অর্ডিনারি আইটির পোস্ট নোটিফিকেশন


ক্রন্দনরতা জননীর পাশে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Krondonrota Jononir Pashe Descriptive Question Answer

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় Krondonrota Jononir Pashe Descriptive Question Answer PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF

ক্রন্দনরতা জননীর পাশে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Krondonrota Jononir Pashe Descriptive Question Answer

নিচে ক্রন্দনরতা জননীর পাশে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। Krondonrota Jononir Pashe Descriptive Question Answer PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।



ক্রন্দনরতা জননীর পাশে - মৃদুল দাশগুপ্ত


‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতাটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ধানক্ষেত’ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে মৃদুল দাশগুপ্তের ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


ক্রন্দনরতা জননীর পাশে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Krondonrota Jononir Pashe Descriptive Question Answer


1. “আমি কি তাকাব আকাশের দিকে/বিধির বিচার চেয়ে ?” কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো।

Ans: কবির মন্তব্যের তাৎপর্য: কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় নিজের সমাজচেতনার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। সাধারণভাবে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন না, কিন্তু তাঁর প্রকাশভঙ্গিতে থাকে দৃঢ়তা। চারপাশের অসংগতি আর অন্যায়, ঘটে যাওয়া অজস্র ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি ক্রন্দনরতা জননীর পাশে এসে দাঁড়াতে চান। শাসকের হাতে সহনাগরিক ভাইয়ের মৃত্যু তাঁর মনে ক্রোধের জন্ম দেয়। জঙ্গলে পাওয়া নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ তাঁর প্রতিবাদী বিবেককে জাগিয়ে তোলে কবিতার মধ্য দিয়ে। এভাবেই নিজের দায়বদ্ধতা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং মূল্যবোধ প্রকাশ করেন কবি। কবিতাকে যখন তিনি চেতনা এবং প্রতিবাদের মাধ্যম করে তোলেন— তখন সেখানে আধ্যাত্মিকতা বা ঈশ্বরবিশ্বাসের কোনো জায়গা থাকে না। তাই নিখোঁজ মেয়ের নৃশংস মৃত্যু দেখতে দেখতে কবির মনে হয়েছে, বর্তমানের এই বিপন্ন সময়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরের কাছে বিচার চাওয়া একেবারেই অর্থহীন। ফলে, অনিবার্য হয়ে পড়েছে সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত প্রতিবাদ। এই বিপন্নতার সময়ে প্রতিবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে কবির একমাত্র অস্ত্র কবিতা। সেই কবিতার মাধ্যমেই নিজের বিক্ষোভ, প্রতিবাদকে সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন তিনি। কবির দায়বদ্ধতার যে ছবি তিনি এখানে তৈরি করে দিয়েছেন, কবিতাকে করে তুলেছেন বিবেকের বাহক, তা শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শিল্পীসত্তার চিরকালীন প্রতিবাদের ইঙ্গিতকেই বহন করে।


2. ’ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় কবি জননীকে কেন ক্রন্দনরতা বলেছেন তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো। কবি এখানে নিজেকে কোন্ ভূমিকায় দেখতে চেয়েছেন?

অথবা, ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় জননীকে ‘ক্রন্দনরতা’ বলে উল্লেখ করা হল কেন? কবি তাঁর কী কর্তব্য এ কবিতায় নির্দিষ্ট করেছেন?

Ans: জননীকে ক্রন্দনরতা বলার কারণ: মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় স্বাধীনতা-পরবর্তী এক অস্থির সময়ের ছবি কছেন। শিল্পের জন্য কৃষিজমি কেড়ে নেওয়া, উর্বরা জমিকে এক ফসলি অনাবাদি জমি হিসেবে চিহ্নিত করা—এইসব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে রক্তাক্ত ও লাঞ্ছিত হতে হয় সাধারণ মানুষকে। নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ জঙ্গলে দেখে কবির মনে হয়েছে, বিধাতার প্রতিবিধানের আশায় বসে না থেকে এখন প্রয়োজন সম্মিলিত প্রতিবাদের। এ কবিতা প্রতিবাদের কবিতা, যার পটভূমিতে রয়েছে স্বদেশ। যে স্বদেশ মৃত্যু আর রক্ত লাঞ্ছিত, নিপীড়নের কান্নায় ভেজা। মাটি আর মানুষ দিয়েই গড়া হয় দেশজননীর শরীর। দেশজননীর সন্তানের রক্ত, দেশবাসীর কষ্ট দেশজননীকে ক্রন্দনরতা করেছে বলে কবির মনে হয়েছে।

কবির কর্তব্য: শাসকের জনস্বার্থবিরোধী নীতিতে যখন দেশ বিপন্ন, তখন নিপীড়িত দেশবাসী তথা দেশজননীর পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন কবি। ভাইয়ের মৃত্যু, নিখোঁজ মেয়ের জঙ্গলে পাওয়া ছিন্নভিন্ন শরীর তাঁর মধ্যে একইসঙ্গে জন্ম দিয়েছে ক্রোধ, দায়বদ্ধতা এবং মূল্যবোধের। শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তিনি কবিতাকে করে তুলতে চেয়েছেন প্রতিবাদের হাতিয়ার। তাই কবিতার মধ্যেই তিনি মজুত করতে চান বিক্ষোভের বারুদ, সামান্য অগ্নিস্ফুলিঙ্গে যা থেকে ঘটবে প্রতিবাদের বিস্ফোরণ। 


3. “আমি তা পারি না।”—কবি কী পারেন না? “যা পারি কেবল”—কবি কী পারেন?

অথবা, “আমি তা পারি না।”—বক্তা কী পারেন না? বক্তা কীভাবে তার কর্তব্য পালন করতে চান ?

Ans:  কবির না-পারা বিষয়: কবি মৃদুল দাশগুপ্ত তাঁর ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় তাঁর স্বদেশপ্রেম এবং সমাজচেতনার স্বাক্ষর রেখেছেন। কবির মনে হয়েছে, অস্থির সময়ের সামাজিক অস্থিরতায় বিপন্ন মানুষের দুঃখে দেশমাতা কাঁদছেন। চোখের সামনে কবি দেখেন তাঁর ভাইয়ের মৃতদেহ এবং জঙ্গলে উদ্ধার হওয়া নিখোঁজ মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহ। শাসকের এই অন্যায়-অত্যাচার বর্বরতার হাত থেকে মুক্তি পেতে কবি কি বিধাতার সুবিচারের জন্য অপেক্ষা করে থাকবেন? এটাই তিনি পারেন না, কারণ, আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধির বিচার চাওয়ার মধ্য দিয়ে যেমন নিয়তিনির্ভরতা প্রকাশ পায়, তেমনই প্রকাশিত হয় আত্মশক্তি এবং আত্মবিশ্বাসের অভাবও। মানুষের অধিকার যখন বিপন্ন হয় তখন বেঁচে থাকার সুস্থ পরিবেশ আর থাকে না। এমনকি রাষ্ট্রশক্তি যখন নিজের নিরঙ্কুশতাকে প্রকাশ করতে তার নখ-দাঁত বিস্তার করে তখন ঈশ্বরের কাছে ন্যয়বিচার চেয়ে বসে থাকা আসলে অনাবশ্যক সময় ব্যয় ছাড়া আর কিছুই নয়।

কবির কর্তব্য পালন: সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ, সহানুভূতিশীল কবি অত্যাচারী শাসকের আনুগত্য বর্জন করতে চান। নিজের মানবিকতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মূল্যবোধকে জাগিয়ে রাখতে কবিতাকেই হাতিয়ার করেন কবি। প্রতিবাদী কবিতার মাধ্যমেই নিজের বিবেককে জাগিয়ে রাখেন তিনি। এই জাগরণে থাকে মানবতা, আর তার কাঠামোয় থাকে রাজনীতিও। এভাবেই কবি কবিতাকে প্রতিবাদের অস্ত্র করে তোলেন। কবি হিসেবে এটাই পারেন তিনি।


4. “আমি তা পারি না।”—কে পারেন না? না পারার বেদনা কীভাবে কবিকে আলোড়িত করেছে তা কবিতাটি অবলম্বনে লেখো।

Ans: সংবেদনশীল, আত্মপ্রত্যয়ী, প্রতিবাদী কবি মৃদুল দাশগুপ্তের কাব্যসৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হল সমাজের বুকে সংঘটিত কুকর্মের প্রতিরোধ বিধান। তাই তিনি নিজে কোনো প্রকার দুর্নীতি প্রত্যক্ষ করলে আকাশের দিকে তাকিয়ে সকল অব্যবস্থার প্রতিকার প্রার্থনা করার মতো দুর্বল মানসিকতার প্রমাণ দিতে পারেন না।

কবি নিজে সমাজসচেতন ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। তাই তিনি সরাসরি না হলেও কবিতা রচনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সমাজের বুকে সংঘটিত সন্ত্রাস আর অকল্যাণকর ঘটনাসমূহের, প্রতিবাদ জ্ঞাপন করেছেন। কবি যখন প্রত্যক্ষ করেন মানুষ নৃশংসভাবে নিহত হচ্ছে কিংবা কোনো রমণী শিকার হচ্ছেন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের লোভ ও রিরংসার, তখন তিনি প্রতিবাদ জ্ঞাপন না করে কেবলমাত্র আকাশের দিকে তাকিয়ে ভগবানের কাছে সুবিচার প্রদানের আবেদন জ্ঞাপন করতে ও নিশ্চুপ থাকতে পারেন না। তিনি তাঁর অন্তরে সিঞ্চিত অগ্নিপ্রদাহকে তাঁর রচনায় বাণীরূপ প্রদান করেন। তাই পারতপক্ষে নিজের প্রতিবাদী সত্তা বিষয়ে কবিমনে কোনো সংশয় নেই। বরং অপরের নিশ্চুপ থাকার প্রবৃত্তি তাঁকে প্রতিবাদী করে তোলে। তবে কবি তাঁর অন্তরের বারুদকে অগ্নিসংযোগের দ্বারা বিস্ফোরক রূপ প্রদান করতে পারেন না, তিনি পারেন না প্রত্যক্ষভাবে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে। কবি জানান—

"যা পারি কেবল

সে-ই কবিতায় জাগে

আমার বিবেক, আমার বারুদ

বিস্ফোরণের আগে।”


অর্থাৎ, তাঁর যা কিছু প্রতিবাদ জানানো সবই ধ্বনিত হয় তাঁর সৃষ্টিতে। সরব প্রতিবাদী হতে না পারার জন্য তাঁর অন্তর্মন তাঁকে দংশন করতে থাকে। না-পারার বেদনা কবিকে ক্ষণে ক্ষণে আলোড়িত করে, তাই সেই আলোড়নের উদ্ধত প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতাতেই। ফলে অন্তরের বারুদ বাণীর অগ্নিসংযোগে এই কবিতায় বিস্ফোরক রূপ ধারণ করেছে।


5. “আমার বিবেক, আমার বারুদ/বিস্ফোরণের আগে।” -প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উদ্ধৃত লাইনটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

Ans: বিংশ তথা একবিংশ শতাব্দীর যুগসন্ধিক্ষণের কবি মৃদুল দাশগুপ্ত ‘ক্রন্দনরতা জননীর পাশে’ কবিতায় বর্তমানের অবক্ষয়িত সমাজের চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বাংলার এক কালিমালিপ্ত ঐতিহাসিক ঘটনাকে কবিতার প্রধান প্রেক্ষাপট হিসেবে তুলে ধরেছেন।

কবি প্রত্যক্ষ করেছেন আপন সম্পত্তির অধিকার হানির প্রতিবাদ করার অপরাধে নিম্নবিত্ত মানুষদের লাশে পরিণত হতে। তিনি দেখেছেন জঙ্গলে খোঁজ পাওয়া গেছে নিখোঁজ মেয়েটির, কিন্তু তার ছিন্নভিন্ন দেহ প্রমাণ দিচ্ছে পাশবিক অত্যাচারের। তাই কবির প্রশ্ন অন্যান্য নিশ্চুপ জনতার মতো পাশবিকতা দর্শন করেও—

“আমি কি তাকাব আকাশের দিকে

বিধির বিচার চেয়ে?”


কাপুরুষের মতো দৈবের বিচার প্রার্থনা না করে কবি ন্যায়ালয়ের দ্বারস্থ হতে চান। কারণ, তিনি জানেন অপরাধীকে ন্যায়ের পথ অবলম্বন করে শাস্তি প্রদান করলে তবেই সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষিত হবে। তবে তিনি যেহেতু কবি তাই তিনি প্রত্যক্ষ প্রতিবাদ জানাতে পারেন না, তার প্রতিবাদের ভাষা তথা মূল হাতিয়ার হল তাঁর কবিতা। এ কথা বলতে গিয়েই তিনি আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটির অবতারণা করেছেন।

ভালোবাসার মানুষগুলির প্রতি অর্থাৎ সমাজের অবহেলিত মানুষগুলির প্রতি অবমাননার মাত্রা বর্ধিত হলে সংবেদনশীল কবিমন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তার অন্তরে সঞ্চিত ক্রোধ বারুদের ন্যায় ধীরে ধীরে পুঞ্জিভূত হয়ে ওঠে এবং ক্রমে সেই পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তার কবিতায় বাণীরূপ লাভ করলে ক্ষোভের বারুদ বিস্ফোরক চেহারা ধারণ করে।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.