বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস

বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF

বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস

নিচে বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।


বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস


আলোচ্য পোস্টে বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


বাঙালির ক্রীড়াসংস্কৃতি রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস



প্রশ্ন: ব্রতচারীর উদ্ভাবক কে? সংক্ষেপে ব্রতচারী সম্পর্কে আলোচনা কর।

Ans: ব্রতচারীর উদ্ভাবক ছিলেন গুরুসদয় দত্ত (১৮২২- ১৯৪১)।

পরাধীন ভারতবর্ষে দেশবাসীকে শরীরচর্চা এবং স্বাদেশিকতায় উদ্বুদ্ধ করাতে ব্রতচারী আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। গুরুসদয় দত্ত ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে এই আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। ১৯৩৫ সালে স্থাপিত হয় বেঙ্গল ব্রতচারী সমিতি। সেইসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্রতচারীর অনেকগুলি শাখা খুলেছিল।

সমকালের প্রেক্ষাপটে ব্রতচারীকে একটি সামাজিক আন্দোলন বলা চলে। তবে সাধারণ অর্থে, যারা কোনো অভীষ্ট সিদ্ধের জন্য একাগ্র চিত্তে কোনো ব্রত পালন করে তাদেরকে ব্রতচারী বলা হয়। জ্ঞান, শ্রম, সত্য, ঐক্য এবং আনন্দ- ব্রতচারীকে এই পঞ্চব্রত পালন করতে হত।

ব্রতচারী প্ৰতিষ্ঠার প্রেক্ষাপটে রয়েছে গুরুসদয় দত্তের বঙ্গ-ঐতিহ্যপ্রীতি। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে শরীর ও মনকে বিকশিত করা এবং বৃহত্তর স্বার্থে মানবসেবায় নিয়োজিত করাই ছিল ব্রতচারী আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য।

ব্রতচারী হল উন্নত জীবনবোধের শিক্ষা। ব্রতচারীর কী কী করণীয় এবং কোনগুলি নিষেধ- এই বিষয়ক ‘বিধিমালা’ তৈরি করেছিলেন গুরুসদয় দত্ত। ব্রত পালনের বিষয়টি যাতে মনোগ্রাহী হয় সেইজন্য অনেক গানও রচনা করেছিলেন তিনি। এই গানগুলিতে শ্রমের প্রতি সম্মান, সত্যনিষ্ঠা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা রয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষের নৈতিক উন্নতিসাধন করাই ছিল এই আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য।

যাইহোক, ১৯৪১ সালে ব্রতচারীর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাণপুরুষ গুরুসদয় দত্তের প্রয়াণের পর এর জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে।


প্রশ্ন: আন্তর্জাতিক স্তরে সুনাম অর্জন করেছেন এমন একজন বাঙালি ক্রীড়াবিদের কৃতিত্বের পরিচয় দাও। 

Ans: বাঙালির ক্রীড়া সংস্কৃতির ঐতিহ্য বেশ প্রাচীন। তবে, আধুনিক খেলাগুলির সঙ্গে বাঙালির পরিচয় ঘটে মূলত ইংরেজদের মাধ্যমে। আর সবক্ষেত্রেই বাঙালি ক্রীড়াবিদরা কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে গেছেন। অনেক বাঙালি ক্রীড়াব্যক্তিত্ব দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অবশ্যই সৌরভ গাঙ্গুলি।

ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি

সৌরভ গাঙ্গুলী ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৯২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে একদিবসীয় ম্যাচের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেন এবং সারাজীবনে ৩১১ টি একদিবসীয় ম্যাচে তাঁর প্রাপ্ত রান ১১৩৬৩। আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর প্রথম ম্যাচ ১৯৯৬ সালে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সৌরভ গাঙ্গুলি মোট ১১৩ টি টেস্টে ৭২১২ রান সংগ্ৰহ করেছেন। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি যতখানি সফল ছিলেন, ডানহাতি মিডিয়াম পেসার হিসেবেও তিনি ততখানি অনবদ্য ছিলেন। এছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও তিনি যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

অধিনায়ক সৌরভ

সৌরভ গাঙ্গুলী ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সফল অধিনায়ক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল এবং ভারতীয় দল ২০০৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছেছিল।

প্রশাসক সৌরভ

সৌরভ গাঙ্গুলী শুধুমাত্র একজন দক্ষ ক্রিকেটার বা সফল অধিনায়ক নন, বিভিন্ন ক্রিকেট সংগঠনের প্রশাসক হিসেবেও তাঁর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি ক্রিকেট এসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল- এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০১৯ সালের অক্টোবরে তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা বিসিসিআই (বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া)- এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

ক্রিকেটার হিসেবে সৌরভ গাঙ্গুলি খেলার মাঠে বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। আবার অনেক রেকর্ডও গড়েছেন। যেমন, একদিবসীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি একটানা চারটি ম্যাচে ‘ম্যান অফ দি ম্যাচ’ পুরস্কার পেয়েছেন। ক্রিকেটে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অর্জুন পুরস্কারে (১৯৯৮) ভূষিত হয়েছেন। ২০০৪ সালে তিনি ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মশ্রী পুরস্কার পান।


প্রশ্ন: বাঙালির ক্রিড়া ঐতিহ্যে ফুটবলের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিল ? এই পর্বের ফুটবলের সঙ্গে কোন্ বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নাম জড়িয়ে আছে? বাংলার ফুটবলের কোন্ ঘটনা, কীভাবে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছিল ?

Ans: বাঙালির ক্রীড়া ঐতিহ্যে ফুটবলের সূত্রপাত হয়েছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে। কলকাতায় পুরনো কেল্লার মাঠে ব্রিটিশ নাবিকদের ফুটবল খেলা দেখে বাঙালি সৈনিকদের ফুটবলের সঙ্গে পরিচিতি ঘটেছিল।

এই পর্বের ফুটবলের সঙ্গে যে বিখ্যাত মানুষটির নাম জড়িয়ে আছে তিনি হলেন নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী।

বাঙালির ক্রিড়া সংস্কৃতিতে ফুটবলের একটি বিশিষ্ট স্থান রয়েছে। ব্রিটিশদের মাধ্যমে বাংলাতে ফুটবলের প্রচলন হলেও বাংলার ফুটবল ইংল্যান্ডের থেকে খুব বেশি পিছিয়ে ছিল না। ইংল্যান্ডের অনুকরণে কলকাতাতে বেশ কয়েকটি ফুটবল ক্লাবের জন্ম হয়েছিল এবং বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছিল। ১৮৯৩ সালে গঠন করা হয় ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং সেই বছরই শোভাবাজার ক্লাবের উদ্যোগে প্রবর্তন করা হয় আইএফএ শিল্ড। ফুটবলপ্রেমী বাঙালিদের মধ্যে আইএফএ শিল্ড অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

কিন্তু IFA শিল্ড শুরু হওয়ার পর থেকে টানা ১৮ বছর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দখলে ছিল। ১৯১১ সালে East Yorkshire Regiment কে হারিয়ে বিজয়ী হয় মোহনবাগান ক্লাব। ঐতিহাসিক এই জয় ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে উজ্জীবিত করেছিল কারণ এই প্রথম ব্রিটিশদের খেলাতে ব্রিটিশদেরকেই পরাজিত করেছিল ভারতীয়রা। এই জয় ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের নৈতিক জয়।


প্রশ্ন: কলকাতায় বাঙালির প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা প্রথম স্বদেশী সার্কাসের নাম লেখো ৷ সার্কাসে বাঙালির অবদানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও ৷

Ans: কলকাতা শহরে বাঙালির প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা প্রথম স্বদেশী সার্কাসের নাম হলো ন্যাশনাল সার্কাস (১৮৮৩)।

সার্কাসে বাঙালির অবদান: হিন্দুমেলার প্রাণপুরুষ নবগোপাল মিত্র ছিলেন ন্যাশনাল সার্কাসের প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু তার এই প্রচেষ্টা সাফল্য পায়নি। এর কিছুদিন পরেই গঠিত হয় গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস। এই সার্কাসটি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল কিন্তু এটিও বেশিদিন চলেনি। এরপরই আসে ইতিহাস সৃষ্টিকারী গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস।

গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস: বন্ধ হয়ে যাওয়া ন্যাশনাল সার্কাস এবং গ্রেট ইন্ডিয়ান সার্কাস-এর জন্তু-জানোয়ার, সাজ-সরঞ্জাম কিনে ‘গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’ প্রতিষ্ঠা করেন বিখ্যাত নাট্যকার মনোমোহন বসু রিছেলে প্রিয়নাথ বসু। তখনকার দিনে সার্কাস বা শরীরচর্চার কোচদের প্রফেসর নামে ডাকা হতো এবং প্রিয়নাথ বসু প্রফেসর বোস নামে খ্যাত ছিলেন। এই সার্কাসের প্রদর্শন শুরু হয়েছিল প্রথমে বাংলার বাইরে এবং তার পরে কলকাতায়। সমগ্র ভারতেই গ্রেট বেঙ্গল সার্কাসের খ্যাতি ছিল।

গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস এই সর্বপ্রথম বাঘের খেলা দেখানো শুরু হয়েছিল সেসময় বাঘের খেলা দেখিয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন বাদলচাঁদ এবং সুশীলাসুন্দরী। উল্লেখ্য যে, সুশীলাসুন্দরীই প্রথম বাঙালি নারী যিনি সার্কাসে বাঘের খেলা দেখাতেন।

প্রফেসর বোসের সার্কাসের খ্যাতি শুধুমাত্র ভারতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ভারতের বাইরেও বিভিন্ন দেশে গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস খেলা দেখিয়েছিল। প্রিয়নাথ বসুর লেখা ‘প্রফেসর বোসের অপূর্ব ভ্রমণ-বৃত্তান্ত’ গ্রন্থে সেইসব বিচিত্র ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাঁর সুযোগ্য পুত্র অবনীন্দ্রকৃষ্ণ বসুর লেখা ‘বাঙালির সার্কাস’ বইটি থেকেও প্রিয়নাথ বসুর সার্কাসের নানা কথা জানা যায়।


প্রশ্ন: আমাদের মহাকাব্যে ‘কুস্তি’ কী নামে পরিচিত ছিল? সংক্ষেপে বাঙালির কুস্তি চর্চার পরিচয় দাও।

Ans: আমাদের মহাকাব্যে কুস্তি মল্লযুদ্ধ নামে পরিচিত ছিল।

আধুনিক ভারতে কুস্তি খেলার প্রচলন এবং প্রসারে দেশীয় রাজন্যবর্গ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতের মধ্যে প্রথম কুস্তি চর্চা শুরু হয় বরোদাতে। বরোদার মহারাজ খাণ্ডেরাম কুস্তির উন্নতির জন্য বিশেষভাবে যত্নবান ছিলেন। বাংলাতেও কুস্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ন, মুর্শিদাবাদের নবাব সহ বেশ কয়েকজন বিত্তবান রাজা এবং জমিদার। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়নেরর উদ্যোগে ১৮৯২-৯৪ সালের মধ্যে ভারতে প্রথম বিশ্ব কুস্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রতিযোগিতায় জিতে করিম বক্স বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কুস্তিগিরের মর্যাদা লাভ করেছিলেন।

এক সময় কুস্তি ছিল বাংলাদেশের বাবু সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ। কুস্তি চর্চার জন্য কলকাতাসহ বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য আখড়া গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এইসব আখড়ায় গিয়ে শরীর চর্চা করতেন।

বাঙালির কুস্তিচর্চার ইতিহাসে যাদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তারা হলেন- শ্যামাকান্ত নন্দী, যতীন্দ্রচরণ গুহ, ফণীন্দ্রকৃষ্ণ গুপ্ত প্রমূখ। এঁদের মধ্যে যতীন্দ্রচরণ গুহ বা গোবর গুহ ভারতীয় কুস্তিকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করেছিলেন। তিনি প্রথম এশীয় হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত বিশ্ব লাইট হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। গোবর গুহ ভারতীয় কুস্তিরীতিতে অনেক নতুন প্যাঁচ উদ্ভাবন করেছিলেন। সেগুলি হল ধোঁকা, গাধানেট, ঢাক, পাট কুল্লা ইত্যাদি।


প্রশ্ন: গোবর গুহের প্রকৃত নাম কী? ভারতীয় কুস্তিখেলার ইতিহাসে তাঁর অবদান আলোচনা কর।  ১+৪

Ans: গোবর গুহের প্রকৃত নাম যতীন্দ্রচরণ গুহ। 

পৃথিবীর প্রাচীনতম খেলাগুলির মধ্যে একটি হল কুস্তি বা মল্লযুদ্ধ। ৫০০০ বছর আগের শিলা ফলকে মল্লযুদ্ধের ছবি পাওয়া গিয়েছে। রামায়ণ, মহাভারতের যুগেও কুস্তি খেলার প্রচলন ছিল। মহাভারতের পরবর্তীকালে মল্লযুদ্ধের জন্য বিখ্যাত হয়েছিলেন সোরাব ও রুস্তম। আধুনিক ভারতে কুস্তির চর্চা শুরু হয় বরোদায়। বাংলার বুকে কুস্তি খেলার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মুর্শিদাবাদের নবাব এবং মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ। আর বিশ শতকে ভারতীয় কুস্তিকে বিশ্বের দরবারে সন্মানের সঙ্গে উপস্থাপন করেন যিনি তাঁর নাম যতীন্দ্রচরণ গুহ বা গোবর গুহ। 

গোবর গুহ ১৮৯২ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহন করেন। তাঁদের পরিবার শরীরচর্চার জন্য বিখ্যাত ছিল। গোবর গুহের পিতামহ অম্বুবাবুর আখড়াতে অনেক পালোয়ান আসত শরীরচর্চার জন্য। গোবর গুহ প্রথমে তাঁর পিতামহের কাছেই কুস্তিচর্চা শুরু করেন। পরে তাঁদের আখড়ার অন্যান্য পালোয়ানের কাছে তিনি অনুশীলন শুরু করেন। 

মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি লন্ডনের বুল সোসাইটির একটি কুস্তি প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। এরপর তিনি ১৯২১ সালে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব লাইট হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ  জেতেন। ১৯২৯ সালে পার্ক সার্কাসে তিনি এবং গামা পালোয়ান ভারতীয় কুস্তির নানা মারপ্যাঁচ প্রদর্শন করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি পেশাদার কুস্তি থেকে অবসর নেন। ভারতীয় কুস্তির রীতিতে তিনি রদ্দা, ধোবা প্রভৃতি অনেক নতুন প্যাঁচ  উদ্ভাবন করেন।


প্রশ্ন: ক্রিকেটে বাঙালির অবদান আলোচনা করো।

Ans: ক্রিকেট খেলার জন্ম হয়েছিল ইংল্যান্ডে। সেই ইংল্যান্ডের হাত ধরেই ভারতে ক্রিকেট খেলার সূচনা হয়েছিল। ১৭৫১ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম ক্রিকেট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই বাংলাতেই। ১৭৯২ সালে তৈরি হয়েছিল ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব এবং ১৭৯৩ সাল থেকেই বাঙালির ক্রিকেট খেলার সূত্রপাত হয়েছিল।

সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ সারদারঞ্জন রায় ছিলেন একজন স্বনামধন্য ক্রিকেটার। শুধু ক্রিকেটার হিসেবে নয়, দুই বাংলার বুকে ক্রিকেট খেলা প্রসারের সঙ্গে তার নামটি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। ক্রিকেট খেলার নিয়ম কানুন নিয়ে প্রথম বাংলা বই ‘ক্রিকেট খেলা’ তারই লেখা।

কোচবিহারের রাজকুমার হিতেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার যিনি ইংল্যান্ডের কাউন্টি খেলাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

কয়েকজন খ্যাতনামা বাঙালি ক্রিকেটার: বাংলা ক্রিকেটের ইতিহাসে যাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকিবে তারা হলেন এস এন ব্যানার্জি, সি এস নাইডু, মন্টু ব্যানার্জি, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, পঙ্কজ রায়, প্রবীর সেন, শ্যামসুন্দর মিত্র, অম্বর রায়, সুব্রত গুপ্ত, কার্তিক বসু, গোপাল বসু, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপ দাশগুপ্ত, দেবাং গান্ধী প্রমূখ।

ক্রিকেটে সফলতম বাঙালি হিসেবে যার নাম করতে হয় তিনি হলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি একজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার এবং ভারতের জাতীয় দলের অন্যতম সফল প্রাক্তন অধিনায়ক।

বাংলার মেয়েরাও ক্রিকেটে কৃতিত্বের নজির গড়েছে। বাংলার মেয়ে ঝুলন গোস্বামী ২০১০ সালে অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।


প্রশ্ন: সাঁতারে বাঙালির অবদান আলোচনা করো।

Ans: ভারতবর্ষে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে সাঁতার প্রশিক্ষণ শুরু হয় ১৯১৩ সালে। ওই বছরই কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে প্রথম সুইমিং ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারের ইতিহাসে যেক’জন বিশেষ অবদান রয়েছে তাঁরা হলেন-

মিহির সেন: প্রথম বাঙালি সাঁতারু মিহির সেন। আইন পাশ করে তিনি ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন একটি দৈনিক পত্রিকায় একজন মার্কিন মহিলার ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করার খবর পড়ে তিনি অনুপ্রাণিত হন। তাঁর নিজের দেশের জন্য এই সম্মান অর্জন করার বাসনায় তিনি সাঁতার শিখতে শুরু করেন। ১৯৫৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনি ইংলিশ চ্যানেল পার করেন। দেশে ফিরলে তাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়।

আরতি সাহা: যেক’জন বাঙালি মেয়ে ক্রীড়াজগতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আরতি সাহা। ১৯৪৫ সাল থেকে তিনি প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারে সাফল্য পেতে থাকেন। ১৯৫১ সাল পর্যন্ত মোট ২২ বার তিনি রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হন। অবশেষে ১৯৫৯ সালে তিনি সাফল্যের সঙ্গে ইংলিশ চ্যানেল জয় করে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেন।

বুলা চৌধুরি: অপর একজন স্বনামধন্য বাঙালি সাঁতারু হলেন বুলা চৌধুরি। তিনি নয় বছর বয়সে প্রথম জাতীয় প্রতিযোগীতায় নেমে ৬টি বিভাগে ৬টি স্বর্ণ পদক জেতেন। ১৯৯১ সালে তিনি সাউথ এশিয়ান ফেডেরেশান গেমসে উনি ৬টি সোনা জেতেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ইংলিশ চ্যানেল পার হন।

অন্যান্য প্রথিতযশা বাঙালি সাঁতারুদের মধ্যে প্রশান্ত কর্মকারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি একজন ভারতীয় প্যারালিম্পিয়ান এবং অর্জুন পুরস্কারে ভূষিত।


প্রশ্ন: রামায়ণ অনুসারে দাবা খেলার স্রষ্টা কে? এই খেলায় বাঙালিদের অবদান আলোচনা কর।

Ans: রামায়ণ অনুসারে দাবা খেলার স্রষ্টা হলেন রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী।

বাঙালিদের অবদান

দাবা খেলায় বাঙালিদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আধুনিক ভারতবর্ষে প্রথম দাবা খেলার ক্লাবটি গড়ে উঠেছিল এই বাংলাতেই। ১৮৫০ সালে John Cochrane-এর উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল ক্যালকাটা চেস ক্লাব। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল চেস অ্যাসোসিয়েশন যা অল ইন্ডিয়া চেস ফেডারেশন দ্বারা স্বীকৃত।

বাংলায় বহু প্রতিভাবান দাবাড়ু রয়েছেন যারা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। তবে বাঙালি দাবাড়ু হিসেবে সর্বাগ্রে যার নাম করতে হয় তিনি হলেন মহেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি দীর্ঘদিন যাবৎ জন কোচ্রেনের আমন্ত্রণে ক্যালকাটা চেস ক্লাবে যেতেন। সাম্প্রতিক কালের উল্লেখযোগ্য বাঙালি দাবাড়ু হলেন-

দিব্যেন্দু বড়ুয়া:- বাংলা থেকে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হলেন দিব্যেন্দু বড়ুয়া (১৯৯১)। তিনবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এই দাবাড়ু অর্জুন পুরষ্কারে সম্মানিত হয়েছেন।

সূর্যশেখর গাঙ্গুলি:- মাত্র ষোলো বছর বয়সে ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার (১৯৯৯) এবং উনিশ বছর বয়সে গ্রান্ডমাস্টার (২০০২) হয়ে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন সূর্যশেখর গাঙ্গুলি। এছাড়াও তিনি টানা ছ’বার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নজির সৃষ্টি করেছেন। ২০০৫ সালে তাকে অর্জুন পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।

সন্দীপন চন্দ:- ২০০৩ সালের গ্র্যান্ডমাস্টার সন্দীপন চন্দ তিনটি দাবা অলিম্পিয়াডে ২০০৪, ২০০৬, ২০০৮) ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

এই রাজ্যের অন্যান্য দাবা খেলোয়াড়দের মধ্যে নীলোৎপল দাস, দীপ সেনগুপ্ত, সপ্তর্ষি রায়চৌধুরী, দীপ্তায়ন ঘোষ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


প্রশ্ন: কোন বাঙালি মহিলা প্রথম ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন? সাঁতারে তাঁর অবদান আলোচনা কর।

Ans: আরতি সাহা এশিয়া মহাদেশের প্রথম মহিলা হিসেবে ১৯৫৯ সালে ইংলিশ চ্যানেল জয় করেন।

যে কজন বাঙালি মেয়ে ক্রীড়াজগতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আরতি সাহা। ভারতবর্ষে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে সাঁতার প্রশিক্ষণ শুরু হয় ১৯১৩ সালে। কিন্তু তখন সাঁতারে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিলনা বললেই চলে। আরতি প্রথমে তাঁর কাকা বিশ্বনাথ সাহার কাছে প্রশিক্ষণ নেন। পরে তাঁর প্রতিভা দেখে কাকা নিয়ে যান হাটখোলা ক্লাবে। পেশাদার প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে আরতি দ্রুত উন্নতি করতে থাকে। ১৯৪৫ সাল থেকে তিনি প্রতিযোগিতামূলক সাঁতারে সাফল্য পেতে থাকেন। ১৯৫১ সাল পর্যন্ত মোট ২২ বার তিনি রাজ্য চ্যাম্পিয়ন হন। শুধু তাই নয় তিনি ব্রেস্ট স্ট্রোক, ব্যাক স্ট্রোক এবং ফ্রী স্টাইলে রেকর্ড গড়েন। এই সময় থেকেই তিনি গঙ্গার বুকে দূরপাল্লার সাঁতারে অংশ নিতেন। আর এভাবেই তাঁর মনে ইংলিশ চ্যানেল জয় করার অদম্য ইচ্ছা সৃষ্টি হয়।

অবশেষে ১৯৫৯ সালে তিনি সাফল্যের সঙ্গে ইংলিশ চ্যানেল জয় করে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেন। আরতির এই জয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ তখনো পর্যন্ত যে ২৪ জন মহিলা ইংলিশ চ্যানেল জয় করেছিলেন তারা প্রত্যেকেই উন্নত দেশের নাগরিক। ভারতের মতো সদ্যস্বাধীন দেশের মেয়ে হয়ে আরতি অসাধ্য সাধন করেছিলেন। একইসঙ্গে মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণে সাধারণ মানুষের নেতিবাচক মনোভাব খানিকটা হলেও দূর হয়েছিল। ১৯৬০ সালে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধি প্রদান করা হয়।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.