বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা PDF: বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা PDF একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা PDF. নিচে বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা PDF টি যত্নসহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।
বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা
বাংলার উৎসব
অথবা,
বাঙালির জীবনে উৎসবপ্রিয়তা
অথবা,
সমাজে উৎসবে ভূমিকা
অথবা,
মানুষের মেলবন্ধনে উৎসব
ভূমিকা:
মানুষের কেবল অন্ন সংস্থানের ওপর নির্ভর করে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে না। তার চাই প্রাণশক্তি, চাই আনন্দ, চাই উৎসব। বৈশাখের প্রথম দিন থেকে চৈত্রের শেষ দিন পর্যন্ত উৎসবের ঘনঘটায় বাঙালির ‘বারো মাসে তেরো পার্বণ’। বাংলার পর্যায়ক্রমিক ষড়ঋতুর রূপ পরিবর্তনের সঙ্গে সংগতি রেখে বাঙালি ও প্রাণরসে সিক্ত হয়ে নিত্য নতুন উৎসব রচনার উল্লসিত হয়। সে কখনও একক নয়, বহুর মিলনেই উৎসবের সার্থকতা। মনীষী বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর এ প্রসঙ্গে বলেছেন- আমার আনন্দে সকলের আনন্দ হউক, আমার শুভে সকলের শুভ হউক, আমি যাহা পাই তাহা পাঁচজনের সহিত মিলিত হইয়া উপভোগ করি- এই কল্যাণী ইচ্ছাই উৎসবের প্রাণ।”
প্রাচীন বাংলার উৎসব মুহূর্ত:
প্রাচীন বাংলার উৎসবের মধ্যে ছিল না। প্রাণের সঙ্গে প্রাণের অন্তরের সঙ্গে অন্তরের আত্মিক আদানপ্রদানে প্রাচীন বাংলা ছিল সমৃদ্ধ। প্রত্যেকে এই উৎসব তাদের সকলের উৎসব বলে মনে করত। বর্তমান ব্যতিব্যস্ততার দিনে প্রাচীনকালের সেই সদাচার, ভক্তি বিশেষ পরিলক্ষিত হয় না। তবুও প্রাচীনকালের এই চর্চার ওপর নির্ভর করে বাঙালির জীবনযাত্রার গূঢ় তাৎপর্য আভাসিত হয়।
উৎসবের প্রকৃতি:
ধর্ম, ঋতু, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ইত্যাদি নানা বিষয়কে অবলম্বন করে বাংলার উৎসবের আয়োজন করা হয়। বাংলার উৎসবগুলিকে মূলত ধর্মীয় উৎসব, জাতীয় উৎসব, ঋতু উৎসব, সামাজিক উৎসব ও আধুনিক উৎসব নামে বিভাজন করা হয়ে থাকে ৷ তবে রাষ্ট্রীয় উৎসবের অনেকগুলিই এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে, আবার সামাজিক উৎসব অনেকগুলি এখন পারিবারিক উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে।
ধর্মীয় উৎসব:
হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি নানা ধর্মাবলম্বী মানুষ বাংলায় বসবাস করে। প্রত্যেক ধর্মালম্বী মানুষ এখানে তার নিজের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করে। বাঙালি সমাজে হিন্দুদের উৎসব বেশি প্রাধান্য পায়। সাধারণত নববর্ষের শুরুতে গণেশ বন্দনা করে আমাদের ধর্মীয় উৎসবের যাত্রা শুরু হয়। তারপরে চলে উৎসব-মিছিল ৷ রথযাত্রা, দশহরা, বিশ্বকর্মা, মনসাপূজা, রাখিপূর্ণিমা ইত্যাদি ছোটোখাটো উৎসব শেষ হতে না হতেই বাংলার আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয় আগমনির আগমন বার্তা। এর পরই চলে আসে লক্ষ্মীপূজার আবাহন লগ্ন। কার্তিকের হেমন্তকালে দীপাবলি তথা কালীপূজা, জগদ্ধাত্রীপূজা ইত্যাদি তখনও শারদোৎসবের রেশ টেনে চলে চলে। মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে আসে দেবী সরস্বতীর বন্দনা পর্ব। এরপর শিবের গাজন উৎসব, একে নীলপূজাও বলা হয়।
এ ছাড়া ইসলামধর্মালম্বীদের ইদলফেতর, মহরম, ইঁদুজ্জোহা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ৷ খ্রিস্টধর্মালম্বীদের বড়োদিন, গুডফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে, বৌদ্ধদের বুদ্ধপূর্ণিমা; জৈনদের পরেশনাথ ইত্যাদি উৎসব বাঙালি সমাজে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে।
বাংলার ঋতু উৎসব:
বাংলার ঋতু উৎসবগুলি প্রকৃতির বৈচিত্র্যবিলাসের প্রতীক। বৈশাখের পুণ্য প্রভাবে নববর্ষের উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বীজবপন, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি উৎসবে বর্ষা পরিচয় ফুটে ওঠে। অঘ্রাণে বাংলার ঘরে ঘরে যখন নতুন ধানের আগমন ঘটে তখন অনুষ্ঠিত হয় নবান্ন উৎসব। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- “নবীন ধান্য হতে নবান্ন তোমার ভবনে ভবনে।” পৌষ মাসে শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা এক উল্লেখযোগ্য সামাজিক উৎসব। পৌষের ‘পৌষপার্বণ’ একটি উল্লেখযোগ্য খাদ্যেৎসব। একে লোকপ্রচলিত ভাষায় 'পিঠেপুলির উৎসব'ও বলা হয়। এর পাশাপাশি ফাল্গুনের হোলি ও চৈত্রের গাজন–এসবই ঋতুকেন্দ্রিক উৎসব।
সামাজিক উৎসব:
বাংলার সামাজিক উৎসবগুলি বৃহত্তর সামাজিক ভাবনার পরিচায়ক। এই উৎসবগুলির মধ্যে এক সর্বজনীন ভাব লক্ষ করা যায়। এর সার্থকতা সকলের প্রসন্নতায় ও শুভেচ্ছায়। ‘বারব্রত’, ‘অন্নপ্রাশন’, রাখিবন্ধন, ‘উপনয়ন’, ‘বিয়ে’ ‘জামাইষষ্ঠী’, ‘ভ্রাতৃদ্বিতীয়া’ উপলক্ষ্যে বাঙালি সমাজ আনন্দে মুখরিত হয়।
লোক-উৎসব:
প্রান্তিক জনজীবনে প্রচলিত আছে এমন বহু উৎসব। কোনোটা কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে, আবার কোনোটা জীবনের সঙ্গে। যেমন- ভাদু, টুসু, রোহিণী দান, বসুধারা ব্রত, পুণ্যিপুকুর ব্রত, ইতু পূজা, পদ্ম ইত্যাদি।
জাতীয় উৎসব:
এসব উৎসব ছাড়াও সম্প্রতি জাতীয় উৎসবগুলি সাড়ম্বরে পালিত হয়। নেতাজি জন্মোৎসব, বরীন্দ্রজয়ন্তী স্বাধীনতা ও প্রজাতন্ত্র দিবস উদ্যাপন, গান্ধিজয়ন্তী ইত্যাদি জাতীয় উৎসব উদযাপন বাঙালির জাতীয় চেতনা ও সংহতিবোধকে উদ্দীপ্ত করে।
আধুনিকতম উৎসব:
আধুনিক শিক্ষিত মানুষের চাহিদা পূরণ করতে বাঙালির উৎসব-সূচিতে নতুনভাবে সংযোজিত হয়েছে বইমেলা। চারিদিকে বইয়ের স্তূপ ৷ সকলে তাদের পছন্দের সবরকম বই খুঁজে নিতে পারেন বইমেলা থেকে। দেশ-বিদেশের প্রায় সর্বত্রই এখন শীতের মাঝামাঝি বহমেলা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষিত বাঙালিও তাই মেতে উঠেছে আধুনিকতম এই উৎসবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন করাও এখন উৎসবের অঙ্গ। যেমন- প্রতিবন্ধী দিবস, পরিবেশ দিবস, শিক্ষক দিবস যুব দিবস, মাতৃ দিবস, ভ্যালেটাইন ডে, সাক্ষরতা দিবস ইত্যাদি।
উৎসব সামাজিক মানুষের কর্তব্য:
বাংলার উৎসব যেহেতু বাঙালির আপন হৃদয়ে মাধুরী দিয়ে গড়া তাই যে কোনো উৎসবে বাঙালিকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সৌভ্রাতৃবোধ ও আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে গড়ে তুলতে হবে আনন্দময় জগৎ। সকল দ্বেষ, মনের সকল অন্ধকার দূর করে দিয়ে একে অপরের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মেলামেশা করবে, গড়বে নতুন ভালোবাসার জগৎ।
উপসংহার:
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, রাজনৈতিক বিবেকহীনতায় দেশ আজ খন্ডবিখন্ড। দেশনেতাদের পরিকল্পনাহীন অর্থনীতিতে দিশাহীন অনিশ্চয়তার মানুষ আজ দ্বিধাগ্রস্ত। তবুও আমাদের মনে রাখতে হবে- “আমাদের উৎসবে ভাবেরই প্রাধান্য। বাহিরের সমারোহে তাহার প্রধান অঙ্গ নয়।” উৎসবের মত্ততা আমাদের সমাজজীবনকে যেন কলুষিত না করে তোলে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রীতি পূর্ণ বাঁধন যেন আগামী দিনের বাঙালির উৎসবকে সার্থক করে তুলতে পারে সেই শুভেচ্ছা জাতিধর্মবর্ণনিবিশেষে সবার মধ্যে সঞ্চারিত হোক এই কামনা করি। প্রার্থনা করি-
“বাংলার মাটি বাংলার হাওয়া বাংলার ভাষা বাংলার গান,
বাংলার উৎসবে যেন মেতে ওঠে, বাঙালির প্রাণ।”
Also Read:
Download বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা
File Details:-
File Format:- Pdf
Quality:- High
File Size:- 3 Mb
File Location:- Google Drive
Download: Click Here to Download
Also Read:
Others Important Link
Syllabus Link: Click Here
Question Paper Link: Click Here
Admit Card Link: Click Here
Result Link: Click Here
Latest Job: Click Here
Age Calculator: Click Here
Please do not share any spam link in the comment box