Netaji Subhash Chandra Bose And Azad Hind Fauj: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান

Netaji Subhash Chandra Bose And Azad Hind Fauj: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান

Netaji Subhash Chandra Bose And Azad Hind Fauj: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান


 Netaji Subhash Chandra Bose And Azad Hind Fauj: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান



প্রশ্ন: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান আলােচনা করাে (Describe the contribution of Netaji Subhas Chandra Bose and I.N.A. in the history of India's freedom movement)


❏ ভূমিকা ও ভারতবাসীর স্বাধীনতা: আন্দোলনের সাথে সুভাষচন্দ্র বসুর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সুভাষচন্দ্র ছিলেন বীর, বিপ্লবী এবং দেশের জন্য উৎসর্গীকৃত একটি প্রাণ। ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন মূলত তিনটি ধারায় প্রভাবিত হয়েছিল, যথা — জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে গণ-আন্দোলন, সন্ত্রাসবাদীদের নেতৃত্বে গােপন বিপ্লবী কার্যকলাপ এবং সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে সশস্ত্র সংগ্রাম। ঐতিহাসিক তারাঠাদের ভাষায়ঃ ‘ সুভাষচন্দ্র তার বিভিন্ন কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন ” (" ..brought the Indian question out of the narrow domestic sphere of the British Empire into the broad field of Interna tional Politics.'')।


❏ নিবেদিত প্রাণ: ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে জানুয়ারি কটক শহরে সুভাষচন্দ্রের জন্ম হয়। তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি স্বামী বিবেকানন্দের নববেদান্তবাদ ও স্বদেশসেবার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হন। আই. সি. এস. পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান পাওয়া সত্ত্বেও বিদেশী ইংরেজের চাকুরি বর্জন করে তিনি দেশের সেবায় আত্মনিয়ােগ করেন। প্রথমে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গড়ে তােলার কাজ শুরু করেন। কংগ্রেস কর্মী হিসেবে তিনি বহুবার কারাবরণও করেন। কিন্তু কালক্রমে তিনি জাতীয় কংগ্রেসের অনুসৃত নীতি ও কর্মপন্থার তীব্র সমালােচকে পরিণত হন। কংগ্রেসের 'আবেদন-নিবেদন' নীতি সুভাষচন্দ্রের মনঃপূত ছিল না। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশকারী কোনাে দেশ বা জাতি শুধুমাত্র মুখের কথায় নিজেদের অধিকার ছেড়ে দিতে চায় না। তাই তিনি কংগ্রেসের তরুণ সদস্যদের মধ্যে নতুন মত গড়ে তােলার কাজে ব্রতী হন। তরুণ সদস্যদের তিনি বােঝাতে সক্ষম হন যে, ' আপস-নীতি' দ্বারা ভারতবাসী কোনােরকম অধিকার বর্জন করতে পারবে না। সুভাষচন্দ্র জওহরলাল নেহরু প্রমুখের সহায়তায় কংগ্রেসের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রবর্তন করেন। কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি সর্বস্তরের ভারতবাসীর মধ্যে সংগঠন গড়ে তােলার প্রয়ােজনীয়তা তিনি গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। কংগ্রেসকে তিনি জঙ্গি আন্দোলনের শামিল করতে সচেষ্ট হন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজি বড়ােলাট আরউইন -এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেন, সুভাষচন্দ্র তার তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি এই চুক্তিকে ' কংগ্রেসের চূড়ান্ত পরাজয় ' বলে বর্ণনা করেন। করাচিতে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস-সম্মেলনে সুভাষচন্দ্র ও তার অনুগামীরা গান্ধী-আরউইন চুক্তি প্রত্যাহারের দাবি তােলেন। তারা ভারতের সমস্ত রকম জাতীয়তাবাদী শক্তিকে একত্রিত করে কংগ্রেসের উদ্যোগ প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ সরকারবিরােধী কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তাব দেন। কিন্তু গান্ধীজি ও নরমপন্থী নেতাদের আধিপত্য থাকার ফলে সুভাষচন্দ্রের প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়।


❏ হরিপুরা কংগ্রেস: সুভাষচন্দ্রের নীতি ও আদর্শ দেশের যুবসমাজকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। কংগ্রেসের যুবগােষ্ঠী তাঁকেই নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তাই গান্ধীজির পরােক্ষ নির্লিপ্ততা সত্ত্বেও তিনি ' হরিপুরা কংগ্রেসে ' (১৯৩৮ খ্রিঃ) সভাপতি নির্বাচিত হন। এখানে সভাপতির ভাষণে তিনি জাতিকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পূর্ণ সুযােগ গ্রহণ করার এবং কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের সহযােগিতায় ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন গড়ে তােলার আহ্বান জানান।


❏ কংগ্রেস ত্যাগ: সুভাষচন্দ্রের আহ্বান দেশের যুবসমাজকে আলােড়িত করে। কিন্তু কংগ্রেসের তথাকথিত নেতৃবৃন্দকে করে আতঙ্কিত। শুরু হয় সুভাষকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা। এজন্য ত্রিপুরি কংগ্রেসে (১৯৩৯ খ্রিঃ) স্বয়ং গান্ধীজি সুভাষচন্দ্রের স্থলে পট্টভী সীতারামাইয়াকে কংগ্রেস সভাপতি করার প্রস্তাব সমর্থন করেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের তেজোদীপ্ত বক্তব্য তখন কংগ্রেসীদের এত বেশি প্রভাবিত করেছিল যে, এবারেও সুভাষচন্দ্র সভাপতিপদে পুনর্নির্বাচিত হয়ে যান। এই ঘটনায় সবাই আশ্চর্য হয়ে যান। এমনকি গান্ধীজিও তাঁর ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেন না। তিনি প্রকাশ্যেই বলে ফেলেন, “ পট্টভির পরাজয় আমার পরাজয়। অতঃপর দক্ষিণপন্থী নেতাগণ প্রচণ্ডভাবে সুভাষ-বিরােধিতা শুরু করেন। জাতীয় নেতাদের অসহযােগিতা ও যুক্তিহীন বিরােধিতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে সুভাষচন্দ্র সভাপতির পদে ইস্তফা দেন এবং ' ফরােয়ার্ড ব্লক ' নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।


❏ ছদ্মবেশে গৃহত্যাগ ও বিদেশযাত্রা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সুভাষচন্দ্রের প্রত্যাশিত সুযােগ উপস্থিত হয়। তিনি এই সুযােগে বহিঃশক্তির সহযােগিতায় সশস্ত্র যুদ্ধের দ্বারা ভারতকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেন। সুভাষচন্দ্র নিশ্চিত ছিলেন যে, রাশিয়া, জার্মানি, ইতালি প্রভৃতি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের জয় অসম্ভব। ইংল্যান্ডের পরাজয় ঘটলে তার সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী। ' শত্রুর শত্রু আমার মিত্র ' — এই নীতি অনুসারে তিনি ইংল্যান্ডের প্রধান প্রতিপক্ষ জার্মানির সহযােগিতা গ্রহণে তৎপর হন। কিন্তু তার পরিকল্পনার কিছুটা আঁচ করতে পেরে ব্রিটিশ সরকার সুভাষকে বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করে (১৯৪০ খ্রিঃ)। অতঃপর অসুস্থতার কারণে তাকে স্বগৃহে অন্তরীণ রাখা হয়। এমতাবস্থায় তিনি দেশত্যাগের পরিকল্পনা করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ই জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র নিজ বাসভবন থেকে ছদ্মবেশে দেশত্যাগ করেন। অতঃপর কাবুল ও মস্কো ঘুরে তিনি বার্লিনে উপস্থিত হন। সম্ভবত তিনি রাশিয়ার সাহায্যলাভে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু স্ট্যালিনের অনীহার জন্য তিনি বিফলমনােরথ হন।


❏ জার্মানির নির্লিপ্ততা: জার্মানিতে এসেই সুভাষচন্দ্র জার্মান বিদেশমন্ত্রী রিবেনট্রপের সাথে সাক্ষাৎ করে তার পরিকল্পনা পেশ করেন। এই সাক্ষাৎকারের ও সমঝােতার পরিপ্রেক্ষিতে সুভাষ জার্মানির হাতে বন্দি ভারতীয়দের সংগঠিত করে একটি ' আজাদ হিন্দ সংঘ ' গঠন করেন এবং বার্লিন বেতার থেকে স্বাধীন ভারতের প্রচারকার্য শুরু করেন। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই সুভাষচন্দ্র বুঝতে পারেন যে, ভারতের স্বাধীনতা সম্পর্কে জার্মান সরকার সুনির্দিষ্ট কোনাে প্রস্তাব ঘােষণা করবেন না। এমনকি মধ্য এশিয়ার মধ্য দিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর ভারত-আক্রমণের পরিকল্পনাও হিটলারের মনঃপূত ছিল না। এমতাবস্থায় হিটলার অকস্মাৎ রাশিয়া আক্রমণ করলে সুভাষচন্দ্র হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ রুশ-জার্মান যুদ্ধের অশুভ পরিণতি সম্পর্কে তিনি যথেষ্ট সচেতন ছিলেন।


❏ জাপানে নেতাজী: ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জাপান ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিরুদ্ধে। যুদ্ধ ঘােষণা করলে পরিস্থিতি নতুন মােড় নেয়। জাপান বিস্ময়করভাবে সাফল্য লাভ করে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজ আধিপত্য স্থাপনে সমর্থ হয়। ইতিমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তি-আন্দোলন পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে প্রবাসী। ভারতীয় বিপ্লবী রাসবিহারী বসু অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি ব্যাঙ্ককে এক সমাবেশে (১৯৪২ খ্রিঃ) ভারতের ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করেন এবং ভারতের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনার জন্য আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। ঐ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আজাদ হিন্দ বাহিনী সরকারিভাবে গঠিত হয় এবং প্রায় ৪০ হাজার ভারতীয় সৈন্য এই বাহিনীতে যােগদান করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ভারতীয়দের আন্দোলন পরিচালনার জন্য রাসবিহারী বসু সুভাষচন্দ্রকে আহ্বান জানান। এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সুভাষচন্দ্র এক দুঃসাহসিক সামুদ্রিক অভিযানের দ্বারা টোকিওতে উপস্থিত হন। ২ রা জুলাই তিনি ভারতীয় স্বাধীনতা-সংঘের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এখানেই তিনি ‘ নেতাজী ’ আখ্যায় ভূষিত হন। ' আজাদ হিন্দ বাহিনীকে ' নেতাজী আধুনিক ও উন্নত-প্রথায় প্রশিক্ষণ দান করেন। এখানে তিনি একটি নারীবাহিনীও সংযােজন করেন। তার নেতৃত্বে অল্পদিনের মধ্যেই এই বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ৫০ হাজার পৌঁছায়।


❏ আজাদ হিন্দ বাহিনীর অগ্রগতি: সুভাষচন্দ্র আত্মসম্মান -এর বিনিময়ে বিদেশি সাহায্যগ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন না। তাই আয়ারল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীদের দৃষ্টান্ত অনুসরণে তিনি একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠা করেন (১৯৪৩ খ্রিঃ)। এই সরকারের মূল ধ্বনি ‘ জয় হিন্দ ’ এবং ‘ দিল্লি চলাে ’। কিছুদিনের মধ্যে জাপান, জার্মানি সহ ছয়টি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দান করে। অতঃপর নেতাজী ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে নেতাজী আজাদ হিন্দ সরকার ও বাহিনীর প্রধান কর্মকেন্দ্র রেঙ্গুনে প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ এখান থেকেই ভারত অভিযান সহজতর ছিল। একদল জাপানি সৈন্যের সহায়তায় আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারত সীমান্তে অবস্থিত মউডক আক্রমণ করে এবং দখল করে। এখানে তারা স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করে। এরপর মণিপুরের রাজধানী 'ইম্ফল' আজাদ হিন্দ বাহিনীর হস্তগত হয়। অতঃপর সুভাষ কোহিমার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে অভিযান রচনার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বিবিধ প্রতিকূলতা ও ব্রিটিশ সৈন্যের ক্রমাগত আক্রমণের ফলে সুভাষচন্দ্র ইম্ফল-অধিকার বজায় রাখতে ব্যর্থ হন।


❏ সুভাষচন্দ্রের মৃত্যু: ইতিমধ্যে জাপানি বাহিনী বিভিন্ন রণক্ষেত্রে পিছু হটতে থাকে। শেষ পর্যন্ত জাপান অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য হয় ১৫ ই আগস্ট, ১৯৪৪ খ্রিঃ)। এই অবস্থায় সুভাষচন্দ্রের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় থাকা বিপজ্জনক মনে করে বিমানযােগে টোকিও অভিমুখে রওনা হন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এই বিমানটি দুর্ঘটনায় ভস্মীভূত হয়ে যায়। কথিত আছে, এই দুর্ঘটনায় সুভাষচন্দ্রও মারা যান। অবশ্য এ সত্য এখনও পর্যন্ত ইতিহাসগতভাবে সর্বজনস্বীকৃত নয়।


❏ মূল্যায়ন: ভারতবর্ষের পরাধীনতার শৃঙ্খলমােচনে সুভাষচন্দ্রের মত ও পথকে অনেকেই সমর্থন করেননি। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, তিনি ফ্যাসিবাদী ও নাৎসিবাদী শক্তিসমূহের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু এ অভিযােগ সর্বাংশে সত্য নয়। সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আজাদ হিন্দ ফৌজ ও দেশমাতৃকার পরাধীনতা-মােচনে তাদের অভূতপূর্ব উদ্যম, সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ ভারতের স্বাধীনতা-সংগ্রামের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় রূপে চিহ্নিত হয়ে আছে। কঠিন পরিস্থিতি ও নানা অসুবিধা সত্ত্বেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন রণাঙ্গণে এঁরা ব্রিটিশশক্তির বিরুদ্ধে যে সাফল্য দেখিয়েছেন, তা অনবদ্য। তাঁর দেশপ্রেম ছিল প্রশ্নাতীত। তাই কংগ্রেসের বন্ধ্যা আবেদন নিবেদন নীতি তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। বিশ্ব-ইতিহাসের পাতা থেকে তিনি নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন যে, কোনাে সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শক্তি স্বেচ্ছায় অধিকার ত্যাগ করে না। ভারতবাসীর একক সশস্ত্র সংগ্রাম দ্বারা অসীম শক্তিশালী ব্রিটিশরাজকে পরাজিত করা দুঃস্বপ্ন মাত্র, -এ সত্যও তার জানা ছিল। তাই তিনি পরিস্থিতির সুযােগ নিয়ে বিদেশি সামরিক শক্তির সাহায্যে ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা লাভ হয়তাে সম্ভব হয়নি। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের পরিকল্পনা ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর অগ্রগতি একদিকে যেমন ব্রিটিশ সরকারের মনে ভীতির সৃষ্টি করেছিল, তেমনই ভারতবাসীর স্বাধীনতা-সংগ্রামকে উজ্জীবিত করেছিল নতুন শক্তিতে। জাতিগত, ধর্মীয়, ভাষাগত ও প্রদেশগত বিভেদকে সুভাষচন্দ্র কৃতিত্বের সাথে অতিক্রম করতে পেরেছিলেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীতে হিন্দু ও মুসলমান সৈনিকদের অপূর্ব সমন্বয়সাধন করে তিনি গোঁড়া মুসলিম নেতাদের দ্বিজাতিতত্ত্বকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করেছিলেন। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের মধ্যে ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য ও সংহতির বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।


সুভাষচন্দ্র ফ্যাসিবাদী নাৎসিবাদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন এ ধারণাও ভ্রান্ত। ভগতরাম তলােয়ারের সাক্ষ্যে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সুভাষচন্দ্র নাৎসি বা ফ্যাসিবাদী শক্তির সঙ্গে থেকেও নিজের স্বাধীন সত্তাকে বিসর্জন দেননি। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি হিটলার বা তােজোর আজ্ঞাবহ হননি। তার স্বাধীন চিন্তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ যে, তিনি আজাদ হিন্দ বাহিনীকে সােভিয়েত রাশিয়া বা ব্রহ্মদেশের মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণে বিরত থাকার কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র ও আজাদ হিন্দ বাহিনীর দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা ব্রিটিশ সরকারের নৈতিক (মানসিক) পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল, এ বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই।


কপিরাইট: Gksolves.com এর অনুমতি ছাড়া কোনো অংশ কপি করে অন্য কোনও ওয়েবসাইটে বা ব্লগে ব্যবহার করা অথবা অন্য কোনো উপায়ে প্রকাশ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যদি কোনো কারনে লেখার অংশ প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে, উপযুক্ত লিঙ্ক সহ সম্পূর্ন সূত্র দিয়ে কপি করার অনুরোধ করা হল। অন্যথায় আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবো। আপনি কেবলমাত্র পড়াশোনার জন্য আপনার বন্ধু ও আত্মীয়দের হােয়াটসঅ্যাপ টেলিগ্রাম বা ফেসবুক ইত্যাদি প্লাটফর্মে শেয়ার করতে পারেন এমনকি প্রিন্ট ও করতে পারেন তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই।

আমাদের কথা: যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর বা বানান ভুল থাকে, এই ভুল আমাদের অনিচ্ছাকৃত এর জন্য আমরা ক্ষমা প্রার্থী। সঠিকটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানান আমরা পরবর্তী ক্ষেত্রে আপডেট করে দেব।


Tags

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.