পদার্থবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সমূহ: Important Formulas Of Physics
পদার্থবিদ্যার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সমূহ: Important Formulas Of Physics
1. আর্কিমিডিসের নীতি (Arcitinuedes Principle):
কোন বস্তুকে তরলে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নিমজ্জিত করলে বস্তুটি উদ্ধচাপ অনুভব করে, সেই চাপ বস্তু দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের সমান, অর্থাৎ বস্তুটির ওজনের আপাত হ্রাস অপসারিত তরলের ওজনের সমান হয়। এই নীতিটি খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে গ্রীক গাণিতিক আর্কিমিডিসের দ্বারা আবিষ্কৃত।
2. অ্যাভােগাড্রোর সূত্র (Avagadri's Law):
সম তাপমাত্রায় ও চাপে একই আয়তনের সমস্ত গ্যাসের অণুর সংখ্যা সমান হয়। ইটালীর বিজ্ঞানী অ্যামেডিওস অ্যাভােগাড্রোকে এই প্রকল্পটি 1811 খ্রীঃ প্রেরণা দিয়েছিল এবং পরে তা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল।
3. নিউটনের সূত্রসমূহ (1642-1727) (Newton's Law):
(I) মহাকর্ষের সূত্র (Law of Gravitation) - এই বিশ্বের বস্তুগুলি পরস্পর পরস্পরকে যে বল দ্বারা আকর্ষণ করে তা বস্তু দুটির ভরের গুণফলের সমানুপাতিক ও তাদের মধ্যে দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক। পৃথিবীর উপরিপৃষ্ঠে বা তার কাছাকাছি কোনাে বস্তুর ভর পৃথিবীর ভরের তুলনায় অনেক কম এবং বস্তু ও পৃথিবীর মধ্যে মহাকর্ষ বলের ফলে বস্তু পৃথিবীর দিকে পতিত হয়। এই কারণে শূন্যস্থানে একটি সীসার ঢাকতি গিনি এবং একটি পালক সমবেগে নীচের দিকে নেমে আসে।
(II) নিউটনের প্রথম গতিসূত্র (Newton's First Law of Motion) - বাহ্যিক প্রযুক্তি বলের দ্বারা অবস্থার পরিবর্তন না ঘটালে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির অবস্থায় এবং গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে, সরলরেখায় গতিশীল থাকে। এই সূত্রকে বলা হয় জাড্য সূত্র।
(III) নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র (Newton's Second Law of Motion) - কোনাে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুটির উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল সরলরেখা বরাবর যে দিকে প্রযুক্ত হয় ভরবেগের পরিবর্তন সেই দিকেই ঘটে। আরেকভাবে বললে, বল হলাে ভর ও ত্বরণের গুণফলের সমান।
(IV) নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র (Newton's Third Law of Motion) - প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া ঘটে। বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়লে বিপরীত দিকে ধাক্কা অনুভূত হয় — এই সূত্রের ভিত্তিতে ঘটে।
(V) নিউটনের শীতলকরণ সূত্র (Newton's Law of Cooling) - একটি বস্তু যে হারে তার চারিপাশে তাপ বর্জন বা মােচন করে তা বস্তুটির অতিরিক্ত গড় তাপমাত্রার সমানুপাতিক, যদি এই তাপমাত্রা চারিপাশের তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হয় এবং যদি এই তাপমাত্রা কোনাে ভাবেই অতিরিক্ত না হয়।
4. কুলম্বের সূত্র (1738-1806) (Coulomb's Law):
যদি দুটি তড়িৎ আধানের মধ্যেকার বল দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে আধান দুটির মধ্যের বল পূর্বের বল অপেক্ষা 1/4 অংশ কমে যায়। SI পদ্ধতিতে তড়িৎ আধানের একক হলাে কুলম্ব। আবিষ্কারক চার্লস অগুস্টিন ডে কুলম্বের নামে এই এককটির নামকরণ হয়েছে।
5. স্টিফ্যান্সের সূত্র (1835-1833) (Stefan's Law):
একটি কালাে বস্তু থেকে নির্গত বিকীর্ণ শক্তি, তার পরম তাপমাত্রার চারগুণের সমান।
6. প্যাস্কালের সূত্র (1623-1662) (Pascal's Law):
(i) তরলের উপর চাপ প্রয়ােগ করলে, পরিবর্তিত সম্পূর্ণ চাপ তরলের সব অংশের উপর পড়ে। হাইড্রলিক চাপের মতাে হাইড্রোলিক মেশিন এই নীতির ভিত্তিতে কাজ করে।
(ii) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুমন্ডলীয় চাপ কমতে থাকে। চাপের SI একক হলাে প্যাস্কাল। আবিষ্কারক প্যাস্কালের নামে এই এককের নামকরণ হয়েছে।
7. হুকের সূত্র (1635-1703) (Hooke's Law):
একটি স্প্রিং এর প্রসারণ, তার প্রসারিত হওয়ার টানের সঙ্গে সমানুপাতিক। দ্বিগুণ প্রসারণের জন্য টান দ্বিগুণ হয়।
8. লেঞ্জের সূত্র (1805-1865) (Lez's Law):
সব তড়িৎ চুম্বকীয় আবেগের ক্ষেত্রে আবিষ্ট তড়িৎ প্রবাহের অভিমুখ এমন হয় যে, তা উৎপন্ন হওয়া মাত্রই ঐ প্রবাহের প্রতিক্রিয়া যে কারণে আবিষ্ট প্রবাহের সৃষ্টি হয় সবসময় সেই কারণকে বাধা দেয়।
9. ডালটনের সূত্র (1766-1844) (Dalton's Law):
একটি মিশ্র গ্যাসের (বাষ্পের) ওপর সম্পূর্ণ চাপ তার উপাদানগুলির প্রতিটির উপর প্রযুক্ত আংশিক চাপের যােগফলের সমান ; অর্থাৎ ঐ মিশ্রণের প্রতিটি উপাদান, মিশ্রণের আয়তনের সম আয়তন অর্জনে যে চাপ প্রদান করে তার সমষ্টির সমান।
1803 সালে ডালটন তার পারমাণবিক তত্ত্বটি প্রকাশ করেন। এখানে বলা হয়েছে — প্রত্যেক পদার্থ যে কণা বা পরমাণু দ্বারা গঠিত তা রাসায়নিক পরিবর্তনের সময় অবিভক্ত থাকে। একই রাসায়নিক মৌলের মধ্যে একই রকম পরমাণু থাকে ; পরমাণুগুলির ওজন অভিন্ন, অন্যদিকে বিভিন্ন মৌলের পরমাণুগুলি বিভিন্ন হয় এবং তাদের ধর্ম, ওজন এবং রাসায়নিক যৌগ গঠনের সময় মৌলের সরল অনুপাতগুলি বিভিন্ন হয়।
10. ফ্যারাডের সূত্র (1791-1867) (Faraday's Law):
(I) তড়িৎ বিশ্লেষণের সূত্র (Law of Electrolysis):
(a) তড়িৎ বিশ্লেষণের সময় যে পরিমাণে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, তা উৎপন্ন আধানের সঙ্গে সমানুপাতিক।
(b) একই পরিমাণ তড়িৎ আধান দ্বারা যে পরিমাণ পদার্থের ভর মুক্ত হয় বা জমা হয়, তা পদার্থগুলির রাসায়নিক তুল্যাঙ্কের সঙ্গে সমানুপাতিক।
(II) তড়িৎ চুম্বকীয় আবেশের সূত্র (Law of Electromagnetic Induction):
(a) পরিবাহীর চারপাশের চুম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে পরিবর্তন ঘটানাে হলে পরিবাহীর মধ্যে তড়িৎচুম্বকীয় প্রবাহ আবিষ্ট হয়।
(b) তড়িৎ চুম্বকীয় প্রবাহের মাত্রা, চুম্বকক্ষেত্রের পরিবর্তনের মাত্রার সঙ্গে সমানুপাতিক।
(c) আবিষ্ট তড়িৎ চুম্বকীয় প্রবাহের অভিমুখ, চুম্বকক্ষেত্রের অভিমুখ পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে।
11. ওহমের সূত্র (1787-1854) (Ohm's Law):
কোনাে তড়িৎ বর্তনীর মধ্যে দিয়ে যে পরিমাণ তড়িৎ প্রবাহিত হয়, তা নির্ভর করে ব্যাটারীর ভােল্টেজের উপর অথবা যে ডায়নামােটি ব্যাটারীতে ক্ষমতা প্রদান করে তার উপর। অন্যভাবে বললে, একটি পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ, পরিবাহীর মধ্যে যে বিভব প্রভেদ সৃষ্টি করে তার সঙ্গে সমানুপাতিক এবং পরিবাহীর রােধের সঙ্গে ব্যাস্তানুপাতিক। তড়িৎ রােধের প্রতিষ্ঠাতা, জর্জ সাইমন ওহমের নামে SI পদ্ধতিতে এর একটি নামকরণ হয়েছে, ওহম (Ohm)।
আমাদের কথা: যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর বা বানান ভুল থাকে, এই ভুল আমাদের অনিচ্ছাকৃত এর জন্য আমরা ক্ষমা প্রার্থী। সঠিকটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানান আমরা পরবর্তী ক্ষেত্রে আপডেট করে দেব।
Please do not share any spam link in the comment box