একটি গাছ একটি প্রাণ প্রবন্ধ রচনা - A Tree A Life Essay Writing
একটি গাছ একটি প্রাণ প্রবন্ধ রচনা - A Tree A Life Essay Writing
ভূমিকা:
“গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও
আমাদের দরকার শুধু গাছ দেখা
গাছ দেখে যাওয়া
গাছের সবুজ টুকু শরীরে দরকার
আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার।”
কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় গাছ দেখতে চেয়েছেন। তিনি শহরের বুকে এক টুকরো পতিত জমিতে বাগান তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন কারণ গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার। বাস্তবে, গাছের মতাে এতবড়াে বন্ধু মানুষের আর নেই। অতএব, এই বন্ধুকে সংরক্ষণ করা মানুষের আবশ্যিক কর্তব্য। আর উভয়ের দান-প্রতিদানের মধ্যেই নিহিত আছে গাছপালার সঙ্গে মানুষের জীবনের সম্পর্কের মূল সুর।
মানুষ ও গাছের সম্পর্ক
বলাই গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, “বিশ্বপ্রাণের মূক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধরে দ্যুলোককে দোহন করে; পৃথিবীর অমৃতভাণ্ডারের জন্যে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, প্রাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে…”। একথা অনস্বীকার্য যে, গাছপালার সঙ্গে মানুষের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এই পৃথিবীতে মানুষ আসার বহু বহু যুগ আগে গাছ এসেছে। সেই হিসেবে গাছ মানুষের অগ্রজ। গাছ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নানা দিক দিয়ে মানবসভ্যতাকে ধারণ করে রেখেছে। অর্থাৎ, গাছ হল সমগ্র প্রাণিকুলের ধাত্রীস্বরূপ।
মানুষ বনাম গাছ
আপাতদৃষ্টিতে গাছপালার সঙ্গে মানুষের কিছু উল্লেখযােগ্য বাহ্যিক পার্থক্য রয়েছে। যেমন, মানুষ গতিময় কিন্তু গাছ স্থির, মানুষ বাঙময় কিন্তু গাছ নীরব। আবার, মানুষ প্রত্যক্ষভাবে গাছপালার অনিষ্টসাধন করতে পারে কিন্তু গাছপালার সেই ক্ষমতা নেই। বোধহয় এইজন্য মানুষ নির্বিচারে গাছপালা কেটে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি তৈরি করে। কিন্তু বিজ্ঞানের গবেষণা একথা প্রমান করেছে যে, গাছপালা প্রত্যক্ষভাবে আমাদের ক্ষতি করতে না পারলেও পরােক্ষভাবে মানুষ সহ সমগ্র জীবকুলকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে।
মানুষের জীবনে গাছের অবদান
গাছ হল মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকুলের প্রাণের আধার। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য হল অক্সিজেন যা সরবরাহ করে গাছ। শুধু তাই নয়, যে কয়টি গ্যাসের সংমিশ্রণে বাতাস গঠিত তাদের মধ্যে একটি অহিতকর গ্যাস হল কার্বন-ডাই-অক্সাইড। যদি কোনো কারণে বাতাসে এই গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে সমগ্র প্রাণিকুল ধ্বংস হয়ে যাবে। গাছ প্রকৃতি থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করে থাকে।
জীবনধারণের জন্য অক্সিজেনের মতোই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল জল। জল যেমন জীবের তৃষ্ণা নিবারণ করে তেমনি রুক্ষ-শুষ্ক পৃথিবীকে ‘সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা’ করে তোলে। আর গাছের ভূমিকা হল, গাছ বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণ করে। এখনো পর্যন্ত বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কৃষিকাজ বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করে। সুতরাং মানবসভ্যতার বিকাশের ক্ষেত্রে গাছের ভূমিকা সহজেই অনুমান করা যায়।
তাছাড়া, গাছ ভূমিক্ষয় রােধ করে। আসবাবপত্র নির্মাণের জন্য যে কাঠের প্রয়ােজন হয় তা সরবরাহ করে গাছ। কিছুদিন আগে পর্যন্ত রেললাইনের স্লিপার কাঠ ছাড়া তৈরি করা যেত না। এছাড়া আছে অসংখ্য বনজ সম্পদ যা বিভিন্ন ভাবে আমাদের জীবনধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা আছে। তাই গাছপালা না থাকলে বন্যপ্রাণীরা অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। এইসব ব্যবহারিক প্রয়ােজনীয়তার বাইরেও গাছপালার একটি বিরাট ভূমিকা আছে। এরা মানুষের সৌন্দর্যতৃষ্ণাকে তৃপ্ত করে।
অপর্যাপ্ত বনভূমি
প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের মতানুসারে, দেশের অন্তত শতকরা দশভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের দেশের বনভূমির আয়তনে অনেক কম। দেরিতে হলেও আজ মানুষ উপলব্ধি করেছে যে, গাছ ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। অতীতের অকারণ বৃক্ষছেদনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বর্তমানে দেশে দেশে বন্যসংরক্ষণ ও বনসৃজন পালিত হচ্ছে। আমাদের দেশেও ১৯৫০ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয় ‘বনমহােৎসব’ প্রকল্প। এখনো প্রতিবছর সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ করা হচ্ছে। তবে, শুধু গাছ লাগলে হবে না, সেগুলির যথাযথ দেখভাল করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সারাবছর ধরেই বৃক্ষরোপণ করতে হবে।
উপসংহার: উপসংহারে বলা যায়, গাছের মতাে ক্ষমাশীল, উদার এ জগতে দুর্লভ। এরা ছেদনকারীকেও অকাতরে ফুল দেয়, ফল দেয়- দেয় সুশীতল ছায়া, বেঁচে থাকার রসদ। তবু আমরা ভুলে যাই, যে ফুল জীবনে মরণে লাগে, যে ফল স্বাস্থ্য এনে দেয়, যে পত্র বিষ শােষণ করে- তারা ওই গাছপালারই প্রত্যক্ষ দান। অতএব, আর অযথা বৃক্ষছেদন নয়, কেবল বৃক্ষরোপণ। সকলে আমরা এই মন্ত্রে দীক্ষিত হই- ‘একটি গাছ, একটি প্রাণ’, ‘গাছ লাগাও, প্রাণ বাঁচাও’।
Others Important Link
Syllabus Link: Click Here
Question Paper Link: Click Here
Admit Card Link: Click Here
Result Link: Click Here
Latest Job: Click Here
Please do not share any spam link in the comment box