বাংলা চলচ্চিত্র রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস

বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাস রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাংলা চলচ্চিত্র রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাংলা চলচ্চিত্র রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF

বাংলা চলচ্চিত্র রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস

নিচে বাংলা চলচ্চিত্র রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাস রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।


বাংলা চলচ্চিত্র রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস


আলোচ্য পোস্টে বাংলা চলচ্চিত্রর গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


বাংলা চলচ্চিত্র রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস


প্রশ্ন: বাংলা সিনেমার ইতিহাসে মৃনাল সেনের অবদান আলোচনা কর।

Ans: বাংলা সিনেমার বিকাশের ধারায় মৃনাল সেনের (১৯২৩-২০১৮) অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। ১৯৫৫ সালে ‘রাতভোর’ ছবির মাধ্যমে তাঁর পথচলা শুরু। চলচ্চিত্র পরিচালনা, চিত্রনাট্য রচনা, তথ্যচিত্র নির্মাণ প্রভৃতি অনেক কাজের মধ্য দিয়ে এই কৃতীর কর্মধারা বহমান ছিল।

অবদান

প্রথম ছবিতে সাফল্য না পেলেও তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘নীল আকাশের নীচে’(১৯৫৮) তাঁকে আলাদা পরিচয় এনে দিয়েছিল। তারপর একে একে ‘বাইশে শ্রাবণ’ (১৯৬০), ‘ভুবন সোম’ (১৯৬৯), ইন্টারভিউ (১৯৭১), ক্যালকাটা ৭১(১৯৭২), পদাতিক (১৯৭৩), একদিন প্রতিদিন (১৯৭৯), খারিজ (১৯৮২), আকালের সন্ধানে(১৯৮২) প্রভৃতি ছবিগুলি স্বদেশে এবং বিদেশে সমাদৃত হয়েছে।

তাঁর অন্যান্য ছবিগুলির মধ্যে রয়েছে ‘আকাশ কুসুম, ‘মৃগয়া’, ‘চালচিত্র’, ‘খন্ডহর’, ‘অন্তরীন’ এবং সর্বশেষ ২০০২ সালে ‘আমার ভুবন’। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে তিনি বাংলা ছাড়াও উড়িয়া (মাটির মনিষ), তেলেগু (ওকা উরি কথা) এবং হিন্দি (ভুবনসোম) ভাষাতেও ছবি নির্মান করেছেন। 

অনন্যতা: মৃণাল সেনের ছবিতে 

(১) আমরা সেই ভারতবর্ষের পরিচয় পাই যা বিভূতিভূষণের উপন্যাসে পেয়ে থাকি;

(২) মধ্যবিত্ত মানসিকতার প্রতিফলন খুব বেশি চোখে পড়ে;

(৩) সত্তরের দশকের অস্থির সমাজব্যাবস্থার ছবি দেখতে পাই;

(৪) অসহায়, বঞ্চিত ও শোষিত মানবাত্মার কথা তুলে ধরে;

(৫) একটি নতুন ধারার সন্ধান পাই যা পরবর্তীকালের অনেক চলচিত্র নির্মাতাকে প্রভাবিত করেছে। 


সন্মান ও পুরস্কার

তাঁর ছবি যেমন অনেক পুরষ্কারে সন্মানিত হয়েছে তেমন তিনিও দেশে বিদেশে অনেক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন যার মধ্যে ১৯৮১ সালে ‘পদ্মভূষণ’, ২০০৫ সালে ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার, রাশিয়ার ‘অর্ডার অফ ফ্রেন্ডশিপ’ ও ফ্রান্সের ‘কমান্ডার অফ দি অর্ডার অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।


প্রশ্ন: ভারতীয় সিনেমায় হীরালাল সেনের অবদান।

Ans: হীরালাল সেন (১৮৬৬-১৯১৭) ছিলেন একজন বাঙালি চিত্রগ্রাহক এবং ভারতীয় সিনেমার একজন প্রবাদপুরুষ। ভারতের প্রথম বিজ্ঞাপন-চলচিত্র এবং প্রথম রাজনৈতিক তথ্যচিত্র বানানোর কৃতিত্ব তাঁরই।

অবদান

বাংলা সিনেমার নির্বাক যুগে হীরালাল সেন প্রায় চল্লিশটির মতো সিনেমা বানিয়েছিলেন। বেশিরভাগ ছবিতেই তিনি ক্যামেরাবদ্ধ করেন অমরেন্দ্রনাথ দত্তের ক্লাসিক থিয়েটারে মঞ্চস্থ বিভিন্ন থিয়েটারের দৃশ্য। বিদেশ থেকে ফিল্ম আনিয়ে তিনি সিনেমা তৈরি করতেন। তাঁর তৈরি স্বল্পদৈর্ঘ্যের সিনেমার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ‘ভ্রমর’, ‘হরিরাজ’, ‘বুদ্ধদেব’ প্রভৃতি। ১৯০৩ সালে নির্মিত ‘আলিবাবা ও চল্লিশ চোর’ সিনেমাটি ছিল তাঁর পুর্নদোর্ঘ্যের সিনেমা।

ব্যাবসায়িক বিজ্ঞাপন জগতেও তিনি প্রবাদপুরুষ ছিলেন। তিনি ‘জবা কুসুম হেয়ারঅয়েল’ এবং এডঅয়ার্ডস টনিকের উপর বিজনাপনী চলচিত্র নির্মান করেন। তাঁর তৈরি ‘Anti-Partition Demonstration and Swadeshi movement at town hall, Calcutta on 22nd September 1905’ তথ্যচিত্রটি ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সিনেমার স্বীকৃতি পায়।

১৯১৩ সালে তিনি রয়্যাল বায়স্কোপ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে তাঁর সমস্ত ছবি ১৯১৭ সালে এক বিরাট অগ্নিকান্ডে নষ্ট হয়ে যায়। তাই হীরালাল সেনের কোনো চলচ্চিত্রই এযুগের মানুষের হাতে পৌঁছায়নি। তবে বাংলা সিনেমার পথিকৃৎ হিসেবে হীরালাল সেন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।


প্রশ্ন: বাংলা সিনেমার ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটকের অবদান আলোচনা করো। 

Ans: বাংলা সিনেমার ইতিহাসে সত্যজিৎ রায় এবং মৃণাল সেনের সঙ্গে একবাক্যে যার নাম উচ্চারিত হয় তিনি ঋত্বিক ঘটক (১৯২৫-৭৬)। তাঁর সিনেমাগুলি একই সাথে বহুল চর্চিত ও সমালোচিত। 

অবদান

বাংলা সিনেমায় যোগদানের আগে তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫১ সালে ‘ছিন্নমূল’ সিনেমায় তিনি একইসঙ্গে অভিনয় এবং সহকারী পরিচালকের ভুমিকা পালন করেন। তাঁর একক পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘নাগরিক’ মুক্তি পায় ১৯৫২ সালে। এরপর ১৯৫৮ সালে ‘অযান্ত্রিক’ এবং ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ ছবিদুটিও দর্শকদের নজর কেড়েছিল। ১৯৬০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মেঘে ঢাকা তারা’ তাঁর অন্যতম সেরা চলচিত্র।

‘কোমলগান্ধার’ (১৯৬১) এবং ‘সুবর্নরেখা’ (১৯৬২) ছবিদুটি সাফল্য না পাওয়ায় এক দশক কোনো সিনেমা তৈরি করেননি। ১৯৭৩ সালে অদ্বৈত মল্লবর্মনের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করেন ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমাটি। তাঁর আরেকটি সাড়াজাগানো সিনেমা ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’(১৯৭৭)। পরিচালনা ছাড়াও তিনি অনেকগুলি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন অনেক ছবির। এছাড়া বেশকিছু তথ্যচিত্র ও শর্টফিল্ম বানিয়েছেন যেমন- The life of the Adibasis, Fear, আমার লেনিন, পুরুলিয়ার ছৌ ইত্যাদি। 


অনন্যতা- ঋত্বিক ঘটকের চলচিত্র-ভাবনায়-

(১) শিল্পবোধের পরিচয় পাওয়া যায়,

(২) স্বাধীনতা-উত্তর উদবাস্তু সমস্যার ছবি ফুটে ওঠে , 

(৩) ভারতীয় চলচিত্রের গতানুগতিক ধারার বিপরীতে যাবার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।


সন্মান ও পুরস্কার

ঋত্বিক ঘটক ১৯৬৯ সালে পদ্মশ্রী এবং ১৯৭৫ সালে ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার পান।


প্রশ্ন: বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় সত্যজিৎ রায়ের অবদান আলোচনা কর।

Ans: যে বাঙালি চলচ্চিত্রকার আন্তর্জাতিক মহলে বাংলা সিনেমাকে পরিচিতি দিয়েছিলেন, তিনি হলেন সত্যজিৎ রায় (১৯২১- ১৯৯২)। তিনি একইসঙ্গে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সাহিত্যিক, সঙ্গীত পরিচালক এবং গীতিকার। তাঁর হাতে বাংলা সিনেমার নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছিল।

উল্লেখযোগ্য সিনেমা

সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে ‘পথের পাঁচালী’ (১৯৫৫)। কান চলচ্চিত্র উৎসবে এই সিনেমাটি ‘দ্য বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ শিরোপা পেয়েছিল। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’- এই তিনটি সিনেমাকে একত্রে অপু ট্রিলজি বলা হয়। তাঁর অন্যান্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘জলসাঘর’, ‘পরশপাথর’, ‘চারুলতা’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘অশনি সংকেত’, ‘জন অরণ্য’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ‘তিন কন্যা’, ‘শতরঞ্জ কে খিলাড়ি’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘নায়ক’ ইত্যাদি।

এছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য তৈরি ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ সিনেমাগুলি এখনো সমান জনপ্রিয়।


বিশেষত্ব

(১) সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা প্রকৃত অর্থেই আর্ট এবং আর্ট বলেই সেগুলির আবেদন সার্বজনীন।

(২) তাঁর প্রতিটি সিনেমাতেই মৌলিক সৃজনী ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায়।

(৩) তাঁর ছবির বিষয় এবং আঙ্গিক ছিল বহুমুখী।

(৪) তাঁর ছবির চিত্রনাট্য থেকে শুরু করে ক্যামেরা, সম্পাদনা, সংগীত পরিচালনা সব বিষয়ই তিনি তত্ত্বাবধান করতেন।

(৫) অনেক সমালোচকের মতে সত্যজিৎ রায় ছিলেন শিশু অভিনেতাদের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক।


পুরস্কার ও সম্মাননা

চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অবদানের জন্য সত্যজিৎ রায় বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি, ফ্রান্সের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার লেজিওঁ অফ অনার, ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে এবং বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার একাডেমি (অস্কার) সম্মানসূচক পুরস্কার। এছাড়া মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাঁকে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করা হয়।


প্রশ্ন: বাংলা ভাষায় ছোটোদের সিনেমা তৈরির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

Ans: চলচ্চিত্র শিল্পে শিশু-কিশোরদের জন্য নির্মিত সিনেমার বিশেষ স্থান রয়েছে। বাংলা ভাষায় ছোটদের জন্য নির্মিত সিনেমার ধারাটি তেমন সমৃদ্ধ নয়। ১৯৪৯ সালে নির্মিত সত্যেন বসুর ‘পরিবর্তন’ ছবিটি এই ধারার প্রথম ছবি। ১৯৫১ সালে অগ্রদূতের পরিচালনায় নির্মিত ‘বাবলা’ ছবিটিও ছোটদের সিনেমা।

এরপর ষাটের দশকে বেশ কয়েকটি ছোটদের ছবি তৈরি করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘দেড়শো খোকার কান্ড, ‘মানিক’, ‘বাদশা’, ‘ডাকাতের হাতে’, ‘হীরের প্রজাপতি’ প্রভৃতি। পরিচালক শান্তি চৌধুরী এবং রঘু গোস্বামীর পুতুলের অ্যানিমেশন দিয়ে তৈরি ‘বিরসা এন্ড হিজ ম্যাজিক ডল’ (১৯৫৮) ছবিটিও এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়।

সত্যজিৎ রায়ের হাতে ছোটদের সিনেমা এক বিশেষ মাত্রা পেয়েছিল। তার ‘গুপীগাইন বাঘাবাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘সোনার কেল্লা’ ছবিগুলি আজও শিশু-কিশোরদের মধ্যে সমান জনপ্রিয়।

ঋত্বিক ঘটকের ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’, তপন সিংহের ‘সফেদ হাতি’, ও ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ ছবিগুলি বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য ছোটদের ছবি।


প্রশ্ন: বাংলা তথ্যচিত্র ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

Ans: তথ্যচিত্র হলো সেই চলচ্চিত্র যেখানে কাহিনী থাকে না বরং তত্ত্বের প্রধান থাকে। বাংলা তথ্যচিত্রের ধারাটি ও বেশ সমৃদ্ধ। বাংলা তথা ভারতের চলচ্চিত্র শিল্পের আদিপুরুষ হীরালাল সেনের হাত ধরেই বাংলা তথ্যচিত্র জন্ম হয়েছিল। তাঁর ‘দিল্লি দরবার’ কোন কাহিনীচিত্র ছিল না বরং তথ্যচিত্র ছিল। তবে সার্থক তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল আরো বহু পরে- দেশ স্বাধীন হওয়ার পর।

নিচে কয়েকজন বাঙালি তথ্যচিত্রকার এবং তাদের কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল-

১) হরিসাধন দাশগুপ্ত

তিনি বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য কয়েকটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- কোণার্ক, বাবা, আচার্য নন্দলাল, মিজোরাম প্রভৃতি।

২) সত্যজিৎ রায়

কাহিনীচিত্রের পাশাপাশি সত্যজিৎ রায় পাঁচটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। সেগুলি হল- Rabindranath Tagore, The Inner Eye, Bala, Sikkim এবং সুকুমার রায়।

৩) ঋত্বিক ঘটক

তাঁর উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্র গুলি হল ‘আমার লেনিন’, ‘ইয়ে কিউ’, ‘আদিবাসিও কা জীবন স্রোত’, রামকিঙ্কর প্রভৃতি।

৪) চিদানন্দ দাশগুপ্ত

তাঁর প্রথম তথ্যচিত্রটি কলকাতা বিষয়ক ‘পোট্রেট অফ এ সিটি’। এছাড়াও ‘বিরজু মহারাজ’, ‘দি ড্যান্স অফ শিবা’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্র।

৫) মৃণাল সেন

তাঁর উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্রগুলি হল ‘মুভিং পার্সপেক্টিভ’, ‘ত্রিপুরা প্রসঙ্গ’, ‘ক্যালকাটা মাই এল ডোরাডো প্রভৃতি।

অন্যান্য বাংলা তথ্যচিত্রকরদের মধ্যে বিমল রায়, গৌতম ঘোষ, পূর্ণেন্দু পত্রী, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


প্রশ্ন: বাংলা নির্বাক সিনেমার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর।

Ans: ভারতীয় উপমহাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের সূচনা ঘটেছিল এই বাংলাতেই। তবে তখন চলচ্চিত্র বলতে যা বোঝাতো তা নেহাতই চলমান চিত্র বা মুভি, সেগুলিতে শব্দ থাকতো না। এইসব শব্দহীন ছবিগুলিকেই বলা হয় নির্বাক চলচ্চিত্র। বিংশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশকে বাংলাতে অনেকগুলি নির্বাক সিনেমা তৈরি হয়েছিল।

বাংলা নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রগুলির বৈশিষ্ট্য ছিল এরকম-

১) চলচ্চিত্রের কাহিনী হিসাবে পৌরাণিক কাহিনীর প্রাধান্য পেত।

২) চলচ্চিত্রগুলি সমাজশিক্ষকের ভূমিকা পালন করত সেই জন্য বেশিরভাগ চলচ্চিত্রে নৈতিকতা, মানবিকতা কে গুরুত্ব দেওয়া হতো।

৩) অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং অন্যান্য কলাকুশলী বেশিরভাগই আসতেন নাট্যজগত থেকে। 

৪) এই সময় থেকেই বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে বাংলা সিনেমার যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল। অনেক জনপ্রিয় সাহিত্যকে চলচ্চিত্রে রূপ দেওয়া হয়েছিল।

৫) সমকালীন বাংলা বা ভারতের রাজনীতি নির্বাক চলচ্চিত্রে স্থান পায়নি।

৬) অন্যান্য দেশের নির্বাক সিনেমার তুলনায় বাংলা নির্বাক সিনেমাগুলি দেশ এবং কালের সীমানা অতিক্রম করতে পারেনি।

পরিশেষে বলা যায়, বাংলা নির্বাক সিনেমা গুণগতভাবে উৎকৃষ্ট না হলেও চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই নির্বাক যুগের গুরুত্ব অপরিসীম। চলচ্চিত্রশিল্পের প্রায় জন্মলগ্ন থেকে বাঙালি দর্শক সিনেমা-শিল্পের সাথে পরিচিত হতে পেরেছে এটাও তো কম পাওনা নয়।


প্রশ্ন: বাংলা সিনেমার ইতিহাসে তপন সিংহের অবদান আলোচনা করো।

Ans: বিশ শতকের পঞ্চাশের দশক ছিল বাংলা সিনেমার প্রকৃত উত্থানপর্ব। এইসময় যে চারজন দিকপাল চলচ্চিত্রনির্মাতা বাংলা সিনেমাকে ভারতে ও ভারতের বাইরে সন্মানজনক পরিচিতি এনে দিয়েছিলেন তাঁদের একজন হলেন তপন সিংহ [১৯২৪-২০০৯]। বাকি তিনজন অবশ্যই সত্যজিত রায়, ঋত্বিক ঘটক এবং মৃণাল সেন।

অবদান: তাঁর প্রথম সিনেমাটি নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘সৈনিক’ গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘অঙ্কুশ’ (১৯৫৪) তেমন সাফল্য পায়নি। পরের বছর ‘উপহার’ও সফল হয় নি। ১৯৫৭ সালে নির্মিত রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে ‘কাবুলিওয়ালা’ তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। এরপরে একে একে ‘লৌহকপাট’ (১৯৫৮), ‘ক্ষণিকের অতিথি’(১৯৫৯), ‘ক্ষুধিত পাষাণ’(১৯৬০), ‘ঝিন্দের বন্দী’ (১৯৬১), ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’(১৯৬২) প্রভৃতি সিনেমাগুলি তাঁকে প্রভূত খ্যাতি এনে দিয়েছিল। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলি হল- ‘নির্জন সৈকত’ ‘জতুগৃহ’, ‘আরোহী’, ‘হাটেবাজারে’, ‘সাগিনা মাহাত’ , ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ , ‘আতঙ্ক’, ‘হুইলচেয়ার’, ‘অন্তর্ধান’ প্রভৃতি।

অনন্যতা: তপন সিংহের সিনেমা

১. মানুষকে ভালোবাসার সিনেমা,

২. সিনেমার প্রযুক্তি ও সুচারু ভাষা প্রয়োগে অনন্য,

৩. রবীন্দ্রনাথের কথাশিল্প নৈপুণ্যের সহিত রুপায়িত,

৪. শৈল্পিক এবং বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই সফল।

সন্মান ও পুরস্কার: মোট ১৯টি জাতীয় পুরস্কার সহ ২০০৬ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সন্মানিত হয়েছেন।


প্রশ্ন: বাংলা সিনেমার ইতিহাসে নিউ থিয়েটার্সের (অথবা, বি. এন. সরকারের) অবদান আলোচনা কর।

Ans: বাংলা সিনেমার সবাক যুগের শুরুতে যে প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভুমিকা নিয়েছিল তার নাম নিউ থিয়েটার। বিলেতফেরত সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বীরেন্দ্রনাথ সরকার যিনি বি. এন. সরকার নামে অধিক পরিচিত ১৯৩১ সালে ১০ই ফেব্রুয়ারী এই থিয়েটারের প্রতিষ্ঠা করেন। এর আগে বাংলা সিনেমায় বাঙ্গালী উদ্যোগপতি ছিলেন হীরালাল সেন। তবে এই পর্যায়ে নিউ থিয়েটারের অবদান সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ন।

কৃতিত্ব: ১৯৩১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দেনাপাওনা’ ছবিটি নিউ থিয়েটারের প্রথম ছবি ছিল। এই ছবির পরিচালক এবং সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন যথাক্রমে প্রেমাঙ্কুর আতর্থী এবং রাইচাঁদ বড়াল। তবে এই ছবি সহ পরবর্তী চারটি ছবিতেও সাফল্যের মুখ দেখতে পায়নি নিউ থিয়েটার। ১৯৩২ সালে দেবকী বসুর ‘চণ্ডীদাস’ যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিল। ১৯৩৫ সালের ‘দেবদাস’ সিনেমাটিও দর্শকদের মন কেড়েছিল। ১৯৩১ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত মোট ১৫০টি সিনেমা তৈরি করেছিল নিউ থিয়েটার্স যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ভাগ্যচক্র’, ‘মুক্তি’, ‘বিদ্যাপতি’, ‘অভিজ্ঞান’, ‘দেশের মাটি’, ‘বড়দিদি’, ‘রজত জয়ন্তী’, ‘জীবন মরণ’ প্রভৃতি। ২০১১ সালে ‘আমি আদু’ সিনেমার মধ্য দিয়ে নিউ থিয়েটার আবার পথচলা শুরু করে।

বিশেষ অবদান: নিউ থিয়েটার্স সিনেমা তৈরি ছাড়াও একঝাঁক নতুন শিল্পী ও কলাকুশলীকে সিনেমার আঙিনায় নিয়ে এসেছিল যারা পরবর্তীকালে বাংলা সিনেমাকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই তালিকায় রয়েছেন-

অভিনেতা: কে. এল সাইগল, কে. সি. দে, পৃথ্বীরাজ কাপুর, বিকাশ রায়, ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল, বসন্ত চৌধুরী;

পরিচালক: প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, প্রমথেশ বড়ুয়া, দেবকি বসু, নিতিন বসু;

সঙ্গীত পরিচালক: রাইচাঁদ বড়াল, পঙ্কজ মল্লিক, তিমির বরণ প্রমুখ।

এছাড়াও ১৯৩৫ সালে ‘ভাগ্যচক্র’ সিনেমাতেই প্রথম প্লেব্যাকে গানের সূচনা হয় যা ভারতের সিনেমার ইতিহাসে প্রথম।

স্বীকৃতি: বাংলা সিনেমায় তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বি. এন. সরকার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত হন।


প্রশ্ন: বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম যুগের কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

Ans: রুপোলী পর্দায় যাদের মুখাবয়ব, কথাবার্তা কিংবা অঙ্গভঙ্গি ফুটে উঠে, তাদেরকে বলা হয় অভিনেতা। বাংলা সিনেমার প্রথমযুগে যে ক’জন অভিনেতা-অভিনেত্রী সিনেমাকে প্রাণবন্ত করেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ছিলেন-

প্রমথেশ বড়ুয়া (১৯০৩-১৯৫১): স্বনামধন্য এই শিল্পী রাজনীতি থেকে সিনেমায় এসেছিলেন। তিনি একাধারে অভিনেতা, পরিচালক, আলোকশিল্পী এবং প্রযোজক। এই চারটি ক্ষেত্রেই তিনি সফল। তাঁর অভিনীত ছবির মধ্যে রয়েছে- ‘চরিত্রহীন’, ‘অপরাধি’, ‘বেঙ্গল’, ‘গৃহদান’, ‘উত্তরায়ণ’ প্রভৃতি।

উমাশশী (১৯১৫-২০০০): ‘বঙ্গবালা’ নির্বাক ছবির মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। বাংলা, হিন্দি এবং উর্দু মিলিয়ে মোট ১৫ টি ছবিতে অভিনয় করেন। উল্লেখযোগ্য ছবি হল- ‘বিগ্রহ’, ‘অভিষেক’, ‘চণ্ডীদাস’, ‘দেশের মাটি’ প্রভৃতি। একসময় হঠাৎ অভিনয় জগত থেকে সরে এসেছিলেন এই অভিনেত্রী।

কানন দেবী (১৯১৬- ১৯৯২): ১৯২৬ সালে মাত্র ১০ বছর বয়েসে ‘জয়দেব’ সিনেমার শ্রীরাধার চরিত্রে অভিনয় করেন। তার অভিনীত ছবিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘বিদ্যাপতি’, ‘সাথি’, ‘মুক্তি’, ‘জোরবরাত’ ইত্যাদি।

তুলসী চক্রবর্তী (১৮৯৯-১৯৬১): বহু বাংলা সিনেমায় কৌতুক অভিনেতা এবং পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘পরশপাথর’, ‘পথের পাঁচালি’, ‘অযান্ত্রিক’ প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা।

ছবি বিশ্বাস (১৯০০- ১৯৬২):১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে অন্নপূর্ণার মন্দির চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় শতাধিক। উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে জলসাঘর, দেবী, কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাবুলিওয়ালা, প্রতিশ্রুতি, শুভদা, হেডমাস্টার প্রভৃতি। চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি মঞ্চাভিনয়েও যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন।

উপরোক্ত নামগুলি ছাড়াও পাহাড়ি সান্যাল, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.