বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় - Birth And Family Of Bibhutibhushan Bandyopadhyay
বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী ঘোষপাড়া-মুরাতিপুর গ্রামে নিজ মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বনগাঁ'র নিকট বারাকপুর গ্রামে। তবে তাঁদের আদিবাস ছিল উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত পানিতর গ্রাম৷ তাঁর পিতামহ ছিলেন কবিরাজ এবং তিনি বনগাঁর নিকট ব্যারাকপুর গ্রামে কবিরাজি করতে আসতেন৷ তাঁর পিতা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রখ্যাত সংস্কৃত পণ্ডিত। পাণ্ডিত্য এবং কথকতার জন্য তিনি শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। মাতা মৃণালিনী দেবী। পিতামাতার পাঁচ সন্তানের মধ্যে বিভূতিভূষণ জ্যেষ্ঠ ছিলেন।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর শৈশব ও শিক্ষা - Educational Life Of Bibhutibhushan Bandyopadhyay
পিতার কাছে বিভূতিভূষণের পড়ালেখার পাঠ শুরু হয়। এরপর নিজ গ্রাম ও অন্য গ্রামের কয়েকটি পাঠশালায় পড়াশোনার পর " বনগ্রাম উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে" ভর্তি হন। সেখানে তিনি অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় পিতা মারা যান।
Also Read: আশাপূর্ণা দেবী র জীবনী
১৯১৪ সালে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স এবং ১৯১৬ সালে কলকাতা'র রিপন কলেজ (বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে প্রথম বিভাগে আইএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯১৮ সালে একই কলেজ থেকে বি.এ পরীক্ষায়ও ডিস্টিংশনসহ পাশ করেন। এরপর তিনি এমএ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু পড়াশোনা ছেড়ে দেন ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বিবাহ
১৯১৯ সালে হুগলী জেলার জাঙ্গীপাড়ায় দ্বারকানাথ হাইস্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ানোর সময় বসিরহাটের মোক্তার কালীভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কন্যা গৌরী দেবীর সাথে বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের এক বছর পরই গৌরী দেবী মারা যান। স্ত্রীর শোকে তিনি কিছুদিন প্রায় সন্ন্যাসীর মতো জীবনযাপন করেন। পরে ১৩৪৭ সালের ১৭ অগ্রহায়ণ (ইংরেজি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৪০) তারিখে ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও নিবাসী ষোড়শীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে রমা দেবীকে বিয়ে করেন। বিয়ের সাত বছর পর একমাত্র সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় (ডাকনাম বাবলু) জন্মগ্রহণ করেন।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর কর্মজীবন
শিক্ষকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। এসময় কিছুদিন গোরক্ষিণী সভার প্রচারক হিসেবে বাংলা, ত্রিপুরা ও আরাকানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। পরে খেলাৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে সেক্রেটারি, গৃহশিক্ষক এবং তার এস্টেটের ভাগলপুর সার্কেলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছুদিন আবার ধর্মতলার খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এরপর যোগ দেন বনগাঁর নিকট গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশন স্কুলে। এই স্কুলেই তিনি আমৃত্যু কর্মরত ছিলেন। এই মহান কথাসাহিত্যিক ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা নভেম্বর তারিখে বিহারের (বর্তমানে ঝাড়খন্ড) ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তার বাড়িটির নাম স্ত্রীর নামে "গৌরীকুঞ্জ" রেখেছিলেন।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাহিত্যচর্চা - Literary Life Of Bibhutibhushan Bandyopadhyay
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৮ বঙ্গাব্দ) প্রবাসী পত্রিকার মাঘ সংখ্যায় উপেক্ষিতা নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটে। ভাগলপুরে কাজ করার সময় ১৯২৫ সালে তিনি পথের পাঁচালী রচনা শুরু করেন। এই বই লেখার কাজ শেষ হয় ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে। এটি বিভূতিভূষণের প্রথম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা। সাহিত্যিক-সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় এই লেখাটি পছন্দ করে বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশ করলে তিনি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী উপন্যাসের কাহিনীকে চলচ্চিত্রে রূপদানের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা করেছিলেন। এই সিনেমাটির নামও ছিল পথের পাঁচালী।
Also Read: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী র জীবনী
এই চলচ্চিত্রটি দেশী-বিদেশী প্রচুর পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছিল। এরপর "অপুর সংসার" টেমপ্লেট:The world of apu আর "অপরাজিত" রচনা করেন, যেগুলি "পথের পাঁচালির"ই পরবর্তী অংশ। সত্যজিৎ এই দুটি গল্প নিয়েও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, যা ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। উভয় উপন্যাসেই তার ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিফলন ঘটেছে। পথের পাঁচালী উপন্যাসটি বিভিন্ন ভারতীয় ভাষা এবং ইংরেজি ও ফরাসি সহ বিভিন্ন পাশ্চাত্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। বিভূতিভূষণের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্পগ্রন্থ হল-
মেঘমল্লার, মৌরীফুল, যাত্রাবদল। তার লেখা চাঁদের পাহাড় একটি অনবদ্য এ্যাডভেঞ্চার কাহিনী, যার পটভূমি আফ্রিকা। ২০১৩ সালে বিখ্যাত চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জী "চাঁদের পাহাড়" ("Chander Pahar") কে বাংলা চলচ্চিত্রে রূপান্তর করেন। এই চলচ্চিত্রটিও বাংলা চলচ্চিত্র জগতে যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মান
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার (লেখকের জন্মস্থান) পারমাদান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম লেখকের সম্মানার্থে রাখা হয়েছে "বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য"।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর রচনাবলী
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস
- পথের পাঁচালি
- অপরাজিত
- দৃষ্টিপ্রদীপ
- আরণ্যক
- দেবযান
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত কিশোরপাঠ্য
- চাঁদের পাহাড়
- আইভ্যানহো
- মরণের ডঙ্কা বাজে
- মিসমিদের কবচ
- হীরা মাণিক জ্বলে
- সুন্দরবনের সাত বৎসর
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর মৃত্যু - Death Of Bibhutibhushan Bandyopadhyay
অধুনা ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলাতে, ১ লা নভেম্বর ১৯৫০ (১৭ই কার্তিক ১৩৫৭ বঙ্গাব্দ, বুধবার ) হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। পরদিন দুপুরে সুবর্ণরেখা নদীর ওপরে 'পঞ্চপাণ্ডব ঘাট'-এ তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।
Also Read:
❏ প্রাবন্ধিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
❏ বিখ্যাত বাংলা সাহিত্যিক ও তাদের রচনা
❏ Bengali to English Translation writing Pdf
❏ পত্র লিখন ইংরেজি ও বাংলা Pdf
❏ বাংলা সাহিত্যের প্রশ্নোত্তর Pdf
❏ বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন রচনার পূর্ব নাম Pdf
❏ বিখ্যাত বাংলা চলচিত্র ও পরিচালকের নামের তালিকা
❏ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর
❏ বাংলা সাহিত্যে বিখ্যাত সাহিত্যিক ও তাদের সৃষ্টি
Others Important Link
Syllabus Link: Click Here
Question Paper Link: Click Here
Admit Card Link: Click Here
Result Link: Click Here
Latest Job: Click Here
Age Calculator: Click Here
Please do not share any spam link in the comment box