অর্ডিনারি আইটির পোস্ট নোটিফিকেশন


কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের প্রশ্নোত্তর - Ke Banchay Ke Banche Question Answer Manik Bandopadhyay

কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় Ke Banchay Ke Banche Question Answer Manik Bandopadhyay থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের প্রশ্নোত্তর PDF

কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের প্রশ্নোত্তর - Ke Banchay Ke Banche Question Answer Manik Bandopadhyay

নিচে কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের প্রশ্নোত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। Ke Banchay Ke Banche Question Answer Manik Bandopadhyay পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।



কে বাঁচায় কে বাঁচে - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়


প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় পরিমল গােস্বামী সম্পাদিত 'মহামন্বন্তর' গ্রন্থে। প্রকাশকাল মার্চ, ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ। পরে গল্পটি 'মানিক গ্রন্থাবলি'-র দ্বাদশ খণ্ডে 'সংকলিত গল্প' বিভাগে স্থান পায়। আলোচ্য পোস্টে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে’ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের প্রশ্নোত্তর - Ke Banchay Ke Banche Question Answer Manik Bandopadhyay


কে বাঁচায় কে বাঁচে MCQ প্রশ্ন ও উত্তর (বহু বিকল্প ভিত্তিক)


1. ’ কে বাঁচায়,কে বাঁচে ‘ গল্পের প্রেক্ষাপট হলো –

(ক)১৯৪৩- এর মন্বন্তর 

(খ) ভারত ছাড়ো আন্দোলন 

(গ) ৭৬ এর মন্বন্তর 

(ঘ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

Ans. (ক)১৯৪৩- এর মন্বন্তর


2. মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি নজর রাখার জন্য টুনুর মা কার কাছে। কাতর অনুরোধ করেন ?

(ক) প্রতিবেশীর কাছে 

(খ) নিখিলের কাছে 

(গ) অফিসের বড়োবাবুর কাছে 

(ঘ) ডাক্তারের কাছে

Ans. (খ) নিখিলের কাছে


3. মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের থেকে পঞ্চাশ টাকা বেশি মাইনে পেত।কারণ—

(ক) মৃত্যুঞ্জয় এর চাকরি বেশি দিনের 

(খ) মৃত্যুঞ্জয় ওপরওয়ালার প্রিয়পাত্র ছিল 

(গ) মৃত্যুঞ্জয় অফিস এ বাড়তি দায়িত্ব পালন করতো 

(ঘ) মৃত্যুঞ্জয় এর বয়স বেশি ছিল

Ans. (গ) মৃত্যুঞ্জয় অফিস এ বাড়তি দায়িত্ব পালন করতো 


4. মৃত্যুঞ্জয় রোজ অফিসে যায়—

(ক) বাসে করে 

(খ) ট্রামে চেপে 

(গ) পায়ে হেঁটে 

(ঘ) নিজের গাড়িতে

Ans. (খ) ট্রামে চেপে


5. ”মৃত্যুঞ্জয় এর রকম দেখেই নিখিল অনুমান করতে পারলো …. ।”—নিখিল অনুমান করলো —

(ক) তার শরীর ভালো নেই 

(খ) বড়ো একটা সমস্যার সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে 

(গ) তার মন ভালো নেই 

(ঘ) তার উপর সে রাগ করে আছে

Ans. (খ) বড়ো একটা সমস্যার সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছে।


6. মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির বাজার ও কেনাকাটা করে—

(ক) মৃত্যুঞ্জয় নিজে 

(খ) তার ভাই ও চাকর 

(গ) টুনুর মা 

(ঘ) মৃত্যুঞ্জয় ও তার চাকর

Ans. (খ) তার ভাই ও চাকর


7. ফুটপাথে ব্যক্তিটির মৃত্যুর কারণ—

(ক) রোগ 

(খ) দুর্ঘটনা 

(গ) খাদ্যে বিষক্রিয়া 

(ঘ) অনাহার

Ans. (ঘ) অনাহার


8. নিখিল দেখেছিলো যে মৃত্যুঞ্জয় শার্সিতে আটকানো মৌমাছির মতো —

(ক) উড়ে বেড়াচ্ছে 

(খ) মধু খাচ্ছে 

(গ) গুনগুন করছে 

(ঘ) মাথা খুঁড়ছে

Ans. (ঘ) মাথা খুঁড়ছে


9. মৃত্যুঞ্জয় অফিসে ঠিকমতো না এসে কোথায় যায়?

(ক) বাজারে 

(খ) আত্মীয়ের বাড়িতে 

(গ) নিজের। বাড়িতে 

(ঘ) শহরের ফুটপাথে ঘুরে বেড়ায়

Ans. (ঘ) শহরের ফুটপাথে ঘুরে বেড়ায়


10. মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে থাকে—

(ক) দশ জন লোক 

(খ) পাঁচ জন লোক 

(গ) সাত জন লোক 

(ঘ) ন’জন লোক

Ans. (ঘ) ন’জন লোক


11. “গাঁ থেকে এইচি। খেতে পাই নে বাবা। আমায় খেতে দাও।” কথাগুলো বলেছে

(ক) টুনুর মা 

(খ) মৃত্যুঞ্জয় 

(গ) নিখিল 

(ঘ) মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলে-মেয়েরা

Ans. (খ) মৃত্যুঞ্জয়


12. ”নিখিল সন্তর্পনে প্রশ্ন করলো।”— প্রশ্নটি ছিল —

(ক) তোমার কি হল ? 

(খ) কি হল তোমার ? 

(গ) কি হল হে তোমার ? 

(ঘ) কি হয়েছে তোমার ?

Ans. (গ) কি হল হে তোমার ?


13. নিখিল রোগা, তীক্ষ্ণবুদ্ধি এবং একটু

(ক) আলসে প্রকৃতির লোক 

(খ) সাহসী প্রকৃতির লোক 

(গ) ভীরু প্রকৃতির লোক 

(ঘ) চালাক প্রকৃতির লোক

Ans. (ক) আলসে প্রকৃতির লোক


14. সেদিন কোথায় যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখে ? 

(ক) বাজার। 

(খ) নিখিলদের বাড়ি 

(গ) অফিস 

(ঘ) বাড়ি ফেরার পথে।

Ans. (গ) অফিস।


15. নিখিল কার কাছে মাঝে মাঝে কাবু হয়ে যায় ?

(ক) মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে 

(খ) অফিসের অন্যান্যদের কাছে 

(গ) তার স্ত্রীর কাছে 

(ঘ) অফিসের বড়োবাবুর কাছে

Ans. (ক) মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে


16. “ফুটপাথে হাঁটা তার বেশি প্রয়োজন হয় না”- কার। প্রয়োজন হয় না ?

(ক) নিখিলের 

(খ) টুনুর মা 

(গ) মৃত্যুঞ্জয়ের 

(ঘ) টুনুর

Ans. (গ) মৃত্যুঞ্জয়ের


17. নিখিল অবসর জীবন কীভাবে কাটাতে চায়?

(ক) দুস্থ মানুষের সেবা করে 

(খ) দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে 

(গ) গান শুনে ও নাটক দেখে 

(ঘ) বই পড়ে আর একটা চিন্তার জগৎ গড়ে তুলে

Ans. (ঘ) বই পড়ে আর একটা চিন্তার জগৎ গড়ে তুলে


18. মৃত্যুঞ্জয়ের ধুলিমলিন সিল্কের জামা এখন

(ক) পরিচ্ছন্ন হয়েছে 

(খ) ছিড়ে গেছে 

(গ) অদৃশ্য হয়েছে 

(ঘ) নতুন হয়েছে।

Ans. (গ) অদৃশ্য হয়েছে


19. ‘গ্রুয়েল’ কথাটির অর্থ হলো—

(ক) এক ধরনের টনিক 

(খ) ভাতের ফ্যান

(গ) ফলের সরবত

(ঘ) সুস্বাদু খাবার

Ans. (খ) ভাতের ফ্যান


20. মৃত্যুঞ্জয়ের প্রকৃত বন্ধুর নাম হলো—

(ক) কৈলাস 

(খ) মানিক 

(গ) নিখিল 

(ঘ) সুব্রত

Ans. (গ) নিখিল


21. “কয়েক মিনিটে মৃত্যুঞ্জয়ের সুস্থ শরীরটা অসুস্থ হয়ে গেল। কারণ—

(ক) অফিসে কাজের প্রবল চাপ ছিল 

(খ) প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হেঁটে সে অফিসে এসেছিল 

(গ) প্রথমবার অনাহারে মৃত্যু দেখে সে প্রবল আঘাত পেয়েছিল 

(ঘ) বেশি খাবার খেয়ে ফেলায় তার বমি হচ্ছিল

Ans. (গ) প্রথমবার অনাহারে মৃত্যু দেখে সে প্রবল আঘাত পেয়েছিল


22. ”অন্য সকলের মতো মৃত্যুঞ্জয় কে সেও খুব পছন্দ করে”— সে কে —

(ক) তার অফিস এর বস 

(খ) নিখিল

(গ) টুনুর মা 

(ঘ) টুনু

Ans (খ) নিখিল


23. ফুটপাথে ব্যক্তিটির মৃত্যুর কারণ— 

(ক) রােগ 

(খ) দুর্ঘটনা। 

(গ) খাদ্যে বিষক্রিয়া। 

(ঘ) অনাহার। 

Ans. (ঘ) অনাহার।


24. সেদিন কোথায় যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখে ? 

(ক) বাজার। 

(খ) নিখিলদের বাড়ি 

(গ) অফিস 

(ঘ) বাড়ি ফেরার পথে।

Ans. (গ) অফিস।


25. মৃত্যুঞ্জয়ের প্রকৃত বন্ধুর নাম হলাে— 

(ক)  কৈলাস। 

(খ) মানিক 

(গ) নিখিল 

(ঘ) সুব্রত। 

Ans. (গ) নিখিল।


26. ”যথেষ্ট রিলিফ ওয়ার্ক”—না হওয়ার কারণ —

(ক) টাকার অভাব 

(খ) লোকের অভাব 

(গ)সদিচ্ছার অভাব

(ঘ) পরিকল্পনার অভাব

Ans. (খ) লোকের অভাব 


কে বাঁচায় কে বাঁচে SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর


প্রশ্ন ১। মৃত্যুঞ্জয় সেদিন অফিস আসার পথে কী দেখল?

উ: মৃত্যুঞ্জয় সেদিন অফিস আসার পথে প্রথম মৃত্যু দেখল অনাহারে মৃত্যু।


প্রশ্ন ২। মৃত্যুঞ্জয় এতদিন কী শুনে বা পড়ে এসেছে?

উ: মৃত্যুঞ্জয় এতদিন শুনে বা পড়ে এসেছে ফুটপাথের মানুষের মৃত্যুর কথা।


প্রশ্ন ৩।লােকে কোথায় মরতেও যায় না বেশি?

উ: মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িটা শহরের এমন এক নিরিবিলি অঞ্চলে, যে পাড়ায় ফুটপাথ বেশি না থাকায় দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ মরতেও সেখানে যায় না।


প্রশ্ন ৪।মৃত্যুঞ্জয়েৱ সুস্থ শরীরটা কয়েক মিনিটে অসুস্থ হয়ে পড়ল কেন?

উ: ফুটপাথে অনাহারে মানুষকে প্রথম মরতে দেখে মৃত্যুঞ্জয় মনে এমনই আঘাত পায় যে, মনে বেদনাবােধ ও শরীরে কষ্টবােধ হতে থাকায় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।


প্রশ্ন ৫। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে। গল্পে কোন্ ঘটনা নিখিলের কাছে সাধারণ সহজবােধ্য ঘটনা বলে মনে হয়?

উ: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে। গল্পে ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যু নিখিলের কাছে সাধারণ সহজবােধ্য বলে মনে হয়।


প্রশ্ন ৬। ফুটপাথে মানুষ মৱাৱ কথা কে, কোথায় শুনেছে?

উ: ফুটপাথে মানুষ মরার কথা মৃত্যুঞ্জয় কাগজে পড়ে বা লােকমুখে শুনেছে।


প্রশ্ন ৭। মৃত্যুঞ্জয় অফিসে নিজেৱ কুঠরিতে ঢুকেই চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ল কেন?

উ: ধপ করে বসে পড়ার কারণ হল, সে মানসিক বেদনায় ও শারীরিক কষ্টবােধে রীতিমতাে কাবু হয়ে পড়েছে।


প্রশ্ন ৮। গ্লাসে জলপান কৱে খালি গ্লাসটা নামিয়ে রেখে সে কী কৱল?

উ: মৃত্যুঞ্জয় খালি গ্লাসটা নামিয়ে রেখে শূন্যদৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল।


প্রশ্ন ৯। মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিলেৱ কেমন চেহারা ও কী প্রকৃতির মানুষ?

উ: মৃত্যুঞ্জয়ের সহকর্মী নিখিল চেহারা ও প্রকৃতির দিক থেকে রােগা, তীক্ষবুদ্ধি এবং আলসে প্রকৃতির মানুষ।


প্রশ্ন ১০। নিখিল অবসৱ জীবনটা কীভাবে কাটাতে চায়?

উ: নিখিল অবসর জীবনটা বই পড়ে আর একটা চিন্তাজগৎ গড়ে তুলে কাটিয়ে দিতে চায়।


প্রশ্ন ১১। নিখিলের মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ কৱা ও ভালােবাসা কেমন?

উ: নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে অন্য সকলের মতাে বেশ পছন্দ করে এবং হয়তাে অল্প একটু অবজ্ঞার সঙ্গে ভালােও বাসে।


প্রশ্ন ১২। মৃত্যুঞ্জয়কে নিখিলের ভালােবাসার কারণ কী?

উ: নিখিলের ভালােবাসার কারণ, মৃত্যুঞ্জয় নিরীহ শান্ত দরদি ভালাে মানুষ, সৎ ও সরল, তা ছাড়া মানবসভ্যতার সবচেয়ে পুরােনাে ও সবচেয়ে পচা আদর্শবাদের কল্পনাতাপস।


প্রশ্ন ১৩। মৃত্যুঞ্জয় কী বলে আনমনে আর্তনাদ করে উঠল?

উ: ‘মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল। আনমনে বলে মৃত্যুঞ্জয় আর্তনাদ করে উঠল।


প্রশ্ন ১৪। “ধিক। শত ধিক আমাকে।”—মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার জানাল কেন?

উ: মত্যায় নিজেকে ধিক্কার জানাল, কারণ লােকের অভাবে দুর্ভিক্ষে যথেষ্ট রিলিফ-ওয়ার্ক হচ্ছে না, অথচ সময় কাটাবে কীভাবে ভেবে পাচ্ছে না মৃত্যুঞ্জয়—এই মানসিকতার জন্য।


প্রশ্ন ১৫। একটা কাজ করে দিতে হবে ভাই’-কাজটা কী?

উ: কাজটা হল মৃত্যুঞ্জয়ের দেওয়া টাকা নিখিল কোনাে রিলিফ ফান্ডে দিয়ে আসবে।


প্রশ্ন ১৬। মৃত্যুঞ্জয় ও টুনুৱ মা একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে কেন?

উ: মত্যয় আর টুনুর মা একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, কারণ তাদের সেই বেলার ভাত দুর্ভিক্ষপীড়িত ক্ষুধার্ত মানুষদের বিলিয়ে দেয়।


প্রশ্ন ১৭। মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলেমেয়েগুলি চেঁচিয়ে কাঁদে কেন?

উ: মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলেমেয়েগুলি অনাদরে, অবহেলায় ও ক্ষুধার জ্বালায় চেঁচিয়ে কাঁদে।


প্রশ্ন ১৮। মৃত্যুঞ্জয়েৱ মনে হতাশা জেগেছে কেন?

উ: মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হতাশা জেগেছে, কারণ তার ধারণা হয়েছে সর্বস্ব দান করেও কিছু ভালাে করতে পারবে না।


প্রশ্ন ১৯। মৃত্যুঞ্জয় নিজের আগেকার যুক্তিতর্কগুলি কী করে?

উ: মৃত্যুঞ্জয় নিজের আগেকার যুক্তিতর্কগুলি খণ্ড খণ্ড করে।


প্রশ্ন ২০। মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের কথা শােনে কিন্তু তার চোখ দেখে কী টের পাওয়া যায়?

উ: মৃত্যুঞ্জয়ের চোখ দেখে টের পাওয়া যায় যে, সে আর কথার মানে বুঝতে পারে না।


প্রশ্ন ২১। মৃত্যুঞ্জয়ের গা থেকে কী অদৃশ্য হয়ে যায়?

উ: মৃত্যুঞ্জয়ের গা থেকে ধূলিমলিন সিল্কের জামা অদৃশ্য হয়ে যায়।


প্রশ্ন ২২। মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথে থাকে আর মারামাৱি কৱে কী খায়?

উ: মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথে থাকে আর মারামারি করে লঙ্গরখানার খিচুড়ি খায়।


প্রশ্ন ২৩। তখন সে রীতিমতাে কাবু হয়ে পড়েছে। সে কাবু হয়ে পড়েছিল কেন? 

উ: মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথে মানুষকে প্রথম অনাহারে মরতে দেখে শরীরে কষ্ট ও মনে বেদনাবোেধ নিয়ে অফিসে নিজের চেয়ারে বসে রীতিমতাে কাবু হয়ে পড়ে।


প্রশ্ন ২৪। অন্য সকলের মতাে মৃত্যুঞ্জয়কে সেও খুব পছন্দ করে।”—কী কারণে ‘সে’ মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করে?

উ: নিখিলের মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করার কারণ, মৃত্যুঞ্জয় শান্ত, নিরীহ, দরদি, ভালাে মানুষ ; তা ছাড়া মানবসভ্যতার সবচেয়ে পুরােনাে ও পচা আদর্শবাদের কল্পনাতাপস।


প্রশ্ন ২৫। নিখিলেৱ সমপদস্থ মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের তুলনায় কত টাকা মাইনে বেশি পায় এবং কেন?

উ: নিখিলের সমপদস্থ মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের সমান বেতন পায়। একটা বাড়তি দায়িত্বের জন্য সে পাশ টাকা বেশি মাইনে পায়।


কে বাঁচায় কে বাঁচে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর


1. “মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখল–অনাহারে মৃত্যু” —–অনাহারে মৃত্যুর কারণ কী?
Ans. দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমসাময়িককালে কিছু মজুতদার কালোবাজারির দাপটে বাংলায় নেমে এসেছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এই দুর্ভিক্ষ পঞ্চাশের মন্বন্তর নামে খ্যাত। অনাহারে মৃত্যুর কারণ হল নিদারুণ খাদ্যাভাব।

2. ‘একটা কাজ করে দিতে হবে তাই। কাজটা কী ছিল?
Ans. কাজটা ছিল মৃত্যুঞ্জয়ের দেওয়া বেতনের সমস্ত টাকা নিখিলকে রিলিফফাণ্ডে দিয়ে আসতে হবে।

3. টুনুর মা বিছানায় পড়ে থেকে বাড়ির লোকদের কীভাবে মৃত্যুঞ্জয়ের খোজ নিতে পাঠান ?

Ans. টুনুর মা বিছানায় পড়ে থেকে বাড়ির ছেলে, বুড়ো সকলকে তাগাদা দিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের খোঁজ নিতে পাঠান।

4. “মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল’– কার উক্তি এবং কে মরে গেল?

Ans. উক্তিটি মৃত্যুঞ্জয়ের। একজন ফুটপাথবাসী বুভুক্ষু মানুষ অনাহারে মরে গেল।

5. হয়তো মৃদু একটু অবজ্ঞার সঙ্গে ভালও বাসে। – অবজ্ঞার কারণ কী?
Ans. মৃত্যুঞ্জয় স্বাভাব চরিত্রে নিরীহ, শাস্ত, দরদী, ভালোমানুষ। সেই সঙ্গে সে সৎ ও সরল। তাই নিখিল অন্য সকলের মতো মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করলেও মানব সভ্যতার সবচেয়ে প্রাচীন ও পচা ঐতিহ্যের আদর্শবাদের কল্পনা তাপ বলে তাকে অবজ্ঞার সঙ্গে ভালোবাসত।

6. “তখন সে রীতিমতো কাবু হয়ে পড়েছে”– সে কাবু হয়ে পড়েছিল কেন ?

Ans. পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের দিনে অফিসকর্মী মৃত্যুঞ্জয় প্রথম পথে এক অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দেখে মানসিক আঘাত পেয়ে কাবু হয়ে পড়েছিল।

7. অবসর জীবনটা নিখিল কীভাবে কাটাতে চায় ?
Ans. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ নামাঙ্কিত গল্পে নিখিল বই পড়ে আর নিজস্ব চিন্তা জগৎ নিয়ে অবসর জীবনটা কাটাতে চায়।

8. “এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কি?” অপরাধটা কী?

Ans. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে! গল্পে দেখা যায়, মানুষ অনাহারে ভুগছে আর মৃত্যুঞ্জয় এই দুরবস্থার সময়েও চারবেলা পেটভরে খেয়েছে। সে এটাকেই অপরাধ বলে গণ্য করেছে।

9. “নিখিল ধীরে ধীরে টাকাটা গুনল’—টাকাটা গুনার কারণ কী?
Ans. নিখিল জানত মৃত্যুঞ্জয়ের মাইনে কত, তা সত্ত্বেও সে টাকাটা গুনেছিল। কারণ মৃত্যুঞ্জয় তার মানব দরদি চিত্ত, সমবেদনা, সহানুভূতি ও মমত্ববোধ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মাইনের সমস্ত টাকাটাই রিলিফফান্ডে দান করল কিনা।

10. “সেটা আশ্চর্য নয়। কোনটা আশ্চর্য নয়?

Ans. ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ গল্পে অনাহারে ফুটপাতে মৃত্যুর ঘটনাটি আশ্চর্য নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

11. একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি।’—বক্তার এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী?
Ans. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ নামাঙ্কিত গল্পে দেখা যায়— মৃত্যুঞ্জয় অনাহারীদের মধ্যে খাবার বিলিয়ে দেওয়ার জন্য একবেলা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল।

12. অনাহারক্লিষ্ট মানুষদের জন্য খাদ্যের সংস্থান করতে নিখিল কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

Ans. অনাহারক্লিষ্ট মানুষদের জন্য খাদ্যের সংস্থান করতে নিখিল তার পরিবারের রোজকার খাওয়াদাওয়ার বহর যতদূর সম্ভব কমিয়ে দিয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যই তারা খায়।

13. নিখিলের সমপদস্থ মৃত্যুঞ্জয় নিখিলের তুলনায় কত টাকা মাইনে বেশি পায় এবং কেন?

Ans. নিখিল ও মৃত্যুঞ্জয় সমপদস্থ হলেও মৃত্যুঞ্জয়ের বেতন পঞ্চাশ টাকা বেশি। কারণ সে একটা বাড়তি দায়িত্ব পালন করে। 

14. ‘সংসারে তার নাকি মন নেই।’—কীসে তার মন ছিল?
Ans. এখানে ‘তার’ বলতে নিখিলের কথা বলা হয়েছে। তার মন বইপত্র এবং চিন্তার জগতে বিচরণ করতো।

15. “ অন্য সকলের মতাে মৃত্যুঞ্জয়কে সেও খুব পছন্দ করে। ” – কী কারণে ‘ সে ’ মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করে ? 

Ans. মৃত্যুঞ্জয় আদর্শবাদের কল্পনা তাপস এক সরলচিত্ত যুবক বলে নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে পছন্দ করে। 

16. “ নইলে দর্শনটা অনেক আগেই ঘটে যেত সন্দেহ নেই। ” – কীসের দর্শন ? 

Ans. দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে মৃত্যুঞ্জয়ের ফুটপাথে অনাহার- মৃত্যুর দর্শনের কথা এখানে বলা হয়েছে। 

17. “ নিখিলকে বার বার আসতে হয়। ” – নিখিলকে কোথায় , কেন বারবার আসতে হয়?

Ans. পথে পথে ঘুরে বেড়ানাে বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির লােকেদের খোঁজ খবর নিতে নিখিলকে মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়িতে বারবার আসতে হয়।

18. “ একেবারে মুষরে যাচ্ছেন দিনকে দিন। ” – উক্তিটি কার ?

Ans. ‘ কে বাঁচায় , কে বাঁচে ‘ গল্পে প্রশ্নোদৃত এই উক্তিটি মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রীর। 

19. কি হল হে তােমার ? ” – কে , কাকে এ কথা বলেছিল ?

Ans. “ কে বাঁচায় , কে বাঁচে ’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের বমি করা ও শরীর খারাপ দেখে সহকর্মী নিখিল তাকে এ কথা বলেছিল। 

20. “কেমন একটা ধারণা জন্মেছে।” – ধারণাটা কী?
Ans. মৃত্যুঞ্জয়ের মনে একটা ধারণা জন্মেছে যে, যথাসর্বস্ব দান করলেও সে কিছুই ভালো করতে পারবে না।

21. “ শত ধিক আমাকে। ” – কে , কেন নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিল ?

Ans. মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিল কারণ দেশের লােকের অনাহার জনিত মৃত্যুর কথা জেনে শুনেও সে চারবেলা পেট পুরে খেয়েছে। 

22. ‘ কে বাঁচায় , কে বাঁচে ’ গল্পটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয় ?

Ans. ‘ কে বাঁচায় , কে বাঁচে ’ গল্পটি প্রথম সারদাকুমার দাস সম্পাদিত ভৈরব ’ পত্রিকার প্রথম শারদ সংখ্যায় ১৩৫০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়। 

23. আনমনে অর্ধ – ভাষণে যেন আর্তনাদ করে উঠল মৃত্যুঞ্জয়। ” – আর্তনাদটা কী ছিল ? 

Ans. আর্তনাদটা ছিল— “ মরে গেল ! না খেয়ে মরে গেল। 

24. “নিখিল সন্তর্পণে প্রশ্ন করল।”—সন্তর্পণে প্রশ্ন করার কারণ কী?
Ans. অফিসে ঢুকেই মৃত্যুঞ্জয় সেদিন চিন্তা-গম্ভীর হয়ে পড়েছিল। সহকর্মী নিখিল বুঝেছিল বড়ো একটা সমস্যার সঙ্গে তার মনের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক দোলাচলের কারণ বুঝতে না পেরে নিখিল সন্তর্পনে প্রশ্ন করেছিল।

25. ” সকলে এক কথাই বলে। ” – কী কথা বলে ? 

Ans. সকল দুর্ভিক্ষ পীড়িতই বলে , গাঁ থেকে এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও।

26. “রূঢ় বাস্তব নিয়মকে উল্টে মধুর আধ্যাত্মিক নীতি করা যায়, সেটা হয় অনিয়ম”—রূঢ় বাস্তব নিয়ম বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
Ans. জীবনের অন্নে মানুষের দাবি জন্মগত। অথচ সেই জন্মগত দাবিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একশ্রেণির স্বার্থপর মানুষ যাবতীয় ভোগ্যপণ্য কুক্ষিগত করে এবং গরিব মানুষকে ভাগ্যের  দোহাই দিতে শেখায়—এটাই রূঢ় বাস্তব নিয়ম।

27. “এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না”—কার, কেন একথা মনে হয়েছে?
Ans. সীমাহীন খাদ্যাভাবের দিনে একক প্রচেষ্টায় মৃত্যুঞ্জয় তার মাসমাইনের পুরো টাকা এবং একবেলার আহার ভুখা মানুষদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছিল। অভাব যেখানে সীমাহীন, সেখানে মৃত্যুঞ্জয়ের সামান্য এই দান নিতান্তই কিঞ্চিৎকর বলে বক্তা এরূপ মন্তব্য করেছে।

28. “ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা”—কোন্ কাজকে পাশবিক স্বার্থপরতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে?
Ans. নিখিল সমাজধর্মের কথা উল্লেখ করে মৃত্যুঞ্জয়কে বলেছিল, ‘দশজনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়ো পাপ।’ মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে এই ব্যাপারটি পাশবিক স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

29. “ক্রমে ক্রমে নিখিলকে হাল ছেড়ে দিতে হয়”—নিখিলকে কেন হাল ছেড়ে দিতে হয়েছিল?
Ans. সহকর্মী মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিকতার পরিবর্তনে নিখিল বহু যুক্তিতর্কের অবতারণা করে প্রাণপ্রণ সচেষ্ট হয়েছিল। কিন্তু কোনো কিছুতেই মৃত্যুঞ্জয়ের মনে পরিবর্তনের কোনো চিহ্ন পর্যন্ত দেখা যায়নি; বরং দিন দিন সে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। এই কারণেই নিখিল শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দিয়েছিল।

30. “মনটাও খারাপ হয়ে যায়।” –কার, কেন মন খারাপ হয়ে যায়?
Ans. ফুটপাতে অনাহারে মানুষের মৃত্যু দেখে মৃত্যুঞ্জয় মানসিকভাবে বিচলিত হয়ে পড়ে। চোখ ছলছল করে ওঠে তার। এই দেখে নিখিলের মনটা খারাপ হয়ে যায়।

31. “ভেতরে সে পুড়ছে সন্দেহ নেই”—উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এমন অবস্থার কারণ কী ?
Ans. ফুটপাথে অনাহারী মানুষের মৃত্যু দেখে মৃত্যুঞ্জয় মানসিক বেদনা ও শারীরিক কষ্টবোধে অধীর হয়ে পড়েছিল। এই মৃত্যুদৃশ্যই মৃত্যুঞ্জয়ের অন্তর্দহনের কারণ।

32. “একস্থানে তীক্ষ্মধার হা হুতাশ করা মন্তব্য করা হয়েছে।”— এই মন্তব্যের কারণ কী?
Ans. দুর্ভিক্ষপীড়িত অনাহারী গোটা কুড়ি মানুষের মৃতদেহকে ভালোভাবে সদ্‌গতি বা সৎকার করা হয়নি ।

কে বাঁচায় কে বাঁচে রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর


1. ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে।’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

Ans. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে।’ গল্পে মৃত্যুওয়কে কেন্দ্র করে ঘটনার বিকাশ ঘটেছে, তাই মৃত্যুঞ্জয়ের চরিত্রের বিভিন্ন দিকগুলি প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি পাঠকের চোখে ধরা পড়েছে, সেগুলি হল-

মধ্যবিত্ত বাঙালি: এ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী। দৈনন্দিন জীবনের বাঁধাধরা জীবনযাত্রার বাইরে সমাজে বা কর্মস্থলে তার ভূমিকা প্রায় ছিল না বললেই চলে।

ঐতিহা-আদর্শের কল্পনা-তাপস গতানুগতিক: জীবনযাত্রার মধ্যেও মৃত্যুঞ্জয়ের নিজের কিছু ভাবনা ছিল। সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য বিষয়ে তার নিজস্ব কিছু বিশ্বাস ছিল, এই বিশ্বাস ভাবপ্রবণ-আদর্শবাদের মতো নয় বরং অনেক বেশি মজবুত।

সংবেদনশীল: অফিস যাওয়ার পথে রাস্তায় অনাহারে মৃত্যু দেখে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়। মৃত্যুঞ্জয় এতটাই সংবেদনশীল যে তার মনের যন্ত্রণা শরীরের উপর প্রভাব ফেলে। অনাহারে মৃত্যুর ঘটনা তাকে সমস্যার গভীর পর্যন্ত ভাবায়।

সহমর্মী: মৃত্যুঞ্জয়ের মর্মবেদনা দিনে দিনে এত গাঢ় হয় যে অফিস, সংসার সবকিছু উপেক্ষা করে সে কেবলই অভুক্ত মানুষের কল্যাণের কথাই ভাবতে থাকে। সংসারনির্বাহের চিন্তা না করে মাসের পুরো মাইনেটা নিখিলের হাতে তুলে দেয় কোনো রিলিফ ফান্ডে দেওয়ার জন্য। শুধু তাই নয়, নিজে একবেলা না খেয়ে সেই খাবার অভুক্তদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়। অভুক্ত মানুষদের দুঃখ্যন্ত্রণা জানার জন্য সে ফুটপাথে বা লঙ্গরখানায় ঘোরে।

দায়িত্বজ্ঞানহীন: মৃত্যুঞ্জয় রাস্তার নিরন্ন মানুষগুলোর উপকার করার নেশায় মেতে উঠেছিল কিন্তু স্ত্রী-পুত্র-কন্যা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা ভাবেনি। সংসার খরচের টাকা রিলিফ ফান্ডে দেওয়ার পর কীভাবে সংসার চলবে সে-কথা তো ভাবেইনি উপরন্তু কাউকে কিছু না বলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়ে স্ত্রী ও অন্যদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে।

বাস্তব জ্ঞানহীন: মৃত্যুঞ্জয় অভুক্ত মানুষদের সেবা করার জন্য নিজে না খেয়ে যেভাবে খাবার বিলিয়ে দিত তা একপ্রকার আত্মহনন। নিখিলের মতে- “ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা।” অফিস ও সংসার ত্যাগ করে যেভাবে অভুক্ত মানুষদের সহমর্মী হওয়ার চেষ্টা করেছে তাতে জনসেবা যেমন হয়নি তেমনি পরিবারও চরম দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছে।

মহত্তম মানবতাবোধ: শোষিত শ্রেণির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য মৃত্যুঞ্জয় নির্দ্বিধায় সাধারণ মধ্যবিত্ত মানসিকতা ঝেড়ে ফেলে সর্বহারাদের স্তরে ভিক্ষাপাত্র হাতে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, মৃত্যুঞ্জয় যেন রবীন্দ্রনাথের সেই ভাবনার অনুসরণ করেছে— “ছোটোর উপকার করতে গেলে বড়ো হলে চলবে না, ছোটো অথবা সমান হতে হবে।” তাই চরম সোশিয়ালিস্টিক ভাবনাজাত মানবতাবোধ মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।



2. “নিখিল ভাবছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে,এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।”–কোন প্রসঙ্গে নিখিলের এই ভাবনা?এর মধ‍্যে দিয়ে নিখিল চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট‍্য ধরা পড়েছে।

   অথবা,

‘কে বাঁচায়,কে বাঁচে’ গল্প অবলম্বনে নিখিল চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা কর।     

Ans. নিখিলের চরিত্র: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র নিখিলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নলিখিতভাবে আলোচনা করা যায়।

সংসার-উদাসীন: মৃত্যুঞ্জয়ের অফিসের সহকর্মী-বন্ধু ছিল নিখিল। প্রখর বুদ্ধিমান, রোগা চেহারার এই যুবকটি ছিল কিছুটা অলস প্রকৃতির। দুই সন্তানের পিতা নিখিলের সংসারে বিশেষ মন ছিল না বলে কেউ কেউ মনে করতেন। বইপত্র পড়ে এবং নিজের ভাবনার জগতে বিচরণ করেই অবসর সময় কাটাত এই অন্তর্মুখী যুবকটি।

বন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ: অফিসের সমপদস্থ সহকর্মী মৃত্যুঞ্জয়ের মাইনে নিখিলের থেকে সামান্য কিছু বেশি হলেও অন্য সকলের মতো নিখিলও তাকে বেশ পছন্দই করত। হয়তো তাতে কিছুটা অবজ্ঞামিশ্রিত ভালোবাসাও জড়িয়ে থাকত। তবে মৃত্যুঞ্জয়ের মানসিক শক্তির কাছে নিখিল কিছুটা যেন নিস্তেজ ছিল। মাঝেমাঝে তার এই ভেবে আপশোশ হত যে সে যদি নিখিল না হয়ে মৃত্যুঞ্জয় হত, তাহলে মন্দ হত না।

বন্ধুবৎসল: নিখিল স্বার্থপর ছিল না। সে প্রতিমাসে তিন জায়গায় অর্থসাহায্য পাঠাত। তা ছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে সে মৃত্যুঞ্জয়কে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট থেকেছে। সে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছে এবং মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়া বন্ধ করলে তার ছুটির ব্যবস্থাও করে দিয়েছে।

সৎ এবং বাস্তববাদী: নিখিল দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেলও প্রিয় বন্ধু মৃত্যুঞ্জয়ের মতো ভেঙে পড়েনি। সে মৃত্যুঞ্জয়ের মতো বাস্তব জ্ঞানহীন ছিল না। মৃত্যুঞ্জয় মাইনের পুরো টাকা ত্রাণ তহবিলে দান করলে সে তার প্রতিবাদ করেছে এ কথা ভেবে “এ ভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।” মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারের প্রতি আন্তরিক ভাবনাও তার কোথায় প্রতিফলিত হয়েছে। বাস্তববাদী মানুষের মতোই সে বলেছে– “নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়ো পাপ”।

ইতিকথা: সুতরাং, নিখিল চরিত্রের বিভিন্ন দিকগুলি পর্যালোচনা করে বলা যায় যে, সে এ গল্পের হৃদয়বান এক বাস্তববাদী চরিত্র।


3. “মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয়।” মৃত্যুঞ্জয়ের। বাড়ির অবস্থা শোচনীয় কেন? এই শোচনীয় অবস্থার পরিচয় দাও।”

অথবা,

ফুটপাথে অভুক্ত মানুষের মৃত্যু মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারে কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল?

Ans. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে।’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় ব্যতিক্রমী চরিত্র। একদিন অফিসে যাওয়ার সময় ফুটপাথে অভুক্ত মানুষের মৃত্যু দৃশ্য দেখে তার মনে গভীর হতাশার সৃষ্টি হয়। সেই আঘাত তার শরীরেও প্রভাব ফেলে। একজন অনুভূতিশীল মানুষ হিসেবে সে ওই ক্ষুধার্ত মানুষের যন্ত্রণা উপলব্ধির চেষ্টা করে এবং প্রায়শ্চিত্ত করার নেশায় মেতে ওঠে।

মৃত্যুঞ্জয় প্রথমে তার মাসের পুরো বেতন রিলিফ ফান্ডে দিয়ে দেয়। সে অফিসের কাজে অমনোযোগী হয় আর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। পরিবর্তে শহরের ফুটপাথে-ফুটপাথে ঘুরে বেড়ায়। ক্রমশ সে দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষদের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করে, তাদের দুঃখের কাহিনি উপলব্ধি করতে চায়। এসব কারণে মৃত্যুঞ্জয় সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে। মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবারে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ নয়জন সদস্য। মৃত্যুঞ্জয়ের উপার্জনে পরিবার সচ্ছলভাবে চলে না, তার উপর মৃত্যুঞ্জয়ের মানবসেবার উদ্যোগের কারণে পরিবারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

মৃত্যুঞ্জয়ের স্ত্রী স্বামীর ভাবনার সহমর্মী হয়ে স্বামীর মতো একবেলার খাবার না খেয়ে অভুক্তদের বিলিয়ে দেয়। ক্রমশ সে অসুস্থ হয়ে শয্যা নেয়। আর স্বামীর খোঁজে বারবার লোক পাঠায়। তারা খোঁজ না পেয়ে টুনুর মাকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। পরিবারে এমন এক অশাস্তি বিরাজ করে যে প্রত্যেক সদস্যই না গম্ভীর কাদো কাদো মুখে বসে থাকে। পরিবারের কর্ত্রী টুনুর মা স্বামীর মতো অভুক্ত মানুষদের সেবার বাসনায় এমনি ঝুঁদ হয়ে থাকে যে ছেলেমেয়েদের জন্যও ভাবে না বরং শরীর সুস্থ থাকলে সে-ও স্বামীর মতো পথে পথে ঘুরত। ফুটপাথে অভুক্ত মানুষের মৃত্যু দেখে মৃত্যুঞ্জয়ের যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তার প্রভাবে পরোক্ষভাবে মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবার ভেঙে যেতে বসেছিল।


4. অভুক্ত মানুষদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুঞ্জয় কেন ফুটপাথে শোয় আর লঙ্গরখানার খাবার খায় অন্য অভুক্তদের সঙ্গে?

Ans. উনিশশো তেতাল্লিশের মন্বস্তরের প্রেক্ষাপটে রচিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে।’ গল্পে লেখকের স্বতন্ত্র জীবনদর্শনের সুস্পষ্ট ছাপ পড়েছে।

এই গল্পটি কাহিনির চাইতে বেশি নির্ভরশীল চরিত্রের উপর, আর যে চরিত্র ঘটনার রাশ ধরে রেখেছে, তা হল মৃত্যুঞ্জয়। সে মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী। পৃথিবীতে যে সকল নিঝঞ্ঝাট মানুষ রয়েছে, মৃত্যুঞ্জয় তাদের দলের। একদিন অফিসে যাওয়ার সময় সে ফুটপাথে একটি অনাহার ক্লিষ্ট মানুষের মৃত্যুর ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। এই ঘটনার অভিজ্ঞতা তার মনের উপর যেমন আঘাত হানে তেমনি প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তার শরীরেও। এমন মৃত্যু বন্ধ করার জন্য সে নানা রকম তৎপরতা শুরু করে অফিসের বেতন রিলিফ ফান্ডে দেয়, নিজের ও পরিবারের খাবার কমিয়ে অভুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা চালায়, কিন্তু তাতেও তার ইচ্ছার চরম বিন্দু দূরেই থেকে যায়। অফিস ছেড়ে কলকাতার পথে পথে ঘুরে লঙ্গরখানা দেখে, ক্লিষ্ট মানুষদের সঙ্গে কথা বলে অসহায়তা আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করে। বাড়ি ছেড়ে ফুটপাথে দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের সঙ্গে থাকতে শুরু করে, তার শরীরে মধ্যবিত্তের পোশাক উধাও হয়ে ওঠে ছেঁড়া ন্যাকড়া আর লঙ্গরখানার খিচুড়ি চেয়ে খায় অন্যদের মতো।

যে মধ্যবিত্ত স্বার্থপর, অমানবিক, আত্মসর্বস্ব সে দলে মাথা খুঁজতে পারেনি মৃত্যুশ্রয়। এ কারণেই ক্রমশ সর্বহারার স্তরে নেমে আসা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে।“শহরের আদি অন্তহীন ফুটপাত ধরে সে ঘুরে বেড়ায়” এবং সে উপলব্ধি করে সকলে একই দুর্ভাগ্যের শিকার আর দুঃখযন্ত্রণাও একই রকম কিন্তু এজন্য কারও মনে কারওর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। মৃত্যুঞ্জয় উপলব্ধি করে বাস্তব অভিজ্ঞতা, যে অভিজ্ঞতার কাছে নিখিলের থিয়োরিসর্বস্ব কথার মারপ্যাচ অর্থহীন হয়ে যায়।

মৃত্যুঞ্জয় লেখকের এক অনবদ্য সৃষ্টি। মধ্যবিত্ত থেকে সর্বহারাদের স্তরে নামিয়ে নিয়ে এসে চরিত্রটির যথার্থ শিল্পসম্মত ক্রম পরিণতি দিয়েছেন লেখক। মৃত্যুঞ্জয় শেষ পর্যন্ত মনে করেছিল শোষিত শ্রেণির সমপর্যায়ে নিহিত হতে হলে মধ্যবিত্তের বুর্জোয়া খোলসটিকে অবলীলায় ত্যাগ করতে হবে, আর তা করেও দেখাল সে। তাই ব্যক্তি মৃত্যুঞ্জয় নিজের স্বাতন্ত্র্যকে বিসর্জন দিয়ে সর্বহারাদের সামীপ্য গ্রহণ করে বুর্জোয়া শ্রেণিবিভক্ত সমাজের আদল বদলানোর এক চরম চেষ্টা করেছে তার এই ব্যতিক্রমী আচরণের দ্বারা।


5. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায় কে বাঁচে।’ গল্পটি ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্যে কতটা সমৃদ্ধ তা আলোচনা করো।

অথবা,

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে।’ গল্পটিকে সার্থক ছোটোগল্প বলা যায় কিনা বিচার করো।

Ans. কেবল আকারে ছোটো হলেই তাকে ‘ছোটোগল্প’ বলা যায় না, এর নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সার্থক কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ গল্পটির যে সকল বৈশিষ্ট্যের জন্য একে সার্থক ছোটোগল্প বলা যায় সেগুলি হল-

স্বল্প আয়তন ও সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু: ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ গল্পটি আকারে বেশ ছোটো, পাঠক একক পাঠেই গল্পটি শেষ করতে পারেন। আর এ গল্পের কাহিনি অংশ সামান্যই—মধ্যবিত্ত চাকুরিজীবী মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার সময় ফুটপাথে অভুক্ত মানুষের মৃত্যু দেখে মানসিক আঘাত পায়। সেই আঘাতে তার জীবনপ্রবাহ ভিন্ন খাতে বইতে শুরু করে—দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষদের কল্যাণে অর্থ, খাদ্য দান করেও তৃপ্ত হয় না সে। শেষ পর্যন্ত মধ্যবিত্তের খোলস ছেড়ে সর্বহারাদের একজন হয়ে তাদের দুঃখ কষ্টের উপলব্ধির গভীরতায় পৌঁছে যায়।

একমূখীন ও শাখাপ্রশাখাহীন: তেতাল্লিশের মন্বস্তরের প্রেক্ষাপটে এ গল্পের পরিণতি একমুখীনভাবে এগিয়েছে। গল্পের সূচনায় দুর্ভিক্ষের এক নির্মম চিত্র রয়েছে, আর এরপর মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের তীব্রতম মানসিক প্রতিক্রিয়া কোন পর্যায়ে পৌঁছায়, সেই জিজ্ঞাসাই গল্পকে পরিণতির দিকে দ্রুত টেনে নিয়ে গিয়েছে।

স্বল্প সংখ্যক চরিত্র: মাত্র তিনটি চরিত্রই গল্পের কাহিনিকে পরিণতি দিয়েছে। তবে এ গল্পে কাহিনির চাইতে গুরুত্ব পেয়েছে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের ক্রম রূপান্তর।মাত্র দুটি পার্শ্ব চরিত্র–টুনুর মা (সহযোগী) নিখিল (বিপরীত)-এর উপস্থিতি এবং ‘ছোটোগল্পের’ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য পূরণ করেছে।

চরম মুহূর্ত বা ক্লাইম্যাক্স: গল্পের শুরুতে তীব্র মানসিক আঘাতে যে পথে ছাপোষা মৃত্যুঞ্জয় যাত্রা শুরু করেছিল তারই স্বাভাবিক পরিণতি তার ভিক্ষা গ্রহণ। তাই শেষে “গা থেকে ক এইছি। খেতে পাইনে বাবা। আমায় খেতে দাও।” – উক্তিতে এ র্থ গল্পের চরম মুহূর্ত (Climax) প্রকাশ পায়।

বৃহতের ব্যঞ্জনা: মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রের বৃহত্তর মানবিক চেতনা লেখকের গভীর সমাজতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচায়ক। অভ্যস্ত মধ্যবিত্ত জীবনযাপনের মধ্যে থেকে সর্বহারা মানুষদের জীবন যন্ত্রণার সমান অংশীদার হওয়া সম্ভব নয়। তাই মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবার, অফিস ত্যাগ করে মগ হাতে ছিন্নবস্ত্রে লঙ্গরখানায় অভুক্তদের সঙ্গে কাড়াকাড়ি করে খাবার গ্রহণ মেকি সমাজসেবার পর্দা খুলে দেয়।


6. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পের নাম করণের স্বার্থকতা আলোচন করো।

Ans. সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আর ছোটো গল্পের নামকরণ আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ছোট গল্পের বিষয় তার নাম করণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশিরভাগ গল্প গুলিতে বিশেষ আদর্শ যুক্ত মানুষের প্রতিবাদ শিল্প রূপ লাভ করেছে। 

কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পের কাহিনী অত্যন্ত সাদামাটা এবং এই সাধারণ কাহিনীতে মৃতুঞ্জয়ের জীবন ছবিতে এক ব্যতিক্রমী রূপ ধরা পড়েছে। গল্পটির শুরু হয়েছে  এক অনাহারে মৃত্যুর দৃশ্য দিয়ে, আর মৃত্যুঞ্জয় ওই মৃত্যু দেখে অপরাধবোধে পীড়িত হয়। সাথে সাথে আদর্শবাদী মৃত্যুঞ্জয়ের পারিবারিক জীবনে নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া। এমনকি অফিসের সারা মাসের মাইনে টা বন্ধু নিখিলকে দিয়ে রিলিফ ফান্ডে দান করে দেয়।

ধীরে ধীরে মৃত্যুঞ্জয় ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে শহরের ফুটপাতে দুর্ভিক্ষ পীড়িত দের মাঝখানে। অভুক্ত মানুষ গুলির মধ্য থেকে মৃত্যুঞ্জয় নিজেই প্রতিবাদহীন হয়ে পড়ে এবং আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই লঙ্গরখানার খিচুড়ি খায়, ফুটপাতে পড়ে থাকে।

অনাহারক্লিষ্ট দের বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুঞ্জয় নিজেই নিজেকে সর্বহারাদের মধ্যে নিয়ে গেছে। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় এইভাবে নিজেকে যেমন বাঁচাতে পারেনি তেমনি অনাহারীদের ও বাঁচাতে পারেনি। তাই অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে গল্পের নায়ক নিজেকে শেষ করে ফেলেছে। সেই কারণে কে বাঁচায় কে বাঁচে গল্পটির নামকরণেে যে সার্থকতা  কোন সন্দেহ নেই।

অনাহারক্লিষ্ট দের বাঁচাতে গিয়ে গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় নিজেই অনাহারে জীবন সঁপে দিয়েছে, এমনকি তার স্ত্রী অর্থাৎ টুনুর মাকেও সেই পথে যেতে বাধ্য হতে হয়েছে তাই এইসব দিকে বিচার করলে গল্পটির নাম যথাযথভাবেই সার্থক।


7. “মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয়।” – মৃত্যুঞ্জয় কে? তার বাড়ির অবস্থা শোচনীয় কেন?

Ans. মৃত্যুঞ্জয়ের পরিচয়: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র হল মৃত্যুঞ্জয়।

বাড়ির অবস্থা শোচনীয় হওয়ার কারণ: মৃত্যুঞ্জয় ফুটপাথে অনাহার মৃত্যুর দৃশ্য দেখার পর থেকে ভেতরে বাইরে ক্রমশ পালটে যেতে থাকে। অপরাধবোধে দীর্ণ হয়ে সে বাড়িতে ভালো করে খেতে ও ঘুমোতে পারে না। একবেলা সস্ত্রীক না খেয়ে সেই খাবার সে অভুক্তদের বিলোনো শুরু করে। এমনকি, মাইনের দিন নিখিলের মাধ্যমে পুরো বেতনটাই সে ত্রাণ তহবিলে দান করে দেয়। এদিকে অফিসে তার আসা যাওয়ারও ঠিক থাকে না। কাজে ভুল করে, প্রায়ই চুপচাপ বসে থেকে ভেবে চলে সে। বাড়িতেও বিশেষ না থেকে শহরের গাছতলায়, ডাস্টবিনের ধারে বা ফুটপাথে পড়ে থাকা মন্বন্তরগ্রস্ত মানুষগুলিকে দেখতে সে ঘুরে বেড়াতে থাকে। মৃত্যুঞ্জয়ের এমন অবস্থার জন্যই তার বাড়ির শোচনীয় অবস্থা হয়েছিল। মৃত্যুঞ্জয়ের এই অবস্থায় তার স্ত্রী শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। মৃত্যুঞ্জয়ের ছেলেমেয়েরা খিদের জ্বালায় মাঝেমধ্যেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। মৃত্যুঞ্জয়ের অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের লোকেদের এমন শোচনীয় অবস্থাই হয়েছিল।


8. “কারো বুকে নালিশ নেই, কারো মনে প্রতিবাদ নেই।”— মন্তব্যটির প্রসঙ্গ আলোচনা করো। ভাবনাসূত্রটি বিশ্লেষণ করো।

Ans.  
প্রসঙ্গ: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ গল্পে দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যুর ঘটনা মৃত্যুঞ্জয়ের মনে তীব্র প্রভাব ফেলে। মৃত্যুঞ্জয় শহরের আদি-অন্ত ফুটপাথ ধরে ঘুরে বেড়ায়। বিপন্ন মানুষগুলির দুরবস্থা এবং অন্নকাতরতা তাকে প্রভাবিত করে। কিন্তু সেই মানুষদের আচরণ ও মনোভাব সে মেনে নিতে পারে না। এই প্রসঙ্গেই মন্তব্যটি করা হয়েছে।

ভাবনাসূত্রটির বিশ্লেষণ: দুর্ভিক্ষে মানুষদের দুরবস্থা মৃত্যুঞ্জয়কে প্রভাবিত করেছিল। সেই ফুটপাথবাসী মানুষগুলির প্রতিদিনের জীবন-যন্ত্রণা, বেঁচে থাকার অসম লড়াই ছিল তার পর্যবেক্ষণের বিষয়। এই মানুষগুলির সঙ্গে প্রথম দিকে যতটা সম্ভব সে আলাপ করত, কিন্তু পরবর্তীতে তা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ, মৃত্যুঞ্জয় দেখেছে যে, তারা সকলে একই কথা বলে এবং তাদের ভাষা ও বলার ভঙ্গি পর্যন্ত একইরকম। নেশাগ্রস্ত আচ্ছন্ন মানুষের মতো সেই একই ভাগ্যের এবং দুঃখের কাহিনি—নালিশহীন, প্রতিবাদহীন। কীভাবে তাদের জীবনের সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেল তা তারা জানতে কিংবা বুঝতে চায়নি কিন্তু সব কিছুই মেনে নিয়েছে। ভাগ্যের কাছে এই অসহায় আত্মসমর্পণ মৃত্যুঞ্জয়ের পছন্দ হয়নি। সে চেয়েছিল সমস্যার প্রকৃত উৎসগুলি এই মানুষরা বুঝুক, নাহলে তার সমাধান অসম্ভব। সেই কারণেই প্রতিবাদহীন এই মানুষগুলির সঙ্গে কথা বলা সে বন্ধ করে দিয়েছিল।


9. “দিন দিন কেমন যেন হয়ে যেতে লাগল মৃত্যুঞ্জয়।”—মৃত্যুঞ্জয় কেমন হয়ে যেতে লাগল? তার এমন হয়ে যাওয়ার কারণ কী?

Ans.  
মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবর্তন: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে’ ছোটোগল্প থেকে উদ্ধৃতিটি সংকলিত হয়েছে। অনাহারে মৃত্যু দেখার কিছুদিন পরই অফিসের মাইনের তারিখ আসে। সে দিন মৃত্যুঞ্জয় তার মাইনের পুরো টাকাটা নিখিলের মাধ্যমে রিলিফফান্ডে দান করে দেয়। সে-দিনের পর থেকেই মৃত্যুঞ্জয় কেমন যেন হয়ে যেতে থাকে। অফিসে আসতে দেরি করে, কাজে ভুল করে, প্রায়ই চুপচাপ বসে বসে ভাবে, তারপর একসময় বেরিয়ে যায়। বাড়িতেও তাকে বিশেষ একটা পাওয়া যায় না। দিনরাত শহরের ফুটপাথ ধরে সে হেঁটে বেড়ায়। বড়ো গাছের নীচে, ডাস্টবিনের ধারে বা খোলা ফুটপাথে যেসব দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ পড়ে থাকে, তাদের শুধু দাঁড়িয়ে থেকে লক্ষ করে সে। এইসব অনাহারীরা সন্ধ্যা থেকেই শুয়ে থাকে, কিন্তু অনেক রাতে, দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর হামাগুড়ি দিয়ে সামনের কোনো রোয়াকে উঠে সেখানে শুয়ে পড়ে। এরাই ভোর চারটের সময় লঙ্গরখানায় গিয়ে খাবারের জন্য লাইন দেয়। সকালের দিকে মৃত্যুঞ্জয় তাই বিভিন্ন পাড়ার লঙ্গরখানায় গিয়ে অন্নপ্রার্থীদের ভিড় লক্ষ করে।

মৃত্যুঞ্জয়ের পরিবর্তনের কারণ: মন্বন্তরকালে নিজের চোখে ফুটপাথে ঘটা অনাহার মৃত্যুর দৃশ্য দেখে ভীষণ রকমের মানসিক আঘাত পেয়েছিল মৃত্যুঞ্জয়। একজন মানুষ না খেতে পেয়ে মরার সময় কীরকম কষ্ট পায়, খিদের যন্ত্রণা না মৃত্যুযন্ত্রণা—কোন্‌টা বেশি কষ্টদায়ক—এসব প্রশ্ন তাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। মন্বন্তরকালে মৃত্যুঞ্জয় সপরিবারে চার বেলা খেয়ে চলেছে এবং ত্রাণকার্যেও কখনও এগিয়ে যায়নি বলে নিজেকে ধিক্কার দেয় মৃত্যুঞ্জয়৷ দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের বাঁচাতে তাই সে মাইনের সব টাকাটা ত্রাণ-তহবিলে দান করে দেয়। এমনটা করেও তার অপরাধবোধ না কমায় সে অমন হয়ে গিয়েছিল।


10. “নিখিল ভাবছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে, এভাবে দেশের লোককে বাঁচানো যায় না।”—নিখিলের বন্ধু অভুক্ত মানুষকে কীভাবে বাঁচাতে চায়? বন্ধুর এই সমাজসেবার বিপক্ষে নিখিল কী যুক্তি দেখিয়েছিল?

Ans. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ – গল্পে মৃত্যুঞ্জয় অফিসে যাওয়ার সময় ফুটপাথে অনাহারে মৃত্যুদৃশ্য দেখে। ওই দৃশ্য দেখার পর থেকেই মৃত্যুঞ্জয় অস্থির হয়ে ওঠে—কীভাবে নিঃস্বার্থ দানে অভুক্ত মানুষগুলোর কল্যাণ করা যায় এই ভাবনায়। সহকর্মী নিখিলের হাতে সে সমস্ত মাইনের টাকা তুলে দিয়ে কোনো রিলিফ ফান্ডে দিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। নিখিল সংসারের সদস্যদের কথা স্মরণ করিয়ে নিষেধ করলেও শোনে না। শুধু তাই নয়, সে নিজের একবেলার খাবার না খেয়ে বিলিয়ে দিতে থাকে। তার দেখাদেখি স্ত্রীও তার একবেলার ভাত বিলিয়ে দিতে থাকে। এভাবে নিজে কৃচ্ছ্রসাধন করে আর পরিবারের দায়িত্ব একরকম উপেক্ষা করে মৃত্যুঞ্জয় দেশের লোককে বাঁচানোর নেশায় মেতে উঠল।

নিখিল সহকর্মীর এই সমাজসেবার নেশা মোটেই সমর্থন করল না। নিখিল মৃত্যুঞ্জয়কে বোঝাতে চেষ্টা করল—“এভাবে দেশের লোককে বাঁচান যায় না।” সারা দেশময় চোখের আড়ালে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, আর মৃত্যুঞ্জয় যা করছে তা কেবল চোখের সামনে যারা মরছে তাদের বাঁচানোর সান্ত্বনা। নিখিল মনে করত ভূরিভোজটা অন্যায় কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন তা গ্রহণ করা অন্যায় তো নয়, বরং উচিত। আর মৃত্যুঞ্জয় যেভাবে নিজেকে না খাইয়ে মারতে বসেছে তা দশজনকে খুন করার চাইতে বড়ো অপরাধ। নিখিল মনে করে অভুক্তদের খাদ্য ত্রাণ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং তাদের স্বার্থপরতার শিক্ষা দিতে পারলে সমস্যা মিটত। নিজের বেঁচে থাকার ব্যাপারে যদি তারা স্বার্থপর হত তাহলে কেউ মরত না। যে কোনো বাধা টপকে তারা ঠিক খাবার জোগাড় করে আনত।


11. “সেদিন আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখল–অনাহারে মৃত্যু।”—এই ‘দেখা’-র ফলে মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?

Ans. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘কে বাঁচায়, কে বাঁচে!’ গল্পের মূল চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় বাড়ি থেকে দু-পা এগিয়ে ট্রাম ধরে অফিস যাওয়ার জন্য, আর নামে প্রায় অফিসের দরজায় তাই ফুটপাথে তার চলাচল কম হয়। একদিন অফিসে যাওয়ার পথে মৃত্যুঞ্জয়ের চোখে পড়ে অনাহারে মৃত্যু। এর আগে অনাহারে মৃত্যুর কথা কানে শুনে আর কাগজে পড়ে থাকলেও আজই তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হল।

মৃত্যুঞ্জয় অত্যন্ত সংবেদনশীল মানুষ, যে-কোনো মানসিক আঘাতেই সে কাহিল হয়ে পড়ে। এমনকি তার মনের প্রভাব এসে পড়ে শরীরের উপর। অফিসে আসার সময় অভুক্ত মানুষের মৃত্যু দৃশ্য দেখে তার মানসিক আঘাত ক্রমেই মাত্রা পেল এবং সে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করল। অফিসে পৌঁছে সে তার নিজের কুঠরিতে ধপ করে চেয়ারের উপর বসে পড়ল। কিন্তু তার শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা কিছুমাত্র কমল না বরং বেড়ে চলল। একটু বসেই সে গেল কলঘরে এবং দরজা বন্ধ করে বমি করতে শুরু করল। বাড়ি থেকে খেয়ে আসা ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি, মাছ, দই—সবই উঠে আসল বমির সঙ্গে।

মৃত্যুঞ্জয় কলঘর থেকে ফিরে কাচের গ্লাসে জলপান করে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু মানসিক যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠতে না পেরে শূন্য দৃষ্টিতে দেয়ালের দিকে তাকিয়ে রইল উদাস ভাবে। তার সহকর্মী নিখিলের প্রশ্নের উত্তরে আনমনে সে বলে উঠল—“মরে গেল! না খেয়ে মরে গেল!”

নিখিল তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারল মৃত্যুঞ্জয়ের মনে এইসব প্রশ্ন উঁকি মারছে-না খেয়ে মরা কী ও কেমন? কত কষ্ট হয়? ক্ষুধার যন্ত্রণা বেশি না মৃত্যুর? প্রভৃতি। মৃত্যুঞ্জয় নিজেকে ধিক্কার জানাল এই ভেবে যে ফুটপাথে লোক মরছে না খেয়ে অথচ সে চারবেলা পেটপুরে খেয়েছে বলে কিংবা রিলিফ কাজ ভালোভাবে চলছে না অথচ সে ভেবে পায় না কীভাবে সময় কাটাবে।


12. “ ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা ” — কে , কাকে একথা বলেছে ? ‘ পাশবিক স্বার্থপরতা ’ শব্দবদ্ধ ব্যবহারের কারণ কী ? 

অথবা , “ . . সমাজদর্শনের দিক থেকে বিচার করলে দশ জনকে খুন করার চেয়ে নিজেকে না খাইয়ে মারা বড়াে পাপ। ” বক্তা কে ? এই উক্তিতে বক্তার যে মনােভাব প্রকাশ পেয়েছে তা বিশ্লেষণ করাে। 

Ans. উদ্ধৃত উক্তিটি করেছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছােটোগল্প ‘ কে বাঁচায় , কে বাঁচে ! ’ গল্পের অন্যতম চরিত্র নিখিল। 

  নিখিল বাস্তববাদী। তার মতে নিজেকে না খাইয়ে মারা ঠিক নয়। দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষদের প্রতি সহানুভূতিবশত মৃত্যুঞ্জয় খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল। নিখিল তখন যুক্তি দেখিয়ে বলে মন্বন্তরের দিনে ভূরিভোেজনটা অন্যায় কিন্তু নিজেকে না খাইয়ে রাখা আরও অন্যায়। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু খেলে দুর্ভিক্ষের দিনে অন্যায় কোথায় ? শত শত নিরন্নের দিকে চেয়ে যদি নিজেকে অভুক্ত রেখে দেওয়া হয় তবে সেটা নিজেরই সঙ্গে প্রবঞ্চনা করা। 

 এর উত্তরে মৃত্যুঞ্জয় বলে ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা। স্বার্থপরতা চরম হলে তবেই এ কাজ করা যায়। নিজেকে খাইয়ে অন্যকে না খাইয়ে রাখা , মৃত্যুঞ্জয় আপন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে নিখিলের এই যুক্তিকে পাশবিক স্বার্থপরতা ’ বলেছে। 


13. “সেদিন আপিস যাবার পথে মৃত্যুঞ্জয় প্রথম মৃত্যু দেখল, অনাহারে মৃত্যু”-  এই দেখার ফলে মৃত্যুঞ্জয় এর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কি হয়েছিল?

 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প “কে বাঁচায় কে বাঁচে” তে আমরা দেখতে পাই মূল চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে একদিন এক না খাওয়া মানুষের অনাহারক্লিষ্ট মৃত্যুর দৃশ্যের সম্মুখীন হয়। যদিও দুর্ভিক্ষের সময় এরকম ঘটনা আকছার ঘটে থাকে কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় তার প্রাত্যহিক জীবনে ব্যস্ত থাকার কারণে এমন ঘটনা এর আগে দেখেনি। মৃত্যুঞ্জয় অত্যন্ত সংবেদনশীল। দৃশ্যটি তার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে এবং এই কারণে সে অফিসে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে এমনকি পরবর্তীতে বমিও করে। পাশের কক্ষ থেকে খবর নিতে আসে তারই খুব কাছের বন্ধু এবং সহকর্মী নিখিল। নিখিল এসে দেখে মৃত্যুঞ্জয় টেবিলে খালি কাচের গ্লাস রেখে ভাবলেশহীনভাবে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে দেয়ালের দিকে। তার এই অবস্থার কারণ খুঁজতে থাকে নিখিল। মৃত্যুঞ্জয়ের মধ্যে একটা উপলব্ধি বোধ তৈরি হয়, একশ্রেণীর মানুষের বাড়িতে অন্নের বাড়বাড়ন্ত আরেক শ্রেণীর মানুষের অন্নহীনতা তাকে অত্যন্ত ব্যথিত করে এবং এই প্রত্যক্ষ মৃত্যু চাক্ষুষ করার পর তার জীবনবোধকে বদলে যায়।

14.   “মরে গেল না খেয়ে মরে গেল” - বক্তা কে? এর মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্রের কোনদিকে ফুটে উঠেছে?

Ans. উদ্ধৃত অংশটি আমরা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “কে বাঁচায় কে বাঁচে” গল্পে পাই। এই মন্তব্যটি করেছেন কাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়।

প্রাত্যহিক জীবনে অত্যন্ত ব্যস্ত মৃত্যুঞ্জয় একদিন অফিসে যাওয়ার পথে প্রথমবার কোন অনাহারক্লিষ্ট মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে দেখে সামনে থেকে। এই ঘটনা তার মনের উপর অত্যন্ত গভীরভাবে প্রভাব ফেলে এবং বেদনাবোধের সঞ্চার করে। এক চরম শূন্যতা তাকে গ্রাস করতে থাকে। অফিসে গিয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে বমি করে। তারপর ভাবলেশহীনভাবে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে দেয়ালের দিকে। বন্ধু নিখিল কারণ খুঁজতে থাকে তার অসুস্থতা। নিখিল প্রশ্ন করলে মৃত্যুঞ্জয় অন্যমনস্ক ভাবে অস্পষ্ট ভঙ্গিতে আর্তনাদ করতে থাকে। ক্ষুধার কারণে মানুষের মৃত্যুকে মৃত্যুঞ্জয় মেনে নিতে পারে না। কারণ মৃত্যুঞ্জয় কখনো অনাহার দেখেনি তার ব্যক্তিগত জীবনে। অনাহারক্লিষ্ট মানুষের মৃত্যু তার চেতনা চৈতন্য কে অধিকার করে নেয়। এবং নিজে দিনে বেশ কয়েকবার উদরপূর্তিতে তার আত্মগ্লানি হতে থাকে। অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের আত্মবিলাপ জানা যায় মৃত্যুঞ্জয়ের মন্তব্যে। তার সংবেদনশীলতা, তার উপলব্ধি বোধ, তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সবকিছুই অধিকার করে সেই অসহায় মানুষটির মৃত্যু।  


15. “ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা”-  বক্তা কে? কোন কাজকে পাশবিক স্বার্থপরতা বলা হয়েছে?

Ans. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্প “কে বাঁচায় কে বাঁচে” থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশের বক্তা হলেন কাহিনীর মূল চরিত্র মৃত্যুঞ্জয়।

পঞ্চাশ এর দশকের দুর্ভিক্ষ কালে হঠাৎই একদিন ফুটপাতে একা নাখাওয়া মানুষের মৃত্যু দেখতে পায় মৃত্যুঞ্জয় অফিস যাওয়ার পথে। এর আগে মৃত্যুঞ্জয় কাউকে সামনে থেকে অনাহারে মরতে দেখেনি এবং সে নিজে চারবেলা আহার গ্রহণ করে তাই সে আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকে। অফিসে গিয়ে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বন্ধু নিখিল কারণ খুঁজতে থাকে। তার চিন্তা ভাবনার সাথে নিখিল সহমত হতে পারে না। নিখিল ভাবে সকল মানুষের সহানুভূতি একত্রিত করেও অনাহারীদের খিদে মেটানো সম্ভব নয়। এরপর বেতনের দিনে মৃত্যুঞ্জয় যখন বেতনের  টাকা নিখিলের হাতে তুলে দেয় ত্রান তহবিলে দান করতে তখন নিখিল এর সাথে তার মতানৈক্য হয়। নিখিল তাকে তার নিজের পরিবারের প্রতি দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাকে বলে দুর্ভিক্ষের সময় তার ভুঁড়িভোজ যতটা লজ্জার আবার অনাহারে থাকা ততটাই অনুচিত কর্ম। বেঁচে থাকতে গেলে যতটুকু খাদ্য প্রয়োজন তা গ্রহণ করতেই হবে। নিখিল বলে নিজের জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম খাদ্য টুকু সে কাউকে দান করতে পারবে না। দেশের সমস্ত লোক মরে গেলেও সে নিজের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু বাঁচিইয়ে রাখবে। এটাই তার জীবন দর্শন। এবং নিখিলের কাছে ১০ জনকে হত্যা করার মতোই গর্হিত কর্ম উপোস করে মৃত্যুবরণ করা। নিখিলের এই জীবন দর্শন, ভাবনাকেই মৃত্যুঞ্জয় পাশবিক স্বার্থপরতা বলে অভিহিত করেছে।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.