মৃদুল দাশগুপ্তের ক্রন্দনরতা জননীর পাশে প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সাজেশন (HS Bengali Suggestion) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি উচ্চমাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের মৃদুল দাশগুপ্তের "ক্রন্দনরতা জননীর পাশে" কবিতার সমস্ত প্রশ্নোত্তর।
এখানে উচ্চমাধ্যমিক বাংলা ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে - মৃদুল দাশগুপ্ত
‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ধানক্ষেত’ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।
মৃদুল দাশগুপ্তের ক্রন্দনরতা জননীর পাশে প্রশ্ন ও উত্তর - উচ্চমাধ্যমিক বাংলা
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার কবি পরিচিতি
৩ রা এপ্রিল ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার শ্রীরামপুরে কবির জন্ম হয়। কবির পিতার নাম জ্যোৎস্না কুমার দাশগুপ্ত এবং মা ছিলেন সান্তনা দাশগুপ্ত। শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে বিদ্যালয় জীবন শেষ করেন এবং উত্তরপাড়া প্যারীমোহন কলেজ থেকে তিনি উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেন। জীববিদ্যাকে অন্যতম বিষয় হিসেবে নিয়ে। কবি তাঁর নিজের বিদ্যালয়ে জীব বিজ্ঞানে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হয়ে প্রথম কর্মজীবনের সূত্রপাত ঘটান। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সাংবাদিকতাকেই বেছে নেন। তাঁর প্রথম কাজ আমরা পরিবর্তন পত্রিকা এবং যুগান্তর পত্রিকায় দেখতে পাই। শ্রীরামপুরের শীর্ষবিন্দু ও বেলাভূমি পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হতো। কলিকাতার আনন্দমেলায় তার লেখা বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ জলপাই কাঠের এসরা। তার ছয় বছর পর তিনি প্রকাশ করেন এভাবে কাঁদে না। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ গুলি হল সোনার বুদবুদ, সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহ, গোপনে হিংসার কথা বলি।
তিনি শিশুদের জন্য ছড়া গ্রন্থ লিখেছিলেন বেশকিছু, যার মধ্যে অন্যতম আমপাতা জামপাতা, ঝিকমিক ঝিরিঝিরি, ইত্যাদি। ২০০০ সালে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, সূর্যাস্তে নির্মিত গৃহে’র জন্য তাকে পুরস্কৃত করে। তিনি রবীন্দ্র পুরস্কারও পান সোনার বুদবুদ কাব্যগ্রন্থের জন্য।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার উৎস
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতাটি ২০০৬ সালের সিঙ্গুর আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা। মূল কাব্যগ্রন্থের নাম ধানক্ষেত।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার সারসংক্ষেপ
সময়ভেদে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন শাসন-নীতি বিপর্যস্ত করে তোলে মানুষকে। এক অনিশ্চিয়তার ছায়া নেমে আসে মানুষের জীবনে। এমন সময় যেকোনো শিল্পী তার লেখার প্রতি দায়বদ্ধ হয়। কবি এখানে দেশমাতাকে মাতৃ রূপে কল্পনা করে নিয়েছেন। তিনি মনে করেছেন দেশমাতা ও যেন মানুষের এই দুঃখে কাঁদছেন। সমাজ সচেতন কবির স্বদেশপ্রীতি তাকে এই জননীর পাশে দাঁড়াতে বলেছে। কবি নিজের চোখে দেখেছেন তার দেশের মৃত ভাইদের।
কবি যেহেতু সমাজকে ভালোবাসেন তাই এই অত্যাচার, সামাজিক অবমাননা তাকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। যখন কোন নিখোঁজ মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া যায় জঙ্গলে সেই অবস্থায় কবি পারেননা বিধির বিধান চেয়ে আকাশ মুখো হয়ে চেয়ে থাকতে। তাই তার লেখনীর ভাষা হয়ে যায় প্রতিবাদের ভাষা। তার উন্নত বিবেক ও দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তিনি বিচার করেন। তার বিবেক বারুদের মত বিস্ফোরণের অপেক্ষা করে এই শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব,সুতরাং সমাজের ভালোমন্দ তাকে প্রভাবিত করবে এটা খুব স্বাভাবিক। 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে 'কবিতায় সামাজিক অব্যক্ষয়ের যে চিত্র ফুটে উঠেছে,তা কবির মনে তৈরী করেছিল গভীর প্রতিক্রিয়া। দেশবাসীর কাছে রাজনীতি যখন পরিণত হয়েছিল রণনীতিতে,তখন সে দেশের শাসক সম্পর্কে কবির মনে জমা হয়েছিল ঘৃণা। নিহত ভাইয়ের মৃতদেহ দেখে কবির মনে তৈরী হয়েছিল ক্রোধ এবং কবি মনে করেছিলেন অত্যন্ত স্বাভাবিক। সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক যদি ভালোবাসা দিয়ে গড়া হয়,যদি এক মানুষের কাছে অন্য জন মূল্যবান হয় ;তবে একের মৃত্যুতে অন্যের বিচলিত হওয়ারই কথা। কিন্তু শাসকের চোখরাঙানিতে ভালোবাসা -মূল্যবোধ শব্দগুলো অর্থহীন হয়ে পড়েছে বলে কবি বিস্মিত হন। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা সমাজবিরোধীরা যখন কোনো নারীকে তুলে নিয়ে যায় তারঘর থেকে,তাকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে দেয় জঙ্গলে ;তখন মানাবিক মূল্যবোধসম্পম্ন কবির বিবেক প্রতিবাদে গর্জে উঠতে চায়। কিন্তু কবি জানেন একা একা প্রতিবাদ করা যায় না। অথচ জন্মভূমির প্রতি দায়বদ্ধতা তিনি অস্বীকার করতে পারেন না। তাই কবিতা রচনার মধ্যদিয়ে তিনি প্রতিবাদ করতে চান,শব্দের শক্তি দিয়েই তিনি বিস্ফোরণ ঘটাতে চান মানুষের মনে।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবিতার নামকরণ
সাহিত্যের নামকরণ সর্বদা তাৎপর্য্পূর্ণ করে তুলতে চান সাহিত্যিক। পাঠকের সঙ্গে বিষয়ের সহিতত্ত্ব স্থাপনের আগেই নামকরণে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দগুচ্ছের সাহায্যে সাহিত্যিক বিষয়কে ইঙ্গিতপূর্ণ করে তোলার সুযোগকপান। তাই আগেভাগে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা তিনি সেরে ফেলেন নামকরণের মাধ্যমে। বিষয়ভিত্তিক,চরিত্রকেন্দ্রিক,ব্যঞ্জনাধর্মী প্রভৃতি নামকরণ করা হয় সাহিত্যের। কবি মৃদুল দাশগুপ্তের 'ধানখেত থেকে ' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ' কবিতাটির নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক।
আলোচ্য কবিতার বিষয় সংকটময় পরিস্থিতিতে কবির তার পাশে থাকার অঙ্গীকার। সে সময় হানাহানিতে সমাজে নেমে এসেছে গভীর অবক্ষয়,শাসকের রাজনৈতিক চোখরাঙানিতে মানুষের মধ্য থেকে মুছে গেছে ভালোবাসা-সহানুভূতি -সম্প্রীতিবোধ,যে সময় রাজনীতি পরিণতি হয়েছে রণনীতিতে,রোজদিন রক্তাক্ত হয়েছে সমাজের প্রতিটি কোণ - সেই ২০০৬-২০০৭ খ্রিস্টাব্দের অবক্ষয়িত সমাজ -রাজনৈতিক পরিবেশে কবি অনুভব করেছেন জননী -জন্মভূমির কান্না। অগণিত ব্যাক্তিমানবীর বেদনা দেশজননীর হৃদয়কেই ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। কবি দেখেছিলেন মানুষ হারিয়ে ফেলেছে প্রতিবাদের ভাষা। কবি বুঝিয়েছিলেন ভাগ্যের হাতে ভবিষ্যতের ভার দিয়ে অসহায় বাংলার মানুষ বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়েছিল। এহেন পরিস্থিতিতে কবি অনুভব করেছিলেন তার কলম থেকে সূচনা হতে পারে বিপ্লবের। তাই তিনি তাঁর কবিতায় শব্দের শক্তি দিয়ে মানুষের মনে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছেন। তার সজাগ বিবেক 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে 'কবিতাটির মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে জননী জন্মভূমির পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে। আর এই সূত্রে কবিতাটির নামকরণ সার্থক হয়ে উঠেছে।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে MCQ প্রশ্ন ও উত্তর (বহু বিকল্প ভিত্তিক)
১) কবি মৃদুল দাশগুপ্তের একটি কাব্যগ্রন্থের নাম?
ক) জলপাইকাঠের এসরাজ
খ) ঝরাপালক
গ) সােনার তরী
ঘ) সােনার মাছি খুন করেছি
Ans: ক) জলপাইকাঠের এসরাজ
২) ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ' কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত ?
ক) আমপাতা জামপাতা
খ) সরষেক্ষেত
গ) ধানক্ষেত থেকে
ঘ) জলপাই কাঠের এসরাজ
Ans: গ) ধানক্ষেত থেকে
৩) কবি যে জননীর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন তিনি —
ক) ক্রন্দনরতা
খ) স্নেহময়ী
গ) সুজলা - সুফলা
ঘ) জরাজীর্ণা
Ans: ক) ক্রন্দনরতা
৪) ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ' কবিতায় জননী বলতে কবি বুঝিয়েছেন —
ক) জন্মদাত্রী মাকে
খ) বিপন্ন স্বদেশকে
গ) নারীজাতিকে
ঘ) সমাজকে
Ans: খ) বিপন্ন স্বদেশকে
৫) কবি যার পাশে থাকতে চেয়েছেন-
ক) দরিদ্র মানুষের
খ) ক্রন্দনরতা জননীর
গ) অত্যাচারিতের
ঘ) সমস্ত পৃথিবীবাসীর
Ans: খ) ক্রন্দনরতা জননীর
৬) “ এখন যদি না থাকি ” —এখন বলতে কবি কোন্ সময়ের কথা বলেছেন ?
ক) প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়
খ) উৎসবের সময়
গ) অসুস্থতার সময়
ঘ) নিপীড়িত, অত্যাচারিত হওয়ার সময়
Ans: ঘ) নিপীড়িত, অত্যাচারিত হওয়ার সময়
৭) ক্রন্দনরতা জননীর পাশে না থাকলে কবির অর্থহীন মনে হয়েছে-
ক) লেখালেখিকে
খ) বেঁচে থাকাকে
গ) নাগরিক হওয়াকে
ঘ) রাজনীতিকে
Ans: ক) লেখালেখিকে
৮) “ কেন তবে লেখা, কেন গান গাওয়া। ” — পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে বলা হয়েছে-
ক) ভালাে সাহিত্য সৃষ্টি করা প্রয়ােজন
খ) ভালাে গান প্রস্তুত করা প্রয়ােজন
গ) ভালাে চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠা দরকার
ঘ) বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানাে দরকার
Ans: ঘ) বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানাে দরকার
৯) “ কেন গান গাওয়া ” —কথাটির অর্থ হল-
ক) গান থামানাে দরকার
খ) গান গাওয়ার তবে প্রয়ােজন নেই
গ) গান শেষ করা দরকার
ঘ) গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রয়ােজন
Ans: খ) গান গাওয়ার তবে প্রয়ােজন নেই
১০)“ কেন তবে আঁকাআঁকি ? ” — কথাটির অর্থ হল- —
ক) না আঁকাই শ্রেয়
খ) আঁকাআঁকির অর্থ না বােবা
গ) আঁকার অর্থ সময়ের অপচয়
ঘ) আঁকাআঁকি করাটাই অর্থহীন
Ans: ঘ) আঁকাআঁকি করাটাই অর্থহীন
১১) নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কবির ক্রোধের কারণ-
ক) হিংসা
খ) সামাজিকতা
গ) কর্তব্যবােধ
ঘ) ভালােবাসা ও মূল্যবােধ
Ans: ঘ) ভালােবাসা ও মূল্যবােধ
১২) নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কবির মনে জাগে-
ক) করুণা
খ) হতাশা
গ) ক্রোধ
ঘ) আতঙ্ক
Ans: গ) ক্রোধ
১৩) “ নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে / নাই যদি হয় ”-
ক) রােষ
খ) ক্ষোভ
গ) রাগ
ঘ) ক্রোধ
Ans: ঘ) ক্রোধ
১৪) ‘ নাই যদি হয় ক্রোধ " যা দেখে ক্রোধের জাগরণ ঘটা প্রত্যাশিত-
ক) নিহত ভাইয়ের শবদেহ
খ) ক্রন্দনরতা জননী
গ) নিখোজ মেয়ে
ঘ) কবিতার না জাগা
Ans: ক) নিহত ভাইয়ের শবদেহ
১৫) কবিতায় নিখোঁজ মেয়েটির ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়া গিয়েছিল —
ক) পুলের নীচে
খ) মাঠের ধারে
গ) জালে
ঘ) নদীর ধারে
Ans: গ) জালে
১৬) ছিন্নভিন্ন দেহ পাওয়া গিয়েছে যে মেয়েটির, সে –
ক) পথ হারিয়েছিল
খ) নিখোঁজ ছিল
গ) খেলতে গিয়েছিল
ঘ) পালিয়ে গিয়েছিল
Ans: খ) নিখোঁজ ছিল
১৭) “ যে - মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন ”, তার জন্য কবি কী করবেন না ?
ক) বিধির বিচার চাইবেন না
খ) কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাবেন না
ন) জনতার দরবারে যাবেন না
ঘ) প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবেন না
Ans: ক) বিধির বিচার চাইবেন না
১৮) “ যে - মেয়ে নিখোঁজ, ছিন্নভিন্ন ” —মেয়েটি ছিন্নভিন্ন, কারণ —
ক) সে ছিন্নভিন্ন পােশাক পরিহিতা
খ) সে অত্যাচারিতা
গ) সে সমাজ থেকে বহিষ্কতা
ঘ) সে ধর্মত্যাগিনী
Ans: খ) সে অত্যাচারিতা
১৯) আকাশের দিকে তাকিয়ে চাওয়া হয় —
ক) বৃষ্টি
খ) বিধির বিচার
গ) ঈশ্বরের শুভেচ্ছা
ঘ) চাদের টিপ
Ans: খ) বিধির বিচার
২০) ছিন্নভিন্ন মেয়েটিকে দেখে কবি তাকাতে চান না —
ক) পৃথিবীর দিকে
খ) সমাজের দিকে
গ) জঙ্গলের দিকে
ঘ) আকাশের দিকে
Ans: ঘ) আকাশের দিকে
২১) ‘ বিধির বিচার সম্বন্ধে কবি বলেছেন-
ক) বিধাতা সঠিক বিচার করেন
খ) বিধাতার বিচার অর্থহীন
গ) বিধাতা পীড়নকারীকে শাস্তি দেন
ঘ) বিধাতা নিপীড়িতের পাশে থাকেন
Ans: খ) বিধাতার বিচার অর্থহীন
২২) “ আমি তা পারি না। ” — এখানে আমি কে ?
ক) কবি
খ) পাঠক
গ) সচেতন মানুষ
ঘ) শ্রোতা
Ans: ক) কবি
২৩) “ আমি তা পারি না। ” — যা না - পারার কথা বলা হয়েছে, তা হল-
ক) বিধির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা
খ) নিজের সুখসন্ধান
গ) প্রতিবাদ - বিমুখ হয়ে থাকা
ঘ) কবিতা লেখা।
Ans: ক) বিধির মুখাপেক্ষী হয়ে থাকা
২৪) কবিতায় জাগে —
ক) বিবেক
খ) ভাষা
গ) ভাবনা
ঘ) অর্থ
Ans: ক) বিবেক
২৫) কবির বিবেক জেগে ওঠার পটভূমি হল-
ক) সমাজ
খ) পরিবার
গ) কবিতা
ঘ) রাজনীতি
Ans: ক) সমাজ
২৬)“ বিবেক ’ বলতে বােঝানাে হয়েছে-
ক) অন্তরাত্মাকে
খ) চিন্তাধারাকে
গ) বােধকে
ঘ) মানসিকতাকে
Ans: ক) অন্তরাত্মাকে
২৭) নিজের বিবেককে কবি যার সঙ্গে তুলনা করেছেন, তা হল-
ক) ঝড়
খ) বারুদ
গ) বিদ্যুৎ
ঘ) আলাে
Ans: খ) বারুদ
২৮) কী জেগে ওঠে বিস্ফোরণের আগে ’ ?
ক) আগ্নেয়গিরি
খ) কবির বিবেক
গ) জনগণ
ঘ) প্রতিবাদী আন্দোলন
Ans: খ) কবির বিবেক
২৯) বিধির বিচার চাওয়ার চেয়ে কবির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল —
ক) আত্মার শান্তিকামনা
খ) প্রতিবাদ
গ) আত্মসুখ সন্ধান
ঘ) অন্য প্রসঙ্গে চলে যাওয়া
Ans: খ) প্রতিবাদ
৩০) যা পারি কেবল সেই কবিতায় জাগে ” —কবিতায় কী জাগে ?
ক) কবির বিবেক
খ) কবির হিংসা
গ) কবির ক্রোধ
ঘ) কবির অক্ষমতা
Ans: ক) কবির বিবেক
৩১) “ ক্রন্দনরতা জননীর পাশে ” কবিতায় যে সমাজের ছবি ফুটে উঠেছে, তা হল —
ক) যুদ্ধ বিধ্বস্ত
খ) অবক্ষয়িত
গ) দারিদ্র্য পীড়িত
ঘ) নৈরাজ্যপূর্ণ
Ans: ঘ) নৈরাজ্যপূর্ণ
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
1. “এখন যদি না থাকি”—বলতে কার পাশে কখন না থাকার কথা বলা হয়েছে?
অথবা, “এখন যদি না থাকি”—কোথায় না থাকার কথা বলা হয়েছে?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে নেওয়া প্রশ্নোধৃত অংশে ক্রন্দনরতা জননী বা বিপন্ন স্বদেশের পাশে না থাকার কথা বলা হয়েছে।
2. ক্রন্দনরতা জননীর পাশে কবি কেন থাকতে চান?
Ans: জননীর দুঃখ-দুর্দশা দূর করা সন্তানের প্রধান কর্তব্য। এই কর্তব্যবোধে কবি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে চান।
3. “কেন ভালোবাসা, কেন-বা সমাজ কীসের মূল্যবোধ!”—কোন্ মানসিক যন্ত্রণা থেকে কবি এ কথা বলেছেন?
Ans: নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে উদাসীন থাকার মানসিক যন্ত্রণা থেকে কবি এ কথা বলেছেন।
4. “নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে”—কী কারণে ভাই নিহত?
Ans: স্বদেশ ও স্বজন রক্ষার লড়াইয়ে ভাই নিহত।
5. “আমি কি তাকাব আকাশের দিকে?”–কবি আকাশের দিকে তাকাতে চান না কেন?
Ans: যারা অদৃষ্টবাদী, ভীরু, নিশ্চেষ্ট—– তারাই অন্যায় দেখেও গর্জে না উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরের কাছে বিচার চায়। কবি বাস্তববাদী ও প্রতিবাদী। তাই তিনি আকাশের দিকে তাকাতে চান না।
6. ’ক্রন্দনরতা জননীর পাশে না থাকলে কবি কী কী ব্যর্থ বলে মনে করেছেন?
Ans: দেশজননীর বিপন্নতার মুহূর্তে তার পাশে না থাকলে লেখালেখি, গান গাওয়া, ছবি আঁকা সব মিথ্যা হয়ে যাবে বলে কবি মনে করেছেন।
7. “আমার বারুদ বিস্ফোরণের আগে”—’বারুদ বিস্ফোরণ’ কথার অর্থ কি ?
Ans: ‘বারুদ বিস্ফোরণ’ কথার অর্থ হল প্রতিবাদে গর্জে ওঠা।
8. “যা পারি কেবল”—কে কী পারেন?
Ans: কবি কবিতার মধ্যে বিবেককে জাগিয়ে রাখতে পারেন, যা তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার।
9. জননী ক্রন্দনরতা কেন?
Ans: কতিপয় স্বার্থান্বেষী মানুষের আগ্রাসনে স্বদেশ বিপন্ন। তাই তাকে কুন্দনরতা বলা হয়েছে।
10. “নাই যদি হয় ক্রোধ।”—ক্রোধ না হলে কী হবে?
Ans: ক্রোধ না হলে ভালোবাসা, সমাজ, মূল্যবোধ—সব অর্থহীন হয়ে যাবে।
11. “এখন যদি না থাকি।”—’এখন’ বলতে কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে?
Ans: ‘এখন’ বলতে বিপন্ন জননীর অসহায় অবস্থার সময়কেই বুঝিয়েছেন।
12. “না-ই যদি হয় ক্রোধ”—কোন্ ক্রোধের কথা বলা হয়েছে?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কবির মনে ক্রোধের সঞ্চার হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
13. “না-ই যদি হয় ক্রোধ –তাহলে কী হবে?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি বলেছেন নিহত। ভাইয়ের শবদেহ দেখে ক্রোধ না জন্মালে দেশমায়ের প্রতি ভালোবাসা, সমাজ, মূল্যবোধ সবই অর্থহীন হয়ে যাবে।
14. “কেন ভালোবাসা, কেন-বা সমাজ / কীসের মূল্যবোধ! –কোন্মা নসিক যন্ত্রণা থেকে কবি এ কথা বলেছেন?
Ans: ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি মৃদুল দাশগুপ্ত নিহত দেশবাসী ভাইয়ের মৃতদেহ দেখে তীব্র ক্রোধ মানসিক যন্ত্রণা থেকে প্রশ্নোধৃত মন্তব্যটি করেছেন।
15. ‘যে-মেয়ে নিখোঁজ’ তাকে কোথায় কীভাবে পাওয়া গিয়েছিল?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় নিখোঁজ মেয়েটিকে জঙ্গলে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।
16. “জঙ্গলে তাকে পেয়ে” – এই অবস্থায় কী করা উচিত নয় বলে কবি মনে করেছেন?
Ans: নিখোঁজ মেয়েটিকে জঙ্গলে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পেয়েও এই নৃশংতার প্রতিবাদ না জানিয়ে ঈশ্বরের বিচারের আশায় বসে থাকা উচিত নয় বলে কবি মনে করেছেন।
17. “আমি কি তাকাব আকাশের দিকে”—কবি কার কাছে এই প্রশ্ন করেছেন?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত অংশটিতে কবি প্রশ্নটি করেছেন নিজের কাছেই।
18. “আমি কি তাকাব আকাশের দিকে?”—কবির এই প্রশ্নের উত্তর কী?
Ans: নিখোজ মেয়েকে ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পেয়ে কবি আকাশের দিকে চেয়ে বিধির বিচার চাইবেন না। তার পরিবর্তে তিনি তাঁর বিবেককে কবিতায় জাগাবেন।
19. “সেই কবিতায় জাগে আমার বিবেক” –’বিবেক’-কে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
Ans: কবি মৃদুল দাশগুপ্ত স্বয়ং তাঁর ‘বিবেক’ কে বারুদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
20. ক্রন্দনরতা জননীর পাশে থাকতে না পারলে কবির কী মনে হবে?
অথবা, “এখন যদি না থাকি”— এখন না থাকার ফল কী হবে?
অথবা, ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ না থাকলে কবি কী কী ব্যর্থ বলে মনে করেছেন?
Ans: দেশজননীর বিপন্নতার মুহূর্তে তাঁর পাশে না থাকলে লেখালেখি, গান গাওয়া, ছবি আঁকা সব মিথ্যা হয়ে যাবে বলে কবি মনে করেছেন।
21. “কেন তবে……… গান গাওয়া” এই দ্বিধার কারণ কী?
Ans: দেশের মানুষ আক্রান্ত হলে কোনো শিল্পী প্রতিবাদ করতে না পারলে নিজের শিল্পীসত্তা নিয়ে তাঁর মনেই দ্বিধা সৃষ্টি হয়। কবির মনেও সেই দ্বিধাই সৃষ্টি হয়েছে।
22. “নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে”—কে এই ‘নিহত ভাই’?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় উল্লেখিত ‘নিহত ভাই’ হলেন গণ-আন্দোলনের শহিদ ও কবির সহনাগরিক।
23. ‘নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে’ কবির কী মনে হয়?
Ans: নিহত ভাইয়ের শবদেহ দেখে কবির মনে হয় দেশমায়ের প্রতি ভালোবাসা, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বা মূল্যবোধের জন্যই ক্রোধের জন্ম হওয়া আবশ্যিক।
24. “আমি তা পারি না।”—কবি কী পারেন না?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি বলেছেন নিখোঁজ ছিন্নভিন্ন মেয়েটিকে জঙ্গলে পেয়ে কবি বিধির বিচার চেয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন না।
25. “সে-ই কবিতায় জাগে”—কী, কেন কবিতায় জাগে?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবির বিবেক জাগে জঙ্গলে পাওয়া নিখোঁজ মেয়েটির ছিন্নভিন্ন করুণ অবস্থার প্রতিবাদে ফেটে পড়ার জন্য।
26. “সে-ই কবিতায় জাগে/আমার বিবেক,”–বিবেককে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় বিবেককে বিস্ফোরণের বারুদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
27. “আমার বিবেক, আমার বারুদ”—কবির বিবেক কী করে?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবির বিবেক জেগে ওঠে প্রতিবাদে ফেটে পড়ার জন্য। এই অবস্থাটি বিস্ফোরণের আগে বারুদের সঙ্গেই তুলনীয়।
28. “আমি কি তাকাব আকাশের দিকে” কবি কখন এই প্রশ্ন করেছেন?
Ans: মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন শরীর জঙ্গলে পেয়ে আকাশের দিকে বিধির বিচার চেয়ে তাকানো উচিত কিনা সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করতেই প্রশ্নটি করেছেন।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্নঃ জননী ‘ক্রন্দনরতা’ কেন?
উত্তরঃ ২০০৬ সালে সিঙ্গুর জমি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা ও বিপন্নতা দেখা যায়, তার অভিঘাতেই জননী ক্রন্দনরতা।
প্রশ্নঃ ‘এখন যদি না থাকি’ —বলতে কার পাশে কখন না থাকার কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ দেশজননী ক্রন্দনরতা, কারন তার কোলে লালিত মানুষ আক্রান্ত।একজন সৃজনশীল মানুষ হিসেবে কবির তাই ধারণা যে, এই দুঃসময়ে দেশ জননীর পাশে দাঁড়ানো সত্যিই দায়িত্বস্বরূপ।
প্রশ্নঃ ‘নিহত ভাইদের শবদেহ দেখে’ —”নিহত ভাই” বলতে কবি কাকে বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ ‘নিহত ভাই’ বলতে কবি সেইসব ভাইকে বুঝিয়েছেন , যারা সিঙ্গুর জমি আন্দোলনে শহীদ হয়েছিল।
প্রশ্নঃ ‘না -ই যদি হয় ক্রোধ’ —ক্রোধ হওয়ার কারন কী?
উত্তরঃ কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর নিহত ভাইদের মৃতদেহ দেখে ক্রোধ হওয়ার কথা বলেছেন।
প্রশ্নঃ ‘জঙ্গলে তাকে পেয়ে’ —জঙ্গলে কাকে কীভাবে পাওয়া যায়?
উত্তরঃ “ক্রন্দনরতা জননীর পাশে” কবিতার নিখোঁজ মেয়েটিকে জঙ্গলে ছিন্নভিন্ন ও লাঞ্চিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
প্রশ্নঃ ‘জঙ্গলে তাকে পেয়ে’ কবির কীরূপ অনুভূতি হয়?
উত্তরঃ কবির মতে, বর্তমান অস্থির সময় থেকে অসহায় মানুষের মুক্তির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।
প্রশ্নঃ ‘আমি তা পারি না।’ —বক্তা কি পারেন না?
উত্তরঃ বক্তা অর্থাৎ কবি নিখোঁজ মেয়েটির ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ জঙ্গলে পেয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাইতে পারেন না।
ক্রন্দনরতা জননীর পাশে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
1. “আমি কি তাকাব আকাশের দিকে/বিধির বিচার চেয়ে ?” কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো।
Ans: কবির মন্তব্যের তাৎপর্য: কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় নিজের সমাজচেতনার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। সাধারণভাবে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন না, কিন্তু তাঁর প্রকাশভঙ্গিতে থাকে দৃঢ়তা। চারপাশের অসংগতি আর অন্যায়, ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে এসে দাঁড়াতে চান। শাসকের হাতে সহনাগরিক ভাইয়ের মৃত্যু তাঁর মনে ক্রোধের জন্ম দেয়। জঙ্গলে পাওয়া নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ তাঁর প্রতিবাদী বিবেককে জাগিয়ে তোলে কবিতার মধ্য দিয়ে। এভাবেই নিজের দায়বদ্ধতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং মূল্যবোধ প্রকাশ করেন কবি। কবিতাকে যখন তিনি চেতনা এবং প্রতিবাদের মাধ্যম করে তোলেন— তখন সেখানে আধ্যাত্মিকতা বা ঈশ্বরবিশ্বাসের কোনো জায়গা থাকে না। তাই নিখোঁজ মেয়ের নৃশংস মৃত্যু দেখতে দেখতে কবির মনে হয়েছে, বর্তমানের এই বিপন্ন সময়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরের কাছে বিচার চাওয়া একেবারেই অর্থহীন। ফলে, অনিবার্য হয়ে পড়েছে সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত প্রতিবাদ। এই বিপন্নতার সময়ে প্রতিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে কবির একমাত্র অস্ত্র কবিতা। সেই কবিতার মাধ্যমেই নিজের বিক্ষোভ, প্রতিবাদকে সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন তিনি। কবির দায়বদ্ধতার যে ছবি তিনি এখানে তৈরি করে দিয়েছেন, কবিতাকে করে তুলেছেন বিবেকের বাহক, তা শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শিল্পীসত্তার চিরকালীন প্রতিবাদের ইঙ্গিতকেই বহন করে।
2. ’ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে কেন ক্রন্দনরতা বলেছেন তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো। কবি এখানে নিজেকে কোন্ ভূমিকায় দেখতে চেয়েছেন?
অথবা, ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় জননীকে ‘ক্রন্দনরতা’ বলে উল্লেখ করা হল কেন? কবি তাঁর কী কর্তব্য এ কবিতায় নির্দিষ্ট করেছেন?
Ans: জননীকে ক্রন্দনরতা বলার কারণ: মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় স্বাধীনতা-পরবর্তী এক অস্থির সময়ের ছবি কছেন। শিল্পের জন্য কৃষিজমি কেড়ে নেওয়া, উর্বরা জমিকে এক ফসলি অনাবাদি জমি হিসেবে চিহ্নিত করা—এইসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে রক্তাক্ত ও লাঞ্ছিত হতে হয় সাধারণ মানুষকে। নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ জঙ্গলে দেখে কবির মনে হয়েছে, বিধাতার প্রতিবিধানের আশায় বসে না থেকে এখন প্রয়োজন সম্মিলিত প্রতিবাদের। এ কবিতা প্রতিবাদের কবিতা, যার পটভূমিতে রয়েছে স্বদেশ। যে স্বদেশ মৃত্যু আর রক্ত লাঞ্ছিত, নিপীড়নের কান্নায় ভেজা। মাটি আর মানুষ দিয়েই গড়া হয় দেশজননীর শরীর। দেশজননীর সন্তানের রক্ত, দেশবাসীর কষ্ট দেশজননীকে ক্রন্দনরতা করেছে বলে কবির মনে হয়েছে।
কবির কর্তব্য: শাসকের জনস্বার্থবিরোধী নীতিতে যখন দেশ বিপন্ন, তখন নিপীড়িত দেশবাসী তথা দেশজননীর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন কবি। ভাইয়ের মৃত্যু, নিখোঁজ মেয়ের জঙ্গলে পাওয়া ছিন্নভিন্ন শরীর তাঁর মধ্যে একইসঙ্গে জন্ম দিয়েছে ক্রোধ, দায়বদ্ধতা এবং মূল্যবোধের। শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি কবিতাকে করে তুলতে চেয়েছেন প্রতিবাদের হাতিয়ার। তাই কবিতার মধ্যেই তিনি মজুত করতে চান বিক্ষোভের বারুদ, সামান্য অগ্নিস্ফুলিঙ্গে যা থেকে ঘটবে প্রতিবাদের বিস্ফোরণ।
3. “আমি তা পারি না।”—কবি কী পারেন না? “যা পারি কেবল”—কবি কী পারেন?
অথবা, “আমি তা পারি না।”—বক্তা কী পারেন না? বক্তা কীভাবে তার কর্তব্য পালন করতে চান ?
Ans: কবির না-পারা বিষয়: কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় তাঁর স্বদেশপ্রেম এবং সমাজচেতনার স্বাক্ষর রেখেছেন। কবির মনে হয়েছে, অস্থির সময়ের সামাজিক অস্থিরতায় বিপন্ন মানুষের দুঃখে দেশমাতা কাঁদছেন। চোখের সামনে কবি দেখেন তাঁর ভাইয়ের মৃতদেহ এবং জঙ্গলে উদ্ধার হওয়া নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ। শাসকের এই অন্যায়-অত্যাচার বর্বরতার হাত থেকে মুক্তি পেতে কবি কি বিধাতার সুবিচারের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন? এটাই তিনি পারেন না, কারণ, আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন নিয়তিনির্ভরতা প্রকাশ পায়, তেমনই প্রকাশিত হয় আত্মশক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবও। মানুষের অধিকার যখন বিপন্ন হয় তখন বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ আর থাকে না। এমনকি রাষ্ট্রশক্তি যখন নিজের নিরঙ্কুশতাকে প্রকাশ করতে তার নখ-দাঁত বিস্তার করে তখন ঈশ্বরের কাছে ন্যয়বিচার চেয়ে বসে থাকা আসলে অনাবশ্যক সময় ব্যয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
কবির কর্তব্য পালন: সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, সহানুভূতিশীল কবি অত্যাচারী শাসকের আনুগত্য বর্জন করতে চান। নিজের মানবিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মূল্যবোধকে জাগিয়ে রাখতে কবিতাকেই হাতিয়ার করেন কবি। প্রতিবাদী কবিতার মাধ্যমেই নিজের বিবেককে জাগিয়ে রাখেন তিনি। এই জাগরণে থাকে মানবতা, আর তার কাঠামোয় থাকে রাজনীতিও। এভাবেই কবি কবিতাকে প্রতিবাদের অস্ত্র করে তোলেন। কবি হিসেবে এটাই পারেন তিনি।
4. “আমি তা পারি না।”—কে পারেন না? না পারার বেদনা কীভাবে কবিকে আলোড়িত করেছে তা কবিতাটি অবলম্বনে লেখো।
Ans: সংবেদনশীল, আত্মপ্রত্যয়ী, প্রতিবাদী কবি মৃদুল দাশগুপ্তের কাব্যসৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হল সমাজের বুকে সংঘটিত কুকর্মের প্রতিরোধ বিধান। তাই তিনি নিজে কোনো প্রকার দুর্নীতি প্রত্যক্ষ করলে আকাশের দিকে তাকিয়ে সকল অব্যবস্থার প্রতিকার প্রার্থনা করার মতো দুর্বল মানসিকতার প্রমাণ দিতে পারেন না।
কবি নিজে সমাজসচেতন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। তাই তিনি সরাসরি না হলেও কবিতা রচনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সমাজের বুকে সংঘটিত সন্ত্রাস আর অকল্যাণকর ঘটনাসমূহের, প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেছেন। কবি যখন প্রত্যক্ষ করেন মানুষ নৃশংসভাবে নিহত হচ্ছে কিংবা কোনো রমণী শিকার হচ্ছেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের লোভ ও রিরংসার, তখন তিনি প্রতিবাদ জ্ঞাপন না করে কেবলমাত্র আকাশের দিকে তাকিয়ে ভগবানের কাছে সুবিচার প্রদানের আবেদন জ্ঞাপন করতে ও নিশ্চুপ থাকতে পারেন না। তিনি তাঁর অন্তরে সিঞ্চিত অগ্নিপ্রদাহকে তাঁর রচনায় বাণীরূপ প্রদান করেন। তাই পারতপক্ষে নিজের প্রতিবাদী সত্তা বিষয়ে কবিমনে কোনো সংশয় নেই। বরং অপরের নিশ্চুপ থাকার প্রবৃত্তি তাঁকে প্রতিবাদী করে তোলে। তবে কবি তাঁর অন্তরের বারুদকে অগ্নিসংযোগের দ্বারা বিস্ফোরক রূপ প্রদান করতে পারেন না, তিনি পারেন না প্রত্যক্ষভাবে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে। কবি জানান—
"যা পারি কেবল
সে-ই কবিতায় জাগে
আমার বিবেক, আমার বারুদ
বিস্ফোরণের আগে।”
অর্থাৎ, তাঁর যা কিছু প্রতিবাদ জানানো সবই ধ্বনিত হয় তাঁর সৃষ্টিতে। সরব প্রতিবাদী হতে না পারার জন্য তাঁর অন্তর্মন তাঁকে দংশন করতে থাকে। না-পারার বেদনা কবিকে ক্ষণে ক্ষণে আলোড়িত করে, তাই সেই আলোড়নের উদ্ধত প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতাতেই। ফলে অন্তরের বারুদ বাণীর অগ্নিসংযোগে এই কবিতায় বিস্ফোরক রূপ ধারণ করেছে।
5. “আমার বিবেক, আমার বারুদ/বিস্ফোরণের আগে।” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃত লাইনটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
Ans: বিংশ তথা একবিংশ শতাব্দীর যুগসন্ধিক্ষণের কবি মৃদুল দাশগুপ্ত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় বর্তমানের অবক্ষয়িত সমাজের চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বাংলার এক কালিমালিপ্ত ঐতিহাসিক ঘটনাকে কবিতার প্রধান প্রেক্ষাপট হিসেবে তুলে ধরেছেন।
কবি প্রত্যক্ষ করেছেন আপন সম্পত্তির অধিকার হানির প্রতিবাদ করার অপরাধে নিম্নবিত্ত মানুষদের লাশে পরিণত হতে। তিনি দেখেছেন জঙ্গলে খোঁজ পাওয়া গেছে নিখোঁজ মেয়েটির, কিন্তু তার ছিন্নভিন্ন দেহ প্রমাণ দিচ্ছে পাশবিক অত্যাচারের। তাই কবির প্রশ্ন অন্যান্য নিশ্চুপ জনতার মতো পাশবিকতা দর্শন করেও—
“আমি কি তাকাব আকাশের দিকে
বিধির বিচার চেয়ে?”
কাপুরুষের মতো দৈবের বিচার প্রার্থনা না করে কবি ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হতে চান। কারণ, তিনি জানেন অপরাধীকে ন্যায়ের পথ অবলম্বন করে শাস্তি প্রদান করলে তবেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষিত হবে। তবে তিনি যেহেতু কবি তাই তিনি প্রত্যক্ষ প্রতিবাদ জানাতে পারেন না, তার প্রতিবাদের ভাষা তথা মূল হাতিয়ার হল তাঁর কবিতা। এ কথা বলতে গিয়েই তিনি আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটির অবতারণা করেছেন।
ভালোবাসার মানুষগুলির প্রতি অর্থাৎ সমাজের অবহেলিত মানুষগুলির প্রতি অবমাননার মাত্রা বর্ধিত হলে সংবেদনশীল কবিমন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তার অন্তরে সঞ্চিত ক্রোধ বারুদের ন্যায় ধীরে ধীরে পুঞ্জিভূত হয়ে ওঠে এবং ক্রমে সেই পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তার কবিতায় বাণীরূপ লাভ করলে ক্ষোভের বারুদ বিস্ফোরক চেহারা ধারণ করে।
ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।
Please do not share any spam link in the comment box