মাধ্যমিকের বাংলা সুবোধ ঘোষের বহুরূপী প্রশ্ন ও উত্তর - Bahurupi by Subodh Ghosh Questions and Answers

সুবোধ ঘোষের বহুরূপী প্রশ্ন ও উত্তর: প্রতিবছর মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন 2022 (Madhyamik Bengali Suggestion 2022) থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। তাই আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি মাধ্যমিক বাংলা সিলেবাসের সুবোধ ঘোষের "বহুরূপী" র সমস্ত প্রশ্নোত্তর। 

এখানে মাধ্যমিক বাংলা ‘বহুরূপী’ গল্পের প্রশ্ন উত্তর যেমন বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল। যে গুলি পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন। নিচে Bahurupi by Subodh Ghosh Questions and Answers ‘বহুরূপী’ গল্পের MCQ, SAQ প্রশ্ন উত্তর গুলি যত্ন সহকারে পড়ুন ও জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি করুন।

মাধ্যমিকের বাংলা সুবোধ ঘোষের বহুরূপী প্রশ্ন ও উত্তর - Bahurupi by Subodh Ghosh Questions and Answers




মাধ্যমিকের বাংলা সুবোধ ঘোষের বহুরূপী প্রশ্ন ও উত্তর - Bahurupi by Subodh Ghosh Questions and Answers



বহুরূপী - সুবোধ ঘোষ

‘বহুরূপী’ গল্পটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘গল্পসমগ্র’ গল্প সংকলন থেকে গৃহিত হয়েছে। আলোচ্য পোস্টে সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ), অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (SAQ), সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন এবং রচনাধর্মী প্রশ্নগুলি তুলে ধরা হল।



বহুরূপী গল্পের MCQ প্রশ্নোত্তর (বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর) - Bahurupi MCQ Questions and Answers


১. ‘বহুরূপী’ গল্পটি কে লিখেছেন?

(ক) সুবোধ ঘোষ 

(খ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 

(গ) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় 

(ঘ) বনফুল মুখোপাধ্যায়

উত্তরঃ (ক) সুবোধ ঘোষ


২. গল্পকথক ও তার সঙ্গীরা কার কাছে গল্প করেছিল?

(ক) হরিদার কাছে 

(খ) নবদার কাছে 

(গ) দেবুদার কাছে 

(ঘ) বুড়োদার কাছে

উত্তরঃ (ক) হরিদার কাছে


৩. জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসী কতদিন ছিলেন ?

(ক) সাতদিন 

(খ) পাঁচদিন 

(গ) আটদিন 

(ঘ) চারদিন

উত্তরঃ (ক) সাতদিন


৪. সারা বছরে সন্ন্যাসী শুধু একটি কী খান?

(ক) সুপারি 

(খ) হরীতকী 

(গ) নারকেল 

(ঘ) আপেল

উত্তরঃ (খ) হরীতকী


৫. সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো কে পেয়েছিলেন?

(ক) রামবাবু 

(খ) শ্যামবাবু 

(গ) জগদীশবাবু 

(ঘ) শ্যামলবাবু

উত্তরঃ (গ) জগদীশবাবু


৬. জগদীশবাবু সন্ন্যাসীকে কী দিয়েছিলেন?

(ক) একটি আসন 

(খ) একটি চামর 

(গ) একটি কমণ্ডলু 

(ঘ) একজোড়া কাঠের খড়ম

উত্তরঃ (ঘ) একজোড়া কাঠের খড়ম


৭. সন্ন্যাসীকে বিদায় দেওয়ার সময় জগদীশবাবু তাঁর ঝোলার মধ্যে কত টাকা ফেলে দিলেন?

(ক) একশো টাকা 

(খ) দুশো টাকা 

(গ) তিনশো টাকা 

(ঘ) চারশো টাকা

উত্তরঃ (ক) একশো টাকা


৮. হরিদার পেশা কী ছিল?

(ক) পট খেলানো 

(খ) বহুরূপী সাজা 

(গ) যাত্রা করা 

(ঘ) গান করা

উত্তরঃ (খ) বহুরূপী সাজা


৯. হরিদা চকের বাসস্ট্যান্ডে কোন্ সময়ে পাগল সেজেছিল?

(ক) সকালবেলায়

(খ) বিকালবেলায় 

(গ) দুপুরবেলায় 

(ঘ) সন্ধ্যাবেলায়

উত্তরঃ (গ) দুপুরবেলায়


১০. হরিদা যিনি পাগল সেজেছিলেন, তার গলায় কীসের মালা ছিল?

(ক) ফুলের মালা 

(খ) কাগজের মালা 

(গ) হাড়ের মালা 

(ঘ) টিনের কৌটোর মালা

উত্তরঃ (ঘ) টিনের কৌটোর মালা


১১. হরিদা কী সাজ দেখিয়ে সবচেয়ে বেশি পয়সা পেয়েছিলেন ?

(ক) রূপসি বাইজি 

(খ) হনুমান 

(গ) রাক্ষস 

(ঘ) দেবী কালী

উত্তরঃ (ক) রূপসি বাইজি


১২. স্কুলের মাস্টারমশাই হরিদাকে কত ঘুষ দিয়েছিলেন?

(ক) পাচ আনা 

(খ) আট আনা 

(গ) সাত আনা 

(ঘ) চার আনা

উত্তরঃ (খ) আট আনা


১৩. সপ্তাহে কত দিন হরিদা বহুরূপী সেজে পথে বের হন?

(ক) দু-দিন 

(খ) তিনদিন

 (গ) একদিন 

(ঘ) চারদিন

উত্তরঃ (গ) একদিন


১৪. হরিদা জগদীশবাবুর বাড়ি গিয়ে ঝোলা থেকে কী বের করেছিলেন?

(ক) রামায়ণ 

(খ) মহাভারত 

(গ) উপনিষদ 

(ঘ) গীতা

উত্তরঃ (ঘ) গীতা


১৫. জগদীশবাবু হরিদাকে তীর্থ ভ্রমণের প্রণামী হিসেবে কত টাকা দিয়ে চেয়েছিলেন?

(ক) একশো এক টাকা 

(খ) দুশো টাকা 

(গ) পঞ্চাশ টাকা 

(ঘ) আড়াইশো টাকা

উত্তরঃ (ক) একশো এক টাকা



বহুরূপী অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - বহুরূপী গল্পের SAQ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Bahurupi SAQ Question Answer

১. জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসী কী খান?

উত্তরঃ তিনি সারা বছরে শুধু একটি হরিতকী খান।

২. জগদীশবাবু বিরাগীকে তীর্থভ্রমণের জন্য কত টাকা দিতে চেয়েছিলেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবু বিরাগীকে তীর্থভ্রমণের জন্য একশো এক টাকা দিতে চেয়েছিলেন।

৩. ‘সেটাই যে হরিদার জীবনের পেশা। – হরিদার জীবনের পেশা কী ছিল?

উত্তরঃ হরিদা মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে পথে বের হন। এটাই তার জীবনের পেশা।

৪. ‘সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।’ – সে জিনিসকে কেন ভয়ানক দুর্লভ বলা হয়েছে?

উত্তরঃ সন্ন্যাসী কেবল জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকে তার পদধূলি নিতে দেননি। তাই ‘সে জিনিস’ অর্থাৎ সন্ন্যাসীর পদধূলি ‘ভয়ানক দুর্লভ’।

৫. একটি ঘটনা উল্লেখ করে হরিদার দারিদ্র্য দশার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ হরিদার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না।

৬. ‘বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ’ ছদ্মবেশী হরিদাকে ধমক দিয়েছিল কেন?

উত্তরঃ কারণ, পাগলবেশী হরিদাকে দেখে বাসের সব যাত্রী আতঙ্কিত হয়েছিল।

৭. বাইজির ছদ্মবেশে হরিদা কত রােজগার করেছিলেন?

উত্তরঃ বাইজির ছদ্মবেশে হরিদার রোজগার হয়েছিল আট টাকা দশ আনা।

৮. ‘ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল ছেলেগুলাে’– ছেলেগুলাের ভয়ের কারণ কী?

উত্তরঃ কারণ, ছেলেগুলো দয়ালবাবুর লিচুবাগানে চুরি করতে গিয়ে পুলিশ-বেশধারী হরিদার কাছে ধরা পড়েছিল।

৯. হরিদা কোন্ ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন?

উত্তরঃ হরিদা একজন বিরাগীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন।

১০. জগদীশবাবু বিরাগীর পায়ের কাছে টাকার থলি রেখে কী প্রার্থনা করেছিলেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবু প্রার্থনা করেছিলেন যে, বিরাগী যেন একশো এক টাকা প্রনামী গ্রহণ করে তাকে শান্তি দেন।

১১. ‘তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়।’ – কীসে ঢং নষ্ট হবে?

উত্তরঃ হরিদা যদি বিরাগীর ছদ্মবেশে জগদীশবাবুর দেওয়া প্রনামীর টাকা গ্রহণ করতেন তাহলে তার ঢং নষ্ট হয়ে যেত।

১২. ‘অদৃষ্ট’ হরিদার কোন ভুল ক্ষমা করবে না?

উত্তরঃ হরিদার জীবনে নিত্য অভাব তবু তিনি জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকা গ্রহণ করেন নি। এই ভুলের কথা বলা হয়েছে।

১৩. ‘এটা কী কাণ্ড করলেন, হরিদা?’ – হরিদা কী কাণ্ড করেছিলেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর শত অনুরোধ সত্বেও হরিদা জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকা তুচ্ছভাবে ত্যাগ করেছিলেন। এখানে হরিদার এই কাণ্ডের কথা বলা হয়েছে।

১৪. ‘এসব ভাষা কি হরিদার মুখের ভাষা হতে পারে’- এ কথা কে বলেছিল?

উত্তরঃ ভবতোষের কানের কাছে মুখ এগিয়ে দিয়ে অনাদি এই কথাগুলি বলেছিল।

১৫. ‘আপনি একটা মিনিট থাকুন বিরাগীজি’- বক্তা কেন প্রতীক্ষা করতে বলেছিলেন?

উত্তরঃ বক্তা অর্থাৎ জগদীশবাবু এই সময় বিরাগীর জন্য প্রণামীর টাকা আনতে গিয়েছিলেন।

১৬. “শহরে যারা নতুন এসেছে…”- তারা কী করে?

উত্তরঃ শহরে যারা নতুন আসে তারা রূপসি বাইজির দিকে দু’চোখ বড়ো করে তাকিয়ে থাকে। এই বাইজি আসলে বহুরূপী হরিদা।

১৭. হরিদা কোথায় থাকেন?

উত্তরঃ শহরের সবচেয়ে সরু গলিটার একটা ছোট্ট ঘরে হরিদা থাকেন।

১৮. “একটা উন্মাদ পাগল”- সেই পাগল কী করেছিল?

উত্তরঃ সেই পাগল একটা থান ইট হাতে তুলে নিয়ে বাসের উপরে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল।

১৯. “ওটা কি একটা বহুরূপী?”- হরিদার কোন বেশ দেখে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল?

উত্তরঃ উন্মাদ পাগলবেশী হরিদাকে দেখে বাসের যাত্রীরা এই প্রশ্ন করেছিল।

২০. “সেদিন হরিদার রোজগার মন্দ হয়নি”- কোনদিন?

উত্তরঃ যেদিন হরিদা বাইজি সেজেছিলেন।

২১. জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর গুণাগুণ শুনে হরিদা আক্ষেপ করে কী বলেছেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসী সম্পর্কে হরিদা আক্ষেপ করে বলেছেন—“থাকলে একবার গিয়ে পায়ের ধুলো নিতাম।”

২২. সন্ন্যাসীর ভয়ানক দুর্লভ জিনিসটা কী?

উত্তরঃ সন্ন্যাসীর ভয়ানক দুর্লভ জিনিসটি হল সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো, যেটা জগদীশবাবু ছাড়া আর কেউ পাননি।

২৩. জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসী কোথায় থাকেন?

উত্তরঃ গল্পকার সুবোধ ঘোষের লেখা বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসী ছিলেন খুব উঁচু দরের সন্ন্যাসী। তিনি হিমালয়ের গুহাতে থাকেন।

২৪. সন্ন্যাসীর বয়স কত হবে?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরের বেশি বলে অনেকেই মনে করেন।

২৫. জগদীশবাবু কাঠের খড়মে কী লাগিয়েছিলেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেন।

২৬. জগদীশবাবু সন্ন্যাসীকে একশো টাকার একটা নোট জোর করে দিলে তিনি কী করেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবু সন্ন্যাসীকে একশো টাকার একটা নোট জোর করে দিলে সন্ন্যাসী হাসলেন আর চলে গেলেন।

২৭. হরিদা গম্ভীর হয়ে গেলেন কেন?

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গেলেন।

২৮. “ওই ধরনের কাজ হরিদার জীবনের পছন্দই নয়।”—কোন্ ধরনের কাজ হরিদার পছন্দ নয়?

উত্তরঃ অফিস বা দোকানের বাঁধাধরা গতানুগতিক কাজ হরিদার জীবনের পছন্দই নয়।

২৯. “হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে।”—এই নাটকীয় বৈচিত্র্য কী?

উত্তরঃ হরিদা মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে রোজগার করেন এবং তাতে আহারের সংস্থান হয়। এটাই হরিদার জীবনের একটি নাটকীয় বৈচিত্র্য।

৩০. হরিদা কোথায় পাগল সেজেছিলেন?

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে পাগল সেজেছিলেন।

৩১. “একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল।”—কোথায়, কখন আতঙ্কের হল্লা বেজে ওঠে?

উত্তরঃ একদিন চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঠিক দুপুরবেলা একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল।

৩২. বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ পাগল সেজে থাকা হরিদাকে কী বলেছে?

উত্তরঃ বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ পাগল সেজে থাকা হরিদাকে বলেছিল- “খুব হয়েছে হরি, এইবার সরে পড়ো। অন্যদিকে যাও।”

৩৩. হরিদা রূপসি বাইজি সেজে কত টাকা পেয়েছিলেন?

উত্তরঃ হরিদার রূপসি বাইজি সেজে রাস্তায় বের হয়ে রোজগার খারাপ হয়নি। তিনি মোট আট টাকা দশ আনা পেয়েছিলেন।

৩৪. হরিদা কী কী সাজে বহুরূপী হন?

উত্তরঃ হরিদা কোনোদিন বাউল, কোনোদিন কাপালিক, কোনোদিন কাবুলিওয়ালা, কোনোদিন সাহেব ও কোনোদিন পুলিশ সেজে বহুরূপী হন।

৩৫. হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়েছিলেন?

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানের ভিতরে দাঁড়িয়েছিলেন।

৩৬. জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখাবার জন্য হরিদার এত উৎসাহ জেগেছিল কেন?

উত্তরঃ মোটা মতন কিছু আদায় করে নেওয়ার জন্য জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখানোয় হরিদার এত উৎসাহ জেগেছিল।

৩৭. জগদীশবাবু কেমন মানুষ?

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবু ধনী মানুষ বটে, কিন্তু বেশ কৃপণ মানুষ।

৩৮. জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ধ্যার সময় গল্পকথক ও তার সঙ্গীরা কী করতে হাজির হয়েছিল?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর বাড়িতে সন্ধ্যার সময় গল্পকথক ও তার সঙ্গীরা স্পোর্টসের চাঁদা নেওয়ার জন্য হাজির হয়েছিল।

৩৯. জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদার পোশাক কেমন ছিল?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদার খালি গা, তার ওপর একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় এবং পরনে ছোটো বহরের একটা সাদা থান ছিল।

৪০. জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা কী খেয়েছিলেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা শুধুমাত্র ঠান্ডা জল খেয়েছিলেন।

৪১. জগদীশবাবুর কাছে হরিদা বকশিশ চাইলে তিনি কত দিতে পারেন?

উত্তরঃ জগদীশবাবুর কাছ থেকে হরিদা বকশিশ চাইলে তিনি বড়োজোর আট আনা কিংবা দশ আনা দিতে পারেন।

৪২. “খুব চমৎকার পাগল সাজতে পেরেছে তো লোকটা।”-কারা, কখন এমন ভাবনা ভাবেন ?

উত্তরঃ বাসের ড্রাইভার কাশীনাথ হরিকে ধমক দিয়ে সরে যেতে বললে বাসের যাত্রীরা শুনে বিস্মিত হয়। আর তাতে পাগলের ছদ্মবেশধারী হরিদার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠে। তখনই বাসযাত্রীরা এমন ভাবনা ভাবেন।

৪৩. “এবার মারি তো হাতি, লুঠি তো তার।” এ কথা কে, কেন বলেছিলেন ?

উত্তরঃ ছদ্মবেশ ধরে বহুরূপী সেজে হরিদা এবার অনেক অর্থ উপার্জন করতে চান। তা ছাড়া অল্প আয়ে চলে না তাই সারাবছর চলে যাবে এমন ভেবে হরিদা এ কথা বলেন।

৪৪. “বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যায় চেহারা।”—এ কথা ভাবার কারণ কী ?

উত্তরঃ আজকের মন্ত্রমুগ্ধ সন্ধ্যার চেহারা দেখে গল্পকথক বলেন যে, তাদের শহরের গায়ে কতদিন তো চাদের আলো পড়েছে কিন্তু কোনোদিন তো সেদিনের সন্ধ্যার মতো এমন একটা স্নিগ্ধ ও শান্ত উজ্জ্বলতা ফোটেনি—বক্তা তাই এমন ভেবেছেন।

৪৫. “চমকে উঠলেন জগদীশবাবু।”—জগদীশবাবু চমকে উঠলেন কেন?

উত্তরঃ গল্পকথক ও তার সঙ্গীরা জগদীশবাবুর কাছে স্পোর্টসের চাঁদার খাতা নিয়ে হাজির হন। এসময় জগদীশবাবু বারান্দার সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে ছোটো বহরের একটি সাদা থান পরা আগন্তুককে দেখে চমকে ওঠেন।

৪৬. “আমরা সবাই হরিদার ঘরের ভিতর ঢুকলাম।”—ঘরে সবাই কী দেখেন?

উত্তরঃ ঘরে ঢুকে সবাই দেখেন—হরিদার উনানের আগুন তখন বেশ গনগনে হয়ে জ্বলছে। উনানের ওপর হাঁড়ির চাল ফুটছে। আর একটা বিড়ি ধরিয়ে নিয়ে হরিদা চুপ করে বসে আছেন।



বহুরূপী গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর - Bahurupi Short Type Question and Answer


১] হরিদা পুলিশ সেজে কোথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন? তিনি কীভাবে মাস্টারমশাইকে বােকা বানিয়েছিলেন? ১+২ [মাধ্যমিক ২০১৭]

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে বহুরূপী হরিদা পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

স্কুলের চারটি ছেলে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে গিয়েছিল লিচু চুরি করতে। সেখানে আগে থেকেই হরিদা পুলিশ সেজে দাঁড়িয়েছিলেন। পুলিশ দেখে ছেলেরা ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল। পরে মাস্টারমশাই গিয়ে নকল-পুলিশ হরিদার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং ছেলেগুলোকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু পুলিশের সাজে হরিদা মাস্টারমশায়ের কাছে আট আনা ঘুষ নিয়ে তবেই ছেলেদের ছেড়েছিলেন। এভাবেই হরিদা মাস্টারমশাইকে বোকা বানিয়েছিলেন।


২] “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।”- কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে? তা দুর্লভ কেন? ১+২ [মাধ্যমিক ২০২০]

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলোর কথা বলা হয়েছে। সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ছিল ভয়ানক দুর্লভ জিনিস।

পুণ্য সঞ্চয়ের ব্যাপারে জগদীশবাবু অত্যন্ত হিসেবি ছিলেন। তার বাড়িতে যে সন্ন্যাসী এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি নাকি হিমালয়ের গুহাতে থাকতেন এবং সারা বছরে শুধু একটি হরিতকী খেতেন। এইরকম একজন সন্ন্যাসীর পদসেবা করলে যে অনেক পুণ্য অর্জন করা যাবে সে কথা জগদীশবাবু জানতেন। তাই তার পদধূলি যাতে অন্য কেউ না পায় সেইজন্য জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেন এবং সন্ন্যাসী সেই খড়ম পরা মাত্রই জগদীশবাবু তার পদধূলি গ্রহণ করেন। এজন্য বলা হয়েছে যে, সেই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ‘ভয়ানক দুর্লভ জিনিস’ ছিল।


৩] “হরিদার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না।” – হরিদার জীবিকা কী? কেন তার হাঁড়িতে কেবল জলই ফোটে? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদার একজন বহুরূপী। তিনি বহুরূপী সাজে মানুষের মনোরঞ্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

হরিদার জীবনদর্শন ছিল একটু অন্যরকম।দশটা-পাঁচটার বাঁধাধরা চাকরিতে তার ছিল তীব্র অনীহা। নাহলে চেষ্টা করলে কোনো একটা স্থায়ী কাজ জুটে যেত তার। কিন্তু সেসব কিছু করেন নি হরিদা। তিনি বহুরূপী সেজে মানুষকে আনন্দ দিয়ে যেটুকু উপার্জন করতেন তাই দিয়েই তার দিন চলে যেত। তবে, সপ্তাহে মাত্র একদিন তিনি বহুরূপী সেজে পথে বেরোতেন এবং খুব সামান্যই রোজগার করতেন। এইজন্য তার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না।


৪] “কিন্তু দোকানদার হেসে ফেলে” – কার কী কাণ্ড দেখে দোকানদার হেসেছিল? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদার কান্ড দেখে দোকানদার হেসে ফেলেছিল।

সেদিন হরিদা এক রূপসী বাইজির সাজে পথে নেমেছিলেন। দু’পায়ে ঘুঙ্গুরের রুমঝুম শব্দ তুলে সেই বাইজি প্রায় নাচতে নাচতে এগিয়ে যাচ্ছিল। হাতে ছিল তার ফুলসাজি। একেকটা দোকানের সামনে গিয়ে সে মুচকি হেসে, চোখ টিপে ফুলসাজিটা এগিয়ে দিচ্ছিল আর দোকানদাররা তাতে একটা করে সিকি ফেলে দিচ্ছিল। হরিদার এই কাণ্ড দেখেই দোকানদার হেসে ফেলেছিল।


৫] “আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়াে?” – কাকে একথা বলা হয়েছিল? এমন উক্তির কারণ কী? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে জনৈক ধনী ব্যক্তি জগদীশবাবুকে একথা বলা হয়েছিল।

একদিন জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা গিয়েছিলেন বিরাগীর ছদ্মবেশে। সেই সময় পাড়ার ছেলেরা স্পোর্টের চাঁদা আদায়ের জন্য জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিল। বারান্দায় একটা মস্ত আলোর সামনে তিনি চেয়ারে বসেছিলেন, এমন সময় সেখানে বিরাগীর আবির্ভাব ঘটে। বারান্দা থেকেই তাঁর উদ্দেশ্যে জগদীশবাবু বলেন, “আসুন”। বিরাগীকে দেখে জগদীশবাবু নেমে আসেন নি বলেই বিরাগীর ছদ্মবেশে হরিদা এমন উক্তি করেছিলেন।


৬] “পরম সুখ কাকে বলে জানেন?”- কার উক্তি? ‘পরম সুখ’ বলতে বক্তা কী বুঝিয়েছেন? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত বিরাগী একথা বলেছিলেন। আসলে এই বিরাগী ছিলেন বহুরূপী হরিদা।

হরিদা একজন দক্ষ বহুরূপী। সবাইকে একটা ‘জবর খেলা’ দেখাবেন বলে একদিন সন্ধ্যায় তিনি বিরাগীর সাজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেদিন শুধু সাজে-পোশাকে নয়, কথাবার্তাতেও তিনি বিরাগী হয়ে উঠেছিলেন। বিরাগীরূপী হরিদার মতে, সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়াই হল পরমসুখ।


৭] “অদৃষ্ট কখনও… এই ভুল ক্ষমা করবে না।” – ‘অদৃষ্ট’ শব্দের অর্থ কী? এমন মন্তব্যের কারণ কী? ১+২

উত্তরঃ ‘অদৃষ্ট’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল নয় দৃষ্ট যা। তবে, উদ্ধৃত অংশে শব্দটির অর্থ হল ভাগ্য।

সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীর সাজে গিয়েছিলেন। তাকে প্রকৃতই বিরাগী মনে করে জগদীশবাবু একশো এক টাকা প্রণামী হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন। টাকাটা নিলে তার কয়েকদিনের অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা হয়ে যেত। কিন্তু বিরাগী হয়ে তিনি সেই টাকা স্পর্শ করেন নি। এইজন্য বলা হয়েছে “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।” অর্থাৎ, তার ভাতের হাড়িতে শুধুই জল ফুটবে, ভাত ফুটবে না।


৮] “তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়।”- কার ঢং নষ্ট হয়ে যেত? বক্তার এমন মনে হওয়ার কারণ কী? ১+২

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে বহুরূপী হরিদার ঢং নষ্ট হয়ে যেত।

হরিদা একজন বহুরূপী। তবে, তার বহুরূপতা কেবল সাজ-পোশাকে নয়; তিনি যখন যা সাজতেন তখন মন থেকেও তাই হয়ে উঠতেন। তিনি পুলিশ সেজে স্কুলের মাস্টারমশায়ের কাছে আট আনা ঘুষ নিয়েছিলেন কিন্তু বিরাগীর সাজে জগদীশবাবুর দেওয়া একশো এক টাকা নিতে পারেন নি। কারণ, বিরাগী হয়ে টাকা স্পর্শ করা অশোভনীয়। তার মতে, টাকাটা নিলে তার ‘বিরাগীর ঢং’ নষ্ট হয়ে যেত।


৯] “ গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা ” – হরিদা কে ছিলেন ? কোন গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন ? 

উত্তরঃ লেখক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ নামক গল্পের কেন্দ্রীয় পেশাদার বহুরূপী চরিত্র ছিলেন হরিদা। 

লেখক সহ অন্য বন্ধুরা হরিদাকে জানিয়েছিলেন যে, সাতদিন ধরে এক সন্ন্যাসী এসে জগদীশবাবুর বাড়িতে ছিলেন। খুব উঁচুদরের সন্ন্যাসী, হিমালয়ের গুহাতে থাকেন। সারাবছর শুধু একটি ‘ হরীতকী ‘ খান, এছাড়া আর কিছুই খান না। সন্ন্যাসীর বয়স হাজার বছরের বেশি বলে মনে করা হয়। সন্ন্যাসী কাউকেই পদধূলি দেন না। জগদীশবায়ু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল  লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ে ধরলে বাধ্য হয়ে সন্ন্যাসী পা এগিয়ে দিলেন। এই নতুন খড়ম পরার ফাঁকেই জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন। 


১০] “এবার মারি তো হাতি, লুঠি তো ভাঙার ” –বক্তা কে? তিনি কোন উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন ?

উত্তরঃ প্রখ্যাত লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশের বক্তা হলেন বহুরূপী হরিদা।

‘বহুরূপী’ সেজে হরিদা যে উপার্জন করতেন তা ছিল অত্যন্ত সামান্য। আর তাই যখন জগদীশবাবুর বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীর খাতির – যত্নের কথা শোনের তখন সিদ্ধান্ত নেন সেখানেই বহুরূপী সেজে গিয়ে মোটা কিছু আদায় করে নেবেন। পুরোদিনটা ঘুরে বেড়িয়েও তার উপার্জন হয় সামান্যই। এজন্য কাঙালের মতো বকশিশ নেওয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখে একেবারে এমন উপার্জন করবেন যাতে তার সারাবছর চলে যায় – এই উদ্দেশ্যেই তিনি প্রশ্নোধৃত কথাটি বলেছেন।



বহুরূপী গল্পের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর - Bahurupi Descriptive Questions and Answers

১] “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।”- হরিদা কী ভুল করেছিলেন? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী? ৩+২ [মাধ্যমিক ২০১৯]

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা একজন বহুরূপী। বহু রূপে বিচিত্র সাজে তিনি মানুষের মনোরঞ্জন করতেন এবং তার বিনিময়ে তার যেটুকু উপার্জন হত তাই দিয়ে তার একার সংসার কোনোমতে চলে যেত। কিন্তু তার পেশা সামান্য হলেও হরিদা একজন সৎ এবং আদর্শবান মানুষ ছিলেন। একদিন জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখাতে গিয়ে তিনি আদর্শের কাছে তার ব্যক্তিগত চাহিদাকে বিসর্জন দিয়েছিলেন, এটাই ছিল তার ভুল।

আসলে হরিদা যখন যা সাজতেন, মনেপ্রাণে তাই হয়ে উঠতেন। তাই জগদীশবাবুর বাড়িতে যেদিন তিনি বিরাগী সেজে গিয়েছিলেন, সেদিন তিনিও মনেপ্রাণে একজন একনিষ্ঠ বিরাগী হয়ে উঠেছিলেন। হরিদাকে প্রকৃত বিরাগী মনে করে জগদীশবাবু তাকে একশো এক টাকার প্রণামী দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু টাকা স্পর্শ করলে বিরাগীর ঢং নষ্ট হয়ে যাবে- এই যুক্তিতে তিনি সেই টাকা গ্রহণ করেন নি। এই ছিল হরিদার ভুল।

লেখক বলেছেন, অদৃষ্ট বা ভাগ্য হরিদার এই ভুল কখনোই ক্ষমা করবে না। আর, অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণামে হরিদার অভাব কোনোকালেই ঘুচবে না। এমনিতেই তার হাড়িতে প্রায় দিনই শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না। জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামীর টাকাটা নিলে কয়েকটা দিন অন্তত তার অন্নসংস্থানের চিন্তা দূর হত। কিন্তু হরিদা সেই টাকা নেননি, তাই অভাব তার নিত্যসঙ্গী হয়ে থাকবে।


২] জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল তা বর্ণনা করাে। [মাধ্যমিক ২০১৭]

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেদিন সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার কয়েকজন ছেলেও জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিল স্পোর্টের চাঁদা আদায় করার জন্য। বারান্দায় বড় একটা আলোর সামনে জগদীশবাবু বসেছিলেন। এমন সময় বিরাগীর বেশে হরিদার আবির্ভাব ঘটে।

পরনে সাদা থান, আদুড় গায়ে সাদা উত্তরীয় জড়ানো, ধুলো মাখা পা এবং হাতে একটা ঝোলা- এই সাজে হরিদাকে দেখে তার পরিচিত ছেলেরাও তাকে চিনে উঠতে পারেনি। বারান্দা থেকেই জগদীশবাবু বলেন, ‘আসুন’। বিরাগী জগদীশবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে তিনি হয়তো নিজেকে ভগবানের থেকে বড় ভাবতে শুরু করেছেন এবং নিচে নেমে আসতে পারছেন না। সেই মুহুর্তে জগদীশবাবু নেমে এসে বিরাগীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং কীভাবে তার সেবা করবেন জানতে চান। বিরাগী শুধু একটু ঠাণ্ডা জল চেয়েছিলেন।

এরপর বিরাগী জগদীশবাবুকে ‘পরমসুখ’ সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েছিলেন। জগদীশবাবু তাকে কিছুদিন থাকার জন্য অনুরোধ করেন কিন্তু তিনি রাজি হননি। তখন জগদীশবাবু বিরাগীর কাছে কিছু সদুপদেশ শুনতে চান। বিরাগী বলেন যে, ধন-জন-যৌবন সবই আসলে বঞ্চনা এবং মনপ্রাণ দিয়ে সেই একজনের আপন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাঁকে পেলে সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া যায়।

সবশেষে, বিরাগীর কথা শুনে ভক্তিতে গদগদ হয়ে জগদীশবাবু তাকে একশো এক টাকা প্রণামী হিসেবে দিতে চাইলে তিনি তা না নিয়েই চলে যান।


৩] “তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়”- কী করলে বক্তার ঢং নষ্ট হয়ে যেত? এই উক্তির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর। ১+৪

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে উদ্ধৃত অংশের বক্তা হরিদার ঢং নষ্ট হয়ে যেত যদি তিনি জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামীর টাকা গ্রহণ করতেন।

হরিদা একজন বহুরূপী। তিনি একেকদিন একেকরকম সাজে খেলা দেখাতেন। কোনোদিন পাগল, কোনোদিন কাপালিক বা বাউল অথবা বাইজি সেজে তিনি পথে বেরোতেন। তেমনি একদিন তিনি বিরাগীর সাজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেদিন হরিদাকে দেখে তার পরিচিত ছেলেরাও চিনে উঠতে পারেনি- এমনই নিখুঁত ছিল তার সাজ। শুধু যে সাদা থান আর উত্তরীয় ছিল তাই নয়, হরিদার কথাবার্তাও ছিল একেবারে খাঁটি বিরাগীর মতো। তার সদুপদেশ শুনে জগদীশবাবু ভক্তিতে গদগদ হয়ে তাকে একশো এক টাকা প্রণামী হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হরিদা সেই টাকা নেননি। তার মতে, টাকাটা নিলে তার বিরাগীর ঢং নষ্ট হয়ে যেত।

আসলে, হরিদা যখন যেরকম সাজতেন তখন অন্তর থেকেই সেইরকম হয়ে উঠতেন। তিনি একবার পুলিশ সেজে স্কুলের মাস্টারমশায়ের কাছে আট আনা ঘুষ নিয়েছিলেন, কারণ অনেক পুলিশই ঘুষ নিয়ে থাকেন। কিন্তু বিরাগী হয়ে টাকা স্পর্শ করা অশোভনীয়। একজন মানুষ কেবল সাদা থান, সাদা উত্তরীয় পরে বা ঝোলার ভেতর গীতা রেখেই বিরাগী হয়ে যায়না। অথবা, ভালো ভালো কথা বলেও বিরাগী হওয়া যায়না। প্রকৃত বিরাগী তাকেই বলা হয় যার মনে কোনোরকম বিষয়বাসনা থাকে না। বিরাগীর সাজে টাকাপয়সা নেওয়া একেবারেই মানানসই নয়। সেইজন্য হরিদা বলেছেন, জগদীশবাবুর দেওয়া টাকাটা নিলে তার ‘বিরাগীর ঢং’ নষ্ট হয়ে যেত।


৪] “আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব”- বক্তা কে? তিনি যে খেলা দেখিয়েছিলেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তরঃ সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা একথা বলেছিলেন।

বহুরূপী হরিদা বহু রূপে বিচিত্র সাজে খেলা দেখিয়ে বেড়াতেন। আসলে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করাটাই তার খেলা। নতুন রূপ দেখে কেউ কেউ চিনতে পারে, তবে বেশিরভাগ মানুষই চিনতে পারেনা। যাইহোক, সেদিন জগদীশবাবুর বাড়িতে তিনি যে খেলা দেখিয়েছিলেন তা এইরকম-

সেদিন সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার কয়েকজন ছেলে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিল স্পোর্টের চাঁদা আদায় করার জন্য। বারান্দায় বড় একটা আলোর সামনে জগদীশবাবু বসেছিলেন। এমন সময় বিরাগীর বেশে হরিদার আবির্ভাব ঘটে।

পরনে সাদা থান, আদুড় গায়ে সাদা উত্তরীয় জড়ানো, ধুলো মাখা পা এবং হাতে একটা ঝোলা- এই সাজে হরিদাকে দেখে তার পরিচিত ছেলেরাও তাকে চিনে উঠতে পারেনি। বারান্দা থেকেই জগদীশবাবু বলেন, ‘আসুন’। বিরাগী জগদীশবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে তিনি হয়তো নিজেকে ভগবানের থেকে বড় ভাবতে শুরু করেছেন এবং নিচে নেমে আসতে পারছেন না। সেই মুহুর্তে জগদীশবাবু নেমে এসে বিরাগীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন এবং কীভাবে তার সেবা করবেন জানতে চান। বিরাগী শুধু একটু ঠাণ্ডা জল চেয়েছিলেন।

এরপর বিরাগী জগদীশবাবুকে ‘পরমসুখ’ সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েছিলেন। জগদীশবাবু তাকে কিছুদিন থাকার জন্য অনুরোধ করেন কিন্তু তিনি রাজি হননি। তখন জগদীশবাবু বিরাগীর কাছে কিছু সদুপদেশ শুনতে চান। বিরাগী বলেন যে, ধন-জন-যৌবন সবই আসলে বঞ্চনা এবং মনপ্রাণ দিয়ে সেই একজনের আপন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাঁকে পেলে সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া যায়। বিরাগীর কথা শুনে ভক্তিতে গদগদ হয়ে জগদীশবাবু তাকে একশো এক টাকা প্রণামী হিসেবে দিতে চাইলে তিনি তা না নিয়েই চলে যান।


৫] “এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা।” যে চমৎকার ঘটনাগুলি হরিদা ঘটিয়েছিলেন তার উল্লেখ করো।

উত্তরঃ  বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে হরিদা বহুরূপীর বেশে শহরের জীবনে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ঘটনা ঘটাতেন। বাঁধাধরা জীবন পছন্দ নয় বলেই হরিদা বহুরূপীর জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন।

একদিন হরিদা উন্মাদ পাগলের সাজে চকের বাসস্ট্যান্ডে আতঙ্কের হল্লা তুলেছিলেন। তাঁর মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল, দু’চোখ ছিল কটকটে লাল। কোমরে তাঁর ছেঁড়া কম্বল জড়ানো, গলায় টিনের কৌটার মালা আর হাতে একটা থান ইট তুলে নিয়ে তিনি যাত্রীদের দিকে মাঝে মাঝে তেড়ে যাচ্ছিলেন। 

আর এক কর্মব্যস্ত সন্ধ্যায়— ” হঠাৎ পথের উপর দিয়ে ঘুঙুরের মিষ্টি শব্দ রুমঝুম করে বেজে বেজে চলে যেতে থাকে। ” সবাই দেখে রূপসি বাইজি প্রায় নাচতে নাচতে রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। রূপসি বাইজি মুচকি হেসে, চোখ টিপে তার ফুলসাজি দোকানদার দের দিকে এগিয়ে দেয় আর দোকানদারেরাও হাসিমুখে তাতে এক সিকি ফেলে দেয়। পরে এক দোকানদার চিনতে পারে যে এই বাইজি আসলে বহুরূপী হরিদা।

এখানেই শেষ নয়। দয়ালবাবুর লিচু বাগানে নকল পুলিশের সাজে মাস্টারমশাইয়ের কাছ থেকে ঘুস ও প্রশংসা আদায় ছিল হরিদার বড়ো প্রাপ্তি।


৬] “হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে” —উদ্ধৃতাংশটি কে থেকে নেওয়া হয়েছে ? বক্তার এরূপ উত্তির কারণ কী তা বিবৃত করো। 

উত্তরঃ  উৎস : উদ্ধৃতাংশটি বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। 

বক্তার এরূপ উত্তির কারণ : গল্পকথক অর্থাৎ লেখক তার কাছের মানুষ হরিদা সম্পর্কে খুবই সংবেদনশীল ছিলেন। হরিদার কাছে এসে তিনি বেশ কিছুটা সময়ও কাটান সঙ্গে অবশ্য আরও দুই সঙ্গী ভবতোষ ও অনাদি থাকেন। চায়ের আড্ডাটা বসে হরিদার ঘরেই। 

হরিদা কোনো নির্দিষ্ট কাজ করেন না। যদিও যোগ্যতা অনুযায়ী ইচ্ছে করলেই হরিদা অফিস বা কোনো দোকানে বিক্রিওয়ালার কাজ পেয়ে যেতেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় বেরিয়ে নির্দিষ্ট কোনো কাজে হরিদার আপত্তি। অভাবের সংসারে হরিদার কোনো কোনো দিন হয়তো খাওয়াই হয় না। তার মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ বিচিত্র ছদ্মবেশে পথে বের হতেন হরিদা। কখনো বাসস্ট্যান্ডের কাছে উন্মাদের বেশে তাঁকে দেখা যেত, কখনো শহরের রাজপথে বাইজির বেশে ঘুঙুর বাজিয়ে চলে যেতেন। বহুরূপী সেজে হরিদা যে অনেক টাকা রোজগার করেন তাও নয়। কিন্তু এতেই হরিদা আনন্দ পান। কখনো বোচকা হাতে বুড়ো কাবুলিওয়ালা, কখনো হ্যাট – কোট – প্যান্টালুন পরা ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেবের রূপেও হরিদাকে দেখতে পাওয়া যায়।

তাঁর বিচিত্র সব সাজ আর চরিত্রের সাথে তাল মিলিয়ে যথাযথ আচরণে মানুষ কখনো হাসত, প্রশংসা করত আবার কখনো বা বিরক্ত হতো। আর হরিদার যা সামান্য বকশিশ জুটত— “ তাতেই তাঁর ভাতের হাঁড়ির দাবি মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন ”, কিন্তু এই দারিদ্র্যের মধ্যেও হরিদার জীবনের এই বহুরুপী সেজে পথে বের হওয়াকেই লেখ নাটকীয় বৈচিত্র্য বলেছেন। 


৭] জগদীশবাবুর বাড়িতে হরিদা বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল তা বর্ণনা করো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে জগদীশবাবু হলেন বিত্তশালী মানুষ। জগদীশবাবুর বাড়িতে হিমালয়ের গুহা থেকে আগত এক সন্ন্যাসীর গল্প শুনে হরিদারও ইচ্ছা হয় বহুরুপী সেজে তার বাড়িতে গিয়ে মজা করে কিছু অর্থ উপার্জন করার। সেই কারণেই জগদীশবাবুর বাড়িতে তিনি বিরাগী সেজে হাজির হয়েছিলেন। হরিদার খালি খায়ে ছিল সাদা উত্তরীয় আর পরনে ছিল ছোটো বহরের একটি সাদা থান, গা ছিল ধুলো মাখা, মাথায় ফুরফুর করে উড়ছিল শুকনো সাদা চুল, হাতে ছিল একটি ঝোলা, আর তার ভিতরে ছিল শুধু একটা বই গীতা। তাঁর শীর্ণ শরীর দেখে মনে হচ্ছিল অশরীরী। জগদীশবাবুকে বিরাগী বলেন— “ আপনি বোধ হয় এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে নিজেকে ভগবানের চেয়েও বড়ো বলে মনে করেন।” এই কথা শুনে জগদীশবাবু সিঁড়ি ধরে নেমে এসে বিরাগীরূপী হরিদার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন এবং তাঁকে রাগ করতে নিষেধ করেন। তখন আগতুক বিরাগী বলেন— “ আমি বিরাগী, রাগ নামে কোনো রিপু আমার নেই। ” এরপর জগদীশবাবু বিরাগীকে তাঁর বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করলে বিরাগী তাঁকে বলেন যে ধরিত্রীর মাটিতেই তাঁর স্থান, তাই তিনি এই দালান বাড়িতে থাকবেন না। খাওয়ার কথা বলা হলে বিরাগী বলেন যে তিনি কোনো কিছু স্পর্শ না করে শুধু এক গ্লাস ঠান্ডা জল খাবেন। 

বিরাগী জগদীশবাবুকে সবরকম মোহ থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন — ধন জন যৌবন সবকিছুই হলো সুন্দর সুন্দর এক – একটি বঞ্ছনা যাকে পেলে সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া যাবে। তার কাছাকাছি যাওয়ার উপদেশ দিয়ে বিরাগী চলে র গেলেন। তীর্থ ভ্রমণের জন্য জগদীশবাবু বিরাগীকে একশো এক টাকা দিতে চাইলে বিরাগী সেই টাকা না নিয়ে বলেন- “ আমার বুকের ভেতরেই যে সব তীর্থ ভ্রমণ করে দেখবার ততো কোনো দরকার হয় না। ” এরই সঙ্গে তিনি সোনাও অনায়াসে মাড়িয়ে যাওয়ার কথা র বলে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে চলে যান। এইসমস্ত দেখে জগদীশবাবু স্থির বিস্ময়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। 


৮] ‘বহুরূপী‘ গদ্যাংশে ‘হরিদা' – র চরিত্র আলোচনা করো।

উত্তরঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ‘ গল্পটির কাহিনি বিকাশলাভ করেছে হরিদার চরিত্রকে কেন্দ্র করে। অত্যন্ত গরিব মানুষ ছিলেন এই হরিদা। অভাব তাঁর নিত্যসঙ্গী হলেও কাজের মধ্যে দিয়েই তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার আনন্দ খুঁজে নিতে চান বলেই বহুরূপীর পেশা গ্রহণ করেছিলেন হরিদা। 

হরিদার চরিত্রের মধ্যে সামাজিকতার দিকটিও লক্ষণীয়। শহরের সবথেকে সরু গলিটার ভেতর হরিদার ছোট্ট ঘরটি ছিল কথক ও অন্য বন্ধুদের সকাল – সন্ধার আড্ডার ঘর। চা, চিনি, দুধ হরিদার বন্ধুরাই নিয়ে আসতেন আর হরিদা উনানের আচে জল ফুটিয়ে দিতেন। 

কখনো বাসস্ট্যান্ডের পাগল, কখনো রাজপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাইজি, কাপালিক, বাউল, বুড়ো কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি কেরামিন সাহেব – এরকম অজস্র রূপে তাঁকে দেখা গেছে। শুধু সাজ নয়, চরিত্রের সাথে মানানসই ছিল তার আচরণ, কিন্তু দিন শেষে দারিদ্র্য্যই হয়েছে তাঁর সঙ্গী।

হরিদার চরিত্রটি পরিণতির শীর্ষ ছুঁয়েছে কাহিনির শেষে। বিরাগীর বেশে তিনি জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করলেও তাঁর আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ কিংবা প্রণামি হরিদা প্রত্যাখ্যান করেন। এভাবেই পেশাগত সততায় হরিদা অর্থলোভকে ত্যাগ করে বন্ধুদের বলেন— ” শত হোক, একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকাফাকা কী করে স্পর্শ করি বল ? তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। ” এছাড়াও হরিদা বলেন – বকশিশ ছাড়া বহুরূপীর জীবন আর কিছু আশা করতে পারে না। হরিদার একথা দীর্ঘশ্বাসের মতো শোনালেও তা আসলে তাঁকে সততার আলোয় আলোকিত করে।


৯] "কী অদ্ভুত কথাই বললেন হরিদা” কী প্রসঙ্গে হরিদা অদ্ভুত কথ বলেছিলেন ? কথাটি অদ্ভুত কেন? 

উত্তরঃ প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। 

হরিদার অদ্ভুত কথা বলার প্রসঙ্গ : বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িয়ে গিয়ে হরিদা সেখান থেকে পাওয়া প্রণামির একশো এক টাকা অবহেলায় প্রত্যাখান করে চলে আসেন। এই ঘটনা তাঁর বাড়িতে চায়ের আড্ডায় উপস্থিত কথক এবং তাঁর বন্ধুদের কাছে একটু বিস্ময়কর বলে মনে হয়। হরিদাকে তাঁরা বলেন— “ এটা কী কান্ড করলেন, হরিদা ? জগদীশবাবু তো অত টাকা সাধলেন, অথচ আপনি একেবারে খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব তুচ্ছ করে সরে পড়লেন ? ” হরিদা উত্তরে জানান যে একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তাতে তাঁর ‘ ঢং ’ নষ্ট হয়ে যাবে — একথাকে কথকদের অদ্ভুত কথা বলে মনে হয়। 

 কথাটি অদ্ভুত মনে হওয়ার কারণ: কথাটি অদ্ভুত বলে মনে হওয়ার কারণ প্রথমত, হরিদা ছিলেন একজন পেশাদার বহুরূপী। পেশার টানেই ও মনোরঞ্জনের জন্য তাঁর এই বহুরুপী সাজ। তাই তাঁর পক্ষে সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে, সন্ন্যাসীর জীবন ভাবনায় ভাবিত হয়ে যাওয়াটা ছিল যথেষ্ট বিস্ময়কর। দ্বিতীয়ত, বহুরূপী হরিদার ছিল অভাবের জীবন। জগদীশবাবুর বাড়ি যাওয়ার আগেই হরিদা বলেছিলেন, “এবার মারি তো হাতি, লুঠি তো ভাণ্ডার” —তার সারা বছরের প্রয়োজনীয় অর্থ সন্ন্যাসী সেজে হাতিয়ে নেওয়াই ছিল লক্ষ্য। 

যে মানুষটার দু’বেলা ভাত জোটে না তিনি যখন সন্ন্যাসীর ‘ চং ‘ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলেন তখন তা অদ্ভুত বলেই মনে হয়। কারণ এর ফলে সারাটা জীবন হরিদাকে শুধু অভাবের মধ্যে দিয়েই কাটাতে হবে।


১০] “ খাঁটি মানুষ তো নয়, এই বহুরূপী জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে ” —বস্তা কে ? খাঁটি মানুষ নয় বলার তাৎপর্য কী ?

উত্তরঃ  প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি লেখক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘ বহুরূপী ’ শীর্ষক গল্প  থেকে নেওয়া হয়েছে।

বক্তা : বহুরুপী গল্পে প্রশ্নে উল্লিখিত অংশটির বক্তা হলেন বহুরূপী হরিদা। খাটি মানুষ নয় বলার তাৎপর্য: হরিদা পেশায় ছিলেন বহুরূপী। জীবিকার প্রয়োজনে কখনো পাগল, বাইজি, কখনো নকল পুলিশ এবং আরও অনেক কিছু সেজে তিনি উপার্জন করতেন। যদিও সে উপার্জন ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত সামান্য। 

এই হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে অনেক উপার্জনের আশা করেছিলেন। হরিদার ছদ্মবেশ বুঝতে না পারায় প্রণামি হিসেবে জগদীশবাবু অনেক টাকাই হরিদাকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বহুরূপী হরিদা সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে নিজেকে এতটাই একাত্ম করে ফেলেছিলেন, উদাসীনভাবে প্রণামির অর্থ ফেলে চলে আসেন। কথক ও তাঁর সঙ্গীরা হরিদার এই আচরণ সমর্থন করতে পারেননি। তখন হরিদা জানান, “ শত হোক, একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল ? তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। এরপর হরিদা অবশ্য জানান বকশিশের জন্য তিনি অবশ্যই জগদীশবাবুর কাছে যাবেন। কারণ বহুরূপী হিসেবে মাত্র আট – দশ আনাকেই তিনি নিজের প্রাপ্য বলে মনে করেন। ‘খাটি মানুষ ‘ অর্থাৎ যে নিজের জীবনাচরণ ও জীবনদর্শনকে সদভাবে অনুসরণ করেন তাঁর হয়তো অনেক পাওনা হতে পারে কিন্তু হরিদা নিজেকে বহুরূপী ভাবেন। পেশার আড়ালে তাঁর ভেতরের মানুষটা যে সমাজের কাছে হারিয়ে গিয়েছে – সেই বিষণ্ণতাই প্রকাশ পেয়েছে হরিদার উচ্চারণে।


১১] “ আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব। ” “জবর খেলা – টি সংক্ষেপে লেখো। 

অথবা,

  “ আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব। ” কথাটি কে, কাকে বলেছিলেন ? বক্তা কোন জবর খেলা দেখিয়েছিলেন। 

উত্তরঃ  কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে আলোচ্য কথাগুলি গল্পের কেন্দ্রীয় চত্রিত্র হরিদা কথক ও তাঁর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন। বহুরূপী সেজে টাকা রোজগার করাই ছিল হরিদার নেশ্য এবং পেশা। তাই সন্ন্যাসীর গল্প শুনে তাদের একটি জবর খেলা দেখাবার আগ্রহ প্রকাশ করেন হরিদা। হরিদা একটা সাদা উত্তরীয় কাঁধে, ছোটো বহরের একটি থান পরে, একটি ঝোলা নিয়ে রীতিমতো আর সেইজন্য বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে যান। জগদীশবাবু হরিদার চেহারা দেখে ও কথাবার্তা শুনে মুগ্ধ হন। হরিদাকে তিনি আতিথ্য গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন এবং তীর্থ ভ্রমণের জন্য প্রনামি হিসাবে একশো এক টাকা দিতে চান। কিন্তু হরিদা খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো এই অর্থ প্রত্যাখ্যান কবে বেরিয়ে আসেন এরকম ছদ্মবেশ ধারণ করেই হরিদা জবর খেলা দেখিয়েছিলেন।


১২] “ আমার অপরাধ হয়েছে। আপনি রাগ করবেন না। ” বস্তা কে ? সে কী অপরাধ করেছে বলে তার মনে হয়েছে ? 

উত্তরঃ  লেখক সুবোধ ঘোষের ‘ বহুরূপী ‘ গল্পে শহরের সম্পন্ন ব্যক্তি জগদীশবাবু উক্ত কথাটি বলেছেন।

‘বহুরূপী‘ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়ির বারান্দার নীচে এসে দাঁড়ান একজন বিরাগী সন্ন্যাসী। জগদীশবাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দা থেকেই সন্ন্যাসীকে আসুন বলে আমন্ত্রণ জানান। তখন সন্ন্যাসী তার আচরণের সমালোচনা করে বলেন – “ আপনি বোধ হয় এগারো লক্ষ টাকার সম্পত্তির অহংকারে নিজেকে ভগবানের চেয়েও বড়ো বলে মনে করেন। ” আর সন্ন্যাসীর এই মন্তব্য শুনে জগদীশবাবু নিজের আচরণকে ‘ অপরাধ ‘ বলে মনে করেছেন।


১৩] “ তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি। ” — উক্তিটি কার ? কোন প্রসঙ্গে তাঁর এই মন্তব্য ? মন্তব্যের আলোকে বক্তার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

উত্তরঃ  ছদ্মবেশী সন্ন্যাসী হরিদা আলোচ্য উক্তিটি করেছে। 

হরিদা সন্ন্যাসী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হলে তিনি সন্ন্যাসীকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো টাকা দিতে চান এবং সন্ন্যাসীর কাছে ব্যাকুল স্বরে শান্তি প্রার্থনা করেন। সন্ন্যাসী হরিদার কাছে পার্থিব টাকা অতি তুচ্ছ, এ প্রসঙ্গেই তার প্রশ্নোধৃত মন্তব্য।

আলোচ্য উক্তিটিতে বক্তা হরিদার নির্লোভ মানসিকতা ফুটে উঠেছে। আর্থিক দিক থেকে হরিদা খুবই গরিব। অভাবের কারণে বেশিরভাগ সময়ই তার কপালে ভাত জোটেনি। ছদ্মবেশে হরিদা মানুষের মনোরঞ্জন করে দু – এক আনা উপার্জন করেছে . তাতে তার অন্নসংকুলান না হলেও কারো কাছে অভিযোগ করেনি। তাই দেখা যায়, তিনি সারা বছরের জন্য অর্থ সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে সন্ন্যাসীর রূপ ধরে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হলে তিনি সন্ন্যাসীকে একশো টাকা দান হিসেবে দিয়েছেন। কিন্তু সন্ন্যাসী এই দান গ্রহণ করেনি, ফিরিয়ে দিয়েছেন পরিবর্তে ঠান্ডা জল চেয়েছে। আসলে নির্লোভ দরিদ্র হরিদা তার পেশাকে বিক্রি করতে চায়নি, সেই পেশার মধ্যেই সে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করতে চেয়েছে 



Google News এ আমাদের ফলো করুন


Gksolves Google News

ঘোষণা: বিনামূল্যে আমাদের দেওয়া নোটস, সাজেশান, প্রশ্ন উত্তর ইত্যাদি স্টাডি ম্যাটেরিয়াল PDF এবং ভিডিও ক্লাস ভালো লাগলে, আমাদের এই পোস্টের লিংক আপনার বন্ধুদের ফেসবুক, WhatsApp এ শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.