বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস

বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF

বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস

নিচে বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।


বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস


আলোচ্য পোস্টে বাঙালির চিত্রকলার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


বাঙালির চিত্রকলা রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাস


প্রশ্ন: চিত্রকলা চর্চায় শিল্পাচার্য নন্দলাল বসুর স্থান নিরূপণ করো।

Ans: বিশ শতকে বাঙালির চিত্রকলা চর্চার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন নন্দলাল বসু (১৮৮২- ১৯৬৬)। ক্যালকাটা আর্ট স্কুলের কৃতি ছাত্র নন্দলাল শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। শিক্ষাগ্রহণ পর্ব সমাপ্ত করার পর তিনি কিছুকাল ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অরিয়েন্টাল আর্ট, বিচিত্র সংঘ প্রভৃতি শিল্প-বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এই সময়ই তাঁর ‘সতী’ ছবিটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

নন্দলাল বসু তাঁর শিল্পীজীবনের শুরুতেই ভারতের বিভিন্ন স্থানের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিচিতি লাভ করার জন্য ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে ছিলেন। অবশেষে, ১৯২২ সালে তিনি রবিঠাকুর প্রতিষ্টিত ‘কলাভবন’ শিল্প-বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। সেখানে শিক্ষকতার পাশাপাশি চলে শিল্পচর্চা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি অজস্র ছবি এঁকেছেন।

বিশেষত্ব

১) অবনীন্দ্রনাথের শিল্পভাবনার দীক্ষিত হলেও নন্দলাল বসুর শিল্পকর্মে স্বকীয়তা ছিল।

২) তাঁর ছবিতে যেমন পুরাণের প্রসঙ্গ এসেছে তেমনি উঠে এসেছে আশেপাশের মানুষ ও প্রকৃতি।

৩) তিনি স্বচ্ছ জলরঙের ওয়াশ পদ্ধতির পাশাপাশি টেম্পেরার কাজেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন।

৪) শিল্পশিক্ষক হিসেবে তিনি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের উপর গুরুত্ব দিতেন।

উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম

শিল্পগুরু নন্দলাল সারাজীবন ধরে অজস্র অসামান্য ছবি এঁকেছেন। তাঁর বিখ্যাত চিত্রগুলির মধ্যে সাবিত্রী ও যম, হলাহল পানরত শিব, গান্ধারী, সতী, হরিপুরা পট, প্রভৃতি উল্লেখ্য। রবীন্দ্রনাথের সহজপাঠের ছবিগুলিও তার আঁকা। ভারতীয় সংবিধানের সচিত্র অলংকরণ করেছিলেন নন্দলাল বসু। চিত্রশিল্প ছাড়া দেওয়াল-চিত্র অঙ্কন করেও তিনি যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা

আচার্য নন্দলাল বসু তাঁর শিল্পকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৫৪ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি ললিতকলা আকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। এছাড়াও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি. লিট, বিশ্বভারতীর দেওয়া দেশিকোত্তম।


প্রশ্ন: বঙ্গদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে ভাস্কর ও চিত্রকর রামকিঙ্কর বেইজের অবদান ও স্বকীয়তা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

Ans: আধুনিক ভারতীয় ভাস্কর্যকলার একজন বিশিষ্ট শিল্পী ছিলেন রামকিঙ্কর বেইজ (১৯০৬- ১৯৮০)। তাঁকে শুধু একজন শিল্পী বললে কম বলা হবে, তিনি ছিলেন একজন শিল্পসাধক। রামকিঙ্কর ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কর।

রামকিঙ্কর ১৯০৬ সালে বাঁকুড়ার জুগিপাড়ায় এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কুমোরদের কাজ দেখে তিনি বড় হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই কাদা দিয়ে মূর্তি গড়েছেন। এমনি করেই ভাস্কর্য শিল্পের প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯২৫ সালে ‘প্রবাসী’র সম্পাদক রমানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শে তিনি বিশ্বভারতীর কলাভবনে ভর্তি হন। সেখানে আচার্য নন্দলাল বসু ছিলেন তাঁর শিক্ষক। কথিত আছে, কলাভবনে তাঁর কাজের নমুনা দেখে নন্দলাল প্রথম দিনই বলেছিলেন, ‘‘তুমি সবই জানো, আবার এখানে কেন?’’ রামকিঙ্কর ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী ছিলেন, তবে এই শান্তিনিকেতনেই তাঁর ভাস্কর্যকলা পূর্ণমাত্রায় বিকাশ লাভ করেছিল।

বিশেষত্ব

১) রামকিঙ্করের ছবিগুলি ছিল প্রকৃতিকেন্দ্রিক।

২) প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন জীবনেই ছিল তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর বহু শিল্পকর্মে এসব মানুষের দেখা মেলে।

৩) উন্মুক্ত ভাস্কর্য নির্মাণে তিনি সিমেন্ট ও পাথর ব্যবহার করতেন।

৪) তিনি পাশ্চাত্য শিল্পীদের মত মডেল ব্যবহার করতেন।

৫) ভাস্কর্যে টেরাকোটা রিলিফ ও পাথর খোদাইয়ে এবং চিত্রশিল্পে জল ও তেলরঙে তিনি বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেন।

উল্লেখযোগ্য শিল্পকর্ম: চিত্রশিল্পী হিসেবে রামকিঙ্করের প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ‘কুকুর সাথে রমণী’, ‘পিকনিক’, ‘ঝড়ের পরে’, ‘বিনোদিনী’ প্রভৃতি ছবিতে। তাঁর উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যের নমুনা হল ‘সুজাতা’, ‘সাঁওতাল দম্পতি’, ‘হাটের পথে’ প্রভৃতি।

পুরস্কার ও সম্মাননা: তিনি বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত ডি. লিট এবং ভারত সরকারের খেতাব ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেছেন।


প্রশ্ন: বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা কর। 

Ans: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৭১- ১৯৫১) ছিলেন আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার একজন অন্যতম পথিকৃৎ। নব্যবঙ্গীয় চিত্ররীতিরও জনক তিনি। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির এই কৃতী পুরুষটি ছোটবেলায় অঙ্কনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ড্রয়িং, প্যাস্টেল, জলরং এবং অয়েল পেইন্টিং শিখেছিলেন বিদেশী শিল্পীদের কাছে। এই তালিকায় রয়েছেন ইংরেজ শিল্পী পামার, জাপানী শিল্পী টাইকান প্রমুখ।একসময় তাঁর হাতে আসে আইরিশ ইল্যুমিনেশন এবং মুঘল মিনিয়েচারের কিছু নিদর্শন। কিন্তু এইসকল শিল্পকর্ম তাঁকে তৃপ্ত করতে পারেনি। শেষপর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরামর্শে তিনি ভারতীয় সনাতন চিত্রাঙ্কন-রীতি পুনরুদ্ধারের সাধনা শুরু করেন। তাঁর চিত্রচর্চার বিষয় হয় বৈষ্ণব পদাবলী। 

এই বৈষ্ণব পদাবলীকে অবলম্বন করে তিনি এঁকেছিলেন বিখ্যাত ‘শ্বেতঅভিসারিকা’। তারপরেই কৃষ্ণলীলা সিরিজের ছবিগুলি তাঁকে বিশেষ খ্যাতি এনে দিয়েছিল। বলা হয় যে, এই কৃষ্ণলীলা সিরিজের ছবিগুলির মাধ্যমেই আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার জয়যাত্রা শুরু হয়। চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি এই সময় থেকেই আন্তর্জাতিক পরিচিতি পেতে থাকেন। 

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ওয়াশ’ পদ্ধতিতে ছবি আঁকতেন। জলরঙ্গে আঁকা ছবিগুলি তিনি বারবার ধুয়ে ফেলতেন যা ওয়াশ পদ্ধতি নামে পরিচিত। এরফলে ছবিগুলিতে রঙের চরিত্র হয়ে উঠত কোমল। ছবিগুলি দৃশ্যমান জগতের চেয়ে বেশি অনুভূতির জগতকে তুলে ধরত।

তাঁর বিখ্যাত ছবির তালিকায় রয়েছে ‘কচ ও দেবযানী’, ‘ভারতমাতা’, ‘অশোকের রানি’, ‘দেবদাসী’, ‘কাজরীনৃত্য’, ‘অন্তিমশয্যায় শাহজাহান, প্রভৃতি।


প্রশ্ন: ‘পট’ কথার অর্থ কী? বাংলার পটশিল্প নিয়ে আলোচনা কর।

Ans: ‘পট’ কথাটির আভিধানিক অর্থ হল চিত্র।

লোকশিল্পের একটি অতিপ্রাচীন ধারা হল পট। কাপড়ের উপর কাদামাটি কিম্বা গোবরের প্রলেপ দিয়ে জমিন তৈরি করে পট আঁকা হত। ওই পট নিয়ে শিল্পী গান গাইতেন। সপ্তম শতকেও পটের চল ছিল বলে জানা যায়। সেই সময় পটের বিষয় ছিল বুদ্ধদেবের জীবনী। ত্রয়োদশ শতকে পটশিল্প বিস্তার লাভ করেছিল। আরও পরে পনেরো শতকে গাজীর পট জনপ্রিয় হয়েছিল। ষোড়শ শতকে চৈতন্যদেবের বাণী প্রচারের জন্যও পটের ব্যবহার হত। উনিশ শতকে কালীঘাট পট বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য চিত্রশৈলী মিশিয়ে কালীঘাট পট তৈরি হত। ‘মোহন্ত ও এলোকেশী’ এই পটের উদাহরণ। 

যারা পট তৈরি করতেন তাদের বলা হত পটুয়া। কয়েকটি প্যানেলে ক্যানভাসকে ব্যবহার করে পটুয়ারা কোনো কাহিনীকে ফুটিয়ে তুলতেন। সাধারণত পৌরাণিক কাহিনী বা লোকগাথা পটের মাধ্যমে তুলে ধরা হত। পটের কাহিনীকে গায়েনরা গান গেয়ে প্রকাশ করতেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে এটি মানুষের মনোরঞ্জনের মাধ্যম ছিল। তবে রামায়ণ, মহাভারতের পাশাপাশি সত্যপীর বা গাজীর পটও মানুষের প্রিয় ছিল। 

রাজস্থানেও পটশিল্পের প্রচলন ছিল। তবে বিষয়বৈচিত্র্যে তা বাংলার পটের সমতুল্য ছিল না। এক আনা মুল্যের বিনিময়ে একটি পট কেনার জন্য মানুষ ভিড় জমাত বলে জানা যায়। এমনকি বাংলার এই পট প্যারিসে পসার জমিয়েছিল। আর সেখানে এর অন্যতম খদ্দের ছিলেন পিকাসো। পিকাসোর চিত্রশৈলীতে কালীঘাটের প্রভাব আছে বলে অনেকে মনে করেন। যাইহোক, উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলায় এই পটশিল্পের রমরমা ছিল। এগুলি শুধু উৎকৃষ্ট শিল্পসামগ্রী নয়, সমকালীন সমাজের মুল্যবান দলিল হিসেবেও বাংলার পটের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। 


প্রশ্ন: বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে যামিনী রায়ের অবদান।

Ans: আধুনিক বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে একজন স্বনামধন্য শিল্পী হলেন যামিনী রায় (১৮৮৭-১৯৭২)। তিনি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যোগ্যতম শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি গভর্মেন্ট কলেজ অফ আর্টস-এ ভর্তি হন। সেখানে তিনি গুরু হিসেবে পেয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।


শিল্পবৈশিষ্ট্য: যামিনী রায় প্রথম দিকে ব্রিটিশ একাডেমিক স্বাভাবিকতাবাদী রীতি অনুসরণ করেন। পরে তিনি বাংলা লোকশিল্পের দ্বারস্থ হন। পটচিত্রের প্রতি আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। এইজন্য মেদিনীপুর, বেলিয়াতোড়, কালীঘাট প্রভৃতি অঞ্চল থেকে পট সংগ্রহ করা শুরু করেন। দীর্ঘ অনুশীলনের পর তিনি নিজস্ব চিত্রশৈলী গড়ে তোলেন।

যামিনী রায় সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে চিত্রকলা চর্চা করেছিলেন। তাঁর চিত্রশিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য গুলি হল-

  • গ্রাম বাংলার সহজ সরল মানুষ, তাদের দৈনন্দিন অনাড়ম্বর জীবনযাত্রা, পশুপাখি প্রভৃতিকে তাঁর ছবির বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
  • ছবিগুলি যাতে সহজলভ্য হয় সেই জন্য ছবি আঁকার উপকরণ হিসাবে খড়িমাটি, ভুসোকালি, বিভিন্ন লতা-পাতার রস প্রভৃতি ব্যবহার করতেন।
  • পটচিত্র আঁকার সময় তিনি সমতলীয় বর্ণিল পট ব্যবহার করতেন। এই চিত্রশৈলীকে তিনি ‘ফ্ল্যাট টেকনিক’ নাম দিয়েছিলেন। তবে সেইসময় বাংলা চিত্র চর্চার ক্ষেত্রে বেঙ্গল স্কুলের একাধিপত্য ছিল বলে তাঁর এই টেকনিক কেউ গ্রহণ করেনি।
  • তাঁর আঁকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ছবি হল- সাঁওতাল জননী ও শিশু, মাদলবাদনরত সাঁওতাল, নৃত্যরত সাঁওতাল মা ও শিশু, রাঁধা-কৃষ্ণ, যীশু প্রভৃতি।

সম্মান ও পুরষ্কার: শিল্পী হিসাবে যামিনী রায় জীবনে বহুবিধ সম্মান ও পুরষ্কার পেয়েছেন, তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হল- পদ্মভূষণ (১৯৫৪), ললিত কলা একাডেমির ফেলোশিপ (১৯৫৫)।১৯৭৬ সালে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ যামিনী রায়ের শিল্পকর্মগুলিকে ভারতের নবরত্নের (Nine Masters) একটি বলে ঘোষণা করে।


প্রশ্ন: বাংলার শিল্পশিক্ষার ইতিহাস আলোচনা কর। 

Ans: উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকেই কলকাতায় শিল্প-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। ১৮৩৯ সালে স্থাপিত হয় ‘মেকানিক্যাল ইন্সটিটিউট’। এখানে নির্মিতিমূলক বুনিয়াদি অঙ্কন শেখানো হত। তবে শীঘ্রই এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর ১৮৫৪ সালে বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত হয় ‘সোসাইটি ফর দি প্রোমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’। এই সোসাইটির অর্থানুকুল্যে স্থাপিত হয় ‘দি ক্যালকাটা স্কুল অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’। ১৮৬৫ সালে সরকার এই প্রতিষ্ঠানটি অধিগ্রহণ করে। এরপর এর নাম হয় ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্ট’। স্বাধীনতার পরে ১৯৫১ সালে এই বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট’। যাইহোক, ১৮৬৪ সালে এই স্কুলের অধ্যক্ষ্য হয়ে আসেন হেনরি হোভার লক। তাঁর প্রচেষ্টাতেই কলকাতায় আধুনিক শিল্পশিক্ষার সূচনা হয়। তাঁর সুযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- অন্নদাপ্রসাদ বাগচী, শ্যামচরন শ্রীমানী প্রমুখ। লক এখানে একটি আর্ট গ্যালারিও স্থাপন করেন। ১৮৯৬ সালে আর্নেস্ট বিনকল্ড হ্যাভেল এই স্কুলের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তিনিই প্রথম স্বদেশি শিল্প-পরম্পরার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন।

১৮৯৩ সালে আলোকচিত্রী মন্মথনাথ চক্রবর্তী স্থাপন করেন একটি শিল্পশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নাম ‘দি ইন্ডিয়ান স্কুল অফ আর্ট’।বর্তমানে এর নাম ‘দি ইন্ডিয়ান কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ড্রাফ্‌টম্যানশিপ’।

আর্ট স্কুলেরই ছাত্র রণদাপ্রসাদ গুপ্ত প্রতিষ্ঠা করেন ‘জুবিলি আর্ট একাডেমী’(১৮৯৭)। এখানে ব্রিটিশ চিত্ররীতির হুবুহু অনুসরণ করা হত। এখানকার কয়েকজন কৃতী ছাত্রের মধ্যে অতুল বসু, বসন্ত গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের নাম করা যায়।

অবনীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ১৯০৭ সালে স্থাপিত হয় ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’। তিনি আবার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে একটি শিল্পবিদ্যালয় স্থাপন করেন। নন্দলাল বসু, মুকুল দে প্রমুখ তাঁর সুযোগ্য ছাত্রের কয়েকজন।

বাংলায় শিল্পশিক্ষার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথেরও স্মরণীয় অবদান রয়েছে। ১৯১৯ সালে তিনি বিশ্বভারতীর অংশ হিসেবে ‘কলাভবন’ স্থাপন করেন। বাংলা তথা ভারতের বহু স্বনামধন্য শিল্পী এই কলাভবনের শিল্পশিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন।


প্রশ্ন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রচর্চা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

Ans: শিল্প-সংস্কৃতির এমন কোনো দিক নেই যা তিনি স্পর্শ করেননি। সেই তিনি অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬১-১৯৪১) জীবনের শেষপর্বে চিত্রাঙ্কন-চর্চায় মননিবেশ করেছিলেন। তবে চিত্রকলার জগতকে তিনি শুধু স্পর্শই করেননি, বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তাঁর সমকালে রবীন্দ্রনাথ তেমন স্বীকৃতি পাননি ঠিকই কিন্তু বর্তমানে তাঁর ছবি আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছে।

রবীন্দ্রনাথ একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী। নেহাতই খেলাচ্ছলে তাঁর চিত্রকলার জগতে প্রবেশ। ‘পূরবী’ কাব্যের পাণ্ডুলিপির কাটাকুটিকে শিল্পিত রূপ দিতে গিয়ে তাঁর চিত্রচর্চার সূচনা। তারপর থেকে কালিকলম নিয়ে সচেতনভাবে চিত্রাঙ্কন শুরু করে দেন। তাঁর এই নবসাধনার প্রেরনাদাত্রী ছিলেন ভিকতোরিয়া ওকোম্পো। যাইহোক, চিত্রকলার জগতে রবীন্দ্রনাথ দ্রুতগতিতে পসার লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথের এই শিল্প-প্রাবল্যকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘অগ্নুতপাত’এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

ছবি আঁকার কোনোরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তাঁর ছিলনা।তবে অনভিজ্ঞের মতো তিনি কাউকে অনুসরণও করেননি। অবন ঠাকুরের নব্যবঙ্গ চিত্রভাবনা কিম্বা আধুনিক পাশ্চাত্য চিত্ররীতি- কনটিই রবীন্দ্রনাথকে প্রভাবিত করতে পারেনি। তাঁর চিত্রভাবনা প্রকৃতিগতভাবে আধুনিক আর চরিত্রগতভাবে আন্তর্জাতিক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি আঁকার মাধ্যম ছিল পেলিকান রঙ, জলরং, প্যাস্টেল, পেন্সিল ইত্যাদি। সাহিত্যভাবনার সঙ্গে শিল্পীমনের সার্থক সমন্বয় ছিল রবীন্দ্রনাথের চিত্রকলা। বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের মতে, “… একমাত্র কবি উইলিয়াম ব্লেক ছাড়া অন্য কোনো পাশ্চাত্য সাহিত্যিক নিজের সাহিত্য প্রতিভাকে চিত্রশিল্পের মধ্য দিয়ে এমন সার্থক ভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হননি”।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.