জ্ঞানচক্ষু গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Gyanchokkhu Descriptive Questions and Answers

দশম শ্রেনীর জ্ঞানচক্ষু গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF: প্রতিবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় Gyanchokkhu Descriptive Questions and Answers PDF থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি জ্ঞানচক্ষু গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF. নিচে দশম শ্রেনীর জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন। জ্ঞানচক্ষু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর PDF পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন।

জ্ঞানচক্ষু গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Gyanchokkhu Descriptive Questions and Answers




জ্ঞানচক্ষু - আশাপূর্ণা দেবী

‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর ‘কুমকুম’ গল্প সংকলন থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।



জ্ঞানচক্ষু গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Gyanchokkhu Descriptive Questions and Answers


১) “তপন আর পড়তে পারে না। বােবার মতাে বসে থাকে।”- তপনের এরকম অবস্থার কারণ বর্ণনা করাে। ৫ [মাধ্যমিক ২০১৮]

উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন একটা গল্প লিখেছিল। তার সেই গল্প যখন ছাপা হল, নিজের লেখা গল্প পড়তে গিয়ে তপন হতবাক হয়েছিল।

ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে মামাবাড়িতে এসে তপন জানতে পেরেছিল তার নতুন মেসো একজন লেখক। তাকে দেখেই জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল তপনের। সে ভাবে, নতুন মেসো যদি একজন লেখক হন তবে তপনের বা লেখক হতে বাধা কোথায়? এরপর সে হোমটাস্কের খাতায় আস্ত একখানা গল্প লিখে ফেলে। সেই গল্প ছোটোমাসির হাত ধরে নতুন মেসোর কাছে পৌঁছায়। গল্প পড়ে লেখক মেসো তপনের অনেক প্রশংসা করেন এবং সেই গল্পটি কোনো পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

তার লেখা গল্প হাজার হাজার ছেলের হাতে হাতে ঘুরবে- এই স্বপ্ন নিয়ে তপন অধীর আগ্রহে দিন গুনতে থাকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর একদিন নতুন মেসো একসংখ্যা সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তপনদের বাড়িতে আসেন। তপন বুঝতে পারে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

কিন্তু ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা গল্প পড়তে বসে তপন বুঝতে পারে সেই গল্পে তার হাতের ছোঁয়া নেই। নতুন মেসো সেই গল্পটা আগাগোড়া কারেকশন করে নতুন রূপ দিয়েছেন, যে গল্পের প্রতিটা লাইন তার কাছে অপরিচিত। এইজন্য তপন আর পড়তে পারে না, বােবার মতাে বসে ছিল।


২) “শুধু এই দুঃখের মুহুর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন”- কী সংকল্প করেছিল? তার ‘এই দুঃখের মুহুর্তের’ প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। ১+৪

উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন সংকল্প করেছিল যে যদি কোনোদিন তার লেখা ছাপাতে দিতে হয় তো সে নিজে গিয়ে সম্পাদককে তার লেখা দিয়ে আসবে- তাতে তার গল্প ছাপানো হোক বা না হোক।

ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে মামার বাড়িতে গিয়েছিল তপন। সেখানে সে নিজের হোমটাস্কের খাতায় একটা আস্ত গল্প লিখে ফেলেছিল। আসলে, তপনের নতুন মেসো ছিল একজন লেখক এবং তাকে দেখেই তপনের লেখক হওয়ার বাসনা জেগেছিল। যাইহোক, তপনের গল্প ছোটোমাসির হাত দিয়ে নতুন মেসোর কাছে পৌঁছায়। মেসো তপনের লেখার প্রশংসা করেন এবং সেই গল্প কোনো পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তপন কৃতার্থ হয়ে বসে বসে দিন গুনতে থাকে।

বেশ কিছুদিন পর নতুন মেসো একসংখ্যা ‘সন্ধ্যাতারা’ নিয়ে তপনদের বাড়িতে এলেন। পত্রিকা দেখে তার বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল। সে বুঝতে পেরেছিল যে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

সত্যিই তপনের গল্প ছাপা হয়েছিল। কিন্তু গল্পটা কারেকশন করার এবং ছাপিয়ে দেওয়ার পুরো কৃতিত্বের দাবীদার হয় তার মেসো। গল্প ছাপা হলে যে আহ্লাদ হবার কথা, সেই আহ্লাদ খুঁজে পায়না তপন।

গল্পটা পড়তে গিয়ে তপন বুঝতে পারে যে নতুন মেসো আগাগোড়া কারেকশন করে পুরো গল্পটাই পাল্টে ফেলেছেন। সেই গল্পে তপনের হাতের ছোঁয়া ছিল না- সবকটা লাইন তার অপরিচিত। বইটা ফেলে রেখে ছাদে গিয়ে সে শার্টের তলাটা দিয়ে চোখ মুছে। এরপরেই তপন এই সংকল্প করেছিল।


৩) ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প অবলম্বনে তপনের চরিত্র বিশ্লেষণ করো। ৫

উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হল তপন। আলোচ্য গল্পে তার জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হওয়ার ঘটনাই তুলে ধরা হয়েছে। গল্পটি পড়ে তপনের চরিত্র সম্পর্কে যা জানা যায় তা হল-

১) প্রতিভাবান: তপন একজন প্রতিভাবান কিশোর লেখক। নতুন মেসোকে দেখে যখন সে জানল যে লেখকরা সাধারণ মানুষের মতো হয়, তখন সে ভাবল যে তারও তবে লেখক হতে বাধা নেই। আর তারপরেই একাসনে বসে আস্ত একটা গল্প লিখে ফেলেছিল।

২) ভাবুক: তপন স্বভাবত একজন ভাবুক প্রকৃতির ছেলে। এই ভাবুক স্বভাবের জন্য নিজের বিদ্যালয় জীবনের প্ৰথম দিনের স্মৃতিকে অবলম্বন করে গল্প লিখতে পেরেছিল। আবার, ছোটো মেসোকে দেখার আগে পর্যন্ত লেখক সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না। তবে, লেখকরা যে কেমন হতে পারে সেই নিয়ে অনেক কিছু ভেবে রেখেছিল যে।

৩) মর্যাদাবোধ: তপনের গল্প ছাপা হলে লেখক হিসেবে সে যত প্রশংসা পেয়েছিল, গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়ার জন্য নতুন মেসো তার থেকে বেশি প্রশংসা অর্জন করেছিল। এতে তপন অপমানিত বোধ করেছিল।

৪) বাস্তববুদ্ধি: ছোটোমাসি যখন তপনের লেখা গল্পটা নতুন মেসোর কাছে নিয়ে যাচ্ছিল, তপন তখন মুখে ‘না-আ-আ’ বলে আপত্তি করলেও মনে মনে ভেবেছিল যে তার লেখার প্রকৃত মূল্য কেবল তিনিই বুঝবেন।

৫) মানসিক দৃঢ়তা: নতুন মেসো তপনের গল্পটা কারেকশনের নামে আগাগোড়া পাল্টে দিয়েছিল। এইজন্য তপন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে এরপর সে নিজের গল্প নিজে গিয়ে ছাপতে দিয়ে আসবে, তাতে সে গল্প ছাপা হোক বা না হোক।


৪) ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণের যথার্থতা বিশ্লেষণ করো। ৫

উত্তরঃ আশাপূর্ণা দেবীর লেখা একটি ভিন্ন স্বাদের ছোটগল্প হল ‘জ্ঞানচক্ষু’। জ্ঞানচক্ষু কথার আক্ষরিক অর্থ হল জ্ঞান রূপ চক্ষু। জ্ঞানচক্ষু খুলে গেলে মানুষ প্রকৃত সত্যের সন্ধান পায়।

আলোচ্য গল্পের প্রধান চরিত্র তপন নামের একটি ছেলে। ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষে সে মামাবাড়িতে এসেছিল। যার সঙ্গে ছোটোমাসির বিয়ে হল, সেই নতুন মেসো নাকি একজন লেখক। এর আগে লেখকদের সম্পর্কে তপনের কোন ধারণা ছিল না। তারা যে আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই হয়, সে একথা জানত না। এই লেখক-মেসোকে দেখেই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। সেও গল্প লিখতে শুরু করে এবং তার প্রথম গল্প পড়ে নতুন মেসো সেটি ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।

সেই গল্প ছাপা হলে আরেকবার জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় তপনের। গল্পটা লেখার জন্য তপন যেটুকু বাহবা পেয়েছিল, গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়ার সুবাদে নতুন মেসো তার থেকে বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। আবার, ছাপার অক্ষরে নিজের গল্প পড়তে গিয়ে সে বুঝতে পারে যে মেসো তার গল্পটা আগাগোড়া কারেকশন করেছেন এবং সেই গল্পে তপন নিজেকে খুঁজে পায় না। সেদিন সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে এরপর কোনোদিন কোনো গল্প ছাপাতে হলে সে নিজে গিয়ে পত্রিকার দপ্তরে দিয়ে আসবে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তপনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হওয়াই এই গল্পের প্রধান বিষয়বস্তু। সেই অর্থে এই গল্পের নামকরণ সার্থক হয়েছে বলা যেতে পারে।


৫)‘ জ্ঞানচক্ষু‘ গল্পে তপনের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিনটি কিভাবে দুঃখের দিনে পরিণত হল তা নিজের ভাষায় লেখ।

উত্তরঃ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী রচিত  ‘জ্ঞানচক্ষু ‘ শীর্ষক ছোটগল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপনের সুখের দুঃখের দিনে পরিণত হয়েছিল।

তপনের জীবনের সুখের দিন : মামার বাড়িতে গিয়ে লেখা তপনের একটি গল্প সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল ।তিনি তপনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাঁর লেখা গল্পটি ‘ সন্ধ্যাতারা ‘ পত্রিকার সম্পাদক কে বলে ছাপানোর ব্যবস্থা করে দেবেন। এরপর বেশ কিছু দিন কোন খবর না আসায় তপন অনেকটা আশাহত হয়ে গেলে হঠাৎ তপনের বাড়িতে – “ছোট মাসি আর মেসো একদিন বেড়াতে এল, হাতে এক সংখ্যা সন্ধ্যাতারা।” সেই পত্রিকা দেখে এবং তাতে তপনের লেখা গল্পের কথা মনে করে পুলকিত হয়ে ওঠে। এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে সুখের দিন ।

সুখের দিন দুঃখের দিনে পরিণত হওয়া:  তবে সেই সুখের দিনে শেষ পরিণতি তপনের কাছে হয়ে উঠেছিল অত্যন্ত বেদনার্ত। পত্রিকায় প্রকাশিত গল্পটি একদিকে যেমন কারেকশন করতে হয়েছে অন্যদিকে মেসোর সুপারিশেই তা ছাপা হয়েছে- বাড়িসুদ্ধ এরকম আলোচনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এতে তখন মনে মনে খুব কষ্ট পায়। এরপর মায়ের আদেশ গল্পটি পড়তে গিয়ে তখন দেখে-” এর প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা ,তপনের অপরিচিত।” অর্থাৎ অসম্পূর্ণ গল্প লিখে দিয়েছেন তার পাকা হাতে কলমে ।একমাত্র শিরোনাম ছাড়া তাতে তপনের  কোনো অস্তিত্বই নেই। কিছুক্ষণ গড়িয়ে পড়ার পর তপন বইটা ফেলে রেখে বইটা ফেলে রেখে চলে যায় ।আসলে দুঃখে -কষ্টে তপন ছাদে উঠে গিয়ে কেঁদে ফেলে সংকল্প করে -“যদি কখনো লেখা ছাড়তে দেয় তখন নিজে গিয়ে দেবে। নিজের কাছে লেখা ছাপা হয় হোক, না হয় না হোক ” এভাবে তপনের সুখের মুহূর্তটি শেষে দুঃখের মুহূর্তে  পরিণত হয়েছিল।



Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News

ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুকWhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.