বাজারে ফরিদপুরের গাড়ি আসার অপেক্ষায় বসেছিলেন।
একটু দূরে স্টেশন - সংলগ্ন মিলিটারি ছাউনির একপাশে একটি অদ্ভুত ধরনের প্রাণীকে দেখে লেখক কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে থাকেন। কোনাে চেনা জন্তুর সঙ্গে প্রাণীটির মিল খুঁজে পাওয়া গেল না। আস্তে আস্তে চারপায়ে ভর দিয়ে সে হেঁটে আসতে থাকল।
ভােরের পাতলা কুয়াশা ভেদ করে তার দুটি চোখের তারা যেন জ্বলজ্বল করতে লাগল। সেই চোখের চাউনিতে কেমন যেন একটি অবশ করে দেওয়া মায়াবী শক্তি রয়েছে, এক ঝলক দেখলেই বুকের রক্ত হিম হয়ে যায়। রাস্তা থেকে নানান জিনিস খুঁটে খুঁটে খাচ্ছিল প্রাণীটি।
তার চোখ দুটি কুয়াশায় কী যেন খুঁজে চলেছে। একটু কাছে আসতে দেখা গেল তার সামনের দু - হাতে ঠিক মানুষের হাতের মতােই দুটি থাবা। হাতের আঙুলগুলি লােমহীন, আগার দিকে খানিকটা সরু।
এবার প্রাণীটি মুখােমুখি হতেই বােঝা গেল সে আসলে অমৃতের পুত্র মানুষ, বারাে - তেরাে বছরের একটি ছেলে যার কোমর গিয়েছে ভেঙে, তাই জানােয়ারের মতাে সে চার পায়ে চলে আর রাস্তা থেকে চাল আর ছােলা খুঁটে খায়। মানবতার এইরূপ লাঞ্ছনা লক্ষ করে লেখক বিস্মিত ও হতবাক হয়ে পড়েছেন।
২। “ তােমরাও হাত বাড়াও, তাকে সাহায্য করাে।” লেখককাকে, কীভাবে, কেন সাহায্য করতে বলেছেন?
Ans: সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের ‘ আমার বাংলা ’ গ্রন্থের শেষ রচনা ' হাত বাড়াও ’ শীর্ষক পাঠ্যাংশে পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষে বুভুক্ষু বারাে- তেরাে বছরের সম্পূর্ণ উলঙ্গ অনাহারী এক কিশােরকে সাহায্য করার কথা বলেছেন।
লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায় বহুদিনের শাসন - শােষণক্লিষ্ট বাঙালি সমাজকে তথা দেশবাসীকে একে অপরের সঙ্গে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। লেখক দেখেছেন দুর্ভিক্ষপীড়িত সেই কিশাের ছেলেটির জ্বলন্ত দুটি চোখ সন্ধান করছে ‘ সেইসব খুনি ’ - দের, যাদের ষড়যন্ত্রে শস্য - শ্যামলা এই বাংলা পরিণত হয়েছে অনাহারের শ্মশানে। তাকে সহানুভূতির স্পর্শ দিয়ে, সংবেদনশীলতার মাধ্যমে সাহায্য করতে হবে। কারণ, অনাহারে ধুকতে ধুকতেও তারা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।
মার্কসীয় আদর্শে বিশ্বাসী লেখকের স্পর্শকাতর মন। প্রতিটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান সমবেদনা, গড়ে তুলতে চান সচেতনতা। মন্বন্তরের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা নিয়ে, পরস্পরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অসহনীয় সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দেন লেখক। তাই তিনি চান বাংলার বুকজোড়া সােনালি ফসলে, চাষির গােলা ভরা ধানে, কারখানায় কোটি কোটি বলিষ্ঠ হাতের কধনমুক্ত আন্দোলনে সুখ - শান্তি ফিরে আসুক এ বাংলায়। সমবেত সাহায্যের হাত যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষের অন্ধকার থেকে ' অমৃতের পুত্র মানুষ' কে আলোর উৎসে ফিরিয়ে আনুক। এটিই লেখকের একমাত্র কাম্য।
৩। 'সরু লিকলিকে আঙুল দিয়ে সেইসব খুনীদের সে শনাক্ত করছে — ' কে শনাক্ত করছে ? কাদের, কেন খুনী বলা হয়েছে ?
Ans: উদ্ধৃত অংশটি সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের লেখা ‘ আমার বাংলা 'গদ্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ হাত বাড়াও ’ রচনা থেকে গৃহীত।
রাজবাড়ির বাজারে বসে লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায় কুয়াশায় মােড়া দুর্ভিক্ষের সকালে যে বারাে - তেরাে বছরের মাজা ভাঙা উলঙ্গ ছেলেটিকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন তার ‘ সরু লিকলিকে আঙুলে'র কথা বলা হয়েছে।
শস্যশ্যামলা বাংলাদেশ, রবীন্দ্রনাথের সােনার বাংলা — সেখানে একদিন নেমে এসেছিল প্রকৃতির অভিশাপ। সময়টা ১৩৫০ সন দুর্ভিক্ষের করালছায়া ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছিল। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিঘা আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নিষ্ঠুর শােষণ।
এখানেই শেষ নয়, গ্রামে - গঞ্জে জোতদার, জমিদার, আড়তদার ও কালােবাজারির দল মন্বন্তরকে ত্বরান্বিত করেছিল। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার লেখায় প্রকৃতির নির্মমতার সঙ্গে মানুষের অমানবিক নিষ্ঠুরতার দিকটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
এখানে ‘সেইসব খুনী’ বলতে যাদের শােষণ, লােভ, অত্যাচার মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল লেখক তাদের কথা বলেছেন। এরা সাম্রাজ্যবাদী শােষক, গ্রামের জোতদার - জমিদার ও কালােবাজারির দল।
লেখক চান বাংলায় আবার সুদিন ফিরে আসুক, বাংলার মানুষজন সমৃদ্ধ জীবন যাপন করুক। তাই লেখক সেইসব শােষক, খুনি, ষড়যন্ত্র কারীদের চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। এদেরকে সমাজ থেকে নির্বাসন দিতে হবে, তবেই গড়ে উঠবে নতুন সমাজ।
৪।“ কিন্তু আজও সেই দুটো জ্বলন্ত চোখ আমাকে থেকে থেকে পাগল করে।” — কার জ্বলন্ত চোখের কথা বলা হয়েছে ? কোন্ ঘটনায় লেখকের এমন উক্তি ?
Ans: ‘ হাত বাড়াও ’ রচনাংশে বারাে - তেরাে বছরের একটি উলঙ্গ ছেলের জ্বলন্ত চোখের কথা এখানে বলা হয়েছে।
পাতলা কুয়াশায় মােড়া পাশের দুর্ভিক্ষের এক সকালে লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায় ফরিদপুরের গাড়ির অপেক্ষায় রাজবাড়ির বাজারে বসেছিলেন। সেখানেই বাজার থেকে একটু দূরে স্টেশনের রাস্তায় মিলিটারি ছাউনির পাশে একটি আশ্চর্য রকমের জন্তুকে দেখতে পেলেন লেখক।
ধীরে ধীরে সেটি চারপায়ে এগিয়ে আসে। পরিচিত কোনাে জন্তুর সঙ্গে তার সাদৃশ্য নেই। কুয়াশার মধ্যেও তার চোখদুটি জ্বলজ্বল করছে। সেই চোখের দৃষ্টিতে এমন মায়া ছিল, যা লেখকের বুকের রক্ত হিম করে দিয়েছিল। কিছুটা এগিয়ে এসে সেই মূর্তিটা রাস্তার ধুলাে থেকে কিছু খুঁটে খাচ্ছিল।
ঠিক মানুষের হাতের মতাে তার সামনের দুটো থাবা। আঙুলগুলি যেন আগার দিকে একটু বেশি সরু। গায়ে একদম লোম নেই। সেটি সামনা সামনি আসতেই লেখক অবাক হয়ে গেলেন। বারাে - তেরাে বছরের উলঙ্গ একটি ছেলে। কোমর ভেঙে যাওয়ায় সে হাঁটতে পারে না।
তাই জানােয়ারের মতাে চার পায়ে হামাগুড়ি দেয় আর বাজারের রাস্তায় খুঁটে খুঁটে চাল এবং ছােলা খায়। তার সেই জ্বলন্ত চোখ দুটো লেখককে থেকে থেকে উন্মাদ করে দেয়। আসলে অমৃতের পুত্র মানুষের এইরকম দুর্বিষহ রূপ লেখকের কল্পনাতীত ছিল। তাই তিনি মাঝে মাঝেই সেটি মনে করে চমকে ওঠেন।
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box