ভারত বিভাজনের ইতিহাস: History Of The Partition Of India
ভারত বিভাজনের ইতিহাস: History Of The Partition Of India
ভারত বিভাজনের ইতিহাস:
ভারত বিভাজন আকস্মিক ও নিষ্ঠুরভাবে ইতিহাসে এসে পড়লেও দীর্ঘকাল ধরেই এর প্রস্তুতি চলছিল। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গাগুলির মধ্যেই এর ভূণ প্রােথিত ছিল। ১৮৮১ সালে এই দাঙ্গার সূচন, তারপর মাঝে মাঝেই তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে।
❏ হিন্দু-মুসলিম বিরােধকে উৎসাহ দিতে ও সেই বিরােধ স্থায়ী করতে ব্রিটিশ প্রশাসন এই সব দাঙ্গার সুযােগ নেয়। এসব অবশ্য বাহ্যিক কারণ। আসল কারণ যতটা না ধর্মীয় তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক। ১৯০৬ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় সারা ভারত মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা মুসলিমদের রাজনৈতিক তাশা আকাঙ্খা পূরণের একটা সুযোগ করে দেয়। ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ ইন প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা নিয়ে আলােচনা শুরু করে, তখনই এই দুই সংগঠনের মধ্যে দ্বন্ধ প্রকাশসলে আসে। ১৯৩৭ সালে জওহরলাল নেহরু জিয়াকে লিখলেন - চুড়ান্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী ভারতে আজ মাত্র দুটি শক্তি আছে এটিশ ঔপনিবেশিক এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতিনিধিত্বকারী কংগ্রেস জিন্না উত্তর দিলেন, (১) হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে কোনও মিল নেই এবং (২) ভারতের মুসলিমরা একটি পৃথক জাতি, তাই তাদের জন্য চাই একটি পৃথক রাষ্ট্র। বিভেদ সম্পূর্ণ হল। ভারতের বিভাজনের জন্য কেবল সময়ের অপেক্ষা।
❏ ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর হিটলারের পােল্যান্ড আক্রমণ দিয়ে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা এবং ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটেন ভারতকে একটি যুদ্ধরত রাষ্ট্র বলে ঘােষণা করল এবং ব্রিটিশ ভারতীয় প্রশাসনে শুরু হয়ে গেল পুরােদস্তুর যুদ্ধকালীন তৎপরতা।
❏ ব্রিটেনের নেতৃত্বাধীন মিত্র দেশগুলিকেই কংগ্রেস সমর্থন করল। তবে ভারতকে 'যুদ্ধরত রাষ্ট্র' ঘােষণার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কোনরকম আলােচনা না করায় কংগ্রেস অসন্তোষ প্রকাশ করল।
❏ ১৯৪০ সালের মার্চে রামগড়ে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং স্বাধীন ভারতের একটি সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদ গঠনের দাবি জানানাে হল। সেই একই মাসে মুসলিম লিগ তার লাহাের অধিবেশনে ভারতে মুসলিমদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবি জানায়।
❏ ১৯৪২ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ সরকার স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিকে একটি নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দিয়ে ভারতে পাঠালেন। কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ উভয়েই প্রস্তাবগুলি বাতিল করে দেয়।
❏ ১৯৪২ সালের আগস্টে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি ব্রিটিশদের প্রতি গান্ধীজির আহ্বান নিয়ে বিচারবিবেচনা করে বিখ্যাত ' ভারত ছাড়াে ' প্রস্তাব গ্রহণ করে।
❏ ১৯৪৫ সালে ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেলের উদ্যোগে সমস্ত সিমলা সম্মেলন (জুন-জুলাই, ১৯৪৫) বার্থ হল। এরই মধ্যে (জুলাই) ব্রিটেনে লেবার পার্টি সরকারে এল। এই সরকার ভারতীয় পরিস্থিতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করল।
❏ ব্রিটেনে লেবার পার্টির বিদেশ সচিব লর্ড পেথিক লরেন্স ঘােষণা করলেন, ভারতের স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে আলাপ আলােচনা করার জন্য একটি পার্লামেন্টারি কমিশন ভারত সফরে যাবে। পরে ক্যাবিনেট মিশন নামে খ্যাত, এই প্রতিনিধিদলে তার সাংবিধানিক পরিকল্পনায় মুসলিমদের নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকার প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেয়। মুসলিম লিগ ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব মেনে নিলেও কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করে।
❏ এর পরই একাধিক দাঙ্গা বাধে। দাঙ্গার সূচনা হয়। ১৯৪৬ সালের ১৬ থেকে ১৮ আগস্ট ' গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং ' দিয়ে। তারপরেই ঘটে পশ্চিম পাঞ্জাবের হত্যালীলা, সেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। হতাশ হয়ে কংগ্রেস পাঞ্জাবের বিভাজন দাবি করে।
❏ ১৯৪৭ সালের মার্চে ওয়াভেলের জায়গায় লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভাইসরয় হয়ে আসেন। তিনি জোরালােভাবে ভারত বিভাজনের কথা ঘােষণা করেন। বলেন, যে সব প্রদেশে মুসলিমরা গরিষ্ঠ সেগুলি নিয়ে গঠিত হবে আলাদা একটি রাষ্ট্র পাকিস্তান।
❏ এইভাবে পাঞ্জাবের একটি অংশ (পশ্চিম পাঞ্জাব), বাংলার একটি অংশ (পূর্ববঙ্গ) এবং গােটা সিন্ধ, বালুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে গঠিত হল পাকিস্তান। ভারতের তাবশিষ্টাংশ নিয়ে গঠিত হয় আরেকটি রাষ্ট্র। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট অনুমােদিত ভারতীয় স্বাধীনতা আইন (জুলাই, ১৯৪৭) ভারত বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত করল, গঠিত হল দুটি সম্পূর্ণ স্বাধীন রাষ্ট্র - ভারত ও পাকিস্তান।
আমাদের কথা: যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর বা বানান ভুল থাকে, এই ভুল আমাদের অনিচ্ছাকৃত এর জন্য আমরা ক্ষমা প্রার্থী। সঠিকটা অবশ্যই কমেন্ট করে জানান আমরা পরবর্তী ক্ষেত্রে আপডেট করে দেব।
Please do not share any spam link in the comment box