বাংলায় সমাজ সংস্কার - Social Reform In Bengal
বাংলায় সমাজ সংস্কার - Social Reform In Bengal
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরােপীয় শিক্ষার প্রভাবে ক্রমশ জাতীয়তাবাদী মনােভাব গড়ে উঠতে থাকে বাংলার শিক্ষিত ভদ্রসমাজে। এর ফলে শুরুতে বেশ কিছু সমাজ সংস্কারমূলক কাজে হাত দেন একদল মানুষ, ও পরবর্তীকালে ক্রমশ রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠতে থাকে।
হিন্দু সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে পথিকৃৎ রাজা রামমােহন রায়। সতীদাহ প্রথা রদে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। হিন্দু সমাজের কুসংস্কার - কুপ্রথার প্রতিবাদে তিনি ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন ( ১৮২৮ )। তার আগে ১৮১৭ সালে ডেভিড হেয়ার ও রাজা রাধাকান্ত দেবের সহায়তায় তিনি হিন্দু কলেজ ( বর্তমান প্রেসিডেন্সি কলেজ ) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায় সতীদাহ প্রথা রদে আইন প্রণয়নে সক্ষম।
হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্যতা, বাল্যবিবাহ, বহু-বিবাহ, জাতি ভেদ, অসবর্ণ বিয়েতে আপত্তি প্রভৃতি কুপ্রথার বিরােধিতায় একদিকে উপনি ষদ -ভিত্তিক অন্যদিকে পাশ্চাত্যের আধুনিকতার ছোঁয়ায় ব্রাহ্ম ধর্ম প্রতিষ্ঠা পেলেও ত সমাজের উচ্চকোটির শিক্ষিত মানুষ ছাড়া সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব বেশি আবেদন রাখতে পারেনি বলে কোনাে কোনাে গবেষকের অভিমত। তবে নিঃসন্দেহে সমাজসংস্কারমূলক এই সমস্ত কার্যকলাপে হিন্দু সমাজের মধ্যেও ধীরে ধীরে এই কুপ্রথাগুলির প্রভাব কমতে থাকে।
রামমােহন পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, স্বামী বিবেকানন্দ, বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, শিক্ষাবিদ সৈয়দ আমির আলি ও সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে সমাজ সংস্কারের কাজ চলতে থাকে।
বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহ চালু করেন, আধুনিক বাংলা ভাষা শিক্ষার বর্ণপরিচয় রচনা করেন। ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের সহায়তায় স্ত্রী-শিক্ষার প্রসারে বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
১৮৯৩ সালে শিকাগােয় ধর্ম মহাসভায় তাঁর ভাষণের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের এক নতুন দিশার সন্ধান দেন স্বামী বিবেকানন্দ, প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ মিশন।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিদ্যাসাগর যে আধুনিকতা আনেন তাকে এগিয়ে নিয়ে যান বঙ্কিম থেকে রবীন্দ্রনাথ। বিজ্ঞানে অবদান রাখেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ।
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ছয় দশকে বাঙালি সমাজ এক সামাজিক-সাংস্কৃতিক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করে। আর এই শতাব্দীর পরবর্তী চার দশকে জাতীয়তাবাদের উন্মেষে গড়ে উঠতে থাকে রাজনৈতিক সংগঠন। নবগােপাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসুর সঙ্গে একত্রে ১৮৬৭ থেকে ১৮৮১ হিন্দু মেলার আয়ােজন করেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। আর ইন্ডিয়া লিগ, ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন, ন্যাশনাল কনফারেন্স ও তারপর ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হয় যথাক্রমে ১৮৫৭, ১৮৭৬, ১৮৮৩ ও ১৮৮৫ সালে।
বাঙালি সমাজ-সংস্কৃতিতে এ ছিল এক স্বর্ণযুগ। হিন্দু সমাজের সংস্কারের পাশাপাশি মুসলিম সমাজেও আহমদিয়া ও ফরাজি আন্দোলন হয় এই সময়।
আমাদের কথা: যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর বা বানান ভুল থাকে, এই ভুল আমাদের অনিচ্ছাকৃত এর জন্য আমরা ক্ষমা প্রার্থী। সঠিকটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানান আমরা পরবর্তী ক্ষেত্রে আপডেট করে দেব।
Please do not share any spam link in the comment box