অর্ডিনারি আইটির পোস্ট নোটিফিকেশন


শম্ভু মিত্রের বিভাব নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

শম্ভু মিত্রের বিভাব নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন (HS Bengali Suggestion) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের শম্ভু মিত্রের "বিভাব" নাটকের সমস্ত প্রশ্নোত্তর। 

শম্ভু মিত্রের বিভাব নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

এখানে উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ‘বিভাব’ নাটকের প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে ‘বিভাব’ নাটকের MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।


বিভাব - শম্ভু মিত্র


‘বিভাব’ নাটকটি একটি নির্দিষ্ট বিষয় স্থির রেখে "বহুরূপী" নাট্য গোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেদের সংলাপ নিজেই বানিয়ে নিয়ে যে নাটক রচনা করেন, তা পরবর্তীতে শম্ভু মিত্র গ্রন্থাগারে সাজিয়ে এই নাটকটির নাম দেন 'বিভাব'। নাটকের রচয়িতা ছিল বহুরূপী সদস্যরা। কিন্তু পরবর্তীতে নাট্যকার হিসেবে নাম রাখা হয় শম্ভু মিত্রের। আলোচ্য পোস্টে শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


শম্ভু মিত্রের বিভাব নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা


বিভাব নাটকের নাট্যকার পরিচিতি

শম্ভু মিত্র (১৯১৫ –১৯৯৭) ছিলেন বাংলা তথা ভারতের একজন প্রবাদপ্রতিম নাট্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন ‘বহুরুপী’ নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ। তিনি একাধারে অভিনেতা, নাট্যকার এবং পরিচালক। তাঁর রচিত নাটকগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল ‘চাঁদ বণিকের পালা’। অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে উলুখাগড়া, বিভাব, ঘূর্ণি, কাঞ্চনরঙ্গ প্রভৃতি। তাঁর স্ত্রী তৃপ্তি মিত্রও একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী ছিলেন। ১৯৭৬ সালে নাটক ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ম্যাগসেসে পুরস্কার ও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়।


বিভাব নাটকের নামকরণ

সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্র অনুযায়ী, ‘বিভাব’ কথার অর্থ হল যার দ্বারা দর্শকদের মনে ভাবের উদ্রেক হয়। এই নাটকেও নাট্যকার এমন কিছু করতে চেয়েছেন যার সাহায্যে দর্শকদের হাসি পায়।


বিভাব নাটকের উৎস

একটি নির্দিষ্ট বিষয় স্থির রেখে বহুরূপী নাট্য গোষ্ঠীর সদস্যরা নিজেদের সংলাপ নিজেই বানিয়ে নিয়ে যে নাটক রচনা করেন, তা পরবর্তীতে শম্ভু মিত্র গ্রন্থাগারে সাজিয়ে এই নাটকটির নাম দেন 'বিভাব'। নাটকের রচয়িতা ছিল বহুরূপী সদস্যরা। কিন্তু পরবর্তীতে নাট্যকার হিসেবে নাম রাখা হয় শম্ভু মিত্রের।


বিভাব নাটকের নাট্যকার পরিচিতি

বাংলা নাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ বলা হয় শম্ভু মিত্রকে। 1950 সালের 22 আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন কলকাতায়। তার বাবার নাম শরৎকুমার মিত্র। মা শতদল বাসেনী দেবী। প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষা গ্রহণ করতে অনাগ্রহী ছিলেন। তাই চলে যান দেশ-বিদেশের নাটক পাঠের জন্য। 1939 সালের 9 সেপ্টেম্বর রংমহলে অনুষ্ঠিত বিধায়ক ভট্টাচার্যের "মাটির ঘর" নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে শম্ভু মিত্র অভিনয় জীবন শুরু করেন। এরপর তিনি বহুরূপী দলের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি বহুরূপীদল থেকে দল নামটি বাদ দিয়ে বহুরূপী নামটি গ্রহণ করে ভালো নাটক অভিনয় করা শুরু করেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক হলো উলুখাগড়া, ছেঁড়াতার, বিভাব প্রভৃতি। নাটকে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য পদ্মভূষণ, ম্যাগসাইসাই, দেশিকোত্তম, পুরস্কার লাভ করেন। 


বিভাব নাটকের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু

শম্ভু মিত্র হাসির খোরাক জোগাড় করার জন্য অমর গাঙ্গুলীর বাড়িতে যান। সেখানে বৌদি তৃপ্তি মিত্রের কথামতো প্রেমের দৃশ্যে অভিনয় করেন। কিন্তু এতে অমর গাঙ্গুলী ও শম্ভু মিত্র কারোরেই হাসি পায়নি। এরপর প্রগ্রেসিভ লাভ সিন করার প্রস্তাব দেন বৌদি তৃপ্তি মিত্র। কিন্তু এতেও কারো হাসি পায়নি। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলী চার দেওয়ালের বাইরে প্রকাশ্য রাস্তায় বেরিয়ে আসেন হাসির খোরাক খোঁজার জন্য। কিন্তু এখানে তারা বাস্তবের মুখোমুখি হন। তারা শুনতে পান শোভা যাত্রীদের ক্ষীণ আওয়াজ। যারা 'চাল চাই কাপড় চা চাই' শ্লোগান দিতে থাকে। অপরদিকে পুলিশ শোভাযাত্রীদের পথ আটকায়। তাদের ফিরে যাওয়ার কথা বললেন।কিন্তু প্রতিবাদী একটি ছেলে ও মেয়ে পুলিশের নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে এগিয়ে আসলে পুলিশ বাধ্য হয়ে মিছিলের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে একটি ছেলে ও মেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। অমর গাঙ্গুলী মেয়েটির শুশ্রূষার জন্য মাথায় হাত দিয়ে দেখতে থাকেন। শম্ভু মিত্র অমরের পিঠে টোকা দিয়ে বলেন- "কি হে অমর এবার হাসি পাচ্ছে তো? এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাচ্ছে।"এরূপ পরিস্থিতিতে বাঙালি যে হাসতে পারে না তা তীব্র শ্লেষ এর মাধ্যমে শেষ উক্তিতে উল্লেখ করেছেন শম্ভু মিত্র।


বিভাব MCQ প্রশ্ন ও উত্তর (বহু বিকল্প ভিত্তিক)


১) সংস্কৃত পরীক্ষায় অমর কত পেয়েছিলেন?

ক) তেরো

খ) সতেরো

গ) তেইশ

ঘ) নয়

Ans: তেরো


২) শম্ভু মিত্র, অমর গাঙ্গুলী কোন নাট্য দলের সদস্য ছিলেন?

ক) নান্দিকার

খ) নান্দিমুখ

গ) পঞ্চম বৈদিক

ঘ) বহুরূপী

Ans:বহুরূপী


৩) "বিভাব" নাটকের যথার্থ নাম হওয়া উচিত বলে নাট্যকার মনে করেছেন তা হলো?

ক) হাসির সন্ধানে তিনটি চরিত্র

খ) অভাব নাটক

গ) তামাশা নাটক

ঘ) অভাবিত নাটক

Ans: অভাব নাটক


৪) সরকারের পেয়াদা কীসের লক্ষে নাট্যদলের কাছে আসে?

ক) নিমন্ত্রনপত্র নিতে

খ) অনুমতি পত্র নিতে

গ) খাজনা আদায় করতে

ঘ) সংবর্ধ্ণা জানাতে

Ans:খাজনা আদায় করতে


৫) "তাই ভেবে চিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি।" এই প্যাঁচ হলো-

ক) জনমত গঠন

খ) নিজস্ব নাট্যমঞ্চ তেরি

গ) ভঙ্গিনির্ভর নতুন নাট্যরীতি প্রয়োগ

ঘ) নাটক অভিনয় বন্ধ রাখা

Ans:ভঙ্গিনির্ভর নতুন নাট্যরীতি প্রয়োগ


৬) "এমনি সময় হঠাৎ এক সাহেবের লেখা পড়লাম "। এই সাহেব ছিলেন-

ক) আইনস্টাইন

খ) আইজেনস্টাইন

গ) শেক্সপিয়ার

ঘ) বানাড' শ

Ans:আইজেনস্টাইন


৭) শম্ভু মিত্র 'বিভাব' নাটকে যে তামাশা দেখেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন তা ছিল-

ক) উড়িয়া তামাশা

খ) মারাঠি তামাশা

গ) রাজস্থানি তামাশা

ঘ) অসমীয়া তামাশা

Ans:মারাঠি তামাশা


৮) 'এক জাপানি থিয়েটার মস্কোতে গিয়েছিল।' এই জাপানি থিয়েটার ছিল-

ক) নো

খ) কিয়োগেন

গ) কাবুকি

ঘ) বানরাকু

Ans:কাবুকি


৯) "আমরা বাঙালিরা শুনি কাঁদুনে জাত" একথা কে বলে গিয়েছেন?

ক) রবীন্দ্রনাথ

খ) দ্বিজেন্দ্রলাল

গ) বল্লভ ভাই

ঘ) জহরলাল নেহরু

Ans: বল্লভ ভাই


১০) "বিভাব" নাটকে ' বৌদি ' হলেন

ক) শোভা সেন

খ) তৃপ্তি মিত্র

গ) চিত্রা সেন

ঘ) শাওলী মিত্র

Ans:তৃপ্তি মিত্র


১১) "পৃথিবীতে সবচেয়ে পপুলার জিনিস হচ্ছে।" বৌদি ' তৃপ্তি মিত্র যাকে সবচেয়ে পপুলার জিনিস বলেছেন, সেটি হল?

ক) সিনেমা

খ) আড্ডা

গ) খেলা ধুলা

ঘ) প্রেম

Ans:প্রেম


১২) "বিভাব" নাটকে অমর গাঙ্গুলী কোথায় 'লভ সিন ' দেখার কথা বলেছেন-

ক) বায়োস্কোপ

খ) বাস্তব জীবনে

গ) থিয়েটার

ঘ) লোক কোথায়

Ans:বায়োস্কোপ


১৩) "বিভাব" নাটকে তৈরি হওয়া প্রেমের দৃশ্য নায়িকা ফিরছিল-

ক) অফিস থেকে

খ) কলেজ থেকে

গ) বন্ধুর বাড়ি থেকে

ঘ) গ্রাম থেকে

Ans:কলেজ থেকে


১৪) "বিভাব" নাটকে প্রেমের দৃশ্য নৈপন্থে কি বেজেছিল?

ক) পিয়ানো

খ) বেহালা

গ) হারমোনিয়াম

ঘ) বাঁশি

Ans:হারমোনিয়াম


১৫) "বিভাব" নাটকে প্রেমের দৃশ্য যে গানটি গাওয়া হয়েছিল, সেটি হল-

ক) সখি ভালোবাসা কারে কয়

খ) আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ

গ) তুমি কোন কাননের ফুল

ঘ) মালতি লতা দোলে

Ans:মালতি লতা দোলে


১৬) "মালতি লতা দোলে "গানটি গাওয়া হয়েছিল যেভাবে-

ক) ফিল্মি কায়দায়

খ) শাস্ত্রীয় ভঙ্গিতে

গ) কিতন আঙ্গিকে

ঘ) ঠুংরি ধরনে

Ans:ফিল্মি কায়দায়


১৭) রবীন্দ্রনাথের গানের অনুমোদন যারা দেয় বলে "বিভাব" নাটকে উল্লেখ আছে, তারা হল-

ক) রাজ্য সরকার

খ) বিশ্বভারতী

গ) সাহিত্য অ্যাকাডেমি

ঘ) সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি

Ans:বিশ্বভারতী


১৮) শম্ভু মিত্র মতে, কত ইঞ্চি বুক হলেই পুলিশ হওয়া যায়?

ক) ৩২ ইঞ্চি

খ) ৩৩ ইঞ্চি

গ) ৪২ ইঞ্চি

ঘ)৪৮ ইঞ্চি

Ans:৩২ ইঞ্চি


১৯) "পথিক "নাটকটি কার লেখা?

ক) বিজন

খ) উৎপল দত্ত

গ) শম্ভু মিত্র

ঘ) তুলসী লাহিড়ী

Ans:তুলসী লাহিড়ী


২০) "কয়েকজন মেয়ে এবং কয়েক জন ছেলে। সামনের কয়েক জন হাতটা উচু করে থাকে।" হাতে কি ছিল?

ক) ভাতের থালা

খ) পতাকা ও ফেস্টুন

গ) প্রচার পত্র

ঘ) ফুল

Ans:পতাকা ও ফেস্টুন


২১) শোভা যাত্রার লোকেরা যার জন্য দাবি জানিয়েছিল?

ক) চাল ও কাপড়

খ) সঠিক মজুরী

গ) শিক্ষার সুযোগ

ঘ) আইন শৃঙ্খলার উন্নতি

Ans:চাল ও কাপড়


২২) "The night is calling me "সংলাপ টি কার লেখা?

ক) বানার্ড' শ

খ) শেক্সপিয়ার

গ) শেলি

ঘ) বায়রন

Ans:বানার্ড' শ


২৩) হটাত পেছন থেকে শোভা যাত্রীদের ক্ষীণ আওয়াজ শোনা যায়-

ক) চাল চাই, কাপড় চাই

খ) অন্ন চাই, গৃহ চাই

গ) ফ্যান চাই, ভাত চাই

ঘ) এর কোনোটিই নয়

Ans:চাল চাই, কাপড় চাই


২৪) "বিভাব" নাটকটির অনুপ্ররনা হলো-

ক) জাপানি কাবুকি থিয়েটার

খ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক

গ) রবীন্দ্রনাথের নাটক

ঘ) দীনবন্ধু মিত্রের নাটক

Ans:জাপানি কাবুকি থিয়েটার


২৫) "বিভাব" নাটকটির প্রধান চরিত্রের সংখ্যা হলো-

ক) দুই

খ) তিন

গ) পাঁচ

ঘ) সাত

Ans:তিন


২৬) "আমদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিৎ 'অভাব নাটক'। কারন-

ক) এ নাটকের জন্ম দুরন্ত অভাব থেকে

খ) এ নাটকে অর্থাভাব দেখানো হয়েছে

গ) এ নাটকের চরিত্র সংখ্যার অভাব রয়েছে

ঘ) এ নাটকে অভিনয় উপকরনের অভাব

Ans: এ নাটকের জন্ম দুরন্ত অভাব থেকে


২৭) অমর বাবু তৃপ্তি মিত্রের কাছে ক - কাপ চা চেয়েছেন

ক) এক

খ) দুই

গ) তিন

ঘ) চার

Ans:দুই কাপ


২৮) ঠিক আছে ফেলে দিন না ....কি ?

ক) চা

খ) বিড়ি

গ) সিগারেট

ঘ) দেশলাই

Ans:সিগারেট


২৯) "বিভাব" নাটকে লভ সিনের নায়ক হয়েছিলেন

ক) অমর

খ) শম্ভু

গ) ম্যানেজার

ঘ) বল্লভভাই

Ans:শম্ভু


৩০) "এর মাথায় খালি লভ সিন ঘরে রে ?"কার মাথায় ?

ক) অমর

খ) শম্ভু

গ) তৃপ্তি

ঘ) নাট্য দলের ম্যানেজার

Ans:তৃপ্তি


বিভাব নাটকের অতিরিক্ত MCQ


1. বিভব নাটকে রবীন্দ্রনাথের ব্যাবহৃত গানটি হল – 

(A) মালতি লতা দলে 

(B) আমাদের জাতীয় সংগীত

(C) আমি রূপে তোমায় ভুলবো না 

(D) আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে

Ans: (A) মালতি লতা দলে 


2. The night is calling me – সংকল্পটি কার লেখা ?

(A) বার্নাড শ

(B) শেলি

(C) শেকসপিওর 

(D) বায়রন 

Ans: (A) বার্নাড শ


3.লাভ সিন করতে হলে প্রথমেই কী দরকার ?

(A) একজন নায়ক একজন নায়িকা

(B) চাঁদ, আকাশ এবং দক্ষিণের বাতাস 

(C) গঙ্গার তীরে বা গরের মাঠ

(D) সুদৃশ্য বাগান ও ফুলের সমারোহ

Ans: (A) একজন নায়ক একজন নায়িকা


4. তুলসী লাহিড়ীর – নাটক থেকে বলি – (ফিল্মি ঢংয়ে) আমি চললাম … তুলসী লাহিড়ীর কোন নাটকের উক্তি ?

(A) ছেড়া তার 

(B) পথিক

(C) নবান্ন

(D) এদের কোনোটিই নয়

Ans: (B) পথিক


5. “মা ব্রয়াৎ সত্যম অপ্রিয়ম” কথাগুলি বলেছে ?

(A) শম্ভু

(B) অমর

(C) বৌদি

(D) পুলিশ

Ans: (A) শম্ভু


6. “সংস্কৃতে তেরো পেয়েছিলাম বলে হেদপণ্ডিত স্কুলে প্রমোশন দেননি” – বক্তা কে ?

(A) শম্ভু

(B) অমর

(C) বৌদি

(D) সার্জেন্ট

Ans: (B) অমর 


7. “তুমি তো সহজে মরবে না – ওগো তুমি পালাও – তুমি বীর – তুমি পালাও – এখানে তুমি হলো – 

(A) (নায়ক) শম্ভু

(B) পুলিশ

(C) অমর

(D) পালোয়ান

(A) (নায়ক) শম্ভু


8. “তার আপিস নেই, কলেজ নেই, কিছু নেই।” – কার সমন্ধে বলা হয়েছে ?

(A) (নায়ক) শম্ভু

(B) অমর

(C) পুলিশ

(D) বৌদি

Ans: (A) (নায়ক) শম্ভু


9. “রাজা রথারোহনম নাটকটির।” – এর অর্থ – 

(A) রাজা রথে আহরণ করলেন

(B) রাজা রথ থেকে নামলেন 

(C) রাজা রথে আহরণ করার ভঙ্গি করলেন

(D) রাজা রথে চড়ে যুদ্ধ যাত্রা করলেন 

Ans: (C) রাজা রথে আহরণ করার ভঙ্গি করলেন


10. হঠাৎ পেছন থেকে শোভাযাত্রীদের ক্ষীণ আওয়াজ শোনা যায় – 

(A) চাল কই কাপড় কই

(B) ফ্যান চাই ভাত চাই

(C) অন্ন চাই গৃহ চাই

(D) এর কোনোটিই নয়

Ans: (A) চাল কই কাপড় কই


11. “পরদা খুলে দেখা যায়…” – 

(A) মঞ্চ ফাঁকা আছে

(B) মঞ্চ অন্ধকার

(C) মঞ্চ সম্পূর্ণ ফাঁকা

(D) মঞ্চে নায়ক দাড়িয়ে আছে

Ans: (C) মঞ্চ সম্পূর্ণ ফাঁকা


12. “আরে খিড়কি সে কিউ উতার আয়া। চোট্টা হনগে জরুর আরে পাকরো।” – বক্তা –

(A) পুলিশ

(B) অমর

(C) শম্ভু

(D) সার্জেন্ট

Ans: (B) অমর


13. “কী অমর – এবার হাসি পাচ্ছে ?” – অমরকে কে একথা বলেছেন ?

(A) শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলিকে

(B) বৌদি অমর গাঙ্গুলিকে

(C) সার্জেন্ট অমর গাঙ্গুলিকে

(D) কোনোটিই নয়

Ans : (A) শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলিকে


14. পৃথিবীতে সবচেয়ে পপুলার জিনিস কী ?

(A) প্রেম

(B) গসিপ

(C) লারেলাপ্পা

(D) পরচর্চা

Ans: (A) প্রেম


15. ‘বিভাব' নাটকটির অনুপ্রেরণা হলো – 

(A) জাপানি কাবুকি নাটক

(B) রবীন্দ্রনাথের নাটক

(C) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক

(D) দীনবন্ধু মিত্রের নাটক

Ans: (A) জাপানি কাবুকি নাটক


16. “এমনি সময় হঠাৎই এক সাহেবের লেখা পড়লাম।” – এখানে কোন সাহেবের কথা বলা হয়েছে ?

(A) আইজেনস্টাইন 

(B) আলেকজান্ডার

(C) লই ফিলিপ

(D) চন্দ্রগুপ্ত

Ans: (A) আইজেনস্টাইন


17. “হ্যাঁ বল্লভভাই বলে গেছেন” – বল্লভভাই কী বলেছেন ?

(A) বাঙালিরা শক্তিশালী

(B) বাঙালিরা চোর

(C) বাঙালিরা কদুনে জাত

(D) বাঙালিরা ভীতু

Ans: (C) বাঙালিরা কদুনে জাত


বিভাব SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর


1. “এমনি সময়ে হঠাৎই এক সাহেবের লেখা পড়লাম।”— কোন্ সাহেবের কথা বলা হয়েছে?

Ans: রুপদেশীয় এক বিখ্যাত চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের কথা বলা হয়েছে।


2. তৃপ্তি মিত্রের মতে লভ সিন করতে হলে প্রথমেই কী দরকার?

Ans: বৌদির ভূমিকায় অবতীর্ণ তৃপ্তি মিত্রের মতে লভ সিন করতে হলে প্রথমেই একজন নায়ক ও নায়িকার দরকার।


3. শম্ভু মিত্র কেন মনে করেন নাটকের নাম ‘অভাব’ হওয়া উচিত?

Ans: দুরন্ত অভাব থেকেই ‘বিভাব’ নাটকের জন্ম বলে নাটকটির নাম ‘অভাব’ হওয়াই বাঞ্ছনীয় বলে বক্তা শম্ভু মিত্র মনে করেন।


4. “এই রে—পুলিশ আসছে লাগল ঝঞ্ঝাট।”—পুলিশ আসছিল কেন?

Ans: শোভাযাত্রীরা মিছিল করে আসছিল। তাদের বক্তব্য ছিল ‘চাল চাই, কাপড় চাই’ এই কারণেই পুলিশ আসছিল।


5. অমর গাঙ্গুলিকে স্কুলের হেডপণ্ডিত প্রোমোশন দেননি কেন?

Ans: অমর গাঙ্গুলি সংস্কৃতে তেরো পেয়েছিলেন বলে স্কুলের হেডপণ্ডিত তাঁকে প্রমোশন দেননি।


6. “তোমরা ফিরে যাও।”– কে, কাদের ফিরে যেতে বলেছেন?

Ans: পুলিশের সার্জেন্ট শোভাযাত্রীদের ফিরে যেতে বলেছেন।


7. “যেমন রবীন্দ্রনাথকে মেনেছিল।”—কারা রবীন্দ্রনাথকে মেনেছিল?

Ans: সাহেবরা রবীন্দ্রনাথকে মেনেছিল।


8. কাবুকি নাটকের বৈশিষ্ট্য কী?

Ans: কাবুকি নাটকের বৈশিষ্ট্য হল ভঙ্গির বহুল ব্যবহার। এর ফলে নাটকের প্রয়োজনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র না থাকলেও ভঙ্গির দ্বারা সেগুলির অস্তিত্ব বোঝা যায়।


9. “ওগো তুমি পালাও।” – কে, কাকে পালাতে বলেছেন?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে বৌদি তৃপ্তি মিত্র শম্ভু মিত্রকে পালাতে বলেছেন।


10. “রাস্তায় তাদের দু’জনের ধাক্কাধাক্কি হবে।”—কাদের ধাক্কাধাক্কি হবে?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে দ্বিতীয় লভ সিনের পরিকল্পনায় নায়ক ও নায়িকার ধাক্কাধাক্কি হবে।


11. ‘বিভাব’ নাটকে অমর গাঙ্গুলি কোন্ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে অমর গাঙ্গুলি ‘বহুরূপী’ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।


12. “শোভাযাত্রীরা পরস্পরের দিকে তাকায়।”— শোভাযাত্রীরা পরস্পরের দিকে তাকায় কেন?

Ans: পুলিশের সার্জেন্ট তাদের বলে যে, তারা ফিরে না গেলে তাদের গুলি করবেন—এই কথা শুনে তারা পরস্পরের দিকে তাকায়।


13. “দিলে তো রাগিয়ে”—–কে, কাকে,কেন রাগিয়ে দিয়েছিলেন?

Ans: লভ সিনের দৃশ্যে তাঁর কোনো রকম হাসি পায়নি বলে অমর গাঙ্গুলি জানিয়ে ছিলেন। একথা বলেই বৌদি তৃপ্তি মিত্রকে রাগিয়ে দিয়েছিলেন।


14. “এই পড়ে বুকে ভরসা এল।”— কী পড়ে বুকে ভরসা এল?

Ans: ’বিভাব’ নাটকে রুশ দেশীয় এক চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের লেখা পড়ে শম্ভু মিত্রের বুকে ভরসা এল।


15. “আমি তো চললাম—আবার দেখা হয় কিনা কে জানে।”— কোন্ নাটকের উক্তি?

Ans: তুলসী লাহিড়ির ‘পথিক’ নাটকের উক্তি।


16. “মনে হল লোকে মানবে না।”― লোকে না মানার কারণ কী?“এ বড়ো জখমি লভ সিন।”—‘লভ সিন’-টিকে জখমি বলা হয়েছে কেন?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে প্রেমের দৃশ্যে নায়ক শম্ভু মিত্রের সঙ্গে নায়িকা তৃপ্তি মিত্রের ধাক্কা লাগলে নায়িকা শম্ভু মিত্রকে একটা চড় মারেন | একেই শম্ভু মিত্র ‘জখমি লভ সিন’ বলেছেন |


17. “এটাই হল বড়ো কথা।”— বড়ো কথাটি কী?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে ‘লভ সিন’-এ অভিনয় করার সময় শম্ভু মিত্র জানতে চান নায়ক কোন্ দিক থেকে আসবে। এর উত্তরে তৃপ্তি মিত্র জানান নায়কের আসাটাই বড়ো কথা।


18. “ইংরেজ কোম্পানী কিনা।”—কী দেখে এই মন্তব্য করা হয়েছে।

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে কলকাতার পথে ট্রামচলার কাল্পনিক দৃশ্য দেখে শম্ভু মিত্র একথা বলেছেন |ইংরেজি শিক্ষিত, রুচিশীল দর্শকরা শুধু দৈহিক অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমে নাট্যভিয় মানবে না বলে বক্তার ধারণা।


19. “এই নিয়ে নাটক লেখো”—কী নিয়ে নাটক লিখতে বলা হয়েছে?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে ‘চাই চাই, কাপড় চাই,’ দাবিতে যে মিছিল আসছিল,তাই নিয়ে নাটক লিখতে বলা হয়েছে ।


20. “আমাকে অবশ্য মানায় ভালো”–কাকে মানায় ভালো?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকের নাট্যকার শম্ভু মিত্র মজা করে বলেছেন যে তাকে নায়কের চরিত্রে মানায় ভালো।


21. “সুতরাং চলো—বাইরে।”— বাইরে যাবার প্রয়োজন কেন?

Ans: সম্পাদকের চাহিদা অনুযায়ী হাসির নাটকের উপাদান খুঁজতে বাইরে যাবার প্রয়োজন।


22. ”The night is calling me-me-me” কার লেখা?

Ans: “The night is calling me-me-me -বার্নার্ড শ-এর লেখা।


23. “বৌদির কথা শুনে সে স্পষ্টত হতাশ।”—এই হতাশার কারণ কি ?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকের অন্যতম চরিত্র তৃপ্তি মিত্র (বৌদি) শম্ভু মিত্রকে ‘লভ সিন’-এর নায়ক মনোনীত করলে অমর গাঙ্গুলি হতাশ হন।


24. “তমে ঘোড়া নেই করি চঞ্চল খবর নেই আসিবি।”—অর্থ কি ?

Ans: উদ্ধৃতিটি ওড়িয়া ভাষায় এবং এর বাংলা অর্থ হল তুমি ঘোড়ায় চড়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি খবর নিয়ে আসবে।


25. “সে মরারও বাহার কত।” – এখানে কোন্ মরার কথা বলা হয়েছে?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত কাবুকি থিয়েটারে দুজন লোকের যুদ্ধে একজনের কাল্পনিক মৃত্যুর কথাই এখানে বলা হয়েছে।


26. “আমাদের একটা ‘লভ সিন’ করা উচিত।”—কেন বক্তা একথা বলেছেন ?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকের অন্যতম চরিত্র তৃপ্তি মিত্রের মতে, পৃথিবীতে সবচেয়ে পপুলার জিনিস হল প্রেম। তাই প্রেমের দৃশ্য অভিনয় করলে সকলের হাসি পাবে।


27. “এইরে পুলিশ আসছে।”— পুলিশ আসার কারণ কী?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত চাল ও কাপড়ের দাবিতে শোভাযাত্রীদের মিছিল বন্ধ করতে পুলিশ এসেছিল।


28. “এবার নিশ্চয় লোকের খুব হাসি পাবে।”—কী দেখে বক্তা এরূপ মন্তব্য করেছেন?

Ans: পুলিশের গুলিতে নিহত মানুষ দেখে এবং আহত মানুষের আর্তনাদ শুনে হাসি পাবে বলে শম্ভু মিত্র ব্যঙ্গ করে একথা বলেছেন |


29. “আরে এতে হবে না শম্ভুদা…।” – কী হবে না বলে বক্তা মনে করেছেন?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে শম্ভু মিত্র হাসির উদ্রেক করতে কল্পিত চেয়ারে বসে আবার তা থেকে টলতে টলতে দাঁড়ানোর ভঙ্গি করেন| এতে হাসি পাবে না বলে অমর গাঙ্গুলি জানিয়েছেন |


30. “তোমাকে ধরবে না তো কাকে ধরবে?”— উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে কেন ধরা হবে?

Ans: ‘বিভব’ নাটকে লভ সিনের দৃশ্যে শম্ভু মিত্র একজন ‘underground political leader’ তাই তাঁকে ধরা হবে।


31. “চোখ খুলে চলতে জানেন না?” – কে, কাকে, কেন একথা বলেছেন?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে লভসিনের দৃশ্যে শম্ভু মিত্র এবং বৌদি তৃপ্তি মিত্রের মধ্যে রাস্তায় ধাক্কা লাগে। এই সময় বৌদি তৃপ্তি মিত্র, শম্ভু মিত্রকে একথা বলেছেন।


32. “আর দিলেও সে অনেক টাকা।”— কী দেওয়ার কথা বলা হয়েছে?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকে ‘মালতী লতা দোলে রবীন্দ্র-সংগীতটি ফিল্মি কায়দায় গাওয়া হচ্ছিল| বিশ্বভারতীর এই কায়দায় গান গাওয়ার অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।


33. “মাঠ ভরতি লোক নিঃশব্দে এসব মেনে নিয়ে দেখলে।” —মাঠ ভরতি লোক কী মেনে নিয়ে দেখল?

Ans: এক মারাঠি তামাশায় চাষি জমিদারের কাছে কাকুতিমিনতি করেও ব্যর্থ হয়ে মন্দিরে গিয়ে ভগবানের কাছে নালিশ জানায়। এখানে ফাকা মঞে মন্দির কল্পনা করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমিদার ও মন্দিরের। পুরোহিত চরিত্রে একই ব্যক্তিকে অভিনয় করতে দেখেও মাঠ ভরতি দর্শক নিঃশব্দে তা মেনে নেয়।


34. “দেখে প্রথমে খুব উল্লাস হয়েছিল” —কী দেখে নাট্যকারের মনে উল্লাস জেগেছিল?

Ans: নাট্যকার শম্ভু মিত্র লক্ষ করেন যে, উড়ে দেশের যাত্রা ও মারাঠি তামাশায় সাজসরঞ্জামের বাহুল্য ব্যতিরেকেই নাটক পরিবেশন করা হয় এবং দর্শক তা সহজে মেনেও নেয়। তাই বহুরূপী নাট্যসংস্থার কর্ণধার হিসেবে তিনি কম ব্যয়ে নাট্যোপস্থাপনের পন্থা আবিষ্কারে সফল হওয়ায় উল্লসিত হন।


35. বহুরূপীর নাট্য উপস্থাপনার পথে প্রধান বাধা কী?

Ans: বহুরূপী নাট্যসংস্থার নাট্য-উপস্থাপনার পথে প্রধান বাধা হল বহুরূপীর আর্থিক আনুকূল্যের ‘দুরন্ত অভাব’। আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে ভালো স্টেজ, সিনসিনারি, অন্যান্য সরঞ্জাম কোনো কিছুই তাদের ছিল না। এ ছাড়াও সরকারি খাজনার প্রকোপ তাদের নাট্যোপস্থাপনার পথে বাধা সৃষ্টি করে।


36. নাট্য উপস্থাপনার বাধা দূরীকরণের জন্য শম্ভু মিত্র কী উপায় বের করেছিলেন?

Ans: নাট্য উপস্থাপনার বাধা দূর করার জন্য শম্ভু মিত্র কোনো সাজসরঞ্জাম ছাড়াই নাট্যাভিনয় করার উপায় বের করেছিলেন।


37. উড়ে দেশের যাত্রায় রাজা দূতকে কী বলেন?

Ans: উড়ে দেশের যাত্রায় রাজা দুতকে বলেন—“তমে ঘোড়া নেইকরি চল খবর নেই আসিবি”, অর্থাৎ তুমি ঘোড়া নিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি খবর নিয়ে আসবে।


38. “ওঃ দাতাকর্ণ যে।”–কাকে কেন ‘দাতাকর্ণ’ বলা হয়েছে?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র অমরকে শম্ভু ‘দাতাকর্ণ’ বলেছেন। অমর শম্ভুকে চা খাওয়ার জন্য তার সদ্য ধরানো সিগারেটটি ফেলে দিতে বলেন এবং এও বলেন যে, তিনি চা খাওয়ার পর তাঁকে আবার সিগারেট দেবেন। এ কথা শুনেই শম্ভু অমরকে ‘দাতাকর্ণ’ বলেন।


39. “দেখছ না বার্থ রেট কী হাই।”—কথাটির অর্থ কী?

Ans: ‘বার্থ রেট’ কথাটির অর্থ জন্মহার। বস্তুত, বউদি পৃথিবীর সবচেয়ে পপুলার বিষয় হিসেবে প্রেমের কথা বললে অমর তাঁকে সমর্থন করে ভারতে জন্মহার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সেই পপুলার প্রেমের কথাই বলেন। এটি নাট্যকারের নির্মল হাস্যরস নির্মাণ।


40. ‘বিভাব’ নাটকে নায়ক সম্বন্ধে কী বলা হয়েছে?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকের বউদির সংলাপ অনুযায়ী ব্যক্তি বিশেষের নায়ক হওয়াটাই হল বড়ো কথা, তার কোনো ব্যক্তিক পরিচয় সেক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তার কলেজ বা অফিস কিছু না থাকলেও চলে। বউদির এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে নায়ক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে।


41. “আরে সব সময়ে কি aesthetic দিক দেখলেই চলে?” হয়েছে? ‘aesthetic দিক’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

Ans: ’Aesthetic’ কথাটির অর্থ হল নন্দনতত্ত্ব বা সৌন্দর্যবোধ বিষয়ক দিক বা সৌন্দর্যবোধপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি। রবীন্দ্রনাথের ‘মালতী লতা দোলে’ গানটি বিকৃতভাবে গীত হওয়ায় শম্ভু মিত্রর শৈল্পিক বোধ আঘাত প্রাপ্ত হলে তিনি প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। তাঁর সেই প্রতিবাদের প্রেক্ষিতেই এখানে নেপথ্যের হারমোনিয়াম বাদকের দ্বারা ‘aesthetic দিক’ কথাটি উচ্চারিত হয়েছে যার মাধ্যমে গানের সেই শৈল্পিক দিক তথা সৌন্দর্যতত্ত্বের দিকটির কথাই বলা হয়েছে যা বহুক্ষেত্রেই ‘Box office’-এর স্বার্থে অবহেলিত হয়।


42. “সেটা যখন মাথায় পড়বে বুঝবে তখন।”—‘সেটা মাথায় পড়বে’ কেন?

Ans: রবীন্দ্রনাথের গানের শৈল্পিক দিক অবহেলা করলে ‘সেটা’ অর্থাৎ বংশদণ্ড মাথায় পড়বে বলে মনে করেন শম্ভু মিত্র।


43. “হ্যা বহুরূপী তখন লাটে উঠবে।”—এ কথা বলার কারণ কী?

Ans: লাভ সিনকে প্রোগ্রেসিভ বানানোর জন্য দ্বিতীয় গল্পে বউদি শম্ভুকে Underground political leader হিসেবে চিহ্নিত করেন। তৎকালীন সরকার ‘বহুরূপী’-র সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আদর্শ যুক্ত রয়েছে জানতে পারলে ‘বহুরূপী’ লাটে উঠবে বলে শম্ভু মিত্র আশঙ্কা করেন।


44. “গল্পটা Progressive হয় কী করে?” —গল্পকে progressive করার জন্য তাতে কোন্ বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়?

Ans: ‘বিভাব’ নাটকের বউদি চরিত্রের মতানুযায়ী লাভ সিনকে অর্থাৎ গল্পকে progressive করে তোলার জন্য গল্পে পলিটিকাল সিগনিফিক্যান্স রাখতে হয়।


বিভাব সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর


প্রশ্নঃ ‘বিভাব’ নাটকে নামকরনের স্বাতন্ত্র্য কী?

উত্তরঃ ‘বিভাব’ নাটকের চরিত্ররা তাদের বাস্তব জীবনের নামেই পরিচিত। নাটকে শম্ভু মিত্র শম্ভু, অমর গাঙ্গুলি অমর এবং তৃপ্তি মিত্র তৃপ্তি নামেই উপস্থিত ছিলেন। নিজ নামে পরিচিত হয়েই চরিত্রগুলি স্বতন্ত্র। 


প্রশ্নঃ ‘বিভাব’ নাটকে নারী চরিত্রের সংখ্যা ক-টি?

উত্তরঃ ‘বিভাব’ নাটকে নারী চরিত্রের একটি। 


প্রশ্নঃ ‘তমে ঘোড়া নেইকরী চঞ্চল খবর নিয়ে আসিবি’ —অর্থ কী?

উত্তরঃ উক্তিটিতে দেখা গেছে যে, রাজ্ দূতকে ঘোড়া নিয়ে দ্রুত খবর সংগ্রহ করে আনার নির্দেশ দিচ্ছেন। 


প্রশ্নঃ উড়িয়া নাটকে দূত ঘোড়ায় চড়ার অভিনয় কিভাবে করে?

উত্তরঃ দূত ছোট ছেলের মতো দু-পায়ের ফাঁকে একটা লাঠি গলিয়ে ঘোড়ায় চাপার ভঙ্গি করে বেরিয়ে যায় এবং কিছুক্ষন পরে  ভঙ্গিতে খবর সংগ্রহ করে ফিরে এসে রাজাকে জানায়।


প্রশ্নঃ ‘এমনি সময় হটাৎই এক সাহেবের লেখা পড়লাম।’ —কোন সাহেবের কথা বলা হয়েছে?

উত্তরঃ রুশদেশীয় বিখ্যাত চিত্র পরিচালক আইজেনস্টাইনের কথা বলা হয়েছে। 


প্রশ্নঃ ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত ‘কাবুকি’ নাটকের বৈশিষ্ঠ্য সংক্ষেপে লেখো?

উত্তরঃ ‘কাবুকি’ নাটকের বৈশিষ্ঠ্য হল –

  • এটি একপ্রকার জাপানি থিয়েটার
  • এই নাটকের অভিনয়ে ভঙ্গির বহুল প্রয়োগ দেখা যায়। 


প্রশ্নঃ ‘এই পড়ে বুকে ভরসা এল’ —কী পড়ে বুকে ভরসা এল?

উত্তরঃ জাপানি থিয়েটার ‘কাবুকি’ পড়ে “বহুরূপী” নাট্যদলের পুরোধা শম্ভু মিত্র আশ্বস্ত হয়েছিলেন। 


প্রশ্নঃ সম্পাদক হাসির নাটক করতে বলেছেন কেন?

উত্তরঃ  সম্পাদক হাসির নাটক করতে বলেছেন কারন, হাসির নাটকের দারুন বক্সঅফিস। 


প্রশ্নঃ ‘খালি সে ধাক্কা দিয়ে বেড়ায়?’ —কে খালি ধাক্কা দিয়ে বেড়ায়?

উত্তরঃ বউদি পরিকল্পিত প্রথম প্রেমের নাটকের দৃশ্যে নায়ক খালি ধাক্কা দিয়ে বেড়ায়। 


প্রশ্নঃ “বিশ্ব ভারতীয় কি পারমিশন দেবে?” —কীসের পারমিশন?

উত্তরঃ রবীন্দ্রসঙ্গীতের গায়কি ঢঙের পরিবর্তনের জন্য বিশ্বভারতীর পার্মিশনের কথা বলা হয়েছে।


বিভাব রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর


1. “আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’।” ”–অভাবের চিত্র ‘বিভাব’ নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখো।

অথবা,

‘বিভাব’-এর মতো মঞ্জুসজ্জা ও অন্যান্য নাট্য উপকরণ ছাড়া নাটক প্রযোজনার বাসনা বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর মনে এল কীভাবে?

Ans: শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটকের শুরুতেই স্বয়ং নাট্যকার শম্ভু মিত্রের জবানিতে অপেশাদার নাট্যগোষ্ঠীগুলির সমস্যার কথা ফুটে উঠেছে। গ্রুপ থিয়েটারগুলির নাট্য-প্রযোজনার আন্তরিক ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক ও অন্যান্য নাট্য-উপাদান, সর্বোপরি মঞ্চের অভাব বাধা হয়ে দাঁড়াত। তাই বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর সংকটমোচনের প্রত্যাশায় ‘বিভাব’-এর মতো ব্যতিক্রমী নাট্যপ্রয়াস।

নাটক যে দীর্ঘ সংলাপ দিয়ে শুরু হয়েছে, সেখানেই শম্ভু মিত্র বলেছেন এ নাটকের নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’। গ্রুপ থিয়েটারগুলির নাট্য-প্রযোজনার ক্ষেত্রে বড়ো বাধা ছিল নাট্যমঞ্চ ৷ যে কয়টি সরকারি বা বেসরকারি নাট্যমঞ রয়েছে সেগুলি বহুরূপীর মতো নাট্যদলকে কেউ ভাড়া দিতে চান না। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা প্রদান তো দুরের কথা, উপরস্তু থাকে করের বোঝা।

সেই সঙ্গে প্রচলিত ধারায় নাট্য প্রযোজনার ক্ষেত্রে যেসব সিনসিনারি, আলো, ঝালর ইত্যাদি প্রয়োজন সেগুলিও এদের ছিল না। এরকম পরিস্থিতিতে ‘বিভাব’-এর মতো নাট্য-প্রযোজনার ভাবনা মাথায় এল বহুরূপী গোষ্ঠীর। এ নাটকে স্টেজের দরকার হবে না, দরজা, জানালা, সিনসিনারি কিছুই দরকার হবে না—একটা যে কোনো রকম প্ল্যাটফর্ম হলেই চলবে। সর্বোপরি, এরকম প্রযোজনার জন্য সরকার খাজনা আদায়ের খাতা হাতে হাজিরও হবে না।


2. “তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাচ বের করেছি।”—এখানে যে প্যাচের কথা বলা হয়েছে তার বিবরণ দাও। নাট্যকার এত ভাবনাচিন্তা কেন। করেছিলেন?

Ans: প্রখ্যাত নাট্যকার শম্ভু মিত্র তাঁর প্রখ্যাত একাঙ্কিকা ‘বিভাব’-এর প্রাকৃভাষণ অংশে নাট্যাভিনয়ের অভিনব রীতিপদ্ধতি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ‘বিভাব’ নাটকটিকে মঞ্জুস্থ করার পদ্ধতি বিষয়ে এক বিশেষ ‘প্যঁাঁচ’-এর আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে নাট্যকারের বক্তব্যানুযায়ী, নাটক পরিবেশনার জন্য অঢেল উপকরণ, বিশালকায় নাট্যমঞ্চ কিংবা সাজসজ্জা নিষ্প্রয়োজন। যে-কোনো রকম একটা প্ল্যাটফর্ম হলেই ‘বিভাব’ নাটক অভিনয় করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে নাটকের কুশীলববৃন্দ আপন অভিনয়গুণেই বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির দ্বারা অনুপস্থিত বস্তুসামগ্রীর প্রতীতি সৃষ্টি করে এই স্বয়ংসম্পূর্ণ নাটক পরিবেশন করতে পারে।

গণনাট্য সংঘ থেকে পৃথক হওয়ার পর নাট্যকার শম্ভু মিত্র যখন বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর সূত্রপাত ঘটান তখন তাদের প্রভূত অর্থাভাবের সম্মুখীন হতে হয়। নাট্যকারের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের ‘বিভাব’ নাটকটিরও জন্ম ‘দুরন্ত অভাব’ থেকে। সে সময় তাদের না ছিল কোনো ভালো স্টেজ, না ছিল সিনসিনারি, আলোকসজ্জা, ঝালর কিংবা প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসমূহ। নাট্যকারের মন্তব্যানুযায়ী— “থাকবার মধ্যে আছে কেবল নাটক করবার বোকামিটা।” কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষ বিচিত্র সাঁড়াশি ভঙ্গিতে বলপূর্বক কর আদায় করত। নাট্যকার জানান সরকারের সেই অত্যাচারের প্রেক্ষিতে বহু কষ্টে জোগাড় করা অর্থটুকুও তাদের হস্তচ্যুত হত এবং— “আমরা সর্বস্ব দিয়ে থুয়ে আবার ‘ব্যোমকালী’ বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি।” তবে অনাচার ও শোষণ যতই প্রবল হোক না কেন অভিনয়ের উন্মত্ত বাসনা তাদের অন্তর থেকে দূরীভূত হতে পারেনি। তাই তাঁরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিয়মের এই ‘ফাঁক’-টির আবিষ্কার করেন। এই বিচিত্র কৌশলের প্রয়োগে তাঁরা একই সঙ্গে যেমন নাট্য-প্রদর্শনের ব্যয়ভারকে সংকুচিত করতে সমর্থ হন তেমনি সরকারি অনাচারেরও প্রতিকার বিধান করেন।


3. “বুদ্ধিটা কী করে এল তা বলি।” – কোন্ বুদ্ধিটার কথা বলা হয়েছে? কীভাবে সেই বুদ্ধিটা বক্তার মাথায় এলো ?

অথবা,

“যথেষ্ট মঞসজ্জা বা উপকরণ ছাড়া নাট্যবক্তব্য প্রকাশ সম্ভব” ‘–এ বক্তব্যের সমর্থনে ‘বিভাব’ নাটকে দেশি-বিদেশি যে সকল দৃষ্টান্ত রয়েছে তার উল্লেখ করো।

Ans: শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ নাটকে উক্তিটি করেছেন নাট্যকার শম্ভু মিত্র স্বয়ং। অপেশাদার নাট্যদল বহুরূপী নাট্য- প্রযোজনার ক্ষেত্রে যে সকল বাধার সম্মুখীন হয়েছিল সেগুলির সমাধানকল্পে এক ভিন্ন ধারার নাট্য-প্রযোজনার ভাবনার কথা এখানে বলা হয়েছে। এই ভাবনা অনুযায়ী প্রচলিত মঞ্চ, মঞ্চসজ্জা এসবের প্রয়োজন হবে না, যে-কোনো রকম একটা প্ল্যাটফর্ম হলেই এ নাটক উপস্থাপন করা যাবে।

শম্ভু মিত্র এরকম ভিন্ন রীতির ভাবনার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন দেশি ও বিদেশি কিছু উদাহরণ থেকে।

যেমন—পুরোনো কোনো এক বাংলা নাটকে লেখা আছে— ‘রাজা রথারোহণম নাটয়তি’—অর্থাৎ রাজা রথে আরোহণ করার ভঙ্গি করলেন। রথ বা ঘোড়ার উপস্থিতি ছাড়াই দর্শকরা মনে করলেন রাজা রথে চড়লেন।

ওড়িশার এক নাটকে রাজা দূতকে বললেন—“তমে ঘোড়া নেইকরি চঞ্চল খবর নেই আসিবি।” –দূত অমনি দুই পায়ের ফাঁকে একটা লাঠি গলিয়ে ঘোড়ায় চড়ার ভঙ্গি করল। দর্শক অত্যন্ত গম্ভীরভাবে মেনে নিল যে, দূত ঘোড়ায় চড়ে গেল এবং ফিরে এল।

আবার, মারাঠি তামাশায় দেখা গেল যে, জমিদারের কাছে চাষি অনেক কাকুতিমিনতি করার একটু পরেই মঞের অন্য কোণে যখন ভগবানের কাছে নালিশ জানাতে গেল তখন সেই জমিদার অভিনেতাই মঞেঞ্চর উপরে দাড়িগোঁফ লাগিয়ে ধর্মীয় তর্জন শুরু করে দিল। এমনকি মাঠ ভরতি দর্শক তা মেনেও নিল।

কিন্তু শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিদেশেও অভিনয়ে ভঙ্গির বহুল ব্যবহার লক্ষ করা যায়। রুশ চিত্র পরিচালক আইজেন স্টাইনের লেখা পড়ে জানা যায়, জাপানি কাবুকি থিয়েটারে Perspective রচনার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করা হয়। একজন নাইট যখন স্টেজে এগোচ্ছেন তখন দুজন শিফটার মস্ত দুর্গার ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এরপর নাইটের এগিয়ে যাওয়ার Perspective তৈরির জন্য নাইট সামান্য এগোলেই শিফটারদের দ্বারা দুর্গদ্বারের আকৃতি ক্রমান্বয়ে ছোটো হচ্ছে। অর্থাৎ, এইভাবে ধারের আকৃতি ছোটো করে নাইট কতদূর এসে পৌঁছেছেন তা বোঝানো হল।

এ সমস্ত দেশি-বিদেশি উদাহরণ থেকে শম্ভু মিত্র ‘‘বিভাব’-এর মতো মঞসজ্জাহীন, নাট্য-উপকরণহীন নাটক উপস্থাপনার ভাবনায় উৎসাহিত হয়েছিলেন।


4. “আর একবার এক মারাঠি তামাশায় দেখেছিলাম” মারাঠি তামাশা’ বলতে কী বোঝো? সেই তামাশায় নাট্যকার কী দেখেছিলেন?

Ans: মারাঠি তামাশা হল মহারাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্যের একটি বিশেষ রূপ। এই বিশেষ লোকনাট্য নৃত্যগীত সহযোগে মহারাষ্ট্রের স্থানীয় অথবা ভ্রাম্যমাণ নাট্যগোষ্ঠীর দ্বারা প্রদর্শিত হয়ে থাকে। এগুলি সাধারণত বিভিন্ন সামাজিক অসংগতি ও জীবনের বিবিধ অভিব্যক্তিকে মনোরঞ্জনকারী ভঙ্গিতে জনসমক্ষে তুলে ধরত। মহারাষ্ট্রে মূলত দু-ধরনের তামাশা অভিনীত হয়ে থাকে—‘ঢোলাকি ফাদচা’ তামাশা ও ‘সংগীত বারিচা’ তামাশা। নৃত্য-গীত-অভিনয় সহযোগে প্রদর্শিত এক পূর্ণাঙ্গ শিল্পরীতি হল ‘ঢোলাকি ফাদচা’ তামাশা। ঐতিহ্যবাহী মারাঠি তামাশার প্রাচীন ধারায় ‘নাচ্যা’ নামাঙ্কিত অংশে নৃত্যে পারদর্শী ছেলেরাই সাধারণত মেয়ের ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হত। বর্তমানে অবশ্য মেয়েরাও তামাশায় অংশগ্রহণ করছে। এই তামাশাগুলির রচয়িতা তথা কবি নাটকগুলির সূত্রধরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

একদা এই মারাঠা তামাশা দর্শন কালেই নাট্যকার শম্ভু মিত্র দেখেন যে, বিশালকায় সজ্জিত মঞ, সিনসিনারির প্রয়োগবাহুল্য ব্যতীতই স্বল্প সংখ্যক অভিনেতার অভিনয় সৌকর্যের দ্বারা নাটকের কথাবস্তুটি দর্শকমনে গ্রহণযোগ্যতা লাভে সমর্থ হয়েছে। নাট্যকার দেখেন অভিনীত মারাঠি তামাশার চাষি চরিত্রটি জমিদারের কাছে প্রবল কাকুতিমিনতি করেও জমিদারের অনুকূল্য লাভে ব্যর্থ হলে ব্যর্থ মনোরথে সে— ‘ চলল মন্দিরে, ভগবানের কাছে নালিশ জানাতে।” তার ভগবানের কাছে যাওয়ার পদ্ধতিটি বড়োই অভিনব, চাষি স্টেজ থেকে বেরিয়ে না গিয়েই মঞসদৃশ্য তক্তার উপরে কয়েকবার ঘুরপাক খায় ও গ্রাম অতিক্রম করার ভঙ্গি প্রদর্শন করে। এরপর সে কাল্পনিক এক মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ভগবানের কাছে আপন মনোবেদনা নিবেদন করতে থাকে। সর্বোপরি, জমিদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ অভিনেতাটির দর্শকসমক্ষে দাঁড়িয়েই ‘দাড়ি গোঁফ এঁটে পুরুত সেজে’ চাষিটিকে ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান করতে থাকে এবং “মাঠ ভর্তি লোক নিঃশব্দে এসব মেনে নিয়ে দেখলে।” মারাঠি তামাশায় নাট্যকার এই বিশেষ ধরনের নাট্যপ্রদর্শনরীতি প্রত্যক্ষ করেছিলেন।


5. “এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না …।”—জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন? শেষে তার কীরূপ অভিজ্ঞতা হয়? 

Ans: নাট্যকার শম্ভু মিত্র শুধুমাত্র শৌখিন ইচ্ছাবশতই নাটক নির্মাণ বা নাট্যাভিনয় করতেন না। তিনি প্রকৃত অর্থে এমন শিল্প সৃষ্টি করতে চাইতেন যার দ্বারা দর্শকদের মনে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করা যায়। তিনি জানতেন যে, জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েই সাহিত্যশৈলী পূর্ণাঙ্গ রূপে বিকশিত হতে পারে। তবে জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত সাহিত্য সৃষ্টির জন্য জীবনকে উপলব্ধি করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমে সম্পাদকের প্রস্তাবক্রমে হাসির নাটক তৈরির জন্য হাসির খোরাক জোগাড় করতে অমর গাঙ্গুলির বাড়ি যান। সেখানে বউদি অর্থাৎ তৃপ্তি মিত্রর কথানুযায়ী দুটো লাভ সিন করেও তাঁরা হাসির সন্ধান পাননি। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি উপলব্ধি করেন জীবনকে সম্পূর্ণ রূপে অনুভব করার জন্য চার দেয়ালের বাইরে গিয়ে প্রকৃতির মাঝে নিজেকে ও মনকে মুক্ত করতে হবে। তিনি অমর গাঙ্গুলিকে বলেন জীবন আছে—“রাস্তায়, মাঠে, ঘাটে। … সুতরাং চলো–বাইরে—হাসির খোরাক, পপুলার জিনিসের খোরাক পাবে।” অর্থাৎ, জীবনের সন্ধান লাভের জন্য বক্তা শম্ভু মিত্র চার দেয়ালের বাইরে বিশ্ববাসীর মাঝে নিজেকে উন্মুক্ত করেন, তিনি বাইরে বেরিয়ে পড়েন।

জীবনের সন্ধানে বাইরে বেরিয়ে তাঁদের মনে হয় যান্ত্রিকতা ও কৃত্রিমতার নিষ্পেষণে জীবনও যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ইংরেজ শাসনের ছায়া তাঁরা লক্ষ করেন প্রতিটি জিনিসে। এমতাবস্থায় হঠাৎ-ই তাঁরা এক নৃশংস দৃশ্যের দর্শক হয়ে ওঠেন। ‘চাল চাই, কাপড় চাই’–এই ধ্বনিতে মুখরিত একটি পতাকাধারী শোভাযাত্রার গতিরোধ করার জন্য সার্জেন্টের নির্দেশক্রমে পুলিশ শোভাযাত্রার সামনে থাকা একটি ছেলে ও মেয়েকে গুলিবিদ্ধ করে। রক্তমাখা এক মর্মান্তিক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে জীবনের ঘৃণ্যতম অভিজ্ঞতায় ভরে ওঠে দুই শিল্পীর মন।


6. “নাঃ কোথাও জীবনের খোরাক, হাসির খোরাক নেই।”—বক্তা কে? কোথাও জীবনের খোরাক, হাসির খোরাক নেই বলে বক্তা মনে করেছেন কেন? 

Ans: প্রখ্যাত নাট্যকার শম্ভু মিত্র তথা ‘বিভাব’ নাটকের অন্যতম প্রধান চরিত্র শম্ভু আলোচ্য উক্তিটির বক্তা।

সাহিত্য সমাজের দর্পণ। সাধারণত, জীবনের যাবতীয় অনুভূতিই তার নিজস্ব রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ সহযোগে নাটকে সংবেশিত হয় ও সেই অনুভূতিই নাটকের কুশীলবদের অভিনয়গুণে দর্শক সমক্ষে পরিবেশিত হয়। শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকটিতেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাবলি নাটকীয় ভঙ্গিতে এই নাটকে উপস্থাপিত হয়েছে। বহুরূপী নাট্যদলের নাটকের প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব সম্পর্কিত দীর্ঘ সংলাপের মধ্য দিয়ে যে নাটকের সূচনা তারই পরিসমাপ্তি এক চরম জীবনবোধের প্রকাশে। নাট্য-সম্পাদকের কথানুযায়ী হাসির নাটকের প্রধান উপাদান হাসির খোরাক জোগাড় করতে গিয়ে শম্ভু বাড়ির আবদ্ধ পরিবেশে দুটি প্রেমের দৃশ্য অভিনয় করে দেখেন। কিন্তু অপ্রাসঙ্গিক প্রেমের আবহ সৃষ্টি করেই হোক কিংবা তাতে পলিটিকাল সিগনিফিক্যান্স এনেই হোক কোনোভাবেই তাতে হাসির সন্ধান পাওয়া যায় না। তাই শেষ পর্যন্ত শম্ভু সিদ্ধান্ত নেন—“এই চার দেওয়ালের মধ্যে, এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না–হাসিও পাবে না। সুতরাং চলো— বাইরে—হাসির খোরাক, পপুলার জিনিসের খোরাক পাবে।” কিন্তু প্রকৃতির মাঝেও তিনি মুক্তির সন্ধান পাননি। তিনি লক্ষ করেন, অতিযান্ত্রিকতা সেখানেও জীবনের স্পন্দনকে অব্যাহত থাকতে দেয়নি। জীবনের কাননে যে হাসির ফুল ফোটে তা নিরস হয়ে গেছে বর্তমানের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে। তাই নাট্যকার কোথাও হাসির ও জীবনের খোরাক খুঁজে পাননি।


7. ‘বিভাব’ নাটকে নাট্যরীতির যে নতুনত্ব প্রকাশ পেয়েছে তা আলোচনা করো।

Ans: বাংলা নাট্যজগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং ‘বহুরুপী নাট্যগোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ শম্ভু মিত্র রচিত ‘বিভাব’ একটি ভিন্ন স্বাদের একাঙ্কিকা। স্বয়ং শম্ভু মিত্রের ভাষায় নাটকটির জন্ম ‘দুরস্ত অভাব থেকে। বস্তুত, নাটকটি সৃষ্টির পিছনে ‘বহুরূপী’-র আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যহীনতা তো নিশ্চয়ই একটা কারণ। ‘নাটক করবার বোকামিটা’ ছাড়া ভালো স্টেজ, সিনসিনারি, আলো, ঝালর কিছুই তাদের ছিল না। তার উপরে ছিল সরকারি করের বোঝা। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই একটা ‘প্যাচ’ বের করতে হয়েছিল, যেখানে নিদেন একটা প্ল্যাটফর্ম বা ক্ষেত্র থাকলেই অভিনয় করা যাবে—সিনসিনারি, দরজা-জানলা, টেবিল-বেঞি কোনো উপকরণই লাগবে না।

এ তো গেল একটা দিক। কিন্তু এ কথা ভুললে চলবে না, নাট্য অভিনয়, নাট্য-রচনা ও পরিচালনার পাশাপাশি শম্ভু মিত্র নাটক নিয়ে বহু গবেষণা করেছেন। যার ফল হল ওয়ার্কশপধর্মী এই একাঙ্কিকা। তিনি পুরোনো বাংলা নাটক, প্রাদেশিক নাটক, এমনকি বিদেশি নাটক পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন কোনোরকম নাট্য-উপকরণ, সাজসজ্জা, জৌলুস, আলো, ঝালর ছাড়াই কেবল ভঙ্গির প্রয়োগে দর্শকের মনে রস নিষ্পত্তি ঘটানো যায়। তিনি উড়ে দেশের যাত্রা, মারাঠি লোকনাট্য, জাপানি কাবুকি থিয়েটার প্রভৃতির থেকে নির্যাস গ্রহণ করে সৃষ্টি করলেন ভঙ্গি প্রধান নাটক ‘বিভাব’। সেখানে কোনোরকম উপকরণের ব্যবহার তো রাখলেনই না, উপরন্তু নাটকের চরিত্ররাও বাস্তব জীবনের পরিচিতি নিয়েই উপস্থিত হলেন। কখনও নাটকের নায়ক-নায়িকা কখনও বাস্তব চরিত্র—উভয় সত্তায় তাঁরা অনায়াস যাতায়াত রাখলেন। এইভাবে অভিনয়ে একাধিক স্তর প্রকাশ করে চলা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য। নাট্যকর্মী ও পরিচালক শাঁওলী মিত্রের ভাষায়—“এর উপস্থাপনায় ও অভিনয়রীতিতে ‘অ্যাবসার্ড’ নাটকের ছায়া খুব স্পষ্ট।”

সেই সঙ্গে বলতে হয় সমাজ বাস্তবতার যথাযথ প্রতিফলনের পাশাপাশি নাট্য সৃষ্টির পিছনে নাট্যকর্মীদের যে আন্তরিক নিষ্ঠা ও প্রয়াস ক্রিয়াশীল থাকে তা দর্শকের বোধের কাছে খুব সুন্দরভাবে পৌঁছে দিয়েছেন নাট্যকার। এখানেই এই অভিনব নাট্যরীতির সার্থকতা।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.