অর্ডিনারি আইটির পোস্ট নোটিফিকেশন


ভাত রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Bhat Descriptive Question Answer

ভাত রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় Bhat Descriptive Question Answer PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ভাত রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF

ভাত রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Bhat Descriptive Question Answer

নিচে ভাত রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। Bhat Descriptive Question Answer PDF পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।



ভাত - মহাশ্বেতা দেবী


‘ভাত’ গল্পটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর ‘শ্রেষ্ঠ গল্প সংকলন’ থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।


ভাত রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Bhat Descriptive Question Answer


1. ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তাকে বড়াে উতলা করে —এখানে কার কথা বলা হয়েছে ? ফুটন্ত ভাতের গন্ধ কেন তাকে উতলা করে ?

Ans: বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘ ভাত ’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিতে গল্পের প্রধান চরিত্র উচ্ছব তথা উৎসব নাইয়ার কথা বলা হয়েছে। 

মাতলা নদীর বন্যায় এক রাতের মধ্যে ঘর – বাড়ি , স্ত্রী – ছেলে – মেয়ে হারিয়ে উচ্ছব পাগল হয়ে যায়। পাগল উচ্ছব কারও কথা শােনে না। ঝড় – জলের দাপটে মাতলার গর্ভে চলে যাওয়া সব কিছু খুঁজে খুঁজে হয়রান উচ্ছব রান্না করা খিচুড়ি পর্যন্ত খায়নি। 

তারপর যখন তার হুঁশ হল ততদিন খিচুড়ি বন্ধ ড্রাইডাল ছাড়া কিছুই তার জোটেনি। চালগুলি চিবিয়ে জল খেয়ে কোনােমতে বেঁচে থাকা উচ্ছব মৃত আপনজনদের জন্য কাঁদে না , হঠাৎ ভাত খাওয়ার আশায় বাসিনীর সঙ্গে। 

সে কলকাতায় বড়াে বাড়িতে কাজ নেয়। তীব্র ক্ষুধা নিয়ে যজ্ঞের জন্য আবশ্যক আড়াই মণ কাঠ সে ভাত খাওয়ার আশায় কেটে ফেলে। তান্ত্রিকের নির্দেশমতাে যজ্ঞশেষের আগে সমস্ত রান্না করতে হবে , কিন্তু ভাত খাওয়া যাবে যজ্ঞ শেষ হলে। 

যজ্ঞ – হােম চলাকালীন সময়ে উচ্ছব বাড়ির লােকজনের কথাবার্তায় রান্না শেষ হওয়ার ইঙ্গিত পায় আর মনে মনে ভাত খাওয়ার আশাকে তীব্রতর করতে থাকে। 

কবে সে পেটপুরে ভাত খেয়েছে তার মনে নেই। এমনকি যেদিন উচ্ছব সব হারায়। সেদিনও সে হিঞে আর গুগলিসেদ্ধ নুন আর লঙ্কাপােড়া দিয়ে খেয়েছিল। 

তারপর থেকে ভাতের গন্ধ পাওয়ার জন্যে সে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছে। আজ সেই ভাত পাওয়ার তার সামনে এসেছে। সেই উত্তেজনায় ফুটন্ত ভাতের গন্ধে উচ্ছব উতলা হয়ে ওঠে।


2. মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্প অবলম্বন করে ঝড়জল বন্যার রাতটির বর্ণনা দাও।

Ans. ঝড়জল বন্যার রাতের বর্ণনা: প্রশ্নে উদ্ধৃত ঝড়জল বন্যার রাত উচ্ছবকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছিল। সেদিন সন্ধ্যাতেই অনেকদিন পর সপরিবারে উচ্ছব পেট পুরে ভাত খেয়েছিল। খেতে খেতে চন্নুনীর মা বলেছিল যে, দেবতার গতিক ভালো নয়। নৌকা নিয়ে যারা বেরিয়েছিল, তাদের নৌকা সহ ডুবে মরে যাওয়ার আশঙ্কাও সে প্রকাশ করেছিল। এরপরই শুরু হয় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি। ঝড়-বৃষ্টিতে উচ্ছবদের কাঁচা বাড়ির মাঝ খুঁটিটি ‘মাতাল আনন্দে টলছিল’ ধনুষ্টংকার রোগীর মতো। তাই উচ্ছব সর্বশক্তি দিয়ে ঘরের মাঝখানের  খুঁটিটা মাটির দিকে চেপে ধরে ছিল। কিন্তু তার মনে হচ্ছিল মা বসুন্ধরা যেন সেই খুঁটি রাখতে চাইছেন না, ঠেলে বের করে দিতে চাইছেন। তাই ভয়ে ভগবানের নাম নিতে থাকে সে। অন্যদিকে, ছেলেমেয়েকে জাপটে ধরে তার বউ ঠান্ডায় এবং ভয়ে কাঁপতে থাকে। এ সময়েই হঠাৎ বিদ্যুতের ঝলকানিতে উচ্ছব দেখতে পায় মাতাল মাতলা নদীর সফেন জল বাতাসের তোড়ে দ্রুত ছুটে আসছে। পরে একসময় জল নেমে গেলেও উচ্ছবের ঘরের সব কিছু এবং তার পরিবারকে উচ্ছব আর খুঁজে পায়নি, সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় সেই জল। বানের জলে ভেসে যাওয়া উচ্ছব গাছে বেধে কোনোক্রমে প্রাণে বাঁচে। এভাবে ঝড়জল-বন্যার সেই রাত উচ্ছবের জীবনে সর্বনাশ ডেকে এনেছিল।


3. “যা আর নেই, যা ঝড়-জল-মাতলার গর্ভে গেছে তাই খুঁজে খুঁজে উচ্ছব পাগল হয়েছিল।”—দুর্যোগটির বর্ণনা দাও। দুর্যোগটি উচ্ছবকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

Ans. দুর্যোগের বর্ণনা: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্পে আমরা দেখি, দুর্যোগের দিন সন্ধ্যাবেলায় চন্নুনীর মা খেতে খেতে বলছিল যে, দেবতার গতিক ভালো নয়। তারপরে রাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল দুর্যোগে উচ্ছবদের কাঁচা বাড়ির মাঝখানের খুঁটিটি ‘মাতাল আনন্দে টলছিল’ ধনুষ্টংকার রোগীর মতো। তাই ঘরের মাঝখানের খুঁটিটা উচ্ছব মাটির দিকে সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরেছিল এবং ভয়ে ভগবানের নাম নিচ্ছিল। অন্যদিকে, ছেলেমেয়েদের জাপটে ধরে তার বউ ঠান্ডায় আর ভয়ে কাঁপছিল। এসময় হঠাৎ বিদ্যুতের আলোর ঝলকানিতে উচ্ছব দেখে, মাতাল মাতলা নদীর সফেন জল বাতাসের তোড়ে দ্রুত ছুটে আসছে। নিমেষের মধ্যে সেই বানের জল উচ্চবের বউ ছেলেমেয়েকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। গাছে বেঁধে কোনোক্রমে প্রাণে বেঁচে যায় উচ্ছব

উচ্ছবের উপরে দুর্যোগের প্রভাব: দুর্যোগের আকস্মিকতায় সাময়িকভাবে উচ্ছবের বুদ্ধি লোপ পায়। বউ-ছেলেমেয়ে সহ সবকিছু ফিরে পাবার আশায় শুনসান বাড়ি ছেড়ে তাই সে নড়ে না। লঙ্গরখানায় দেওয়া খিচুড়ি তাই তার খাওয়া হয় না। কয়েকদিন পর সরকার শুকনো চাল দিলে দীর্ঘদিন যাবৎ উপোসি উচ্ছব তা চিবিয়েই কয়েকদিন কাটায়। এ সময় মাঝে মাঝেই তার মনে পড়ে সেই দুর্যোগের রাতটার কথা। তার মনে হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভাত না খেয়ে সে ভূত হয়ে যাচ্ছে, ভাত খেলেই সে পুনরায় মানুষ হবে এবং বউ-ছেলেমেয়ের দুঃখে কাঁদতে পারবে। তাই কয়েকদিন পেট পুরে ভাত খেতে সে কলকাতা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।


4. “তারপরই মনে পড়ে যে রাতে ঝড় হয়।”—কোন্ কথার পর ঝড়ের রাতের কথা উদ্দিষ্ট ব্যক্তির মনে পড়ে? কোন্ কোন্ কথা এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে তার?

Ans. মনে পড়ার পরিপ্রেক্ষিত: মহাশ্বেতী দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্প থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে উচ্ছব নাইয়ার কথা বলা হয়েছে। ধান খেতে আগুন লাগার কথা মনে পড়ার পরে উচ্ছবের ঝড়ের রাতের কথা মনে পড়ে।

প্রসঙ্গত মনে পড়া কথাগুলি: উচ্ছব নাইয়ার এ প্রসঙ্গে মনে পড়েছিল যে, অনেকদিন পর সেই সন্ধ্যায় সে পরিবার সহ পেটপুরে খেয়েছিল। অনেকটা হিঞে শাক সেদ্ধ, গুগলি সেদ্ধ, নুন এবং লংকাপোড়া দিয়ে মেখে ভাত খেয়েছিল সে। সেদিন উচ্ছবের মতো গ্রামের সকলেই পেট পুরে খেয়েছিল। চন্নুনীর মা খাওয়ার সময় বলেছিল যে, ভগবানের লক্ষণ ভালো নয় ৷ সে আরও বলেছিল যে, নৌকো নিয়ে যারা বেরিয়েছে, তারা নৌকা-সহ ডুবে মরতে পারে। এরপর উচ্ছবের মনে পড়ে ঘরের মাঝ খুঁটিটা মাটির দিকে ঠেলে ধরে রাখার কথা। ধরণি যেন সেই খুঁটি উপড়ে ফেলতে চাইছিল। ভগবানের নাম নিয়েছিল উচ্ছব। তারপর বিদ্যুতের চমকে সে দেখেছিল, মাতলার সফেন জল ছুটে আসছে। তারপর আর কিছু মনে পড়ে না তার নিজের পরিচয় পর্যন্ত। উচ্ছব ভাবে, তার কাগজ-ভরা, সুন্দর কৌটোটির কথা। আরও ভাবে, ভগবান যদি তার বউ-ছেলেমেয়েদের বাঁচিয়ে রাখত, তবে সে শত হাতির শক্তি পেত। সেই কৌটোটি নিয়ে তবে সপরিবারে সে ভিক্ষায় বেরোত। সতীশবাবুর নাতির ফুড খাওয়ার কৌটোটি উচ্ছব চেয়ে এনেছিল। অমন সুন্দর কৌটো থাকলে প্রয়োজনে একমুঠো চাল ফুটিয়েও নেওয়া যায়।


5. “মারতে মারতে উচ্ছবকে ওরা থানায় নিয়ে যায়।”—কারা, কেন উচ্ছবকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়?

Ans. উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক উচ্ছবকে মারার কারণ: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্পে মাতলা নদীর বন্যায় সর্বস্ব হারানো উচ্ছব ভাতের আশায় তার গ্রামতুতো বোন বাসিনীর মনিবের বাড়ি কলকাতায় চলে আসে। সেখানে ভাত খাওয়ার বিনিময়ে তাকে সেই বাড়ির বড়োকর্তার আয়ুবৃদ্ধির জন্য করা হোমযজ্ঞের কাঠ কাটতে হয়েছিল। এদিকে তান্ত্রিকের বিধান অনুযায়ী, যজ্ঞ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু খাওয়া বারণ ছিল। তাই খিদের জ্বালায় অস্থির হয়ে-পড়া উচ্ছবও ভাত খেতে পারেনি। মাঝে বাসিনীর দেওয়া ছাতু জল খেয়ে খিদে মেটানোর চেষ্টা করে উচ্ছব। যদিও এই সামান্য খাবারে তার পেট ভরেনি। তার সামনে অপ্রত্যাশিত সুযোগ চলে আসে বড়োকর্তার মৃত্যুর পরে। বড়ো পিসিমার নির্দেশে রান্না খাবার ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে উচ্ছব ভাতের বড়ো ডেকচিটা চেয়ে নেয় ফেলে দেওয়ার জন্য। তারপরে দ্রুত হেঁটে, পরে এক দৌড়ে স্টেশনে গিয়ে মনের সুখে ভাত খায়। অনেকদিন পরে আশ মিটিয়ে ভাত খেয়ে স্টেশনেই তৃপ্ত উচ্ছব সেই পেতলের ডেকচিটি জাপটে, তার কানায় মাথা ছুঁয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ভোরে পুলিশ ঘুমন্ত উচ্ছবকে স্টেশনেই ধরে ফেলে এবং পেতলের ডেকচি চুরির অপরাধে তাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়।


6. “বাদার ভাত খেলে তবে তো সে আসল বাদাটার খোঁজ পেয়ে যাবে একদিন।”—–‘বাদা’ কাকে বলে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এই রকম মনে হওয়ার কারণ কী?

Ans. বাদা: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশে থাকা ‘বাদা’ শব্দটির অর্থ হল জল-জঙ্গলপূর্ণ নীচু জমি।

এরকম মনে হওয়ার কারণ: ঝড়-বৃষ্টির যে রাতে উচ্ছব তার স্ত্রী ও পুত্র কন্যাকে হারিয়েছিল, সেদিন সন্ধ্যায় উচ্ছব অনেকদিন পরে পেট ভরে সপরিবারে ভাত খেয়েছিল। তারপর সর্বস্বান্ত উচ্ছব তার বন্যাবিধ্বস্ত ভিটেতে উন্মাদের মতো কয়েকদিন পড়ে ছিল তাই লঙ্গরখানার রান্না খিচুড়ি তার খাওয়া হয়নি’। তার যখন সম্বিত ফেরে তখন রান্না খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। কাঁচা চাল চিবিয়েই তাই তার দিন কাটতে থাকে। উচ্ছব যার জমিতে কাজ করত, সেই সতীশ মিস্তিরিও তাকে ভাত দিতে অস্বীকার করে। ভাতের আকাঙ্ক্ষাতেই উচ্ছব কলকাতায় গ্রামতুতো বোন বাসিনীর মনিববাড়িতে কাজ করতে আসে। সুন্দরবনের নোনা জলের বাদার অধিবাসী উচ্ছব দেখে যে, বাসিনীর মনিবদের মিষ্টিজলের বাদায় হওয়া নানাপ্রকার চালে তাদের ঘর ভরে আছে। সে-বাড়ির বড়োকর্তার মৃত্যু হলে তারা যখন বাড়ির সমস্ত ভাত এবং অন্যান্য রান্না খাবার ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে, তখন অভুক্ত উচ্ছব আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না। বাসিনীর হাত থেকে অশৌচ বাড়ির ভাতের ডেচকিটা ছিনিয়ে নিয়ে সে স্টেশনে ছুটে আসে এবং সেখানেই ভাতে হাত দিয়ে সে স্বর্গসুখ লাভ করে উচ্ছব। তার মনে হয়, মিঠে জলের বাদার ভাত খেলেই সে ‘আসল বাদা’ অর্থাৎ ‘অন্নের দেশ’-এর খোঁজ পেয়ে যাবে।


7. মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্পে উচ্ছবের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

Ans. দুর্ভাগ্যপীড়িত: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ ছোটোগল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র উৎসব নাইয়া নিম্নবর্গীয় সমাজব্যবস্থার একজন প্রতিনিধি। ভাগ্যের ফেরে মাতলার বন্যায় বউ ছেলেমেয়েকে হারায় সে। ভেসে যায় তার মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ উৎসবের জীবন থেকে সব কিছু কেড়ে নিলেও কেড়ে নিতে পারেনি তার আদিম প্রবৃত্তিকে, যে প্রবৃত্তির নাম খিদে। তাই প্রিয়জন হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই তার মধ্যে জেগে ওঠে ভাতের জন্য হাহাকার।

মমতা ও ভালোবাসাপ্রিয়: হাভাতে উৎসবের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসার আগে পর্যন্ত তার মধ্যেও কোমলতার স্পর্শ ছিল। তাই সতীশ মিস্তিরির তিন ধানে মড়ক লাগলে ধানের প্রতি পরম মমতায় কেঁদে ভাসায় এই গরিব ভাগচাষি। ভেসে যাওয়া ঘরের চালের নীচ থেকে পরিচিত স্বর শোনার আশায় নাওয়াখাওয়া ভুলে বসে থাকে উৎসব। অসম্ভব জেনেও পাগলের মতো বলতে থাকে, “রা কাড় অ চন্নুনীর মা !”

মানবিকতা: পরম আকাঙ্ক্ষিত ভাতের স্পর্শে ‘প্রেত’ উচ্ছবের ভিতর থেকে জেগে ওঠে ‘মানুষ’ উৎসব। তাই বড়ো বাড়ি থেকে নিয়ে আসা ডেকচির ভাত খেতে খেতে সে মনে মনে সেই ভাত তুলে দেয় বউ ছেলেমেয়ের মুখে… “চন্নুনী রে। তুইও খা, চন্নুনীর মা খাও, ছোটো থোকা খাঁ, আমার মধ্যে বসে তোরাও খা।"

সর্বহারা বঞ্চিত: আসলে উৎসবের মতো বঞ্ছিত, প্রান্তিক মানুষদের সমাজজীবনে ব্যক্তিনামেরও কোনো মূল্য নেই। তাই আমরা দেখি তার নিরুৎসব জীবনে সে আর উৎসব থাকেনি, তার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্ছব নাইয়া।


8. মহাশ্বেতা দেবীৱ লেখা ‘ভাত’ গল্পের কাহিনি সংক্ষেপে লেখাে। ওই প্রসঙ্গে গল্পের নামকরণ কতখানি সার্থক আলােচনা করাে।

Ans. ভাত খাবে কাজ করবে: নাম তার উৎসব। অবশ্য সে উচ্ছব নাইয়া নামে পরিচিত। মাতলা নদীর তীরে বাদা অঞ্চলের মানুষ সে। তার বাদায় ধান তেমন ফলে না। সেখানে মেলে গুগলি-গেঁড়ি-কচুশাক-সুসনি শাক। ভাতের খিদে তাই মেটে না। তা যেন আগুন হয়ে জ্বলতে থাকে। তার ওপর উচ্ছব লােকটা তুমুল ঝড়জলে ও মাতলার জলােচ্ছ্বাসে চিরকালের মতাে হারিয়েছে বউ- ছেলেমেয়ে। ওই নিরন্ন ক্ষুধার্ত হতভাগ্য মানুষটাকে কলকাতার বড়ােবাড়ির চাকরানি বাসিনী নিয়ে আসে হােম-যজ্ঞির কাঠকুটো কাটার কাজে। ভাত খাবে, তার বিনিময়ে কাজ করবে। বাসিনীর দয়ার কারণ হল উচ্ছব তার গা-সম্পর্কের দাদা।

ভাতের আশায় দুর্বল শরীরও শক্তিমান: বাসিনীর মুখে উচ্ছব কেন, গায়ের সবাই শুনেছে বাসিনীর মুনিবের বাড়িতে ভাতের হেলাফেলা। ভাঁড়ারে ঢােল ঢােল ভরতি চালের পাহাড়ের প্রমাণ পাওয়ার পর কথাটা উচ্ছবের মিছে মনে হয় না। চালের নামও অনেক। ভাতই রান্না হয় পাঁচ রকম চালের। হােম-যজ্ঞি উপলক্ষ্যে রান্নারও খুব ঘটা। শােকে-দুঃখে আর উপপাসে দিন কাটাতে কাটাতে উচ্ছব দুর্বল। তবু ভাত খাবে, এই আশায় যেন বলবান হয়ে হােম-যজ্ঞির পাঁচ রকমের আড়াই মন কাঠ কেটে ফেলে। পরিশ্রমের ফলে খিদে প্রচণ্ড রকম চাগিয়ে উঠলেও ভাত জোটে না। তান্ত্রিকের বিধান হল হােম-যজ্ঞ যতক্ষণ চলবে, ততক্ষণ বাড়িতে খাওয়া চলবে না।

অশুচি ভাত ভক্ষণ: বাড়িতে হােম-যজ্ঞির কারণ হল বাড়ির বুড়াে কর্তা লিভার ক্যানসারে মুমূর্ষ। ডাক্তারদের কথামতাে হােম-যজ্ঞির আয়ােজন। এতে নাকি রােগের নিরাময় হবে। কিন্তু যজ্ঞ হল আর বুড়ােও মরল। যজ্ঞ শেষে ভাত মিলবে আশায় ঘুম থেকে উঠে উচ্ছব শােনে মৃতের বাড়ির রান্না অশুচি। খাওয়া চলবে না। বড়াে পিসিমার হুকুম, সর্ব রান্না রাস্তায় ঢেলে দিয়ে আসতে হবে। উচ্ছব এই সুযােগে ভাতভরতি একখানা বড়াে ডেকচি নিয়ে ছুটে স্টেশনে পালিয়ে গিয়ে প্রাণভরে ভাত খায়। কিন্তু যে বাদার চালে ওই অঢেল ভাত, সে-বাদা আর তার খোঁজা হয় না।

নামকরণ সার্থক: গল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ভাত। ভাতকে বিষয় করে মহাশ্বেতা দেবী এই গল্প ছাড়াও আরও কয়েকটি গল্প লিখেছেন। ভাতের অভাব গরিব সংসারের সবচয়ে বড় সমস্যা। খিদে মেটানাের এই বস্তুটি গরিবের কাছে সহজলভ্য নয় বলেই, ভাতের আকাঙ্ক্ষা তাদের পিঠে চাবুক হাঁকড়িয়ে যেন পাগল করে তােলে। গল্পের শুরুতেই বলা হয়েছে যে, নিরন্ন উপােসি লােকটা কাজ করতে এসেছে ভাতের বিনিময়ে। তার পারিশ্রমিক মজুরি নয়, টাকাকড়ি নয়। শুধু ভুখা পেটে দু-মুঠো ভাত। যজ্ঞি বাড়ির গরম ভাতের গন্ধে তার ক্ষুধা উতলা হয়ে ওঠে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ভাত অধরা থেকে যায় তান্ত্রিকের বিধানে। যজ্ঞ শেষ না হলে খাওয়া হবে না। এরপর আরও বিপত্তি ঘটে। অসুস্থ বুড়াে কর্তা মরে গিয়ে নাকি বাড়ির সব রান্না অশুচি করে দিয়েছে। অশুচি ভাত খাওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু খিদে আর ভাতের তীব্র আকাঙ্ক্ষা কোনাে বিধিনিষেধই মানে না। উচ্ছব ওই অশুচি ভাত খেয়ে স্বর্গসুখ অনুভব করে। তার মৃত স্ত্রী-কন্যা-পুত্রের বুভুক্ষু আত্মাও যেন তার আহারের মধ্য দিয়ে অতৃপ্ত ক্ষুধা পরিতৃপ্ত করে। গল্পে ভাত এইভাবে অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কাজেই ভাত হল কাহিনির কেন্দ্রীয় ভাবনা ও গল্পের চালিকাশক্তি। কাজেই গল্পের ‘ভাত’ নামকরণ সার্থক।


9. “ দাঁতগুলাে বের করে সে কামটের মতােই হিংস্র ভঙ্গি করে কে , কার প্রতি এরূপ আচরণ করেছিল ? তার এরূপ আচরণের কারণ বিশ্লেষণ করাে।

Ans: প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর ‘ ভাত ‘ ছােটগল্পের মুখ্য চরিত্র উচ্ছব নাইয়া তার গ্রাম্য সম্পর্কিত বােন বাসিনীর প্রতি এমন আচরণ করেছিল। 

গল্পে বুড়াে কর্তার মৃত্যুর পরে তার মৃতদেহ শ্মশানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার পরে বড় পিসিমার কথায় বাড়ির সব রান্না ফেলে আসতে বলেন। আর ঠিক সেই মূহুর্তেই উচ্ছব স্থির করে নেয় যে সে কী করবে। সুদূর সুন্দরবন থেকে শুধুমাত্র খাবারের সন্ধানে সে এসেছিল শহরের বড়াে বাড়িতে কাজ করতে। কিন্তু বুড়াে কর্তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হােম – যজ্ঞ শেষ না হলে খাওয়া হবে না – এই যুক্তিতে সে তার চরম আকাঙ্খিত খাবার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। এর মধ্যে সে নানা রকম চালের এবং খাবারের গল্প শুনেছে ও দেখেছে। আর তাই তাে- ফুটন্ত ভাতের গন্ধ তাকে বড়াে। উতলা করে। 

কিন্তু ভাত জোটেনি উচ্ছবের। কিন্তু আজ যখন বাসিনী ভাত ফেলতে গেল তখন উচ্ছব ভাতের ডেকচি নিয়ে সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে সে কী করবে ? ডেকচি নিয়ে প্রথমে হনহনিয়ে হাঁটা তারপর দৌড়ানাে শুরু করে। যে ভাতের জন্য তার দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষা , সেই ভাত এখন তার হাতের মুঠোয়। এই সময়েই যখন বাসিনী তাকে ‘ অশুচ বাড়ির ভাত খেতে নিষেধ করে তা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে উচ্ছবের পক্ষে। সে ফিরে দাঁড়ায় এবং কামটের মতাে হিংস্র চোখে বাসিনীর দিকে তাকায়। তার দাঁত বের করা মুখ ভঙ্গি কামটের মতাে হিংস্র লাগে বাসিনীর। 


10. মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ রচনাটি ছোটোগল্প হিসেবে কতখানি সার্থক, তা আলোচনা করো।

Ans. বিষয়বস্তু: মহাশ্বেতা দেবীর ‘ভাত’ একটি ছোটোগল্প। ঝড়জল বন্যার এক রাতে সুন্দরবনের ভাগচাষি উচ্ছব নাইয়ার ঘরবাড়ি এবং স্ত্রী-সন্তান বানের জলে ভেসে যায়। প্রাথমিকভাবে শোক ও তারপর খিদের তাড়না তাকে পাগল করে তোলে। তার চাষ করা জমির মালিক সতীশ মিস্তিরির কাছে ভাতের প্রার্থনা করে ব্যর্থ হয়ে ক-দিন পেটপুরে ভাত খাওয়ার আশায় সে কলকাতায় চলে যায়। গ্রামতুতো বোন বাসিনীর মনিববাড়িতে গিয়ে পেটপুরে ভাত খাওয়ার চুক্তিতে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে সে। কিন্তু বিকেলে সেই ‘বড়ো বাড়ি’র বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটলে দীর্ঘদিন ধরে ভাত না খাওয়া উচ্ছব প্রমাদ গোনে। তাই যখন সেই অশৌচ বাড়ির রাঁধা ভাত ফেলে দেওয়ার উপক্রম হয়, তখন মরিয়া উচ্ছব বাসিনীর হাত থেকে ভাতের একটা পেতলের ডেকচি নিয়ে এক দৌড়ে স্টেশনে চলে যায়। সেই ভাত পেটপুরে খেয়ে সেখানেই সে শুয়ে পড়ে। ভোরে পেতলের ডেকচি চুরির অপরাধে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। যে বাদার জমির বিপুল ও উন্নত ধান ‘বড়ো বাড়ি’কে বড়ো করে তুলেছিল, সেই ‘আসল বাদাটার খোঁজ’, বন্ধ্যা বাদার অধিবাসী উচ্ছবের আর পাওয়া হয় না।

সার্থকতা: সুতরাং, উচ্ছবের ভাত খাওয়াকে কেন্দ্র করেই সুন্দরবন ও কলকাতার পটভূমিতে ‘ভাত’ ছোটোগল্পের মাত্র কয়েকদিনের কাহিনি গড়ে উঠেছে। এ গল্পে তাই স্থান-কাল-ঘটনাগত ঐক্য বজায় রাখা হয়েছে। তা ছাড়া, ‘ঘটনার ঘনঘটা’, ‘তত্ত্ব’, বা ‘উপদেশ’ও এখানে অনুপস্থিত। উচ্ছব এবং আরও চার-পাঁচটি চরিত্র নিয়েই গল্পটি বিস্তার লাভ করেছে। সমাপ্তিতে উচ্ছবের জেলে যাওয়া এবং ‘আসল বাদাটার খোঁজ না পাওয়ার মধ্যে যেমন চমক রয়েছে, তেমন তা গল্পটিকে চরম ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছেও দিয়েছে। ‘ভাত’ তাই নিঃসন্দেহে একটি শিল্পসার্থক ছোটোগল্প।


11. “ তুমি কি বুঝবে সতীশবাবু ! ” সতীশবাবু কী বুঝবে না ? কেন বুঝবে না ? সতীশবাবু উচ্ছবের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল ? 

Ans. আলােচ্য অংশটি মহাশ্বেতা দেবীর ভাত ’ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। ভাত না। খেলে কীরূপ ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় , উচ্ছব তা বুঝতে পেরেছে। একারণেই উচ্ছব জানিয়েছে সতীশবাবু ভাত না খেতে পারার জ্বালা বুঝতে পারবে না। 

সতীশবাবু আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল। উচ্ছবের মতাে যে নদীর পাড়েও থাকে , মেটে ঘরেও থাকে না। তার পাকা ঘর ঝড়ে ভেঙে যায়নি , এছাড়া তার ধান – চাল। সম্পূর্ণ নিরাপদে আছে। তাই দেশজোড়া দুর্যোগের সময়েও তার ঘরে রান্না হয়েছে। উচ্ছবের আর্থিক অবস্থা ভালাে নয়। তার যা কিছু ছিল তাতেও ভগবানের মার পড়েছে। 

তুমুল ঝড়বৃষ্টিতে মাতলার জলে উচ্ছবদের সংসার সর্বনাশ হয়ে যায়। একে উচ্ছবের ঘরদোর বিপর্যস্ত তার ওপর স্ত্রী – পুত্র হারিয়ে যায় এ হেন অবস্থায় হতদরিদ্র উচ্ছবদের পেটের জ্বালা সতীশবাবু কোনােমতেই বুঝতে পারবে না। তুমুল ঝড়বৃষ্টিতে উচ্ছবদের সংসার বিপর্যস্ত হয়ে গেলে সে সম্পূর্ণ একাকী হয়ে পড়ে। কয়েকদিন ধরে অভুক্ত থাকার জন্য উচ্ছব খিদের জ্বালায় ছটফট করে। খিদের জ্বালা মিটানাের জন্য সে সতীশবাবুর কাছে ভাতের প্রার্থনা করে , কিন্তু সতীশবাবু জানায় তাকে ভাত দিলে পঙ্গপালের মতাে মানুষ তার কাছে ভিড় করবে। প্রচণ্ড ক্ষুধার তাড়নায় উচ্ছব ভাত ভাত করছে শুনে সতীশবাবু মন্তব্য করেছে তার মতিভ্রম হয়েছে। উচ্ছবকে ভাত না দিয়ে সতীশবাবু নিষ্ঠুর , অমানবিক কাজ করেছে।


Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News


ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.